মনবাউল (কনক-দুর্গা)
স্মৃতির সুতোয় টান লাগলেই গুঞ্জন ওঠে মনের তারে॥অনেক দিন আগের কথা!কলেজের বার্ষিক অনুষ্ঠানে শ্যামা ” হবে! প্রথম বর্ষের আমিও শ্রীলেখা মুখ্য ভূমিকায়! আমি বজ্রসেন ও শ্যামা!ড্রেস ভাড়া
করা হয়েছে! শ্যামার নীল বেনারসী!
শ্রী বললো ও নীল বেনার়সী পরতে পারবে না! বাধা আছে!কি বাধা তা কিছুতেই বলে না॥
অনেক পরে জানতে পারলাম যে ও চিল্কিগড়ের
রাজ পরিবারের মেয়ে! ওদের কুলদেবী মা কনকদুর্গা॥ মায়ের পরিধেয় নীল বেনারসী॥ তাই
রাজ পরিবারের কেউ নীল বেনারসী পরে না॥
কেটে গেছে অনেক গুলো বছর!মা কনকদুর্গার কথা ভুলতে বসে ছি তখন হঠাৎ পিকনিকের জন্য
চিল্কিগড়ের নামওঠে॥মনে পড়ে গেল কলেজের ঐ ঘটনাটা॥মা কনকদুর্গা দর্শনে যাবই ঠিক করে বেরিয়ে পড়লাম॥ ঝাড়গ্রাম থেকে গাড়ি নিয়ে বেয়িয়েছি!চালক ছেলেটি
র নাম সুমনরায়! বছর পঁচিশ বয়স! খুব মিশুকে!কয়েক মিনিটের মধ্যেই আমি তার মাসী” হয়ে গেলাম॥ যাত্রা শুরু হল শালজঙ্গলের পথে!লালমাটিয়া পথ! দিগন্ত ছোঁয়া রুক্ষু টঁাড় জমি॥লোকজন নেই বললেই চলে॥শাল,পলাশ,কুল,মহুয়া গাছের জঙ্গল॥কোথাও বা কুর্চি ভূতভৈরবী, কুকশিমা র ঝোপ॥আলোক লতার হলুদ ছেয়ে আছে গাছের মাথাটা॥জঙ্গলের মধ্যে নাম না জানা জঙ্গলী লতাটায় ঝোকা ঝোকা ঈষৎ বেগুনীফুল ফুটেছে॥ ঝঁাঝালো বুনো গন্ধে বনতল ম ম করছে॥
গাড়ি আস্তে আস্তে মন্দিরের সামনে দাঁড়ালো!বাঁদরের উৎপাতে দঁাড়ানো কঠিন॥জঙ্গল ঘেরা মন্দির! পরিখার জলে বোটিং হচ্ছে॥চারপাশের বন ভেষজ
উদ্ভিদের ॥প্রায়400প্রজাতির ভেষজ আছে এখানে॥
মন্দির লাগোয়া ডুলুং নদীর ঘাট! সতী ঘাট!
এক রানী এখানে সতী হয়েছিলেন॥
কথিত আছে চিল্কিগড়ের রাণীর কঙ্কন দিয়ে
মায়ের মূর্তি গড়া হয়েছিলো! স্বপ্নাদেশ পেয়ে!
মা রাজার কুলদেবী! আটহাত,অশ্বারোহী, নীল বেনারসী পরনে॥এখানে অষ্টমী নবমীতে 1000রবেশী বলি হয়! মন্দির থেকে সতীঘাট
পর্যন্ত রক্তের নদী বয়েযায়॥
সন্ধীপূজোর পর এখানে বিরাম ভোগ হয়!
পুরোহিত কাঠের উনুনে ভোগ বসিয়ে ঘর তালা বন্ধ
করে দেন পরের দিন দেখা যায় ভোগ সুন্দর রান্না হয়ে গেছে॥
মানুষের বিশ্বাস মা নিজেই ভোগ রাঁধেন॥
সারা বন পাখ পাখালির কলরবে সরগরম॥
একটু এগিয়ে ডুলুং নদীর ঘাটে এলাম!তির তির করে বয়ে চলেছে ডুলুং॥ হেটে পার হওয়া যায়! শুনলাম হঠাৎ হড়পা বান এলে দুকুল ছাপিয়ে যায়!
জেলেরা ছোট নৌকা নিয়ে মাছ ধরছে!
দুরে যেখানে নদী বাঁক নিয়েছে সেখানে জল গভীর
,আয়নার মত স্থির॥
জঙ্গলও আকাশ নদীর আয়না জলে মুখ দেখে॥
ঘাটের পাথরে বসে আছি!জলে পা ডুবিয়ে॥
অপর পারে জলজ আগাছার জঙ্গল॥একটা ছোট্ট মাছরাঙা সুতীব্র হুইসেল বাজিয়ে উড়ে গেল॥
তার তুঁতে নীল ডানা যেন রঙের চামর দোলালো!
এক ঝাঁক মুনিয়ার কলতানে কান ঝাঁ ঝাঁ করছে॥
মন্দিরের কাছ থেকে সুমনের ডাক ভেসে এলো,,,,,”মাসী,এবার আসুন, ঝাড়গ্রাম পৌছাতে
দেরী হয়ে যাবে॥”
আস্তে আস্তে সতীঘাট ছেড়ে মন্দিরের চাতালে উঠে এলাম॥দুপাশে কাষ্ঠল লতা মন্ডপ করে তুলেছে॥
সূর্য
পাটে বসতে চলেছে তাই পাখ পাখালির কলতানে
জঙ্গলমুখর॥গাড়ীতে বসলাম!গাড়ি এগিয়ে চললো
জানলা দিয়ে পেছনে তাকিয়ে দেখলাম,,,,,,মন্দির,জঙ্গল,লালমাটিয়া পথ সবাই যেন বলছে,,,,,আবার এসো কিন্তু॥