Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » ভো-কাট্টা || Rana Chatterjee

ভো-কাট্টা || Rana Chatterjee

ভো-কাট্টা

ঘুড়ি টা যেভাবে কেটে গিয়ে মাঝ আকাশে লাট খেতে খেতে যাচ্ছিল, মনে হচ্ছিল কোনো আনাড়ির হাতে লাটাই আর তার ওড়ানো ঘুড়িটা অনেক সুতো নিয়ে হটাৎ কুচ করে কেউ কেটে গেছে যেন! ভ্রমর হাপিত্যেশ করে হাঁ করে দেখছিল, যেন ঘুড়ি টা, ঘুড়ি নয়, ভরা যৌবনবতী, এ বাড়ির সবেধন নীলমনি একমাত্র বউ, তার প্রাণের দিদি টুসকি!

সদ্য ঘর খালি করে দুই কোলের শিশু কে আবির দার কোলে ছেড়ে দিয়ে কেমন মাঝ আকাশে প্রকৃতির কোলে, দোল খেতে খেতে চলে যাচ্ছে তার প্রাণের দিদি ! এই চলে যাওয়া যে কত বিষাদের তা এই বাড়ির প্রতিটি ইঁট কাঠ পাথরও জানে, জানে জামাইবাবু আবির দা।

কথাটা ভাবতেই জলে ভরা দু চোখ চলে গেল আবির দার দিকে! সে তখন, মিষ্টু আর সৃষ্টি দুই দেড় বছরের যমজ বোনঝি দুটোকে নিয়ে থম মেরে বসে, কেটে যাওয়া ঘুড়িটার দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে চেয়ে আছে! সব কি সুন্দর চলছিল একদম ছবির মতো।যেমন দিদি ছিল রূপে গুনে সাক্ষাৎ লক্ষী, স্বরস্বতী জামাইবাবু ও তেমনি। এ বলে আমায় দেখ এমন তুল্যমূল্য দুজনে। পাড়ার লোকেরা বলতো হর পার্বতী জুটি। এই সামনের পূজা এলে পাক্কা তিনটি বছর ঘুরবে দিদি আবির দার বিয়ে।

কত্ত ধুম ধাম করে ছিল সে বিয়ের রোশনাই ।দিদির বিয়েতে, বাবার প্রচুর ধার দেনা হয়ে গিয়েছিল। স্বচ্ছল পরিবারটা হটাৎ করে একদম নিঃস্ব, ফোপরা হয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে, আদরের বড়ো মেয়েকে বড় ঘরে বিয়ে দিতে।আসলে পরে ওদের বাড়িতে গেছিলো, দিদির শ্বাশুড়ি মায়ের গোপন আবদার।দেনাপাওনার পাহাড় মেটাতে, যেটা দিদিকে গোপন রাখা হয়েছিল পাছে এতো ভালো সম্বন্ধ কে, না করে দেয় তার আদরের ঠোঁটকাটা দিদি। কিন্তু এখানে তার কোনো প্রতিবাদ ই খাটল না!আর এটাই সারাজীবনের মতো এক দগদগে ঘা ভ্রমর ও তার মা বাবাদের।

বিয়ের দ্বিতীয় বছরেই কোল জুড়ে দুই ফুটফুটে যমজ কন্যা আসার পর থেকেই শ্বশুর বাড়ির পরিবেশ বিষিয়ে যেতে থাকে দিদির! এই নিয়ে অনেক কথা কাটাকাটি চলতো আবির দার সঙ্গে! দিদি এটাই বুঝিয়ে উঠতে পারতো না, সফটওয়ার ইঞ্জিনিয়ারের এতো বড়ো মেধাবী ছাত্র তার সর্বস্ব দিয়ে একমাত্র ভরসা অবলম্বন করা স্বামী আবির দা কে! ইংলিশে মাস্টারডিগ্রী করা ব্রিলিয়ান্ট পাখি পর্যন্ত বুঝিয়েছে জামাইবাবুকে, “কন্যা তো হয়েছে কি, এই তারাও তো দুই বোন, মা বাবা কে কোনোদিন ছেলের অভাব ই বুঝতে দেয় না, আর এই নিয়ে কোনো আক্ষেপও নেই” তবু যেন বাড়ির পরিবেশ টা বড্ড ভারী হয়ে গেছিলো!এই গতবছর বাচ্ছা দুটির তিন মাস হবার আগেই দিদিকে বাপের বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল শাশুড়ির অঙ্গুলিহেলনে! অনেক বুঝিয়ে মিটমাট করে এ বাড়িতে নিয়ে আসার পর থেকে পুত্র সন্তানের জন্য আবেগ উথলে ওঠে, তা নাহলে নাকি এই ঘর দোর সম্পত্তি সব বৃথা!

আর এই ভ্রান্ত ধারণা, পুরুষ সর্বস্ব এই পচে যাওয়া সমাজের চাহিদা মেটানোর খেসারত দিতে হলো তার মাত্র তেইশ বছরের দিদিকে! ডাক্তার কাকু বহুবার বলেছিলেন এই বাচ্ছা নেওয়াটা খুব রিস্কের, জটিল হয়ে দাঁড়িয়েছে শারীরিক পরিস্থিতি, তবুও সে কথায় কর্ণপাত করতে বয়েই গেছে নাতির মুখ দেখতে চাওয়া মানুষ গুলোর! তাতে যদি হার মানা হয়, মুখ পোড়ে পাছে মানুষ গুলোর, বৌমার ইচ্ছা অনিচ্ছার কাছে ! তাতে পরের বাড়ি মেয়ে শারীরিক কষ্ট, রিস্কের শিকার হলো তো বয়েই গেল!

আর হলোও তাই, মা বাচ্ছা উভয়েই চলে গেল, তাদের ওপর নিজেদের জেদ আর পিছিয়ে পড়া ভাবনাকে চাপিয়ে দিতে গিয়ে! আবির দা তখনো ঘুড়িটা চলে যাওয়ার শেষ বিন্দু পর্যন্ত হাঁ করে, দেখছিলো আর কোলে মিষ্টু তখন দুধ খাবার জন্য হাঁই হাঁই করছে আর সৃষ্টিতোঘুমিয়েই কাদা!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress