Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » ভারতে কালের ভেরী || Hemchandra Bandyopadhyay

ভারতে কালের ভেরী || Hemchandra Bandyopadhyay

( ১ )
ভারতে কালের ভেরী বাজিল আবার |—-
অই শুন ঘোর ভীম নাদ তার !
ছুটিছে তুমুল রঙ্গে আকুল অধীর বঙ্গে ;
উঠিছে পূরিয়া দিক্ প্রাণী-হাহাকার !—

বাজিল অকাল ভেরী—বাজিল আবার |


( ২ )
চলেছে প্রাণীর কুল হের চারিধার ;
চলে যেন পঙ্গপাল করিয়া আধার—
স্থবির বালক নারী হা অন্ন, হা অন্ন বারি
বলিতে বলিতে ধায়, চক্ষে নীরধার ;
ধরাতলে চলে ধীরে কালীর আকার !

( ৩ )
দেখ রে চলেছে আহা শিশু কত জন,
শীর্ণদেহ চাহি আছে জননী বদন ;
আকুল জননী তার মুখ চাহি বারবার
অনিবার বারিধারা করে বরিষণ—
ভ্রমে যেন উন্মাদিনী অন্নের কারণ !

( ৪ )
হের দেখ পথিধারে বসিয়া ওখানে
পতির চরণে লুটি আকুল পরাণে,
বলিছে কামিনী কেহ, “কই নাথ অন্ন দেহ
কালি আর চাহিব না রাখ আজ প্রাণে”—
বলিয়া ত্যজিল প্রাণ চাহি পতিপানে |

( ৫ )
ছুটেছে যুবতী কন্যা ফেলিয়া পিতায় ;
মা বলি ডাকিছে বৃদ্ধ সকলি বৃথায় ১
কেবা কন্যা, কেবা পিতা, কে জননী, কেবা মিতা,—
অন্নদাতা, পিতা মাতা, আজি বাঙ্গালায়—
হের হেন কত জন আজি এ দশায় |

( ৬ )
হের কত জন আহা উদর-জ্বালায়
জননী ফেলিয়া শিশু ছুটিয়া পলায়—
তুলিয়া যুগল পাণি শিশু ডাকে ‘মা’ ‘মা’ বাণী,
ক্ষুধায় জননী তার ফিরিয়া না চায়—
একাকী পড়িয়া শিশু পরাণে শুকায় !

( ৭ )
চলেছে প্রাণীর কুল এরূপে আকুল,
নৃত্য করে অনশন, মুক্ত করি চুল—
নৃত্য করে ভেরী নাদে, কঙ্কাল তুলিয়া কাঁধে,
খপূর ধরিয়া করে করিছে ভ্রমণ—
দেখ বঙ্গবাসি, দেখ মূর্ত্তি কি ভীষণ !

( ৮ )
ছুটিছে নয়নে বহ্নি স্ফুলিঙ্গ সমান ;
ফিরিছে উন্মত্ত ভাব উল্কার প্রমাণ ;
দন্ত ঘরষণে শব্দ ভারতভুবন স্তব্ধ,
করাল বিকট গ্রাস মুখের ব্যাদান—
আকাশে উঠিছে সঙ্গে কালের নিশান !

( ৯ )
কতই উত্সবপূর্ণ গৃহস্থ আলয়,
নন্দিনী নন্দন রূপ, সুখপুষ্পময়,
আজি পূর্ণ কলরবে অচিরে নীরব হবে,
শকুনি বায়স কিম্বা পেচক আশ্রয় –
ধরিবে শ্মশান বেশ মৃত অস্থিময় |

( ১০ )
কত সে জনতাপূর্ণ পণ্যবীথি হায়,
এ রাক্ষস অনাচারে হবে মরু প্রায় –
ভীষণ গহন সাজ, ধরিবে পুরীর মাঝ
পূরিবে বনের গুল্ম পাদপ লতায় |
ভ্রমিবে শার্দ্দূল শিবা আনন্দে সেথায় |


( ১১ )
আজি হাসিভরা মুখে প্রফুল্ল যে সব,
আজি সুখপূর্ণ বুক আশার পল্লব,
কালি আর নাহি রবে শবদেহ হবে সবে,
শৃগাল কুক্কুরে করিবে উত্সব—
কর্ণমূলে গৃধ্র বসি শুনাইবে রব !

( ১২ )
কেমনে হে বঙ্গবাসি, নিদ্রা যাও সুখে ?
ভাবিয়া এ ভাব, চিত্ত ভরে না কি দুখে ?
নিজ সুত পরিবার না জানিছে অনাহার,
ভাবিয়ে, না চাহ কি হে অভুক্তের মুখে—
স্বজাতি-শোকের শেল বিন্ধে না কি বুকে ?

( ১৩ )
প্রিয়ে বলি গৃহে আসি ধর যবে কর,
হয় না উদয় কি রে হৃদয়-ভিতর—
কত সতী অনাথিনী পথে পথে কাঙ্গালিনী
ভ্রমিবে হতাশ হয়ে ত্যজি শূন্য ঘর—
নাহি লজ্জা কুলমান, ক্ষুধায় কাতর !

( ১৪ )
ক্রোড়ে ধরি হের যবে কন্যা পুত্রগণ,
ভাবিয়া জগৎ মাঝে অমূল্য রতন—
কভু কি পড়ে না মনে সেই সব শিশুগণে
অন্য বিনে মরে যারা করিয়া রোদন ?
তাহার ও অইরূপ নয়ন-রঞ্জন

( ১৫ )
হে বঙ্গ কুল কামিনী আর্য্যা যতজন,
জান যারা পতি পুত্র পিতা সে কেমন –
ভাব দেখি একবার বদন সে সবাকার
ঘরে যারা প্রাতঃসন্ধ্যা করে দরশন
নিরন্ন বিষণ্ণ পতি, জনক, নন্দন !

( ১৬ )
একদিন অনশনে দিন যদি যায়,
জান না কি বঙ্গবাসী কি যাতনা তায় !
আজি সেই অনশনে দারুণ হতাশ মনে
লক্ষ নরনারী শিশু করে হায়, হায়—
তবুও চেতনা কি হে নাহি হয় তায় !

( ১৭ )
ভাব, অহে বঙ্গবাসী, ভাব একবার
কি কাল রাক্ষস আসি ঘেরিয়াছে দ্বার—
নাশিতে সে দুরাচার বৃটনের হুহুঙ্কার
বৃটিশ কেশরীনাদ শুন একবার—
ঘুমাইও না বঙ্গবাসী, ঘুমাইও না আর ;
ভারতে কালের ভেরী বাজিল আবার ;

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *