সময় শ্রেষ্ঠ নাট্যকার, সময়ই শ্রেষ্ঠ পরিচালক
সময় শ্রেষ্ঠ নাট্যকার, সময়ই শ্রেষ্ঠ পরিচালক। এ মনে হয় অস্বীকার করা যায় না। মাধুর্যের নাম এমিলিয়া। ডিরোজিওর সুশিক্ষিতা, স্নেহময়ী বোন। ভাই আর বোনের ছোট্ট সংসার। এমিলিয়া যেন ডিরোজিওর মা। ভাইটিকে স্নেহ দিয়ে ঘিরে রেখেছেন। দক্ষিণারঞ্জনকেও ভাইয়ের মতো স্নেহ করতেন। একই পাড়ায় দক্ষিণারঞ্জন এসেছেন। যখন তখন ডিরোজিওর বাড়িতে তাঁর অবাধ যাতায়াত। এক ধরনের মানুষ থাকেন যাঁরা চিরকালই অন্যের ছিদ্র অনুসন্ধান করেন, কুৎসা রটান। সব যুগেই তাঁরা বহালতবিয়তে থাকেন। শহরে রাষ্ট্র হয়ে গেল দক্ষিণারঞ্জনের সঙ্গে ডিরোজিও পরিবারের ঘনিষ্ঠতা দেখে মনে হচ্ছে, গোপীমোহন ঠাকুরের নাতি এইবার খ্রিস্টধর্ম গ্রহণ করলেন বলে। বড়লোক বাড়ির এইরকম একটি ছেলেকে পেলে পাদরিরা ধন্য হয়ে যাবেন। আর ওই এমিলিয়া, তাঁকেই বা বিশ্বাস কী! দুজনের এই ভালোবাসা প্রেমেরই নামান্তর। বিয়ে আসন্ন। এই কুৎসার কোনও ভিত্তি ছিল না। দক্ষিণারঞ্জন অনেক আগেই ডাক্তার ডফের ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শে এসেছিলেন। তাঁর সহপাঠীদের মধ্যে কেউই অতটা কাছাকাছি যেতে পারেননি। ডফ সাহেব নিশ্চয়ই পারলে দক্ষিণারঞ্জনকে অনেক আগেই খ্রিস্টান করে দিতেন। আর এমিলিয়ার সঙ্গে বিবাহ? অনেক আগে ছাত্রাবস্থায় দক্ষিণারঞ্জনের সঙ্গে হরচন্দ্র ঠাকুরের কন্যা জ্ঞানদাসুন্দরীর বিয়ে হয়ে গেছে। এমিলিয়া অত্যন্ত পবিত্র স্বভাবের মেয়ে ছিলেন। বিবাহিত দক্ষিণারঞ্জনের সঙ্গে অবৈধ প্রেমের কোনও সম্ভাবনাই ছিল না। স্বল্প পরমায়ুর ডিরোজিও আজীবন অবিবাহিত ছিলেন। বোন এমিলিয়া অনেক চেষ্টা করেছেন দাদাকে বিবাহে রাজি করাতে। একটি ইংরেজি কবিতায় ডিরোজিও এমিলিয়াকে লিখেছিলেন যে কথা তার কোনও তুলনা নেই। সেই কবিতায় এমিলিয়ার নির্মল চরিত্রের বর্ণনা আছে।
কলকাতার সমাজে এখন হিন্দু ধর্মের কয়েকজন গোঁড়া সমর্থক খুবই প্রবল। তাঁদের একজন হলেন কেশবচন্দ্র সেনের পিতামহ দেওয়ান রামকমল সেন। তিনিই উদ্যোগী হয়ে হিন্দু কলেজ থেকে ডিরোজিওকে সরাবার প্রস্তাব করেন। কলেজের হিন্দু অধ্যক্ষরা ডিরোজিওর নামে তিনটি অপবাদ এনেছিলেন। প্রথম হল–ঈশ্বরের অস্তিত্বে অবিশ্বাস, দ্বিতীয়টি, পিতা মাতার প্রতি অবহেলা করতে ছাত্রদের শিক্ষা দেওয়া, তিন নম্বরটি খুবই সাংঘাতিক। ভ্রাতা। এবং ভগিনীর বিবাহ অনুমোদন করা। ডাক্তার উইলসন আগেভাগেই ডিরোজিওকে এই খবর দিলেন–তোমাকে ওরা অপসারিত করতে চাইছে। ডিরোজিওর আত্মসম্মান অত্যন্ত প্রবল। তিনি কারও পরোয়া করেন না। তাঁর জীবনে প্রতিফলিত করতে চাইছেন উচ্চ একটি আদর্শ। ১৮৩১ খ্রিস্টাব্দ, ২০ এপ্রিল, একটি চিঠিতে ডিরোজিও নিজেই পদত্যাগ করলেন। তিনটি অপবাদ অস্বীকার করে উইলসনকেও একটি চিঠি লিখেছিলেন। ডিরোজিওর পদত্যাগে তাঁর ছাত্ররা বজ্রাহত। তাঁরা এই অনন্য শিক্ষকের, তাঁদের প্রাণের মানুষটির আরও কাছে সরে এলেন। এরপর তিনি যতদিন বেঁচেছিলেন, এই ছাত্রগোষ্ঠী নিয়মিত তাঁর কাছে যেতেন, তাঁর উপদেশ অনুসারেই জীবন গঠনের চেষ্টা করতেন। ১৮৩১ সাল, ডিরোজিওর জীবনের একটি ঘনায়মান কাল। ২৩ ডিসেম্বর মাত্র তেইশ বছর বয়সে ওলাওঠা রোগে পৃথিবী ছেড়ে তিনি চলে গেলেন। অসুস্থ অবস্থায় যাঁরা প্রাণ দিয়ে সেবা করেছিলেন তাঁদের একজন হলেন দক্ষিণারঞ্জন। ডিরোজিও শূন্য কলকাতা। দক্ষিণারঞ্জন এই সময়ে অতি উচ্চভাবে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন। ধনী কিন্তু ভীষণ অমায়িক, পরোপকারী ও বন্ধুবৎসল। একটি উজ্জ্বল জ্যোতিষ্ক যেন। এই চরিত্রের পরিচয় ছড়িয়ে আছে তাঁর শৈশব জীবনের কয়েকটি ঘটনায়। একটি হল– দক্ষিণারঞ্জনের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন তারাচাঁদ চক্রবর্তী। তিনি একবার ব্যবসায় প্রচুর টাকা লোকসান করলেন। প্রচুর ঋণ। দক্ষিণারঞ্জন তখন কৈশোর অতিক্রম করতে চলেছেন। তাঁর কানে এল এই সংবাদ। সঙ্গে সঙ্গে নাম প্রকাশ না করে বন্ধুকে এক হাজার টাকা পাঠিয়ে দিলেন। বহুদিন পরে তারাচাঁদ যখন তাঁর উপকারীর নাম জানতে পারলেন তখন ঋণ স্বীকার করে ওই টাকাটি শোধ দেওয়ার ব্যবস্থা নিলেন। যুবক দক্ষিণারঞ্জন শুনলেন, হেয়ার সাহেব অর্থের প্রয়োজনে অত্যন্ত বিব্রত। সমাজসংস্কারে তিনি প্রায় নিঃস্ব। দক্ষিণারঞ্জন তাঁকে। অবিলম্বে ষাট হাজার টাকা ধার দিলেন। হেয়ার সাহেব যখন দেখলেন শোধ করার কোনও ক্ষমতাই তাঁর নেই অথচ এই প্রবল অস্বস্তি। দক্ষিণারঞ্জন তখন বললেন, ঠিক আছে, আপনি যা ভালো বোঝেন তাই করুন। হেয়ার সাহেব এক খণ্ড জমি দক্ষিণারঞ্জনকে লিখে দিলেন। যার মূল্য মাত্র আট হাজার টাকা। দক্ষিণারঞ্জন বললেন, সব শোধ। তৃতীয় ঘটনাটি আরও জটিল। এই ঘটনার নায়ক দক্ষিণারঞ্জনের বন্ধু কৃষ্ণমোহন। ডিরোজিওর শিক্ষায় তিনি কিছুটা বেসামাল। কৃষ্ণমোহনের বাড়ির উত্তর দিকের একটি বাড়িতে থাকতেন ভৈরবচন্দ্র ও শম্ভুচন্দ্র চক্রবর্তী। নিষ্ঠাবান ব্রাহ্মণ। একদিন কৃষ্ণমোহন যখন বাড়িতে নেই সেই সময় তাঁর। কয়েকজন বন্ধু এসে হাজির। যথারীতি বৈঠকখানায় বসে তাঁরা সমাজসংস্কার বিষয়ে আলোচনা করতে করতে ভীষণ উত্তেজিত হয়ে উঠলেন। একজন চলে গেলেন মুসলমানের দোকানে। সেখান থেকে গোমাংসের তৈরি খাদ্য নিয়ে এলেন। কৃষ্ণমোহন তখন নেই। ঘরে বসে খাওয়া হল। এরপর উচ্ছিষ্ট অংশ প্রতিবেশী চক্রবর্তীদের বাড়ির দিকে ছুঁড়তে ছুঁড়তে চিৎকার করতে লাগলেন–ওই গো হাড়, ওই গো মাংস। শম্ভুবাবু তখন বাড়িতে ছিলেন। ভৈরববাবু ছিলেন না। শম্ভুবাবু প্রতিবাদ করলেন। কাজ হল না। তখন তিনি কয়েকজন প্রতিবেশীকে নিয়ে মার মার করে তেড়ে এলেন। যুবক দল ঊর্ধ্বশ্বাসে পালিয়ে গেলেন। কৃষ্ণমোহনের দাদা ভুবনমোহন বাড়িতে আসা মাত্রই প্রতিবেশীদের নালিশ শুনলেন। সঙ্গে সঙ্গে তিনি হুকুম দিলেন, কৃষ্ণমোহন এই বাড়িতে যেন আর না ঢোকে। প্রতিবেশীরা বলেছেন, কৃষ্ণমোহনকে না তাড়ালে তাঁরা বাড়ি ভেঙে দেবেন। ভাইকে তাড়াতে বাধ্য হলেন ভুবনমোহন। কৃষ্ণমোহন এসবের কিছুই জানেন না। বাড়ি ফেরা মাত্রই শুনলেন, এই বাড়িতে তাঁর কোনও স্থান নেই। কৃষ্ণমোহন যে ছিলেন না, তিনি কিছুই জানেন না–এসব কথা বলার প্রয়োজন বোধ করলেন না। তিনি নিঃশব্দে চিরবিদায় নিলেন।
পথে নামা মাত্রই উন্মত্ত হিন্দু প্রতিবেশীরা তাঁকে মারার জন্য এগিয়ে এলেন। কেউ কেউ বললেন, ব্যাটাকে শেষ করে দাও। কোনওক্রমে রেহাই পেলেও তিনি জানেন না কোথায় আশ্রয়। তাঁর কোনও হিন্দু আত্মীয়স্বজন দরজা খুলে দিলেন না। পাশে এসে দাঁড়ালেন দক্ষিণারঞ্জন। আশ্রয় দিলেন নিজের বাড়িতে। এই আগুনে ঘৃতাহুতি পড়ল। The persecuted নামে পাঁচ অঙ্কের একটি নাটক লিখে ছাপিয়ে চতুর্দিকে বিতরণ করলেন। কৃষ্ণমোহন। নাটকে আক্রমণের লক্ষ্য হিন্দুদের ধর্ম, আচার, আচরণ, ব্যবহার। ডাক্তার ডফ আসরে নামলেন। ইংরেজি প্রবাদ আছে Strike the iron while it is hot কৃষ্ণমোহনকে বোঝাতে লাগলেন তোমার হিন্দুধর্ম পৃথিবীর একটি নিকৃষ্ট ধর্ম, সে তো দেখতেই পেলে। দক্ষিণারঞ্জন না থাকলে কোন হিন্দু তোমাকে আশ্রয় দিতেন? পৃথিবীর সেরা ধর্ম খ্রিস্টধর্ম। শহরে ইতিমধ্যে রাষ্ট্র হয়ে গেছে কৃষ্ণমোহন ও তার প্রাণের বন্ধু দক্ষিণারঞ্জন আর কয়েকদিনের মধ্যে খ্রিস্টধর্ম গ্রহণ করবে। কৃষ্ণমোহনের প্রচুর প্ররোচনা দক্ষিণারঞ্জনকে টলাতে পারল না। তিনি ডফের ফাঁদে পা দিলেন না। তাঁর নিজস্ব একটা অহংকার ছিল। তিনি হিন্দু–এই গর্ব তাঁকে পরিচালিত করত। তাঁর পিতার বংশ, তাঁর মাতামহের বংশ কত বড়।
কৃষ্ণমোহন দক্ষিণারঞ্জনের বাড়িতে আশ্রিত। বাজারে প্রবল গুজব। দক্ষিণারঞ্জনের নিষ্ঠাবান পিতা পূজা, আহ্নিক শেষ করে বাইরের বাটিতে আসছেন। এমন সময় কেউ একজন এসে বললেন, দক্ষিণারঞ্জনের হয়ে গেল। সবে ঠাকুরঘর থেকে পুজো শেষ করে বৈঠকখানায়। এসেছেন, এমন সময় এই সংবাদ। দেখলেন কৃষ্ণমোহন সামনে, দক্ষিণারঞ্জন সেইসময়। বাড়িতে ছিলেন না। পা থেকে খড়ম খুলে তিনি কৃষ্ণমোহনকে ছুঁড়ে মারলেন। শুধু তাই নয়, তিরস্কার করলেন, কিছু অশালীন কথাও বললেন। বাইরে দরজার দিকে আঙুল তুলে বললেন, এখনই বেরিয়ে যাও। অপমানিত কৃষ্ণমোহন সঙ্গে সঙ্গে রাস্তায় নামলেন। ইতিমধ্যে দক্ষিণারঞ্জন ফিরে এসেছেন। শুনলেন, বন্ধু কৃষ্ণমোহনকে যা তা বলে বাবা দূর করে দিয়েছেন, এমনকী খড়ম ছুঁড়ে মেরেছেন। মর্মাহত দক্ষিণারঞ্জন সঙ্গে সঙ্গে গৃহত্যাগ করলেন। তিনি অবশ্য পরে শান্ত হয়ে ফিরে এলেন। পিতার প্রতি তাঁর অগাধ ভক্তি ছিল। শান্ত জগন্মোহন, পড়ুয়া জগন্মোহন যদিও কিছু করতেন না কিন্তু এই রাজগৃহের নানা কোলাহলের মধ্যে তাঁকে থাকতে হত। তার ওপর সমাজের এই বিক্ষিপ্ত অবস্থা। তিনি নিজেই গৃহত্যাগ করে চলে গেলেন কাশীতে। আর ফেরেননি। সেইখানেই তাঁর জীবনাবসান হয়। কাশীতে থাকাকালে দক্ষিণারঞ্জন প্রায়ই বাবার কাছে যেতেন। কিছুদিন কাটিয়ে ফিরে আসতেন। কলকাতায়।
ইংরেজরা বেশ জাঁকিয়ে বসেছেন। ১৮৩৫ সাল। স্যার চার্লস মেটকাফ, পরে লর্ড হয়েছিলেন। তিনি ভারতীয়দের ফ্রিডম অফ প্রেস অনুমোদন করলেন। এটি একটি বিরাট প্রাপ্তি। সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা। তিনি বললেন, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এলে, মানুষ সোচ্চারে তার মনের কথা বলবে। এতে তাঁর জন্মগত অধিকার। কোনও সরকার তা কেড়ে নিতে পারে না। জ্ঞানান্বেষণ-এর সম্পাদক দক্ষিণারঞ্জন মুদ্রাযন্ত্রের স্বাধীনতার কথা প্রায়ই ভাবতেন। কলকাতার বহু ইংরেজি ও দেশীয় ভাষার সংবাদপত্রের সম্পাদকগণ এবং বিশিষ্ট ব্যক্তিরা টাউন হলে সমবেত হয়ে মেটকাফকে অসংখ্য ধন্যবাদ দিলেন। একটি অভিনন্দনপত্র প্রদান করলেন। সভায় দক্ষিণারঞ্জন একটি হৃদয়গ্রাহী বক্তৃতা দিলেন। লন্ডনের Alexanders Magazine-এ একটি চিঠি প্রকাশিত হল। সেই চিঠিতে ছিল এই সভার কার্য বিবরণী। দক্ষিণারঞ্জনের বক্তৃতাটিও প্রকাশিত হয়েছিল। বক্তৃতার এক জায়গায় তিনি বলেছিলেন, Sir Charles Metcalfe certainly deserves all the thanks that we are able to bestow on him, and I concur with Mr. Turton, that the liberty we require is not limited but absolute liberty under responsibility. Let the offender be amenable to the Law, and if he deserve punishment, a court of justice is the tribunal to inflict it. I am sorry that we have some cause of complaints against Lord William Bentinck, for not having passed the proposal law. It was his duty according to his oath, if he thought the present law good, to enforce it, if not, to repeal it. The proposal law is well calculated to promote the benefit of the country; for no country so much needs a free press as that whose Government is despotic.
ডিরোজিও স্থাপন করেছিলেন, অ্যাকাডেমিক অ্যাসোসিয়েশন। তাঁর মৃত্যুর পর সেটি অবলুপ্ত হল। এই ধরনের সংস্থার প্রয়োজনীয়তা সমাজের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে খুবই আকাঙ্ক্ষিত। ডিরোজিওর বিশিষ্ট শিষ্যগণতারিণীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়, রামগোপাল ঘোষ, রামতনু লাহিড়ী, তারাচাঁদ চক্রবর্তী, রামকৃষ্ণ দে–এই পাঁচজন ১৮৩৮ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি একটি অনুষ্ঠানপত্র প্রকাশ করলেন। স্বাক্ষরকারীদের প্রস্তাব সবরকমের জ্ঞান লাভ করার জন্য দেশের বিভিন্ন অবস্থার তথ্য সংগ্রহের জন্য, প্রীতি বজায় রাখার জন্য স্থাপিত হল সোসাইটি ফর দি অ্যাকুইজিশন অফ জেনারেল নলেজ বা সাধারণ জ্ঞানোপার্জিকা সভা। স্থাপিত হওয়ার প্রয়োজন আছে। সংস্কৃত কলেজের সম্পাদক রামকমল সেনের অনুমতি নিয়ে ১২ মার্চ কলেজের সভাকক্ষে সকলে সমবেত হলেন, ১৬ মে থেকে সভার কাজ শুরু হয়ে গেল। অধিবেশনের জন্য নির্দিষ্ট হল প্রতিমাসের দ্বিতীয় বুধবার। সভ্যরা তাঁদের ইচ্ছামতো চাঁদা। দিতে পারেন। কোনও বাধ্যবাধকতা নেই। যাঁদের যাঁদের প্রবন্ধ পাঠ করতে বলা হবে তাঁরা যদি নির্দেশ পালন না করেন, সন্তোষজনক কারণ দেখাতে না পারেন তাহলে অর্থদণ্ড হবে। এই সভার পরিদর্শক হলেন ডেভিড হেয়ার। সম্পাদক হলেন দুই বিখ্যাত ব্যক্তি রামতনু। লাহিড়ী ও প্যারীচাঁদ মিত্র। দক্ষিণারঞ্জনের নাম কোনওভাবেই যুক্ত হল না। কারণ সেই। সময়ে তিনি কলকাতায় ছিলেন না। ফিরে আসার পর তিনি যোগদান করেন। পরে হয়ে। উঠলেন একজন প্রধান সভ্য। এইটাই স্বাভাবিক।
এই সময় দেশের রাজনীতিতে একটি চাঞ্চল্য আসছে। ভারতীয়রা ক্রমশই সচেতন হচ্ছেন। পরবর্তীকালে যা পরিণত হয় স্বাধীনতা আন্দোলনে। ১৮২৪ সালের ডিসেম্বর মাসে একটি ঘটনা ঘটল। প্রিন্স দ্বারকানাথ ইংল্যান্ড থেকে ফেরার সময় সঙ্গে নিয়ে এলেন বিখ্যাত বাগ্মী ও ভারত হিতৈষী, মহাত্মা জর্জ টমসনকে। জন্মেছিলেন দরিদ্র পরিবারে। নিজের অধ্যবসায় ও চেষ্টায় লেখাপড়া শিখলেন। ক্রমে হয়ে উঠলেন বিশ্বপ্রেমিক মহাপুরুষ। ইংল্যান্ড ও। আমেরিকার ক্রীতদাসপ্রথার বিরুদ্ধে শক্তিশালী আন্দোলন তিনি গড়ে তোলেন। দেশের দরিদ্র ও অত্যাচারিত জনগণের পাশে দাঁড়িয়ে ন্যায্য অধিকার আদায়ের সংগ্রাম শুরু করলেন। রাজা রামমোহন রায়ের বন্ধু রেভারেন্ড উইলিয়াম অ্যাডাম ইংল্যান্ডে স্থাপন করেছিলেন ব্রিটিশ ইন্ডিয়া সোসাইটি। টমসন তার প্রধান সভ্য ছিলেন।
ভারতবর্ষে স্বদেশ ভাবনার সূত্রপাত হয়েছে। পাশ্চাত্য থেকে নানা ধরনের ভাব আসছে। সেদেশের মণীষীরা অন্য স্তরে চিন্তা শুরু করেছেন। যুদ্ধ-বিগ্রহ, রাজ্য দখল, কলোনি স্থাপন, হাজার হাজার মানুষকে দাসত্বের শৃঙ্খল পরিয়ে নিজেদের সুখবৃদ্ধি, মানুষের অন্তরে অধিষ্ঠিত দেবতাকে অস্বীকার করে পশুর মতো দেখা–এই একপেশে পৃথিবীর সমর্থন করছেন না। চিন্তাবিদরা। ভারতবর্ষে সেইসব ভাব ঢুকছে। বিভিন্ন দিকে একাধিক ভারতীয় ভারতমুক্তির কথা ভাবতে শুরু করেছেন। ভারত পরিক্রমা শেষ করে আর কয়েকদিন পরেই স্বামী বিবেকানন্দ যাবেন আমেরিকায়, ভারতের মহান আদর্শ, সভ্যতা ও আধ্যাত্মিকতার কথা মানুষকে জানাতে। তিনি পরদা ছিঁড়ে দেবেন। কয়েকবছর পরেই আসছেন সিস্টার নিবেদিতা, জোড়াসাঁকোয় রবীন্দ্রনাথ, মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ, ঋষি বঙ্কিম, শ্রীঅরবিন্দ, এই পটভূমিতে একে একে আত্মপ্রকাশ করবেন। সকলেরই উদ্দেশ্য ভারতের অতীত গৌরব ফিরিয়ে আনা। রামমোহনের সুহৃদ দ্বারকানাথ কিছু কম যেতেন না। তিনিই নিয়ে এলেন চিন্তাবিদ টমসনকে। স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাস আলোচনা করলে দেখা যাবে, বিদেশিদের ভূমিকা কিছু কম ছিল না। এই টমসন হলেন আদি ইন্ডোলজিস্ট। ভারতবর্ষ সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করা তাঁর উদ্দেশ্য হলেও এদেশের শিক্ষিত মানুষকে রাজনীতি সচেতন করার জন্য যথোচিত শিক্ষাও দিতে চান। ডিরোজিওর রেখে যাওয়া যুবক দলকে সব বিষয়েই অগ্রগণ্য মনে করা হত। তাঁরা অনেকটা এগিয়ে ভাবতে শিখেছেন। তাঁদের গুরুর শিক্ষা। ব্রিটিশ পার্লামেন্টের প্রভাবশালী সদস্য, ভারতবর্ষের প্রতি সহানুভূতিশীল টমসন। কলকাতায় এসেছেন। অকারণে আসেননি। শিক্ষিত তরুণ দলের সামনে একের পর এক অসাধারণ বক্তৃতার মাধ্যমে তাঁদের চনমনে করে তুলেছেন। শুধু ধর্ম, ধর্ম, ধর্ম ছাড়াও জাগরণের অন্য অনেক মার্গ আছে। সর্বাধিক প্রভাবিত হলেন, দক্ষিণারঞ্জন ও রামগোপাল ঘোষ। পরবর্তীকালে জনৈক গবেষক বলেছিলেন, ডিরোজিওর শিষ্যদের মধ্যে দক্ষিণারঞ্জনের মতো ব্রিলিয়ান্ট পলিটিশিয়ান আর কেউ ছিলেন না। এমনকী পলিটিক্যাল পাদরি কৃষ্ণমোহন বন্দ্যোপাধ্যায় কিংবা ভারতবর্ষের ডিমস্থিনিস রামগোপাল ঘোষও নন। ফ্রেন্ড অফ ইন্ডিয়ার সম্পাদক মার্শম্যান তারাচাঁদ চক্রবর্তী প্রমুখ নব্য সংস্কারকদের। Chuckerburty faction নাম দিয়েছিলেন। জ্ঞানোপার্জিকা সভার অধিবেশনটি হিন্দু কলেজের একটি ঘরে হচ্ছিল। সেইসময় হিন্দু কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেন ক্যাপ্টেন ডেভিড লেস্টার রিচার্ডসন। তিনি ছিলেন রক্ষণশীল টোরি দলভুক্ত। তিনি এই Chuckeburty faction-এর নব্য সংস্কার আন্দোলন ভালো চোখে দেখছিলেন না। এই সভার এক অধিবেশনে দক্ষিণারঞ্জন গবেষণামূলক একটি প্রবন্ধ পাঠ করলেন। বিষয়–Present condition of East India Companys Courts of judicature and police under the Bengal Presidency। এই বক্তৃতায় দক্ষিণারঞ্জন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসননীতির বেপরোয়া কিন্তু নিরপেক্ষ সমালোচনা করলেন। সভায় রিচার্ডসনও ছিলেন। বক্তৃতা শেষ হওয়ার পর তিনি চিৎকার করে বললেন, I cannot convert the college into aden of treason। হিন্দু কলেজকে আমি কোনওভাবেই ষড়যন্ত্রকারীদের ডেরায় পরিণত করতে চাই না। সভার সদস্যরা রিচার্ডসনের এই কথায় অপমানিত বোধ করে মুহূর্তে সভা ত্যাগ করলেন। সভা করার জায়গার অভাব হল না। প্রথম শ্রীকৃষ্ণ সিংহের। বাগানবাড়িতে, তারপর বিখ্যাত ডাক্তার ডি গুপ্ত মহাশয়ের চেম্বারের দোতলায় ফৌজদারি বালাখানায়। দক্ষিণারঞ্জনের সেদিনের বক্তৃতা ইংরেজি সংবাদপত্রে ঝড় তুলেছিল। স্বাভাবিক! ইংরেজরা কেন সহ্য করবে। তাঁরা অত্যন্ত অভদ্র ভাষায় দক্ষিণারঞ্জনকে আক্রমণ করলেন। একজন সম্পাদক জেমস হিউম দক্ষিণারঞ্জনকে বললেন–Duck। কিন্তু বেঙ্গল হরকরা বক্তৃতাটি দুটি কিস্তিতে পুরোটাই ছাপল। সঙ্গে উচ্চ প্রশংসা, তারিখ, ১৮৪৩, ২ ও ৩ মার্চ।
হিন্দু কলেজ থেকে বিতাড়িত হলেও চক্রবর্তী মণ্ডলের উৎসাহে ভাটা পড়ল না বরং আরও উদগ্র হল। ফৌজদারি বালাখানায় টমসন একের পর এক জ্বালামুখী বক্তৃতার মাধ্যমে ভারতে স্বাধীনতা আন্দোলনের জমি তৈরি করে দিচ্ছেন। ফ্রেন্ড অফ ইন্ডিয়ার সম্পাদক মার্শম্যান লিখলেন, এখন দুদিকে কামানের গর্জন–পশ্চিম ভারতে বালাহিসারে আর কলকাতার ফৌজদারি বালাখানায়। সকলেই স্বীকার করবেন, আমাদের দেশের রাজনীতিক আন্দোলনের জন্মদাতা জর্জ টমসন। দিগম্বর মিত্রের ইংরাজি জীবনী লিখেছিলেন ভোলানাথ চন্দ্র। এক জায়গায় তিনি লিখছেন, ডেভিড হেয়ার যে ক্ষেত্র প্রস্তুত করে দিয়েছিলেন, জর্জ টমসন সেই জমিতে রাজনীতিক শিক্ষার বীজ বপন করলেন। যাঁরা স্বদেশি তাঁরা নাম রেখেছিলেন অবমোচনকারী টমসন। আমাদের দেশে তিনি রাজনীতির জন্মদাতা বলেই ধন্যবাদ ভাজন।
