Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » ব্যোমকেশ ও বরদা – ব্যোমকেশ বক্সী || Sharadindu Bandyopadhyay » Page 3

ব্যোমকেশ ও বরদা – ব্যোমকেশ বক্সী || Sharadindu Bandyopadhyay

অপরাহ্নে বরদাবাবু আসিলেন। তারাশঙ্করবাবু রাজী হইয়াছেন; যদিও একটি শোকসন্তপ্তা ভদ্রমহিলার উপর এইসব অযথা উৎপাত তিনি অত্যন্ত অপছন্দ করেন।

বরদাবাবুর সঙ্গে দুইজনে বাহির হইলাম। শশাঙ্কবাবু যাইতে পারিলেন না‌, হঠাৎ কি কারণে উপরওয়ালার নিকট তাঁহার ডাক পড়িয়াছে।

পথে যাইতে যাইতে বরদাবাবু জানাইলেন যে‌, তারাশঙ্করবাবু লোক নেহাৎ মন্দ নয়‌, তাঁহার মত আইনজ্ঞ তীক্ষ্ণবুদ্ধি উকিলও জেলায় আর দ্বিতীয় নাই; কিন্তু মুখ বড় খারাপ। হাকিমরা পর্যন্ত তাঁহার কটু-তিক্ত ভাষাকে ভয় করিয়া চলেন। হয়তো তিনি আমাদের খুব সাদর সংবর্ধনা করিকেন না; কিন্তু তাহা যেন আমরা গায়ে না মাখি।

প্ৰত্যুত্তরে ব্যোমকেশ একটু হাসিল। যেখানে কাযোদ্ধার করিতে হইবে সেখানে তাহার গায়ে গণ্ডারের চামড়া-কেহই তাহাকে অপমান করিতে পারে না। সংসর্গগুণে আমার তুকও বেশ পুরু হইয়া আসিতেছিল।

কেল্লার দক্ষিণ দুয়ার পার হইয়া বেলুনবাজার নামক পাড়ায় উপস্থিত হইলাম। প্রধানত বাঙালী পাড়া‌, তাহার মধ্যস্থলে তারাশঙ্করবাবুর প্রকাণ্ড ইমারৎ। তারাশঙ্করবাবু যে তীক্ষ্ণবুদ্ধি উকিল তাহাতে আর সন্দেহ রহিল না।

তাঁহার বৈঠকখানায় উপনীত হইয়া দেখিলাম তক্তপোশে ফরাস পাতা এবং তাহার উপর তাকিয়া ঠেস দিয়া বসিয়া গৃহস্বামী তাম্রকুট সেবন করিতেছেন। শীর্ণ দীঘকূিতি লোক‌, দেহে মাংসের বাহুল্য নাই বরং অভাব; কিন্তু মুখের গঠন ও চোখের দৃষ্টি অতিশয় ধারালো। বয়স ষাটের কাছাকাছি; পরিধানে থান ও শুভ্ৰ পিরান। আমাদের আসিতে দেখিয়া তিনি গড়গড়ার নল হাতে উঠিয়া বসিলেন‌, বলিলেন‌, ‘এস বরদা। এঁরাই বুঝি কলকাতার ডিটেকটিভ?

ইহার কণ্ঠস্বর ও কথা বলিবার ভঙ্গীতে এমন একটা কিছু আছে যাহা শ্রোতার মনে অস্বস্তি ও অস্বচ্ছন্দ্যের সৃষ্টি করে। সম্ভবত বড় উকিলের ইহা একটা লক্ষণ; বিরুদ্ধ পক্ষের সাক্ষী এই কণ্ঠস্বর শুনিয়া যে রীতিমত বিচলিত হইয়া পড়ে তাহা অনুমান করিতে কষ্ট হইল না।

বরদাবাবু সঙ্কুচিতভাবে ব্যোমকেশের পরিচয় দিলেন। ব্যোমকেশ বিনীতভাবে নমস্কার করিয়া বলিল‌, ‘আমি একজন সত্যান্বেষী।’

তারাশঙ্করবাবুর বাম ভ্রূর প্রান্ত ঈষৎ উত্থিত হইল‌, বলিলেন‌, ‘সত্যান্বেষী? সেটা কি?’

ব্যোমকেশ কহিল‌, ‘সত্য অন্বেষণ করাই আমার পেশা-আপনার যেমন ওকালতি।’

তারাশঙ্করবাবুর অধরোষ্ঠ শ্লেষ-হাস্যে বক্র হইয়া উঠিল; তিনি বলিলেন‌, ‘ও-আজকাল ডিটেকটিভ কথাটার বুঝি আর ফ্যাশন নেই? তা আপনি কি অন্বেষণ করে থাকেন?

‘সত্য।’

‘তা তো আগেই শুনেছি। কোন ধরনের সত্য?’

ব্যোমকেশ ধীরে ধীরে বলিল‌, ‘এই ধরুন‌, বৈকুণ্ঠবাবু আপনার কাছে কত টাকা জমা রেখে গেছেন–এই ধরনের সত্য জানতে পারলেও আপাতত আমার কাজ চলে যাবে।’

নিমেষের মধ্যে শ্লেষ-বিদ্রূপের সমস্ত চিহ্ন তারাশঙ্করবাবুর মুখ হইতে মুছিয়া গেল। তিনি

‘বৈকুণ্ঠ আমার কাছে টাকা রেখে গেছে‌, একথা। আপনি জানলেন কি করে?’

ব্যোমকেশ বলিল‌, ‘আমি সত্যান্বেষী।’

এক মিনিট কাল তারাশঙ্করবাবু নিস্তব্ধ হইয়া রহিলেন। তারপর যখন কথা কহিলেন তখন তাঁহার কণ্ঠস্বর একেবারে বদলাইয়া গিয়াছে; সন্ত্রম-প্ৰশংসা মিশ্রিত কণ্ঠে কহিলেন‌, ‘ভারি আশ্চর্য! এরকম ক্ষমতা আমি আজ পর্যন্ত কারুর দেখিনি। —বসুন‌, দাঁড়িয়ে রইলেন কেন?—বোসো বরদা। বলি‌, ব্যোমকেশবাবুরও কি তোমার মত পোষা ভূত-টুত আছে নাকি?’

আমরা চৌকিতে উপবেশন করিলে তারাশঙ্করবাবু কয়েকবার গড়গড়ার নিলে ঘন ঘন টান দিয়া মুখ তুলিলেন‌, ব্যোমকেশের মুখের পানে চাহিয়া বলিলেন‌, ‘অবশ্য আন্দাজে ঢ়িল ফেলেছেন‌, এখন বুঝতে পারছি। কিন্তু আন্দাজটা পেলেন কোথায়? অনুমান করতে হলেও কিছু মাল-মশলা চাই তো।

ব্যোমকেশ সহাস্যে বলিল‌, ‘কিছু মাল-মশলা তো ছিল। বৈকুণ্ঠবাবুর মত ধনী ব্যবসায়ী নগদ টাকা কিছু রেখে যাবেন না‌, এটা কি বিশ্বাসযোগ্য? অথচ ব্যাঙ্কে তাঁর টাকা ছিল না। সম্ভবত ব্যাঙ্ক-জাতীয় প্রতিষ্ঠানকে তিনি সন্দেহের চক্ষে দেখতেন। তবে কোথায় টাকা রাখতেন? নিশ্চয় কোনো বিশ্বাসী বন্ধুর কাছে। বৈকুণ্ঠবাবু প্রতি রবিবারে দুপুরবেলা আপনার সঙ্গে দাবা খেলতে আসতেন। তিনি মারা যাবার পর তাঁর মেয়েকে আপনি নিজের আশ্রয়ে রেখেছেন; সুতরাং বুঝতে হবে‌, আপনিই তাঁর সবচেয়ে বিশ্বাসী এবং বিশ্বাসভাজন বন্ধু।’

তারাশঙ্করবাবু বলিলেন‌, ‘আপনি ঠিক ধরেছেন। ব্যাঙ্কের ওপর বৈকুণ্ঠের বিশ্বাস ছিল না। তার নগদ টাকা। যা-কিছু সব আমার কাছেই থাকত এবং এখনো আছে। টাকা বড় কম নয়‌, প্ৰায় সতের হাজার। কিন্তু এ টাকার কথা আমি প্রকাশ করিনি; তার মৃত্যুর পর কথাটা জানাজানি হয় আমার ইচ্ছা ছিল না। কিন্তু ব্যোমকেশবাবু যখন ধরে ফেলেছেন তখন স্বীকার না করে উপায় নেই। তবু আমি চাই‌, যেন বাইরে কথাটা প্রকাশ না হয়। আপনারা তিনজন জানলেন; আর কেউ যেন জানতে না পারে। বুঝলে বরদা?’

বরদাবাবু দ্বিধা-প্রতিবিম্বিত মুখে ঘাড় নাড়িলেন।

ব্যোমকেশ জিজ্ঞাসা করিল‌, ‘কথাটা গোপন রাখবার কোনো বিশেষ কারণ আছে কি?’

তারাশঙ্করবাবু পুনরায় বারকয়েক তামাক টানিয়া বলিলেন‌, ‘আছে। আপনারা ভাবতে পারেন আমি বন্ধুর গচ্ছিত টাকা আত্মসাৎ করবার চেষ্টা করছি‌, কিন্তু তাতে আমার কিছু আসে যায় না। কথাটা চেপে রাখবার অন্য কারণ আছে।’ ‘সেই কারণটি জানতে পারি না কি? তারাশঙ্করবাবু কিছুক্ষণ ভ্রূকুঞ্চিত করিয়া চিন্তা করিলেন; তারপর অন্দরের দিকের পদািঢাকা দরজার প্রতি একবার কাটোক্ষপাত করিয়া খাটো গলায় বলিলেন‌, ‘আপনারা বোধ হয় জানেন না‌, বৈকুণ্ঠের একটা বকাটে লক্ষ্মীছাড়া জামাই আছে। মেয়েটাকে নেয় না‌, স্যাকসি পার্টির সঙ্গে ঘুরে বেড়ায়। উপস্থিত সে কোথায় আছে জানি না‌, কিন্তু সে যদি কোন গতিকে খবর পায় যে তার স্ত্রীর হাতে অনেক টাকা এসেছে তাহলে মেয়েটাকে জোর করে নিয়ে যাবে। দুদিনে টাকাগুলো উড়িয়ে আবার সরে পড়বে। আমি তা হতে দিতে চাই না–বুঝলেন?’

ব্যোমকেশ ফরাসের দিকে তাকাইয়া থাকিয়া ধীরে ধীরে বলিল, ‘বুঝেছি।’

তারাশঙ্করবাবু বলিতে লাগিলেন‌, ‘বৈকুণ্ঠের যথাসর্বস্ব তো চোরে নিয়ে গেছে‌, বাকি আছে কেবল এই হাজার কয়েক টাকা। এখন জামাই বাবাজী এসে যদি এগুলোকে ফুঁকে দিয়ে যান‌, তাহলে অভাগিনী মেয়েটা দাঁড়াবে কোথায়? সারা জীবন ওর চলবে কি করে? আমি তো আর চিরদিন বেঁচে থাকব না।’

ব্যোমকেশ গালে হাত দিয়া শুনিতেছিল‌, বলিল‌, ‘ঠিক কথা। তাঁকে গোটকয়েক কথা আমি জিজ্ঞাসা করতে চাই। তিনি বাড়িতেই আছেন তো? যদি অসুবিধা না হয়—’

‘বেশ। তাকে জেরা করে কোন লাভ হবে বলে মনে হয় না। কিন্তু আপনি যখন চান‌, এইখানেই তাকে নিয়ে আসছি।’ বলিয়া তারাশঙ্করবাবু অন্দরে প্রবেশ করিলেন।

তিনি প্রস্থান করিলে আমি চক্ষু এবং ভ্রূর সাহায্যে ব্যোমকেশকে প্রশ্ন করিলাম-প্রত্যুত্তরে সে ক্ষীণ হাসিল। বরদাবাবুর সম্মুখে খোলাখুলি বাক্যালাপ হয়তো সে পছন্দ করিবে না‌, তাই স্পষ্টভাবে কিছু জিজ্ঞাসা করিতে পারিলাম না। মনের মধ্যে প্রশ্ন জাগিতে লাগিল—তারাশঙ্করবাবু লোকটি কি রকম?

পাঁচ মিনিট পরে তিনি ফিরিয়া আসিলেন; তাঁহার পশ্চাতে একটি যুবতী নিঃশব্দে দরজার কাছে আসিয়া দাঁড়াইল। মাথায় একটু আধ-ঘোমটা‌, মুখ দেখিবার পক্ষে কোনো প্ৰতিবন্ধক নাই; পরিধানে অতি সাধারণ সধবার সাজ। চেহারা একেবারে জলার পেত্নী না হইলেও সুশ্ৰী বলা চলে না। তবু চেহারার সবাপেক্ষা বড় দোষ বোধ করি মুখের পরিপূর্ণ ভাবহীনতা। এমন ভাবলেশশূন্য মুখ চীন-জাপানের বাহিরে দেখা যায় কি না সন্দেহ। মুখাবয়বের এই প্রাণহীনতাই রূপের অভাবকে অধিক স্পষ্ট করিয়া তুলিয়াছে। যতক্ষণ সে আমাদের সম্মুখে রহিল‌, একবারও তাহার মুখের একটি পেশী কম্পিত হইল না‌, চক্ষু পলকের জন্য মাটি হইতে উঠিল না‌, ব্যঞ্জনাহীন নিষ্প্রাণ কণ্ঠে বোমকেশের প্রশ্নের সংক্ষিপ্ত উত্তর দিয়া যন্ত্রচালিতের মত পদার আড়ালে অদৃশ্য হইয়া গেল।

যা হোক‌, সে আসিয়া দাঁড়াইতেই ব্যোমকেশ সেই দিকে ফিরিয়া ক্ষিপ্ৰদৃষ্টিতে তাহার আপাদমস্তক দেখিয়া লইল; তারপর সহজ স্বরে প্রশ্ন করিল‌, ‘আপনার বাবার মৃত্যুতে আপনি যে একেবারে নিঃস্ব হননি তা বোধ হয় জানেন?

‘হাঁ।’

‘তারাশঙ্করবাবু নিশ্চয় আপনাকে বলেছেন যে আপনার সতের হাজার টাকা তাঁর কাছে জমা আছে?’

‘হাঁ।’

ব্যোমকেশ যেন একটু দমিয়া গেল। একটু ভাবিয়া আবার আরম্ভ করিল‌, ‘আপনার স্বামী কতদিন নিরুদেশ হয়েছেন?’

‘আট বছর।’

‘এই আট বছরের মধ্যে আপনি তাঁকে দেখেননি?’

‘না।’

‘তাঁর চিঠিপত্রও পাননি?’

‘না।’

‘তিনি এখন কোথায় আছেন জানেন না?’

‘না।’

‘আপনি পৈতৃক টাকা পেয়েছেন জানাজানি হলে তিনি ফিরে এসে আপনাকে নিয়ে যেতে চাইবেন-এ সম্ভাবনা আছে কি?’

কিছুক্ষণ নীরব। তারপর–

‘হাঁ।’

‘আপনি তাঁর কাছে যেতে চান না?’

‘না।’

লক্ষ্য করিলাম তারাশঙ্করবাবু নিগূঢ় হাস্য করিলেন।

ব্যোমকেশ আবার অন্য পথ ধরিল।

‘আপনার শ্বশুরবাড়ি কোথায়?

‘যশোরে।’

‘স্বশুরবাড়িতে কে আছে?’

‘কেউ না।’

‘শ্বশুর-শাশুড়ি?’

‘মারা গেছেন।’

‘আপনার বিয়ে হয়েছিল কোথা থেকে?’

‘নবদ্বীপ থেকে।’

নিবদ্বীপে আপনার খুড়তুত জাঠতুত ভায়েরা আছে‌, তাদের সংসারে গিয়ে থাকেন না কেন?’

উত্তর নাই।

‘তাদের আপনি বিশ্বাস করেন না?’

‘না।’

‘তারাশঙ্করবাবুকেই সবচেয়ে বড় বন্ধু মনে করেন?

‘হাঁ।’

ব্যোমকেশ ভ্রূকুটি করিয়া কিছুক্ষণ দেয়ালের দিকে তাকাইয়া রহিল, তারপর আবার অন্য প্রসঙ্গ আরম্ভ করিল–

‘আপনার বাবার মৃত্যুর পর গয়ায় পিণ্ড দেবার প্রস্তাব বরদাবাবু করেছিলেন। রাজী হননি কেন?’

নিরুত্তর।

‘ওসব আপনি বিশ্বাস করেন না?’

তথাপি উত্তর নাই।

‘যাক। এখন বলুন দেখি‌, যে-রাত্রে আপনার বাবা মারা যান‌, সে-রাত্রে আপনি কোনো শব্দ শুনেছিলেন?’

‘না।’

‘হীরা জহরত তাঁর শোবার ঘরে থাকত?’

‘হাঁ।’

‘কোথায় থাকত?

‘জানি না।’

‘আন্দাজ করতেও পারেন না?’

‘না।’

‘তাঁর সঙ্গে কোনো লোকের শত্ৰুতা ছিল?’

‘জানি না।’

‘আপনার বাবা আপনার সঙ্গে ব্যবসার কথা কখনো কইতেন না?’

‘না।’

‘রাত্রে আপনার শোবার ব্যবস্থা ছিল নীচের তলায়। কোন ঘরে শুতেন?’

‘বাবার ঘরের নীচের ঘরে।’

‘তাঁর মৃত্যুর রাত্রে আপনার নিদ্রার কোনো ব্যাঘাত হয়নি?’

‘না।’

দীর্ঘশ্বাস ছাড়িয়া ব্যোমকেশ বলিল‌, ‘আচ্ছা‌, আপনি এখন যেতে পারেন।’

অতঃপর তারাশঙ্করবাবুর বাড়িতে আমাদের প্রয়োজন শেষ হইয়া গেল। আমরা উঠিলাম। বিদায়কালে তারাশঙ্করবাবু সদয়কণ্ঠে ব্যোমকেশকে বলিলেন‌, ‘আমার কথা যে আপনি যাচাই করে নিয়েছেন এতে আমি খুশিই হয়েছি। আপনি ইশিয়ার লোক; হয়তো বৈকুণ্ঠের খুনের কিনারা করতে পারবেন। যদি কখনো সাহায্য দরকার হয় আমার কাছে আসবেন। আর মনে রাখবেন‌, গচ্ছিত টাকার কথা যেন চাউর না হয়। চাউর করলে বাধ্য হয়ে আমাকে মিথ্যা কথা বলতে হবে।’

রাস্তায় বাহির হইয়া কেল্লার দিকে ফিরিয়া চলিলাম। দিবালোক তখন মুদিত হইয়া আসিতেছে; পশ্চিম আকাশ সিন্দুর চিহ্নিত আরশির মত ঝকঝকি করিতেছে। তাহার মাঝখানে বাঁকা চাঁদের রেখা-যেন প্ৰসাধন-রাত রূপসীর হাসির প্রতিবিম্ব পড়িয়াছে!

ব্যোমকেশের কিন্তু সেদিকে দৃষ্টি নাই‌, সে বুকে ঘাড় গুজিয়া চলিয়াছে। পাঁচ মিনিট নীরবে চলিবার পর আমি তাহাকে চুপি চুপি জিজ্ঞাসা করিলাম‌, ‘ব্যোমকেশ‌, তারাশঙ্করবাবুকে কি রকম বুঝলে?’

ব্যোমকেশ আকাশের দিকে চোখ তুলিয়া হঠাৎ হাসিয়া উঠিল; বলিল‌, ‘ভারি বিচক্ষণ লোক।’

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress