বৌমারাও ভালো হয়
জানো কুন্তল এককালে শুনতাম “ভাগের মা গঙ্গা পায় না”।
অনেক ছেলে মেয়ে,তারা বড় হয়ে গেলে নিজের আখের গোছাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।
মেয়েরা বিয়ের পর বাপের বাড়ির সম্পত্তিতে ভাগ আছে কিন্তু বাবা ও মার দায়িত্ব নিতে সব বলে আমি কেন , তুই বা তোরা দেখ।
কুন্তল দেবশ্রীকে বলে হঠাৎ ঘুমোতে এসে দিদিমনির মাথায় এরকম গল্প মনে এলো। ঘুমিয়ে পড়ো কাল আমার সারাদিন হাসপাতাল, চেম্বার আছে।
কিন্তু তোমার মা , বাবা চলে যাবার পর কেমন চুপচাপ হয়ে গেছেন। কুন্তল কিছুই শোনে নি।নাক ডেকে ঘুমাচ্ছে।
দেবশ্রী বলে এই শুনছ…মা ভালো নেই।
কুন্তল বলে এ একাকিত্বের যন্ত্রণা বুঝলে, আমার আরো কটা ভাই থাকলে ভালো হতো। আমরা দুজনে ব্যস্ত। কেউ না কেউ দেখত।
দেবশ্রী বিড়বিড় করে বলে ওইতো তখন ভাগের মা হতো।
আসলে দুজনের মধ্যে একজন চলে গেলে খুব কষ্ট হয়।তারপর নাতি নাতনীরা পড়াশোনা নিয়ে ছুটছে ,ঠাকুমা দিদার কাছে রূপকথার গল্প শোনার সময় কোথায়!!
পরদিন স্কুলে যাবার পথে
শাশুড়িকে গাড়িতে বসিয়ে দেবশ্রী সরলাশ্রমে রেখে চুপচাপ চলে যায়। শাশুড়ি কেঁদে ভাসান।তার মানে আর ছেলে নাতনিকে দেখতে পারবেন না। একবার ইচ্ছে করছিল ছেলেকে জানান , বৌমা বেড়াতে যাবার নাম করে অসহায় বিধবা মহিলাদের মধ্যে ছেড়ে দিয়ে গেছে। ছেলের নাম্বার কিছুতেই মনে করতে পারেন না।
দেবশ্রী সারাদিন স্কুল করে , মেয়েকে স্কুল থেকে নিয়ে বাড়ি ফিরে এসে হঠাৎ শূন্য ঘরে মনে পড়ে মাকে আনা হয় নি।তারপর মেয়েকে নাচের স্কুলে ঢুকিয়ে সরলাশ্রমে ছোটে।তখন গিয়ে দেখে মা গান শেখাচ্ছে অন্যান্য মহিলাদের। অনেকেরই বেসুরো গান শুনে মা হেসে গড়িয়ে যাচ্ছেন। একজন বলে দিদি আপনার বৌমা নিতে এসেছেন।
মা বলে যাও যাও আমি তোমাদের বোঝা হয়ে গেছিতো তাই চুপিচুপি বৃদ্ধাশ্রমে রেখে গেলে। দেবশ্রী শাশুড়িকে বলে তুমি আমার মা, তুমি ভাবলে কি করে!!!
এবার থেকে মাঝে মাঝে এসো।সব বুড়িরা দেবশ্রীকে নানান প্রস্তাব শোনান।মা বলে রোজ আসব আবার ফিরে যাব। তোমরা কেমন আপন করে নিয়েছ এক বেলায়।
শাশুড়ি এবার আবদার করে বৌমা আজ থেকে যাব এখানে।
তোমার প্রেসারের ওষুধ লাগবে মা।
আশ্রমের অনেকেই বলে আমরাও খায় প্রেসারের বড়ি, দিদিকে দিয়ে দেব। শাশুড়ি নিজে মজা করে বলেন না বাপু তোমাদের ওষুধ খেয়ে মরতে পারব নি।একেক জনের ওষুধ আলাদা হয়।
দেবশ্রী বলে কাল এসে থেকো। হটাৎ শাশুড়ি বৌমাকে দুই গালে চুমু দেন।
গাড়িতে বসে মা হাত নেড়ে বলেন যমুনা সাবধানে থেকো ,জ্বরের ওষুধটা খেও।জ্বর বাড়লে জলপট্টি দিও।তারপর হুস করে গাড়ি নিয়ে বাড়ির দিকে দেবশ্রী এগিয়ে যায়। শাশুড়ি বলেন আমাকে রেখে দিয়ে না বলে চলে গেলে আমি কাঁদছিলাম খুব। তারপর সবাই এসে আমাকে জড়িয়ে কত গল্প, এখন দেখো যেতে ইচ্ছে করছে না। মনে মনে দেবশ্রী ভাবে এটা একাকিত্বের যন্ত্রণার মলম।