মরণের পরে
জনশূন্য দুপুর। স্টাফ ট্রেন ধরার তাড়া ঋতমের!আজ প্রায় টানা দুমাস পর অফিস এসেছিল সে। সব কিছু কেমন পাল্টে যাওয়া লাগছে।জরুরি কিছু ফাইলে সই করে জলদি ফেরার সময় স্ট্যান্ডে একটাও অটো না পেয়ে চিন্তিত হলো।
আরে ওই তো নৃপেনের ঠেলা রিক্সা!এদিক ওদিক তাকিয়ে হাঁক দিতেই ‘বৈঠিয়ে বাবু’বলে ঝড়ের গতিতে ছুটলো রিক্সা।
“আহ্ নৃপেণ, আস্তে,পড়ে যাবো যে! ওই ক’খানা হাড়ে এত শক্তি পেলে কোথায় বলো দেখি”!
খ্যাঁক খ্যাঁক করে হাসলো পরিচিত নৃপেণ।
“..বাবু নামুন,আপনার স্টেশন হাজির”।
“বাপরে এত জলদি”- বলে নামতেই ছ্যাঁত করে উঠলো বুকটা ঋতমের। কোথায় নৃপেণ,এমনকি রিক্সাটাও আসে পাসে নেই!এখনো লক ডাউনের একটা প্রভাব কাজ করছে,ট্রেন কম তাই শূন্য স্টেশন চত্বর।
সারারাত কতো কথা মনে পড়ছে নৃপেনকে নিয়ে।পুরানো জামা প্যান্ট জমলেই রিমলি প্যাকেট করে বলতো ,”নিয়ে যাও কে যেন গরীব রিক্সা দাদা আছে তোমার’।আজও নৃপেণ, ঋতমের হাফ পাঞ্জাবিটা পড়েছিল।
পরের দিন স্ট্যান্ডে নৃপেনের খোঁজ করতেই চা দোকানী বলল,” গত সপ্তাহে করোনা কেড়েছে নৃপেনকে। ওই যে ওর বাচ্চাটা কাছা পড়ে রিক্সায় চেপে খেলছে”!
“..এই নে রাখ, তোর বাবা ভাড়া পেতো”। দুশো টাকা বের করে বাচ্চাটার হাতে গুঁজে উদাস হলো ঋতম।মৃত্যুর পরও নৃপেনের দায়িত্ববোধ!কাল ট্রেন মিস হলে নিজের অসুস্থ সন্তানকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া হতো না ঋতমের।