Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » মনের ঝড় || Samarpita Raha

মনের ঝড় || Samarpita Raha

আমার মা ও বাবার পঞ্চাশতম বিবাহ বার্ষিকী।
আমি ও ভাই দুজনেই বিবাহিত।
ভায়ের বৌ আবার পাঞ্জাবি—সে আবার নিজের ভাঙরা নাচ নিয়ে ব‍্যস্ত থাকে—কখন সরস্বতী পূজো,দুর্গা পূজো কোন হেলদোল নেই।
একদিন আমায় ভায়ের বৌ বলে ——দিদি
ঐ উঠানের ধারে যে পলাশ গাছ আছে—- কেটে দিলে ভালো হয় না?
আমি বলি কেন রে??
তোর পাকা ধানে মই দিয়েছে।
কি বললে দিদিভাই??

আমি বলি কিছু না—-কি সুন্দর লাগে লাল ফুলে ঢেকে যায়—-কাটবার কথা মনে আনবি না—ওই গাছটা আমার বাবা ,পঁচিশতম বিবাহ বার্ষিকীতে মাকে উপহার দিয়েছিল।

তারপর আমি গুনগুন করে গান করতে থাকি
“ওরে ভাই ফাগুন লেগেছে বনেবনে”
পলাশের শোভায় পুলক জেগেছে মনে।গানের কলি ভুলে গেছি,কেমন বানিয়ে দিলাম বলতো??
তারপর দুজনেই হেসে উঠি।

জানো দিদি আমার শোবার ঘরের জানলা দিয়ে পলাশ গাছটা দেখি-মনে হয় “ফাগুনে লেগেছে আগুন”।আমি হঠাৎ চমকে উঠি গুনগুন গানের কলিতে”
আসে বসন্ত ফুলবনে সাজে বনভূমি সুন্দরী
চরণে পায়েল রুমুঝুমু
মধুপ উঠিছে গুঞ্জরি।

আরে তুই এই নজরুল গীতি কার কাছে শিখলি??

বুঝলাম যার বাড়ির নাম “পলাশপ্রিয়া,”ছেলের নাম “কিংশুক”,তিনি তো পাঞ্জাবি বৌমাকে বসন্তের গান শেখাবেন।

হঠাৎ ভাই বলে দিদি— বাবা ও মার বিবাহ বার্ষিকী আর একসপ্তাহ বাকি—–হ‍্যাঁ তুই প‍্যান্ডেল,ক‍্যাটারার সব বলেছিস তো??
আমি বলি হ‍্যাঁ—-তবে ভাই —আত্মীয় বলতে কাকুদের,পিসিকে,পাড়া পড়শি ও আমাদের শ্বশুরবাড়ি,কিছু বন্ধু বান্ধব—এই বলছি কিন্তু।
ভাই বলে আমি ডাক্তার মানুষ—-একদম সময় পায় না—দিদি তুই যা ভালো বুঝবি।

বাবা ও মা বলে এইসব বাড়াবাড়ি না করলেই নয়—আমি মজা করে বলি— নিজেরা যখন বিয়ে করেছিলে তখন আমায় আর ভাইকে নিমন্ত্রণ করো নি।

মা বলে মৌ তুই মনে হয় তোর ছেলের চেয়েও ছোট।
আমরা হা হা হা করে হেসে উঠি।
“বিবাহ বার্ষিকীতে” বাবা ও মায়ের মালা বদল হয়।খাওয়া দাওয়া হয়। অতিথিরা আকাশ ভারাক্রান্ত দেখে খাবার খেয়ে বাড়ি চলে যায়। আমরাও যে যার ঘরে চলে আসি।

হঠাৎ প্রচন্ড ঝড় বৃষ্টি,কড়কড় করে বাজ পড়তে থাকে।আমি বলি বাগানের সব লাইট বৃষ্টিতে নষ্ট হয়ে যাবে।
আমার বর বলে বাগানে গানের শব্দ।
আমি বলি এই বৃষ্টিতে কে বাগানে??
কান পেতে গান শুনতে শুনতে বলি মা ,বাবা বাগানে কি করছে??
বাচ্চা হয়ে গেল।
বর বলে তোমার মা ও বাবার প্রেম কাহিনী নিয়ে গল্প লিখব।
গানের কলি ভেসে আসে—-
“আজি দখিন দুয়ার খোলা
এসো হে এসো হে
আমার বসন্ত এসো।

তারপর চিৎকার।আমরা ও ভাই বাগানে ছুটে যায়।দেখি বাবা বলছে তোরা ধরিস না।কারেন্ট কা–রে ন্ট। “মধুর বসন্ত এসেছে মধুর মিলন ঘটাতে আমাদের
মধুর মিলন ঘটাতে।

মা ও বাবা পলাশ গাছের তলায় শায়িত।ঝলসানো মা বাবার নিথর দেহ।আমরা সবাই মড়ে যেতাম,যদি বাবা বলতে না পারতেন।
তখনও প্রচন্ড ঝড় বৃষ্টি।হঠাৎ লোডশেডিং হয়।আর বিপদ নেই ।তারপর ভাই তো ডাক্তার—মা ,বাবা কে পরীক্ষা করে বলে শরীরে প্রাণ নেয় ——–হয়তো এইভাবেই ওনাদের মৃত্যু লেখা ছিল।

যখনই ঝড় হয়—ঐদিনের কথা খুব মনে পড়ে।মনের ঝড় হৃদয়কে বিদীর্ণ করে—কেন আমরা মা বাবার ঘটা করে বিবাহ বার্ষিকীর অনুষ্ঠান করেছিলাম।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress