Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » বৃত্রসংহার (প্রথম সর্গ) || Hemchandra Bandyopadhyay

বৃত্রসংহার (প্রথম সর্গ) || Hemchandra Bandyopadhyay

প্রথম সর্গ

বসিয়া পাতালপুরে ক্ষুব্ধ দেবগণ,–
নিস্তব্ধ, বিমর্ষভাব চিন্তিত, আকুল ;
নিবিড় ধূমান্ধ ঘোর পুরী সে পাতাল,
নিবিড় মেঘডম্বরে যথা আমানিশি |

যোজন সহস্র কোটি পরিধি বিস্তার—
বিস্তৃত সে রসাতল, বিধুনিত সদা ;
চারিদিকে ভয়ঙ্কর শব্দ নিরন্তর
সিন্ধুর আঘাতে স্বতঃ নিয়ত উথ্বিত |

বসিয়া আদিত্যগণ তমঃ আচ্ছাদিত,
মলিন নির্ব্বাণ-প্রায় কলেবর-জ্যোতি
মলিন নির্ব্বাণ যথা সূর্য্য ত্বিষাম্পতি,
রাহু যবে রবিরথ গ্রাসয়ে অম্বরে ;

কিম্বা সে রজনীনাথ হেমন্ত-নিশিতে
কুঞ্ঝটি-মণ্ডিত যথা হীন দীপ্তি ধরে,
পাণ্ডু বর্ণ, সমাকীর্ণ পাংশুবৎ তনু ;–
তেমতি অমরকান্তি ক্লান্ত অবয়বে |

ব্যাকুল, বিমর্ষ ভাব, ব্যথিত অন্তর,
অদিতি-নন্দনগণ রসাতল-পুরে,
স্বর্গের ভাবনা চিত্তে ভাবে সর্ব্বক্ষণ —
কিরূপে করিবে ধ্বংস দুর্জ্জয় অসুরে |

চারিদিকে সমুথ্বিত অস্ফুট আরাব
ক্রমে দেব-বৃন্দমুখে বহে গাঢ় শ্বাস,—
ঝটিকার পূর্ব্বে যেন বায়ুর উচ্ছ্বাস
বহে যড়ি চারিদিক্ আলোড়ি সাগর |

সে অস্ফুট ধ্বনি ক্রমে পূরে রসাতল
ঢাকিয়া সিন্ধুর নাদ গভীর নিনাদে ;
দেব-নাসিকায় বহে সঘন নিশ্বাস,
আন্দোলি পাতালপুরী, তীব্র ঝড়বেগে |

দেব-সেনাপতি স্কন্দ উঠিয়া তখন
কহিলা গম্ভীর স্বরে,—শূন্যপথে যেন
একত্র জীমূতবৃন্দ মন্দ্রিল শতেক—
মহাতেজে সুরবৃন্দে সম্ভাষি কহিলা :—

“জাগ্রত কি দানবারি সুরবৃন্দ আজ ?
জাগ্রত কি অস্বপন দৈত্যহারী দেব ?
দেবের সমরক্লান্তি ঘুচিল কি এবে ?
উঠিতে সমর্থ কি হে সকলে এখন ?

“হা ধিক্ ! হা ধিক্ দেব ! আদিতি-প্রসূত !
সুরভোগ্য স্বর্গ এবে দনুজের বাস !
নির্ব্বাসিত সুরগণ রসাতল ভূমে,
অবসন্ন, তেজঃশূন্য, অশক্ত, অলস !

“দুর্ব্বিনীত, দেবদ্বেষী দনুজ-প্রবেশে
পবিত্র অমরধাম কলঙ্কিত আজ,
অজর অমর শূর স্বর্গ অধিকারী,
দেববৃন্দ স্বর্ ভ্রষ্ট পড়িয়া পাতালে !

“ভ্রান্ত্ কি হইলা সবে ? কি ঘোর প্রমাদ !
চিরসিদ্ধ দেবনাম খ্যাত চরাচরে,
‘অসুরমর্দ্দন’ আখ্যা—কি হেতু হে তবে
অবসন্ন আজি সবে দৈত্যের প্রতাপে ?

“চিরযোদ্ধা — চিরকাল যুঝি দৈত্য সহ
জগতে হইলা শ্রেষ্ঠ, সর্ব্বত্র পূজিত ;
আজি কি না দৈত্য ভয়ে ত্রাসিত সকলে
আছ এ পাতাল পুরে অমরা বিস্মরি !

“কি প্রতাপ দনুজের, কি বিক্রম হেন,
শঙ্কিত সকলে যাহে স্ববীর্য্য পাশরি ?
কোথা সে শূরত্ব আজি বিজয়ী দেবের
শত বার রণে যায় দনুজে দলিলা ?

“ ধিক্ দেব ! ঘৃণাশূন্য, অক্ষুদ্ধ-হৃদয়,
এত দিন আছ এই অন্ধতম পুরে,
দেবত্ব, ঐশ্বর্য্য, সুধা, স্বর্গ তেয়াগিয়া
দাসত্বের কলঙ্কেতে ললাট উজলি |

“ধিক্ হে অমর নামে, দৈত্যভয়ে যদি
অমরা পশিতে ভয় এতই পরাণে,
অমরতা পরিণাম পরিশেষে যদি
দৈত্য-পদাঙ্কিত পৃষ্ঠ, চিরনির্ব্বাসন !

“ বল হে অমরগণ—বল প্রকাশিয়া
এইরূপে চিরদিন থাকিবে কি হেথা ?
চির অন্ধতম পুরী এ পাতাল দেশে,
দনুজের পদ-চিহ্ন ললাটে আঁকিয়া ?”

কহিলা পার্ব্বতীপুত্র দেব-সেনাপতি |
দেবগণ বিচলিত করিয়া শ্রবণ,
কাঁপিতে কাঁপিতে ক্রমে সক্রোধ মূরতি,
নাসারন্ধ্রে বহে শ্বাস নিকট উচ্ছ্বাসে |

যথা দগ্ধগিরি-স্রাব উদ্গিরণ আগে,
অগ্নির-ভূধরে ধূম সতত নির্গমে
ঘন জলকম্প, ঘন কম্পিত মেদিনী ;
পার্ব্বতী–নন্দন বাক্যে সেইরূপ দেবে |

তুলিয়া সুপৃষ্ঠে তৃণ, পাশ, শক্তি ধরি,
উঠিলা অমরবৃন্দ চাহি শূন্যপানে,
পুনঃ পুনঃ খরদৃষ্টি নিক্ষেপি তিমিরে,
ছাড়িতে লাগিল ঘন ঘন হুহুঙ্কার |

সর্ব্বাগ্রে অনলমূর্ত্তি —দেব বৈশ্বানর,
প্রদীপ্ত কৃপাণ করে, উন্মত্ত স্বভাব,
কহিতে লাগিল, দ্রুত কর্কশ বচনে,
স্ফুলিঙ্গ ছুটিল যেন ঘোর দাবাগ্নিতে !

কহিলা “হে সেনাপতি ! এ মণ্ডলী-মাঝে
কোন ভীরু আছে হেন, ইচ্ছা নহে যার
অমর-নিবাস স্বর্গ উদ্ধারিতে পুনঃ ?
পুনঃ প্রবেশিতে তায় স্ববেশ ধরিয়া ?

“দানবে যুঝিতে, আর কি ভয় এখন ?
ভীরুতার হেতু আর আছে কিহে কিছু,
অমরের তিরস্কার সম্ভব যতেক
ঘটেছে দেবের ভাগ্যে, দৈব-বিড়ম্বন |

“ স্বর্গ অধোদেশে মর্ত্ত, অধোদেশে তার,
অতল গভীর সিন্ধু— তাহার আধোতে,
অন্ধতম পুরী এই বিষম পাতাল,
তাহে এবে দৈত্য-ভয়ে লুক্কায়িত সবে |
“দুঃখে বাস,—ধূমময় গাঢ়তর তমঃ
মুহূর্ত্তে মুহূর্ত্তে, ঘন ঘন প্রকম্পন,
সিন্ধুনাদ শিরোপরি সদা নিনাদিত
শরীর-কম্পন হিমস্তুপ চারিদিকে |

“ এ কষ্ট অনন্তকাল যুগ যুগান্তরে
ভুঞ্জিতে হইবে দেবে থাকিলে এখানে,
যত দিন প্রলয়ে না সংহার অনলে
অমর-আত্মার ধ্বংস হয় পুনর্ব্বার |

“অথবা কপটী হ’য়ে ছদ্মবেশ ধরি
দেবের ঘৃণিত ছল ধূর্ত্ততা প্রকাশি,
ত্রিলোক ভিতরে নিত্য হইবে ভ্রমিতে,
মিথ্যুক বঞ্চক বেশে নিত্য পরবাসী |

“নিরন্তর মনে ভয় কাপট্য প্রকাশ
হয় পাছে কার (ও ) কাছে চিত্তে জাগরিত
বিষম দুঃসহ চিন্তা, ঘৃণা লজ্জাকর
সতত কতই আরো হৃদয়ে যন্ত্রণা !

“সে কাপট্য ধরি প্রাণে জীবন যাপনা,
শরীর বহন আর, দুর্গতির শেষ ;
বরঞ্চ নিরয়-গর্ভে নিয়ত নিবাস
শ্রেয়স্কর শতগুণ জিনি সে শঠতা !

“অথবা প্রকাশ্যভাবে হইবে ভ্রমিতে
চতুর্দ্দশ-লোক-নিন্দা সহি অবিরত,
শত্রু-তিরস্কার অঙ্গে অলঙ্কার করি,
কপালে দাসত্ব চিহ্ন ধরিয়া লাঞ্ছিত !

“যখন ভ্রূকুটি করি চাহিবে দানব,
কিম্বা সে অঙ্গুলি তুলি ব্যঙ্গ-উপহাসে
দেখাইবে এই দেব স্বর্গের নায়ক,
শত নরকের বহ্নি অন্তর দহিবে !

“অথবা বর্জ্জিত হ’য়ে দেবত্ব আপন
থাকিতে হইবে স্বর্গে মার আছে যথা,
অসুর-উচ্ছিষ্ট গ্রাসি পুষ্ট কলেবর,
অসুর-পদাঙ্ক-রজঃ ভূষণ মস্তকে |

“তার চেয়ে শতবার পশিব গগনে
প্রকাশি অমরবীর্য্য, সমরের স্রোতে
ভাসিব অনন্তকাল দনুজ সংগ্রামে,
দেবরক্ত যতদিন না হইবে শেষ |

“অমর করিয়া সৃষ্টি করিলা যে দেবে
পিতামহ পদ্মাসন—সুমনস্ খ্যাতি ;
ব্রহ্মাণ্ড ভিতরে যারা সর্ব্বগরীয়ান্
অদৃষ্টের বশে হায় তাদের এ গতি !

“দেবজন্ম লাভ করি অদৃষ্টের বশ,
তবে সে দেবত্ব কোথা হে অ-মর্ত্ত্যগণ ?
দেব অস্ত্রাঘাতে নহে দানব বিনাশ,
সে দেববিক্রমে তবে কিবা ফলোদয় ?

“নিয়তি স্বতঃ কি কভু অনুকূল কারে ?
দেব কি দানব কিম্বা মানব সন্তানে ?
সাহসে যে পারে তার কাটিতে শৃঙ্খল,
নিয়তি কিঙ্কর তার শুন দেবগণ |

“ধর শক্তি শক্তিধর, হও অগ্রসর,
জাঠা, শক্তি, ভিন্দিপাল, শেল, নাগপাশ,
সুরবৃন্দ সুরতেজে কর বরিষণ,
অদৃষ্ট খণ্ডন করি সংহার অসুরে |”

কহিলা সে হুতাশন সর্ব্ব-অঙ্গে শিখা
প্রজ্বলিত হৈল তেজে পাতাল দহিয়া ;
অগ্নির বচনে মত্ত আদিত্য সকলে
ছুটিল হুঙ্কার শব্দে পুরি রসাতল |

একেবারে শত দিকে শত প্রহরণে,
কোটি বিজলীর জ্যোতিঃ খেলিতে লাগিল ;
পাতলের অন্ধকার ঘুচায়ে নিমিষে
দেখাদিল চারিদিকে জ্যোতির্ম্ময় দেহ |

তখন প্রচেতা—মর্ত্তে বরুণ বিখ্যাত—
উঠিলা গম্ভীরভাব, ধীর মূর্ত্তি ধরি,
পাশ-অস্ত্র শূন্য’পরে হেলাইয়া যেন,
উন্মত্ত জলধিজল প্রশান্ত করিল |