সাধারণ জ্ঞানোপার্জিকা সভা রাজনীতির আখড়া ছিল না কিন্তু রাজনীতির একটি অস্ত্র মাত্র। আসল উদ্দেশ্য দেশের প্রকৃত উন্নতি। আর সেই কাজের জন্য রাজনীতিতে রূপান্তর আনা প্রয়োজন। অতএব আলাদা একটি রাজনীতিক সভার প্রতিষ্ঠার প্রয়োজন দেখা দিয়েছে। ১৮৪৩ সালের ২০ এপ্রিল টমসনের সভাপতিত্বে বালাখানায় একটি সভা হল। সেই সভায় বলা হল, এইরকম একটি সভার প্রয়োজনের কথা। সদস্যরা সকলেই একমত হলেন। ওই দিনই জ্ঞানোপার্জিকা সভার অবসান ঘটল। প্রতিষ্ঠিত হল ব্রিটিশ ইন্ডিয়া সোসাইটি।। যার মূল লক্ষ্য হল রাজনীতি। দক্ষিণারঞ্জন কার্যনির্বাহক সমিতির একজন উৎসাহী সদস্য হয়ে উঠলেন। সভাপতি ছিলেন জর্জ টমসন। সম্পাদক প্যারীচাঁদ মিত্র, কোষাধ্যক্ষ রামগোপাল ঘোষ। সদস্যদের মধ্যে অনেক ইংরেজ ছিলেন, যেমন–জি এফ রেমফ্রি, জি টি এফ স্পিড, এম ক্রো, অন্যান্য সবাই বাঙালি। একটি মুখপত্রও প্রকাশিত হল–বেঙ্গল স্পেক্টেটর। ১৮৪২ সালের এপ্রিল মাস থেকে মাসিকপত্র রূপে প্রকাশিত হতে লাগল। প্রবর্তক। রামগোপাল ঘোষ, প্রধান সম্পাদক প্যারীচাঁদ মিত্র। পত্রিকাটি বাইলিঙ্গুয়াল। ইংরেজি ও বাংলা তিনমাস পরে হল পাক্ষিক। কয়েকমাস পরেই হল সাপ্তাহিক। দক্ষিণারঞ্জন সম্পাদকীয় স্তম্ভে অনেক প্রবন্ধ লিখেছেন। কিছুকাল প্রধান সম্পাদকও ছিলেন। এই কাগজটির প্রচার ও প্রতিপত্তি হয়ে উঠল অসামান্য। জর্জ টমসন এই পত্রিকাটি প্রকাশের জন্য প্রচুর টাকা দিয়েছিলেন। এত প্রচার সত্বেও হিসাব করতে বসে দেখা গেল এক বছরে প্রায় এক হাজার টাকা লোকসান হয়েছে। শেষ সংখ্যাটি প্রকাশিত হল ১৮৪৩ সালের নভেম্বর মাসে। তারপরে উঠে গেল।
কলকাতায় সেকালে ধনী বড়লোকের ছেলেরা প্রভূত বিষয় সম্পত্তির অধিকারী হয়ে দুহাতে টাকা ওড়াতে ওড়াতে একসময় পথে বসত। এদের বলা হত কলকাতার বাবু। কোঁচানো ধুতি, গিলে করা পাঞ্জাবি, কানে আতর, দু-ঘোড়ায় টানা ফিটন গাড়ি। রাত কাটত বাইজি মহল্লায়। দক্ষিণারঞ্জন অল্পবয়সেই ঠাকুরবাড়ির প্রচুর সম্পত্তি, অর্থ উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছিলেন। কিন্তু তিনি ছিলেন শিক্ষিত। ডিরোজিওর ইয়ং বেঙ্গলের একজন। তাঁর চরিত্র সম্পূর্ণ অন্যখাতে প্রবাহিত। নিজের ভোগসুখ নয়, দেশের মানুষকে শিক্ষার পথে, জাগরণের পথে, স্বদেশ চেতনার পথে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে ব্রতী হয়েছিলেন। মনে প্রাণে তিনি ছিলেন। স্বাধীন। কোনও মত ও পথের দাসত্ব করা তাঁর স্বভাবে ছিল না। একটি ঘটনা তাঁর এই স্বভাবের পরিচয় বহন করছে। এখন যেখানে রাইটার্স বিল্ডিং ঠিক সেই জায়গার গোপীমোহন ঠাকুরের বিশাল একটি বাড়ি ছিল। সেকালে যেসব সাহেব নবীন সিভিলিয়ান হয়ে এদেশে আসতেন তাঁরা এই বাড়িটি ভাড়া নিয়ে বসবাস করতেন। ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের অধ্যাপকরা তাঁদের দেশীয় ভাষা, ইতিহাস, সামাজিক প্রথা ইত্যাদি শেখাতে আসতেন। এই দেশের কাজের উপযোগী হলে তাঁদের পোস্টিংহত বিভিন্ন পদে। আশপাশে দেশীয় মানুষের ঘরবাড়িও ছিল। সে সময় সকলের বাড়িতে গরু থাকত। একদিন একটি গাভি কোনওভাবে এই সিভিলিয়ানদের বসতবাটিতে ঢুকে পড়েছিল। একটি কমবয়সি সাহেব ছোঁকরা বাগানের গেট বন্ধ করে তার পোষা কয়েকটি কুকুরকে লেলিয়ে দিল। কুকুরের দল সেই গাভিটিকে আক্রমণ করে ছোটাছুটি করাতে লাগল। তার আর্তচিৎকারে ভাবী সিভিলিয়ানের খুব আনন্দ। গাভিটি প্রাণভয়ে ছুটছে আর সাহেবের পোষা কুকুররা তাকে ক্ষতবিক্ষত করছে। এইভাবে আর কিছুক্ষণ চললে গোরুটি প্রাণ হারাত। হিন্দু প্রতিবেশীরা আর্তনাদ শুনে ছুটে এসেছেন, কিন্তু কীভাবে গোরুটির প্রাণ বাঁচাবেন তা ভেবে পাচ্ছেন না। পরিস্থিতি যখন চরমে উঠেছে ঠিক সেইসময় দেখা গেল একটি পালকি আসছে। পালকিটি ওই বাড়িটির সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় এই গোলযোগ দেখে থেমে পড়ল। পালকিতে বসেছিলেন স্বয়ং গোপীমোহন ঠাকুর। তিনি নেমে এসে সিংহদরজা ভেঙে বাড়িতে প্রবেশ করলেন। হাতের ছড়ি দিয়ে ওই সাহেব যুবকটিকে উত্তমমধ্যম প্রহার। একবারও ভাবলেন না সাদা চামড়ার গায়ে হাত তুললে কী হতে পারে! এই গোপীমোহনের স্পিরিট দক্ষিণারঞ্জনের শরীরে প্রবেশ করেছিল। বেশ কিছুদিন পরে এই সিভিলিয়ানটি সদর আদালতের বিচারপতি হলেন। দক্ষিণারঞ্জনও তখন সদর আদালতের একজন আইনজীবী। একদিন ওই বিচারপতির এজলাসে একটি মামলায় দক্ষিণারঞ্জন উপস্থিত। তিনি তাঁর মক্কেলের হয়ে সওয়াল করছেন, প্রয়োজনীয় বক্তৃতা দিচ্ছেন। বিচারপতি দক্ষিণারঞ্জনকে উদ্দেশ্য করে কয়েকটি রূঢ় মন্তব্য করলেন। সেদিনের কথা, সেই প্রহারের কথা তিনি ভোলেননি। দক্ষিণারঞ্জন কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বললেন, আপনি এজলাসে বসে আছেন, বিচারকের আসনে। আপনার এই মন্তব্যের উত্তর আমি এখানে দিতে পারব না। তবে একসময় আপনি আদালত ছেড়ে বাইরে আসবেন তখন। এর উপযুক্ত জবাব পাবেন। দক্ষিণারঞ্জন এই কথা বলে কোর্টরুমের বাইরে চলে গেলেন। বিচারক এজলাস শেষ হওয়ার পর রাস্তায় বেরতে ভয় পাচ্ছেন। দক্ষিণারঞ্জন যথোচিত জবাব দেওয়ার জন্য প্রস্তুত। জজ সাহেব এও জানেন দক্ষিণারঞ্জন গোপীমোহন ঠাকুরের পৌত্র। তখন তিনি দ্বারকানাথ ঠাকুরকে ডেকে দক্ষিণারঞ্জনকে শান্ত করার অনুরোধ জানালেন। দ্বারকানাথ আদালতের বাইরে এসে ক্ষিপ্ত দক্ষিণারঞ্জনকে অনেক বুঝিয়ে শান্ত করলেন। এই ছিল দক্ষিণারঞ্জনের স্পিরিট।
সেকালে দাস বাঙালির স্বভাবই ছিল সাহেব দেখলেই পায়ের কাছে হামাগুড়ি দেওয়া। পদলেহন করে নিজেদের অবস্থা ফেরানো। এই দাস মনোভাব থেকে মুক্তি পেতে একযুগ সময় লেগেছিল। দক্ষিণারঞ্জনের পর বাঙালি সমাজ যে সন্ন্যাসীর সিংহগর্জন শুনেছিলেন তাঁর নাম স্বামী বিবেকানন্দ। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরও গর্জনকারী এক বাঙালি।