Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » ভাসানের সুন্দরবনে সোনার তরী || Nabarun Bhattacharya

ভাসানের সুন্দরবনে সোনার তরী || Nabarun Bhattacharya

ওই ভাসে শকুনের অর্ধভুক্ত শিশু
তাকে তির্যক রেখায় ঠেলে এক কাষ্ঠ দাঁড়
বোধহয় অসামাজিক এক লজ্জায় অধোমুখ
শিশুটি উল্টে যায় লবণ তরলে
মুখ রেখে মাতলার গভীর লুকোনো ভিতে
হালের হেলায় নাক বেঁকে
সোনার তরীটি তার রিলিফ ভারের ভরে
সুন্দরী ঘাটের দিকে ধায়

নারীর চোখের মণি অন্ধ থাকে শীতের হাওয়ায়
স্পর্শকাতর জল ঝরে সেই দেহের মন্দিরে, ঘিরে
রিলিফ ক্যাম্পে যবে শিশুদের দেওয়া হয়
কমলালেবু ও সাবুগোলা বেবিফুড ওই তার কোল খালি
ওই পারে মৌখালি কৈখালি আর কত না আস্তানা
মসিদবাড়ির মাটি মৃত্তিকার অসংখ্য কুটির
ছিল সেই সব গ্রামে আছে ফাঁকা
বান্টু হটেনটট ও বিবিধ জাতির মানুষ
তারাও এ এক রোমাণ্টিক সাইক্লোনে নাড়া খেয়ে
জলবন্দী হিড়হিড় করে এসে হাজির দূরদর্শনের সংবাদে
তালদি রিলিফ ক্যাম্পে তাদের শীতে কাঁপা থরথরে জীবন
ঝুলে আছে ড্রাইডোলে, হাই তোলে ফোলানো ফাপানো মানুষ
নিশ্চয় পৌঁছেছে রাশি রাশি ভার নিয়ে সোনার তরণী

শহরেরা শহরে সুন্দর, গ্রামবাসী সুন্দর ফ্লাডে
সংবাদে গর্ভস্ফীত কিছু চঞ্চু বান গোলাবাড়ি লাটে
নেমে দেখে বেবাক লোপাটে,
প্রাণ নেই, কিছু নেই, তাই সংবাদ
ডানা ঝাড়ে সকালের মুদ্রিত শকুন
চন্দ্রালোকে শিশুটিকে বৈঠায় পেয়ে
ইন্দ্রনাথ শুনেছিল ডাকে তাকে তার সহোদর

সোনার তরীর সামনে অনন্ত শান্তির এক পারাবার
বেনো পচা হাড়ধোয়া জল খাবল খাবল করে
লাট থেকে বাদা আর কাদাধোয়া শামুক আবাদ
শকুনের সামনে এক জটিল দুরূহ সমস্যা
জাত যাবে গরু খেলে, পাতে তার যদি আছে কোলভরা ছেলে
সোনার তরকে টানে কুলছাপা অশ্রুর জোয়ার

কাঁকড়ার গর্ত থেকে সম্মোহিত উঠে আসে চাঁদের চুম্বক
আকর্ষিত জল যদি তার কণ্ঠলগ্ন হত ক্ষণ যৌনতায়
কামটের বিস্ময়ে স্তব্ধ হত গরানের ঘেরি
বিস্ফোরক চিত্রকল্পে জল লক্ষ দাঁতে কাটে ফাটা মজা ভেড়ি
এশিয়ার কোনো ঘরে শীতঘুমে যে কটি মানুষ
ইতস্তত মৃত পাক খায়, টানে ছোটে, লুকায় কাদায়
রাশি রাশি ভারা ভারা দুগ্ধময় ধান ছেঁড়ে জলের হাঁসুয়া
মৃত ধীবরের জাল তারই দেহের মতো নানা দোটানায়
এবম্বিধ খণ্ডচিত্রে সোনার তরীটি দেখো বড়ই মানায়

তুমি যদি পুণ্য চাও এই লগ্নে শেষকৃত্য সারো
জলজ বায়স আসে তারকার ফোটা খই খেতে
ভোলো দুঃখ, কে তোমার স্তনদাত্রী ছিল, কে বা পিতা
নুড়ো জ্বালো মাটি দাও, অভাগীর অপার মহিমা
সুন্দরবনের তটে সিক্ত ও লবণাক্ত মানুষের চিহ্নলুপ্ত ধোঁয়া
আকাশের হেলিকপ্টারে মুক্ত চার পাখায় জড়ায়
দুর্বল ও ধর্মভীরু মানুষ যেমন, তেমন অপার কঠোর শাস্তি
শেষকৃত্য সারো, ছোঁড়ো ভোটের রিলিফ, বলো এই নাও বড়ি
প্রকৃতির ঘনঘটা হতবুদ্ধি করে প্রভু, এখনও কখনও
যতক্ষণ না গায়ে দিয়ে মৃতের কাপড় জরাক্রান্ত
বালকটি জানে যত মাটি ফেলা হয় ঢের বেশি তার হয় লেখা
গজমন্ত্রী তুষ্ট থাকে অলীক ঘুষের জাঙ্গলে
কোন দল, কোন মত, কোন মোহ ও প্রমেহ
কুলাক ও ঠিকাদার খচীতে সাহস করে মনে
নিয়তির আবির্ভাব একাশির সুন্দরবনে

পাগল জলের তোড়ে কে বাঁচায় গরু বা ছাগল
কার সাধ্য স্রোত থেকে টেনে তোলে ভীত বৃদ্ধকে
খড়ের চালের থেকে খড় সরে, সরে বাঁশ, তলায় মানুষ
কে সে মূঢ় খোজ চায় নিখোঁজ ও নিশ্চিহ্ন গৃহের
ওই দেখো, রাষ্ট্রবিজ্ঞানীর অর্থনীতি বা ধন্দ সসেমিরা
গমকে চলেছে দেখো সুন্দরী বাংলায় সোনার তরীটি
কলিকাতা মহান নগরে প্রায় সমান্তরাল সরকারি পর্যটন উৎসব
চলো সব দল বেঁধে মহামতি ক্যানিঙের খাসজমি দেখে আসি
ভাগ্য প্রসন্ন হলে ক্যামেরায় জুটে যাবে রঙিন কঙ্কাল
বা সাম্প্রতিক খুলি
শ্মশানের পাশে জল থাকে কিন্তু দেখেছ কি বিস্তীর্ণ জলের শ্মশান
নুনমাখা মাটি দেখ বন্ধ্যার মতো হাসে বিকৃত মাথায়
ক্ষতবিক্ষত স্তন নিমজ্জিত যোনি ওষ্ঠ নুনে চাপা ওই পাথর প্রতিমা
চার ঠাং তুলে রাখা অর্থহীন গাভী বা নোনা জলে ঢুকে মরা
মৎস্য প্রকল্পের মাছ
বিঘৎ জলের মধ্যে রূপসী শিঙির মৃত্যু, রাজহংসীর মতো নাচ
কিছু বোকা ওই মাছ খেয়ে গেছে ক্ষুধার ওপারে

এদিকের বর্বর মানুষ জল নেমে যেতে উঠে আসে
চিন্তাহীন জড়বুদ্ধি থাকে, কামড়ায় না বা কাড়ে না সঞ্চয়
সোনার তরীর দিকে তাকায় না অপলক, শোনে না আশ্বাস
আমন মানুষের গায়ে লেগে আছে শোষক পোকা
আমন মানুষের অন্তরে লেগে আছে শোষক পোকা
এ মানুষ এমনই নিঃস্ব যে অন্যতর মানুষের তুলনায় ভারহীন
তিন দিনে দুশো গ্রাম চিঁড়ে পেলে ক্লান্ত চিবোয়
টক খিচুড়ির মধ্যে দক্ষ জিভে খুঁজে নেয় গোপন কলেরা
শহরে হাজির হয় পেটভাতে পরিণত পঙ্গু ক্রীতদাসে
অবশ্য ক্রিমিনাল আছে কিছু নানাকিছু অসভ্য প্রস্তাব দেয় নিশিকালে
বলে এই পদস্থ শৃগালবাহী সোনার তরীটি দাও নিবিড় সমাধি,
কবরস্থ করো যারা ছদ্ম বাঁধ বাঁধে, মজায় তালুক
ঘেড়োভাঙা লাটে তাই মহাজন বড়ই অসহায় হয় দারোগার দেরি দেখে

দিনের মুক্তার পরে ডালা বন্ধ করে দেখ অন্ধ ঝিনুক
ত্রিকালজ্ঞ হেতালের মাথা ঘেরে আরক্ত পশ্চিম
গদ কাদা বাঁশ হাড় উধাও আড়ত নৌকোর মৃতদেহ ঢেলে
নোনাফেনা যে যুবক তাকে ঠাই দেয়নি তো সোনার তরণী
চরে একা শোনে সেই অপসৃয়মান শব্দ ডিজেল ইঞ্জিনের
অতএব হেটে যায়, পায়ে ঠেকে শাখা পরা হাতছানি আর
মৃত বহু মানুষের আঁশটে চোখের পাতা
নদীর কোটাল ফেরে যুবক ভিখারি হয়, রাজপুত্র হয় এই গ্রহে
মরালির মরা নদী, খাড়ি গাঙ, হেঁটেই পেরোয় যেন জাগর বিগ্ৰহ
উলঙ্গ হাওয়ার শিস তার গায়ে ডোরা ডোরা আঁকে

পতঙ্গের তস্কর বেশ্যার বুদ্ধিজীবীর বণিকের শহরে
ধর্ষণে দর্শনে বহুমুখী কৃতী লুব্ধ পাপের ও পচনের নগরে
অকস্মাৎ ফেটে পড়ে ঢোল ও ডগর বাজে নাকাল রেডিও
ও কার রুক্ষ অনাথ অবাধ্য চুল দাউ দাউ উড়ে ঢোকে টিভির পর্দায়
পিতৃমাতৃহীন ও কে প্রেতকষ্ঠে ডাকে
ভাই রে–বাদা ভেসে গেছে
বাঘ আর বনবিবি যুবকের হাত ধরে
শেষ রাতে হাঁটা পথে শহরে এসেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *