Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » ভালো থেকো বাবা || Rana Chatterjee

ভালো থেকো বাবা || Rana Chatterjee

ভালো থেকো বাবা

বাবাকে গাড়িতে চাপিয়ে মনটা কেমন যেন বিষণ্নতায় ভরে উঠলো ঋকের। পাছে অন্য কেউ বুঝে যায় এদিক ওদিক অন্যমনষ্ক ভাবে তাকিয়ে নিজেকে সামাল দিচ্ছিল সে। কাঁচ তুলে গাড়িটা স্টার্ট দিয়ে এগোতেই কি জানি আবার একরাশ শূন্যতা মাথা তুললো মনের আকাশে ।পিছনের কাঁচ থেকে বাবাকে নিতে আসা দাদার হাত নাড়া নজরে পড়তেই সম্বিৎ ফিরে এলো ঋকের। ততক্ষনে একটু এগিয়ে দুধসাদা গাড়িটা মিষ্টির দোকানের সামনে সামান্য যানজটে দেখে যদি একবার দেখা যায় বাবাকে ,বলে গলি থেকে উঁকি মারলেও গাড়ি আবার হুঁশ করে গতি বাড়িয়েছে।

নতুন ব্ল্যাক টি শার্ট,অফ হোয়াইট প্যান্ট আর প্যাকেট খোলা নতুন শ্রীলেদার্স জুতোর সাথে ধবধবে সাদা চুলে যা সুন্দর লাগছিলো বাবাকে,ঋক ভাবছিল একটা ফটো তুলবে কিন্তু বেরুবার সময় নিজের অজান্তেই বাবার যেভাবে চোখ ছল ছল করেছে,বাবার মানসিক অবস্থাটা ভেবে ইচ্ছা হয় নি। মা ,তিন মাস হল গত হয়েছেন ঋকের। দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে রোগসজ্জায় লড়াই করে যাওয়া অদম্য লড়াকু মনের সহধর্মিনী কে বাঁচানোর আপ্রাণ প্রচেষ্টার কোনরকম ত্রুটি না রেখে, পাশে থাকা এই মানুষটা ভুলে গেছিল নিজের জীবনের ন্যূনতম চাহিদা, একটু ভালো থাকা,ভালো পোশাক পরা ,কি দুটো দিন কোথাও ঘুরে এসে এক ঘেঁয়েমি কাটানোর পরিকল্পনা।

মা মারা যাবার পর যে শূন্যতা গ্রাস করেছিল পরিবারের মানুষ গুলোর মধ্যে তা কোনোদিনই মেটার নয় এটা ধ্রুব সত্য জেনেও প্রত্যেকে নিজেদের কাজ নিয়ে ছন্দে ফিরছিল।দীর্ঘ চুয়ান্ন বছরের সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না ঘেরা দাম্পত্য জীবনে একাকিত্ব যে কি ভয়ঙ্করতম দিন যাপনের অঙ্গীকার তা হঠাৎ একা হয়ে যাওয়া, এমনিতেই চুপ থাকা মানুষটাকে দেখলে কষ্টই হতো।নিজেকে একটু গুছিয়ে,পরিপাটি করে নেবার মাঝেই কড়া ধাতের হয়েও বাবা প্রায়শই বাচ্চাদের মতো চোখ ছল ছল করে স্বগতোক্তি করতো। ঋক বেশ উপলব্ধি করতো এগুলোর জন্য কোনো স্বান্তনাই যথেষ্ট নয়। এই ভাবেই নারীরা বিয়ের পর, অচেনা পুরুষ স্বামীর হাত ধরে সংসার নামক সম্পূর্ন নতুন জটিল পরিবেশে সকলের চাওয়া পাওয়ার মধ্যে চমৎকার সেতুবন্ধন ঘটায়। নানান প্রতিকূলতা সামলে নিজেদেরই ব্রাত্য করে রেখে কখন টুক করে তারা খসা হয়ে চলে গিয়েও আপনজনদের স্মৃতিতে বিচরণ করে।

দাদা দিল্লি থেকে বাবাকে কিছুদিনের জন্য নতুন পরিবেশে ঘুরতে নিয়ে যাবার পরিকল্পনা করার পর থেকে যখনই একটু একটু করে এগিয়ে আসছিলো সেই যাবার দিন,ততই যেন উদাস হবার পাল্লা ভারী হচ্ছিল বাবার। এইভাবেই এই ঘর এই সংসার প্রতিটা ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে কত ত্যাগ স্বীকারের ফলে গড়ে ওঠে সম্পর্কের বুনিয়াদ,আর এটাই ভারতীয় সংস্কৃতির পরম্পরা।এত গুলো বছরের স্মৃতি যেন আরো আঁকড়ে ধরে বাবার নিশ্চয়ই মনে পড়ছিল শেষবার মায়ের সাথে ছেলের বাড়ি দিল্লি ও বাইরে কত ঘুরতে যাবার কত কথা ,রোমন্থন।

মন খারাপ করোনা বাবা আমরা তো আপ্রাণ চেষ্টা করেছি বলো মাকে বাঁচানোর।শেষ কয়েক বছর তুমি যেভাবে নিজের শারীরিক প্রতিবন্ধকতা উপেক্ষা করে মায়ের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করে গেছো তা যেকোনো সন্তানের কাছে সেরা দৃষ্টান্ত স্থাপন বাবা। একদম নিজেকে একা ভেবো না তুমি,নিজের যত্ন নিও ,যাও কটা দিন ঘুরে এসো,একটু একঘেঁয়েমি থেকেও মুক্তি পাবে , “ভালো থেকো বাবা”।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress