Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » বেঁচে থাক ভালোবাসা || Rana Chatterjee

বেঁচে থাক ভালোবাসা || Rana Chatterjee

বেঁচে থাক ভালোবাসা

কিগো ভালো আছো, বাব্বা কতদিন পর দেখছি তোমায়?! তোমার খবর বলো কেমন চলছে-আজ এ লাইনে হঠাৎ, কি মনে করে গো? হ্যাঁ দিদি ভালো আছি ,আজ পুরানো অফিসে একটু কাজ ছিল তাই স্মৃতি রোমন্থন করে চলেই এলাম। আলবৎ আসবে,কত স্মৃতি মাখা আমাদের নিত্য যাত্রীদের জীবন।জানো পায়েল খুব ভালো লাগলো তোমায় দেখে।তবে এটা স্বীকার করতে দোষ নেই যে তুমি ট্রান্সফার নিয়ে বেঁচে গেছো পায়েল। সেই ভোর থেকে বেরিয়ে ট্রেন পাল্টে এতখানি দুর্গতির জার্নি।বাড়িতে তোমার দাদাকে বলতাম উফ সে যা সব দিন গেছে তোমার,বাপরে বাপ।

ঠিক বলেছ দিদি,তোমরা খুব আপন জন ছিলে আমার তাই উপলদ্ধি করেছো আমার কষ্ট।তারওপর এত টুকু কোলের বাচ্চাকে মায়ের কাছে রেখে চার চার আট ঘন্টা জার্নি, না পারতাম বাড়িতে সময় দিতে না মেয়েকে,বাড়ি না পৌঁছাতে পারলে মেজাজটাই খিঁচড়ে থাকতো। এখন বুঝতে পারি কি দুর্দশার দিন গেছে গত চার বছর,এখন অন্তত নিজের জেলায় এসে জার্নির দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি। হুম গো, তোমাকে দেখে এত খারাপ লাগত তারপর নিউ সেটআপ কলেজ। যত কাজ তো তোমাকেই সামলাতে হতো দেখতাম। ঠিক বলেছ দিদি,এই যে যখন যা কিছু নির্দ্ধিধায় তোমাদের বলতে পারতাম এটা ভীষণ মিস করি শ্যামলীদি।নিজের দিদির মতো যেকোনো প্রতিকূলতায় সব সময় মনে সাহস জুগিয়ে গেছো ।

পায়েল,তোমাকে একটা ব্যক্তিগত কথা জিজ্ঞাসা করবো?নিশ্চয়ই করবে দিদি,তুমি আমার বিষয়ে ব্যক্তিগত প্রশ্ন না করার কি আর থাকতে পারে বলো। না গো তেমন বিরাট কিছু নয় তবু কিছু মনে করোনা কেমন। আমার নিজের একটা কৌতূহল থেকে জানতে চাইছি,” তোমার সাথে সেই রঞ্জনের যোগাযোগ কি নেই নাকি বলোতো? তুমি চলে যেতে আমাদের সকলের খুব মন খারাপ হয়েছিল এটা ঠিক কিন্তু জানো রঞ্জন কেমন যেন পাল্টে গেছে। চুপচাপ ট্রেনে উঠে গুম হয়ে বসে থাকে যেন আমরা হঠাৎই অচেনা হয়ে উঠেছি ! আমাদের সাথে আর তেমন কথা বলে না,এড়িয়ে যায় বলে আমরাও উটকে কিছু বলি না। ভাবলাম তুমি কি কিছু জানো? ওর আচরণ খুব চোখে পড়ে,কষ্ট হয়- যে মানুষটা হই চই করে কত আনন্দে ফিরতো একসাথে”-বলে থামলো শ্যামলী দি।

প্রশ্নটা শুনে ঠোঁট চেপে ভেতরে দীর্ঘশ্বাস নিয়েও সাবলীল হয়ে পায়েল উত্তর দিলো, “এমা তাই নাকি,কৈ আমি এসব তো কিছু জানিনা।হয়তো সৃষ্টিশীল মানুষ আপন খেয়ালে ভাবতে ভাবতে আসা যাওয়া করে আজকাল”। সে তো বটেই কিন্তু এত যে মানুষ পাল্টে যায়, আগের রঞ্জন যেন কেমন একদম হয়ে গেছে,উঠেই ট্রেনে অন্য সিটে বসে ঘুমিয়ে পড়ে।ও মনে হয় মোটেই ভালো নেই পায়েল ,একবার জিজ্ঞেস করে দেখোতো। রঞ্জন আর তুমি তো খুব ভালো পারিবারিক বন্ধু ছিলে তাই না? দাঁড়াও তো রঞ্জন, মনে হয় পাশের কামড়াতে আছে !ও কি জানে না যে তুমি আজকে এসেছ ট্রান্সফার নিয়ে চলে যাওয়ার এতদিন পর ?

অজান্তেই শ্যামলীদির হাত টা চেপে ধরলো পায়েল,থাক না দিদি ওকে আমি এসেছি খবরটা দিয়ে লাভ নেই গো বলেই চোখটা ছল ছল করে উঠলো তার।এই তুমি কেন এমন করছো পায়েল? অজান্তে তোমায় কোনো ভাবে আঘাত করে ফেললাম না তো! না গো দিদি তুমি ঠিকই ধরেছ, আমি ওকে ভুল বুঝে অপমান করে ফেলেছি একদিন তাই আমার আর ওকে ডাকার মুখ নেই ! অভিজ্ঞ শ্যামলীদি পরিস্থিতি হালকা করতে বললেন,”আরে তাতে রঞ্জন কিছু মনে করার ছেলেই নয়,এসেছো এদিকে, একবার দেখা করবে না তাই হয় ?তোমার মনে নেই পায়েল,আমরা তিনজন ফিরতাম ,কত সম্মান দিতো,সিট খুঁজতো আর কত নির্ভেজাল গল্পের ভাঁড়ার। তোমার কোথাও রঞ্জনকে চিনতে ভুল হচ্ছে পায়েল।

হয়তো শ্যামলীদি আমারই ভুল। আমি ট্রেনে খুব বিধ্বস্ত থাকতাম, ভেতরে ভেতরে মৃতপ্রায় প্রায় আর রঞ্জন বকবক সারাক্ষণ কানের সামনে। কখনো পরিবারের গল্প,কখনো ওর সাহিত্য জগৎ কথা যেন থামতোই না । আমি যতবার ওকে বারণ করে সাবধান করতাম, এত নিজের কথা আমারও কিছু বলার থাকে ,প্রকাশ্যে কে কি ভাববে -বদনাম দেবে তবু শুনতো না। অনেক বার রেগে ওকে ব্লক করেছি,কথা বন্ধ করেছি তবু গায়ে না মেখে সেই বাচ্চাদের মতো পাশটায় এসে বসতো।তারপর ট্রেনে গসিপ ছড়ালো আমরা নাকি রোজ একসাথে বসি,কিছু হয়তো সম্পর্ক আছে আমাদের মধ্যে।লোকজনের নিম্নমানের রুচি,ভাবনা দেখে মাথা গরমও হয়ে গেছিলো।

“ও,লোকে কে কি বললো আর তুমি পায়েল ওদের পাতা ফাঁদে পা গলিয়ে এমন নিঃসার্থ ভাল বন্ধুকেই সরিয়ে দিয়েছো চিরতরে! রঞ্জন না হয় একটু কথা বেশি বলতে ভালোবাসে,কৈ এতদিন তো তুমি আসার আগে থেকে ওকে দেখেছি সামান্য দোষত্রুটিও চোখে পড়েনি কোনোদিন, আজ একেবারে ব্রাত্য!

চুপ করে পায়েল শ্যামলী দির কথা গুলো শুনছিলো আর ওর মনের মধ্যে না জানি কেমন একটা ঝড় আছড়ে পড়ছিল।একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বলল, “দিদি তুমি একদম ঠিক বলেছ ,ঠিকই চিনেছো ওকে । আমার এ অন্যায়ের ক্ষমা নেই”।

দূর বোকা মেয়ে এমন করে কেউ চোখ ভেজায় নাকি।যখন দেখতাম তোমরা কি সুন্দর ভালো বন্ধু হয়ে বিপদে আপদে পাশে দাঁড়াতে,পারিবারিক বন্ধু হয়ে গেছিলে বেশ ভালো লাগতো।তোমার বর তুমি আর রঞ্জন একসাথে একটা ছবি ফেসবুকে আপলোড করে ছিলে মনে পড়ে? এখনো ওই ছবি আমার খুব মনে ভাসে গো, যাই করো ভাল বন্ধুত্ব নষ্ট করো না পায়েল।

চলো কোথায় এলো দেখি নামতে হবে বলে শ্যামলী দি উঠতে যেতেই পায়েল বললো দিদি , এ লাইনের নিত্যযাত্রীদের হোয়াটসঅ্যাপ রেল গ্রুপে তো আমি আর নেই ,তাই রঞ্জনের নাম্বার আমাকে দিতে পারবে একটু । কথাটা থামাতেই চোখ কপালে তুলে শ্যামলী দি ,সেকি রঞ্জনের নম্বর তো তোমার মোবাইলে ছিল,সেটাও ডিলিট করে দিয়েছো! দেখেছো তো কেমন লুকোচ্ছিলে আমার কাছে কিন্তু আমার প্রথম থেকেই সন্দেহ হচ্ছিল জানো কোথাও যেন এড়িয়ে যাচ্ছ। চলো নেমে বরং তোমায় রঞ্জনের নম্বর দিচ্ছি ওকে ফোন করে নিও।আর শোনো না পায়েল আবার যদি কোনদিন আমাদের লাইনে আসো দেখা না হলেও এই দিদিকে ফোন করে একদম সটান বাড়ি চলে এসো কেমন। সারাদিন জমিয়ে গল্প করব দুজনের পরিবার মিলে-বলে উনি নেমে গেলেন।

শ্যামলীদি নেমে যেতেই শুধু মনে হচ্ছিল রঞ্জন কি সত্যিই এই ট্রেনে, ইস একবার যদি ওর সামনে যেতে পারতাম ,একটু বসতে পারতাম বা ফোন করে খবর নিতে ! একবার যদি প্রশ্ন করতে পারতাম “হ্যাঁ রে তোদের চাকরীর টানাপোড়েন কেটেছে?ভালো আছেরে তোর মেয়ে ,স্ত্রী রিমলি-আমার ওপর অভিমানে কি লেখাও কমিয়েছিস রঞ্জন!কেন তবে এত ভরসা করতিস রে আমার ওপর তুই ?-আনমনে বুদ্বুদ ওঠা এত কিছু প্রশ্নের ভিড়ে হঠাৎ এক চেনা ঝালমুড়ি ওলা ,”আরে দিদি ভালো আছেন তো,কতদিন দেখিনা-খাবেন নাকি ঝাল মুড়ি,দাঁড়ান বানাই, খুব ভালো আচারের তেল আছে দিদি।

“হুম বানান”-বলে “আচ্ছা দাদা,রঞ্জনকে দেখেছেন ট্রেনে”, বলে মুখ ফসকে প্রশ্নটা করে ফেলতেই, “আরে ওই তো সামনের দিকে জানলায় রঞ্জন দা ঘুমাচ্ছে দেখলাম”।

“আরে তাইতো, এতক্ষণ খেয়ালই করিনি বলে”- বাঙ্ক থেকে ব্যাগটা নামিয়ে এক হাতে ঝাল মুড়ি,অন্যহাতে জলের বোতল নিয়ে হুড়মুড়িয়ে পায়েল একদম স্বভাব সিদ্ধ ভঙ্গিতে রঞ্জনের ঠিক পাশের ফাঁকা সিটে বসে পড়লো।ভেতরের যেন ধুকপুকানি বহুগুণ বেড়ে গেছে তার।একি শরীরের অবস্থা করেছে রঞ্জন, জামাকাপড় অগোছালো,বয়স যেন এক লহমায় অনেক বেড়ে গেছে তার পবিত্র বন্ধুর! ঝালমুড়ির ঠোঙাটা রঞ্জনের মুখের সামনে এগিয়ে ধরতেই উভয়ের সকল ইতস্তত বোধ যেন ঘুচে গিয়ে ক্ষনিকেই দুজনের চোখের বাঁধভাঙ্গা জল এক নীরব ব্যাকুলতার সাক্ষী হয়ে রইলো দুই বন্ধু সুজনের হৃদয়।

রিং বেজে উঠল শ্যামলী দির,নাও পায়েল লেখো রঞ্জনের নম্বরটা -ও দিদি আমি খুঁজে পেয়েছি গো রঞ্জনকে ।তুমি না থাকলে এভাবেই মৃত্যু হতো আমাদের পবিত্র নির্ভেজাল বন্ধুত্বের ।তুমিও ভালো থেকো দিদি।

রঞ্জন তাকা আমার দিকে,নে ঝালমুড়ি খা । কোনদিন ছেড়ে থাকবি না ,আমিও ছেড়ে যাবো না কথা দিলাম । এভাবে গুমড়ে থাকিস না প্লিজ বলতেই রঞ্জনের ক্লান্ত বিধস্ত মুখে যেন বিদ্যুৎ খেলে গেল,অস্ফুটে বললো বাপরে তুই তো অনেক স্লিম হয়ে গেছিস রে ভূতনি!এক অদ্ভুত আনন্দ,স্বর্গসুখে দুজনেই হো হো করে হেসে উঠলো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress