Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।

জনৈক সরলমতি ভদ্রলোকের কথা মনে পড়ছে। এক সামাজিক অনুষ্ঠানে তিনি একটা সুভেনির কিনেছিলেন। প্রত্যেকটি সুভেনিরে একটি করে ক্রমিক নম্বর দেওয়া ছিল। অনুষ্ঠানের শেষে সেই নম্বর নিয়ে লটারি ওঠে। সৌভাগ্যক্রমে ওই লটারিতে এই ভদ্রলোকের নম্বরই প্রথম উঠল। আর প্রথম পুরস্কার খুবই আকর্ষণীয়। একটি রাউন্ড দি ওয়ার্লড বিমান যাত্রার টিকিট, সারা বিশ্ব চক্রাকারে ঘুরে আসার ফ্রি পাস।

পুরস্কার পাওয়ার পর ভদ্রলোককে মঞ্চে ডাকা হল। তাঁকে অনুরোধ করা হল মাইকে বলতে যে এই পুরস্কার পেয়ে তাঁর কেমন লাগছে। তিনি একটু ইতস্তত করে, তারপর একটু থেমে বললেন, ‘টিকিটটা পেয়ে ভালই লাগছে, তবে অন্য কোথাও যেতে পারলে আরও ভাল হত।’

অন্য কোথাও মানে কী? ভদ্রলোক মনে মনে চাঁদ কি মঙ্গলগ্রহে যাওয়ার কথা ভাবছিলেন! রাউন্ড দি ওয়ার্লড টিকিটে কোথায় যাওয়া যায় না, প্লেনে চড়ে যে কোনও শহরে গেলেই হয়।

তা হয়তো হয়। কিন্তু যেখানে নদীর তীরে সাদা বালুচরের মধ্যে কাশবন ধূ ধূ করছে, আকাশে উড়ে বেড়াচ্ছে গাংচিল তারই একপাশে প্রাচীন কদম গাছের নীচে নদীর ভাঙা ঘাট থেকে উঠে গেছে কাঁচা রাস্তা, দু’পাশের সবুজ মাঠের মধ্যে দিয়ে চলে গেছে সেই রাস্তা গ্রামে, গ্রামান্তরে। কোনও এয়ার টিকিট সেই হারিয়ে যাওয়া পৃথিবীতে আমাদের আর কখনও পৌঁছে দিতে পারবে না।

দূরে ঢাকের শব্দ। কাশবনে জোনাকি জ্বলছে আর নিবছে। আকাশ চাঁদ আর মেঘের ছায়া ছায়া খেলা। গহনার নৌকো এসে লাগল ঘাটে। লণ্ঠন হাতে বাড়ির লোকেরা পারে দাঁড়িয়ে আছে; চিৎকার করে ডাকছে, ‘রমেশ, রমেশ এলে নাকি নৌকায়?’

শারদ ভ্রমণের সেই অনাবিল ঘরে ফেরার পৃথিবী থেকে আমরা বহুদিন নির্বাসিত হয়েছি।

সেই হারিয়ে যাওয়া, হারিয়ে ফেলা ভূমণ্ডলের দুঃখের গল্প থাক, আমরা এখনকার কথায় আসি। এখনকার কথা মানে কয়েকমাস আগের কথা। দক্ষিণ ভারতের একটা পুরনো শহরে বেড়াতে গিয়েছিলাম। কাছেই একটা পাহাড়ের চূড়ায় একটা মন্দির। বহু প্রাচীন, এবং পরিত্যক্ত জরাজীর্ণ। তেমন জাঁকজমক নেই। তবে এখনও দু’বেলা পূজো হয়। ভোগ নৈবেদ্য যৎকিঞ্চিৎ হয়। কিছু কিছ তীর্থযাত্রী আসে।

মন্দির দেখতে গিয়ে চারদিক ঘুরে ফিরে যেমন হয় কৌতূহল আর কী, মন্দিরের সেবাইতের কাছে জানতে চাইলাম মন্দিরটার বয়স কত? ভদ্রলোক মোটামুটি ইংরেজি জানেন, তাই কথাবার্তা বলার সুবিধে বয়েছিল। তিনি আমার প্রশ্ন শুনে বললেন, ‘আজ্ঞে, তা বেশ বয়স হয়েছে, সাতশো। দেড় বছর বয়েস হল এই মন্দিরের।’

এই রকম সূক্ষ্ম হিসেব দেখে আমি অবশ্যই অবাক হলাম, জিজ্ঞাসা করলাম, ‘সাতশো দেড় বছর? এত চুলচেরা হিসেব করলেন কী করে?’ সেবাইত ভদ্রলোক বললেন, ‘দেড় বছর আগে এক আমেরিকান সাহেব এসেছিলেন, তিনি দেখেশুনে বলেছিলেন যে মন্দিরের বয়েস সাতশো বছর হবে। সেই সঙ্গে মধ্যের দেড় যোগ করে এখন হল সাতশো দেড় বছর।’

আমেরিকান সাহেবের কথাই যখন এল একবার আমেরিকা ঘুরে আসি। আমরা যাব ভূ-বিখ্যাত নায়াগ্রা জলপ্রপাতের ওখানে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক রাজ্যের আর কানাডার সীমান্তে।

একবার না কি একদল রাশিয়ান বিশ্বভ্রমণে বেরিয়ে ওই নায়াগ্রা প্রপাত দেখতে গিয়েছিলেন। অবিরাম, অফুরন্ত প্রবল জলকল্লোল উপর থেকে নীচে শতসহস্র ঐরাবতের মতো একসঙ্গে লাফিয়ে পড়ছে। এ দৃশ্য দেখে স্বভাবতই রাশিয়ানরা চমকিত হবেন তাই গাইড জিজ্ঞাসা করল, ‘কেমন দেখছেন? আপনাদের দেশে এ রকম কিছু আছে?’ প্রশ্ন শুনে রাশিয়ানরা বললেন, ‘তা নেই হয়তো, কিন্তু আমাদের মস্কো শহরে এমন জলের কলের মিস্ত্রি আছে যে এই লিক এক ঘণ্টার মধ্যে সারিয়ে দিতে পারে।’

নায়াগ্রা বিষয়ক আরেকটা গল্প আরও গোলমেলে। পূর্বদেশীয় এক শহর থেকে (কলকাতা নয়) জনৈক পর্যটক গিয়েছিলেন নায়াগ্রায়। তিনি যে শহর থেকে গিয়েছিলেন, সেখানে চুড়ান্ত অব্যবস্থা। আলো জল সব কিছুর টানাটানি, বিদ্যুতের বড় অভাব। তিনি নায়াগ্রা জলপ্রপাতে সেই বিপুল, উচ্ছল জলরাশি দেখে খুবই পুলকিত হলেন এবং অনেকক্ষণ দেখার পরে অবশেষে তাঁর সঙ্গীকে প্রশ্ন করলেন, ‘আচ্ছা, এটা কি রাতের বেলায় বন্ধ করে দেওয়া হয়, না কি রাতের বেলাও চালু থাকে?’ সঙ্গীটি মার্কিন দেশে বেশ কিছুকাল আছেন। তিনি বেশ ভেবে বললেন, ‘ঠিক বলতে পারছি না, খোঁজ নিয়ে দেখতে হবে।’

এঁরা নায়াগ্রা প্রপাত নিয়ে ভাবনাচিন্তা করতে থাকুন, ইত্যবসরে, এই পুজোর মরশুমে, আমরা কাছাকাছি একটা জংশন স্টেশনের প্ল্যাটফর্ম থেকে ঘুরে আসি।

দূরপাল্লার ট্রেনগুলো একটাও ঠিক সময়ে আসছে না, বাক্সবিছানা নিয়ে ক্লান্ত যাত্রীসাধারণ গাড়ির অপেক্ষায় প্ল্যাটফর্মে প্রতীক্ষা করছেন। অবশেষে তাঁরা অধীর হয়ে উঠলেন, স্টেশন মাস্টারের ঘরে প্রতিবাদ জানাতে গেলেন।

অনেক কথা কাটাকাটির পর একজন উত্তেজিত হয়ে স্টেশন মাস্টারের টেবিলে ঘুঁষি মেরে বললেন, ‘টাইম টেবল সব পুড়িয়ে ফেলুন। ট্রেন যদি ঠিক সময়ে না আসে তবে টাইম টেবল দিয়ে কী হবে?’

বিচক্ষণ স্টেশন মাস্টার মশায় মৃদু হেসে বললেন, ‘অত উত্তেজিত হবেন না। বিবেচন করে দেখুন, টাইম টেবল যদি সত্যি সত্যি না থাকত তা হলে কী করে ধরতে পারতেন, ট্রেন ঠিক সময়ে আসছে না দেরি করে আসছে!’

ঠিক সেই মুহূর্তে মেল ট্রেন হুসহুস করে স্টেশনে ঢুকে পড়ল। ঘর থেকে যাত্রীবৃন্দ দৌড়ে বেরিয়ে গেলেন ট্রেন ধরতে।

পুনশ্চঃ ভ্রমণকাহিনীর অবশেষে মেল ট্রেনের আসল গল্পটি বলি। কিংবা মনে করিয়ে দিই। কারণ গল্পটি অতি পুরনো, সবাই আগে শুনেছেন।

ব্যাপারটা আর কিছুই নয়। এক ভদ্রলোক হাওড়া স্টেশনে ঘণ্টার পর ঘন্টা সস্ত্রীক দাঁড়িয়ে আছেন। একের পর এক ট্রেন চলে যাচ্ছে, তিনি কোনওটাতেই উঠছেন না। এক রেলকর্মীর কেমন সন্দেহ হল। তিনি প্রশ্ন করলেন, ‘কোথায় যাবেন?’ ভদ্রলোক বললেন, ‘আজ্ঞে, আসানসোল।’ রেলকর্মী বললেন, ‘এইতো কালকা মেল ছাড়ছে। এতে উঠে যান।’ ভদ্রলোক বললেন, ‘সবই তো দেখছি মেল ট্রেন। কিন্তু আমি তো এতে যেতে পারব না। আমার সঙ্গে ফিমেল আছে।’ বলে পাশে দাঁড়ানো স্ত্রীর দিকে অঙ্গুলি নির্দেশ করলেন।

Pages: 1 2 3

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *