বেদনা বিধুর
বিয়ের আগে কত রঙিন স্বপ্ন দেখেছে। ব্যবসায়ী অমরের প্রেমে পড়েছিল মিতা। বিয়ের পর রঙিন স্বপ্নগুলো ভেঙে যায় বাঁধের মতো। এসব সে কল্পনা করে নি। চেনা মানুষ ধীরে বদলে গেল।যৌতুকের জন্য তাকে গালিগালাজ মারধোর করত। নির্যাতন বেড়ে গেল যখন সে সন্তান সম্ভাবা। ভ্রূণ পরীক্ষা করে যখন জানতে পারল কন্যা সন্তান সম্ভবা তখন তার ওপর নির্যাতন আরও বেড়ে যায়।অথচ সাত বছর প্রেম করে,বাড়ির অমতে বিয়ে করেছিল মিতা। পঙ্গু বাবার অভাবী গরীব সংসারে সেই ছিল বড় সন্তান। ভেবেছিল স্বামী, ব্যবসায়ী জামাই হিসেবে বাবা মায়ের উপকারে আসবে।ফল হল উল্টো। মিতাকেই চাপ দিত বাপের বাড়ি থেকে টাকা আনার জন্য।মিতার মামা গোপনে যৌতুকের টাকা মিটিয়ে দিলেও স্বামীর লোভ আরও বেড়ে যায়। স্বামীর ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও কাজের লোক রাখতে দিত না, দোতলা বাড়ির পুরো কাজ তাকেই করতে হত।
দুপুরের আধপেটা খাবার আর রাতে স্বামীর মার খেয়ে লজ্জায়-দুঃখে বালিশে মুখ গুঁজে কাঁদত ।এমন অত্যাচারীর কাছে একদিনও তার মন টিকতো না, শুধু সন্তানের জন্যই থাকত।সে ভাবে ক্লাস এইট পাস,চাকরি কোথায় পাবে? বাবার সংসারে বোঝা হয়ে থাকতে চাইত না।
প্রসব বেদনা উঠলে মামাকে খবর দিয়ে তাকে নিয়ে যায় হাসপাতালে । অপারেশন থিয়েটারের লাল লাইটটি নিভিয়ে চিকিৎসক জানালেন রাজকন্যার খবর। চোখেও দেখল না মেয়েকে। জন্মের বার্তা শুনেই পাষাণ বাবা বাড়ি ছেড়ে চলে গেলেন। সেই বাবা আর ফিরে আসেন নি।শ্বশুর শাশুড়ির কাছে চরম দুর্দশা ও নির্যাতনের শিকার হলেন মা শিশু।শিশু কন্যাটিও তার বাবার ভালবাসা পেল না।দুঃখের দিনে মামাকে পাশে পাওয়ার পরেও নির্যাতিতা মিতার দুচোখ দিয়ে প্রবাহিত শ্রাবণধারা বন্ধ হয়নি।
সে চায় তার মেয়েকে লেখাপড়া শিখিয়ে মানুষ করতে। যেন তার মতো মেয়েকেও ভবিষ্যতে শ্রাবণধারায় ভাসতে না হয়।