Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » বৈচিত্রতার সাক্ষী হয়ে রইল আজকের দিনটা || Subrata Mitra

বৈচিত্রতার সাক্ষী হয়ে রইল আজকের দিনটা || Subrata Mitra

বৈচিত্রতার সাক্ষী হয়ে রইল আজকের দিনটা

বাবা অর্থাৎ (আমার ছেলে সুপ্রতিম মিত্র) যখন প্রথম স্কুলে ভর্তি হয়েছিল তখন বাবার খুব ভোরে স্কুল হওয়ায় আমি এবং বাবা ঠিক সাড়ে ছটার মধ্যে বেরিয়ে যেতাম সকালবেলা। বাবাকে স্কুলে ঢুকিয়ে আমি চলে যেতাম গাড়ির ধুতে। কয়েকটা গাড়ি ধুয়েই সময় অনুযায়ী ফিরে আসতে হতো বাড়িতে স্নান খাওয়া-দাওয়া সেরে সারাদিনের মত বেরিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য। সেই যে বেরিয়ে গেলাম ………সারাদিনের কাজ শেষ করে আবার রাতে বেশ কয়েকটি গাড়ি ধুয়ে বাড়ি ফেরা। রাতে বাড়ি ফিরতে ফিরতে বাবা ঘুমিয়ে পড়তো। তখন বাবার সাথে আমার দেখা হওয়ার একমাত্র সুযোগ ছিল বাড়ি থেকে স্কুলে যাওয়ার ঐ সময়টুকু। পিঙ্কি অর্থাৎ আমার স্ত্রী আমার এবং বাবার দুজনের ভবিষ্যতের সম্পর্ক নিয়ে খুবই চিন্তিত ছিল। ও মনে করত বড় হলে আমার এবং আমার ছেলের সম্পর্ক কতটাইবা সুমধুর হবে? কারণ সারাদিন সারারাত ও আমাকে পেত না। এভাবে কয়েক বছর যেতে যেতে বাবা স্থানান্তরিত হয়ে পঞ্চসায়ার শিক্ষা নিকেতন বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়। তখন বাবার স্কুলটা আর খানিকটা দেরিতে শুরু হওয়ায় আমরা দুজনেই খাওয়া-দাওয়া করে একবারে বেরিয়ে পড়তাম আমি সারাদিনের মত। ততদিনে বাবা খানিকটা বুঝতে শিখেছে। বাবার সাথে আমার দেখাও হতো প্রতি রাতে কম বেশি। বাবা মাঝে মাঝে দুঃখ করে; আমি অন্যান্য বড়লোক বাবাদের মত আমার বাবার চাহিদা মেটাতে সক্ষম হইনা। আমি অন্যান্য ছাত্র-ছাত্রীর বড়লোক বাবাদের মত বড় বড় নামিদামি রেস্টুরেন্ট, নামিদামি জায়গায় ঘুরতে যেতে পারি না। স্বাভাবিকভাবে মাঝে মাঝে আমার মনকে ভীষণ নাড়া দিত এই কথাগুলো। সত্যিই তো আমি অনেক কিছুই অপারক। তখনকার মতো থেমে গিয়ে পরবর্তীতে বাবাকে বোঝানোর চেষ্টা করি। “বাবা তুমি যদি নিজের পায়ে কোনদিন দাঁড়াতে পারো তোমার মনের ইচ্ছে তুমি নিজেই পূরণ করবে। সেদিন আর আমাকে প্রয়োজন হবেনা এমন ভাবে। মাঝের করোনা কালীন দুটি বছর অতিক্রম করে কখন যে বাবা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অতিক্রম করে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র হয়ে এক বুঝদার বালক হয়ে উঠেছে আমি নিজে জানতেও পারিনি। এখন আমার অনেক কথাই বাবাকে আর কষ্ট করে বোঝানোর প্রয়োজন হয় না। বাবা যেন বয়স অনুপাতে অনেকটাই বুঝতে শিখেছে।মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর থেকে স্কুলে যাওয়ার এবং ছুটি হওয়ার সময় পরিবর্তন হয়ে যাওয়ার কারণে আমি আর ওকে সকাল বেলা নিয়ে যেতে পারি না। আজকাল বাবার একটা বড় কষ্ট, আমি বাবাকে একদিনও স্কুলে নিয়ে যাই না এবং স্কুল থেকে বাড়ি আসার সময় ওকে আনতে যাই না অন্যান্য বাবা মায়েরা স্কুলে ছাড়তে যায়, টাটা করে, আদর করে।আবার স্কুল থেকে আনতেও যায়। বাবার কথাগুলো আমি বুঝতে পেরেও আমার কোন উপায় থাকে না। তাই মাঝেমধ্যে কখনো সোম থেকে শুক্রবারের মধ্যে একটু ফাঁক হলেই বাবাকে স্কুলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করি আমার ছুটির দিনগুলোতে। আজ দিনটি তেমনই পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছিল আমাদের দুজনের মধ্যে। আজ দিনটি আমার খুবই বৈচিত্র্যময় ও আবিষ্কারের পরস্পর ঘটনাবলীর মধ্যে থেকে অতিবাহিত করলাম। এক প্রকার ছুটির মৌসম, অথচ একটুও ফুরসত মেলে নিয়ে বসে থাকার। খুব ভোরে ফুল তুলে আজ আর রাস্তাঘাট ঝাট না দিয়েই চলে গেলাম গাড়ি ঝুঁতে। এসব পরী বিশেষ একটি জায়গায় যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি হতে হতে ছেলের স্কুলের টাইম হয়ে যাওয়ায় আমি আর বাবা বেরিয়ে পড়লাম স্কুলের উদ্দেশ্যে। ওখান থেকে বিশেষ কারণবশত ছুটি নেওয়ার সেই গন্তব্য সোনারপুর। ট্রেনে করে ফিরে আসা। ফিরে আসার সময়-ই কবি সুভাষ মেট্রো রেলের সুরঙ্গে দেখা বিদূর কয়াল নামক সুমধুর সুরে বাঁশিবাদক প্রতিভাবান ব্যক্তির সাথে। এক আকাশ আনন্দমুখর প্রাপ্তি নিয়ে বাড়ি ফিরেই ছুটলাম ছেলেকে স্কুল থেকে নিয়ে আসার জন্য। বাড়িতে ফিরে বাবাকে রেখেই আবার পুনরায় রওনা দিলাম রুজি রুটির সন্ধানে। সব মিলিয়ে আজকের দিনটা কর্মব্যস্ততা, ছুটি যাপন, প্রতিভার আবিষ্কারের সন্ধানে ইত্যাদি ইত্যাদি কর্মে নিজেকে যুক্ত রাখার এক বৈচিত্র্যময় অভিজ্ঞতার সাক্ষী হয়ে রইলাম।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *