Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » ভাষাশহীদের রক্তধারায় পুষ্পবৃষ্টি || Shamsur Rahman

ভাষাশহীদের রক্তধারায় পুষ্পবৃষ্টি || Shamsur Rahman

আন্দোলনে সমর্পিত ছিল মনপ্রাণ, অথচ শরীর ছিল
ভয়ঙ্কর থাবার দখলে বহুদিন। ফলে সভা,
মিছিল, শ্লোগান থেকে দূরে, বহুদূরে
বিচ্ছিন্ন দ্বীপের মতো হুহু কেটে গেছে। বারান্নোর ফেব্রুয়ারি জুড়ে
শয্যাগত ছিলাম একাকী; ঘন ঘন জ্বরে পুড়েছে শরীর। অসহায়
দেখেছি জ্বরের ঘোরে আমার নিজের ঘরে ন’জন রূপসী
আসেন নিভৃতে কিছু নাচের স্বর্গীয় মুদ্রা দেখিয়ে এবং
গান গেয়ে মিশে যান মেঘের রেশমে। দেখতাম
পিতা গায়ে শেরওয়ানি চাপিয়ে, মাথায় মখমলী টুপি পরে
যাচ্ছেন নিজস্ব প্রেসে, মা হেঁসেলে রান্নাবান্না সেরে
আমার কপালে হাত রাখছেন জ্বরের সন্ত্রাস বুঝে নিতে।

দেখতাম বারান্দায় কখনও কখনও বসে আছে
একটি কি দুটি কাক, মাঝেমাঝে হঠাৎ দুপুর-চেরা ডাক
দুপুরকে আরও বেশি ঝাঁঝালো বানিয়ে দেয় আর
ক্ষয়িষ্ণু দেয়াল বেয়ে পিঁপড়ের কারাভাঁ চলে যায়,
যেন দীর্ঘ কালো রেখা শিল্পীর তুলির। ট্যাবলেট,
ওষুধের ফ্যাকাশে ফাইল,
চকিতে ঘুলিয়ে তোলে হরিদ্রাভ বিবমিষা আমার ভেতর।
চোখ বুজে থাকি কিছুক্ষণ, হাবিজাবি
কীসব বেয়াড়া ঘোরে করোটিতে। কিয়দ্দূরে যেন
ডেকে ওঠে ফাল্গুনের প্রচ্ছন্ন কোকিল।

তন্দ্রাচ্ছন্ন ছিলাম, হঠাৎ ঝাঁকুনিতে চোখ খুলি-
আমার চৌকির পাশে জননী জায়নামাজে মগ্ন সিজদায়। বারান্দায়,
হায়, ‘মেঘনাদবধ কাব্য’, ‘রবীন্দ্র রচনাবলী’
কুটি কুটি ছিঁড়ে ফেলে ছয়টি লোমশ হাত, দেখি
কালজয়ী বাগানকে ভাগাড় বানাবে বলে যারা তারা নিজ
গর্ভধারিণীকে কলঙ্কিত করে দ্বিধাহীন প্রহরে প্রহরে।
জ্বরে পুড়ি দিনরাত; আমার প্রথম প্রেমদাহ, ভস্মরাশি,
প্রণয়ের পদাবলি, ছাত্রদের দৃপ্ত সভা, শ্লোগান, গ্রেপ্তারি
পরোয়ানা, মিছিল, বুলেটসম্বলিত ডায়েরি পুড়িয়ে ফেলি
বোবা ক্রোধে। প্রেস থেকে ফিরে বাবা বলেন জ্বলন্ত গোধূলিতে,-
“বাংলাভাষা রক্তচেলি পরে হাঁটে রাজপথে নক্ষত্রখচিত
পোস্টার-শোভিত হাতে, হাওয়ায় উদ্দাম অগ্নিশিখা-কেশরাশি!”
কারা যেন আমাকে সফেদ মেঘে মুড়ে
রক্তপোশসহ আসমানে নিয়ে যায়। রবীন্দ্রনাথের গানে,
নজরুলী গজলের তানে, লালনের
একতারা-সৃষ্ট সুরে কী কুসুম ফোটে
মেঘের নানান স্তরে, শূন্যের মাঝার-
দেখে দেখে চোখ হয় বসন্তবাহার
এবং হৃদয় শান্তিনিকেতন।ঘোর কেটে গেলে
শুক্‌নো গলা, জিভে তেতো স্বাদ, মাথা যন্ত্রণায় ছিঁড়ে যেতে চায়।
বায়ান্নর ফেব্রুয়ারিময় বড় বেশি জ্বর ছিল; বন্ধ্যা ক্রোধে,
ঘেন্নায়, কম্পনে বন্দী আমি, আমার ভায়ের তাজা রক্তধারা
রাজপথ থেকে ছুটে এসে আমার সে চৌকিটিকে
নিমেষেই ভাসানে পাঠায় আর বিদ্যাসাগরের
‘বর্ণ পরিচয়’ আর ‘রবীন্দ্র রচনাবলী’ শহীদের শোণিতধারায়
অবিরাম পুষ্পবৃষ্টি করে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *