মন বাউলের নিশি জাগর
আজ পূর্ণিমা—- ঝুলনও রাখি। নিশি কুসুমের মদিরতায় আবেশি রাত। রূপোঝুরি জোৎস্না মেখে প্রকৃতি আজ নেশায় মাতাল। কাকজ্যোৎস্নার ভ্রান্তিতে হঠাৎ করে ডেকে ওঠে পাখপাখালি। পিউ কাঁহা ও কোকিলের যুগলবন্দি রাতকে মোহময় করে তুলেছে। রাতের বুকে কাঁপন তোলা সুর পরিযায়ী ডানাতে যাযাবরী টান লাগায়। জ্যোৎস্না মাখা ডানা উড়ান টানে অচিনপুরের উদ্দেশ্যে।
আজ ঝুলন পূর্ণিমার মিলনোৎসব। জ্যোৎস্না মাখা রাত যেন নববধূর শরম লাজের ঘোমটা টানছে— চাঁপার সুবাস মেখে যেন আরও মদির হয়ে উঠছে। দূরে দক্ষিণের-মাঠে ভূত ভৈরবী, আকন্দ কালকাসুন্দে র ঝোপে থোকা থোকা জোনাক জ্বলেছে— যেন আগুন কুসুম— নিশিরাতের ওডনার সলমা চুমকি।
কোন অজানা রাত চরা পাখির ডানার শন শন রব মনকে বিবাগী করে দেয়। ওই ডানায় মন বসিয়ে উডানটানি দিকশূন্যপুরের উদ্দেশ্যে। একটা মিষ্টি সুবাসী হওয়া সারা চরাচর কে ভালোবাসায় ভরিয়ে দিল। চাঁপা গাছের ফাঁক দিয়ে রুপোর থালার মত চাঁদটা জ্যোৎস্নার প্লাবন ঢালছে।এই মদির নিশি যেন বলছে—” এমনও রাত যেন যায় না বৃথাই”—–!
প্রকৃতির মায়াজালে চরাচর বাঁধা পড়েছে। মায়াবী রাতের প্রণয় ভাষণে আবেশ লাগে। রাতের মোহ চন্দন জ্যোৎস্না হয়ে গড়িয়ে পড়ে– নিশিগন্ধার উগ্র আতরে রাত মায়াবিনী। জ্যোৎস্নার পেলব ওড়না সরিয়ে আস্তে আস্তে নিজেকে প্রকাশ করছে সে। বড় যাদু তার। মনকে কি যেন আবেশে মাতাল করে রাখে। জানালার পাশে বসে বসে রাতের গড়িয়ে চলা অনুভব করছি। দূরে –বহুদূরে —বড় রাস্তার গডানে–রাত কাটছে —আশশেওড়ার ঝোপে ,ভূত ভৈরবীর ফুলে ,চাঁপার সুবাসে, রাতচরা পাখির ডানায়!
রাত যেন ফিসফিস করে কথা বলছে বাতাসের সাথে! একটা ঠান্ডা হাওয়ার লহর উঠলো। রাতের আঁধার তরল হতে চলল। দূরে —অনেক দূরে —এক ঝাঁক পরিযায়ী পাখির ডানার শন শন শব্দ রাতের বুকে আলোড়ন তুলল। ধীরে ধীরে তা পশ্চিমের মাঠে মিলিয়ে গেল—- ঘুমন্ত পাখির ডানায় যা কাঁপন তুলল ক্ষনিকের— আবার নিস্তব্ধতা!
ফল বাগানে বাদুডের হুটোপুটি। হঠাৎ করে একটা পাগলা কোকিল কুহু তানে নীরব রাতটাকে সচকিত করে তুলল। পাপিয়ার পিউ কাঁহা তার সাথে দোহার ধরলো। মায়াবিনী নিশি মদিরতায় আবিল হয়ে উঠলো। দেখতে দেখতে গাছগাছালির উসখুশানী শুরু হলো— ভোর হবে যে! দূর থেকে ভেসে এলো প্রথম মোরগের ডাক –তার দিনমনিকে আহবান। পেঁচা দম্পতি নিশিটহল সেরে এসে বসলো শ্বেতশিমুলের ডালে। আঁধারের মায়াবী ওড়না সরিয়ে ভোর যে উঁকি মারছে— পাখিদের ভোরাই শুরু হলো!!!