দেখিয়া প্রশান্ত-মূর্ত্তি দেব প্রচেতার
নিস্তব্ধ অমরগণ নিস্তব্ধ যেমন
স্নিগ্ধ বসুন্ধরা, যবে ঝটিকা নিবারে
ত্রিরাত্রি ত্রিদিবা ঘোর হুহুঙ্কার ছাড়ি |

কহিলা প্রচেতা ধীর গম্ভীর বচন—
তিষ্ঠ দেবগণ ক্ষণকাল শান্তভাবে,
হেন প্রগল্ ভতা নহে মহতে উচিত,
এ ঔদ্ধত্য অল্পমতি প্রাণীদের সম্ভবে |

“যুদ্ধে দৈত্য বিনাশিয়া স্বর্গ উদ্ধারিতে
অনিচ্ছা কাহার দৈত্যঘাতী দেবকুলে ?
কে আছে নারকী হেন দেব—নাম—ধারী
দ্বিরুক্তি করিবে হেন পবিত্র প্রস্তাবে ?

“তথাপি প্রতিজ্ঞা বাক্য উচ্চারণ আগে
উচিত ভাবিয়া দেখা ফলাফল তার ;
সামান্যের ( ও ) উপদেশ শুভপ্রদ কভু ,
জ্ঞানীর মন্ত্রণা কভু না হয় নিস্ফল |

“ কি ফল প্রতিজ্ঞা করি বিফল যদ্যপি ?
সর্ব্বজন হাস্যস্পদ হ’য়ে কিবা ফল ?
অসিদ্ধপ্রতিজ্ঞ লোক অনর্থ প্রলাপী ;
নমস্য জগতে, কার্য্যে সুসিদ্ধ যে জন |

“অনেক মহাত্মা বাক্য কহিলা অনেক,
কার্য্যসিদ্ধি নহে শুধু বাক্য-আড়ম্বরে ;
কোদণ্ড-নির্ঘোষ কর্ণে প্রবেশের আগে
শরলক্ষ্য ধরাশায়ী হয় শরাঘাতে |

“দেব-তেজ, দেব অস্ত্র, দেবের বিক্রম,
বার বার এত যার কর অহঙ্কার,
এত দিন কোথা ছিল, অসুরের সনে
যুঝিলে যখন রণে করি প্রাণপণ ?

“কোথা ছিল সে সকল যবে দৈত্য-শূল
নিক্ষেপিল সুরবৃন্দে এ পুরী পাতালে ?
সমর্থ কি হয়েছিলো করিতে নিস্তেজ
দুর্জ্জয় বৃত্রের হস্ত দেব অস্ত্রাঘাতে ?

“অস্ত্র সেই, বীর্য্য সেই, সেই দেবগণ,
অক্ষুণ্ণ অসুর( ও ) সেই, সুপ্রসন্ন বিধি
এখনো রক্ষিছে তারে অনিবার্য্য তেজে,
কি বিশ্বাসে পুনঃ চাহ পশিতে সংগ্রামে ?

“ভাগ্য নাই ! ভাগধেয় মূঢ়ের প্রলাপ !
সাহস যাহার সদা সেই ভাগ্যধর !
তবে কেন ইন্দ্র-বাণ-তেজঃ দুর্নিবার
অক্ষত-শরীরে দৈত্য ধরিলা বক্ষেতে ?

“কেন ইন্দ্র সুরপতি সর্ব্বরণজয়ী
দনুজমর্দ্দন নিত্য, শূলের প্রহারে
অচেতন রণস্থলে হইলা আপনি,
চেতন বিরতি যার নহে ক্ষণকাল ?

“কেন বা সে ইন্দ্র আজি নিয়তির ধ্যানে,
সঙ্কল্প করিয়া দৃঢ় প্রগাঢ় মানসে,
কুমেরু-শিখরে একা কাটাইছে কাল,–
কেন সুরপতি বৃথা এ ধ্যানে নিরত ?

“দেবগণ, মন বাক্য অকর্ত্তব্য রণ
যত দিন ইন্দ্র আসি না হন সহায় ;
অগ্রে কোন দেব তাঁর করুন উদ্দেশ,
পশ্চাৎ যুদ্ধকল্পনা হ’বে সমাপিত |”

বরুণের বাক্যে সূর্য্যদেব ত্বিষাম্পতি
উঠিলা প্রখর তেজঃ —কহিলা সবেগে—
বক্তব্য আমার অগ্রে শুন সর্ব্বজন
ভাবিও সে বৈধাবৈধ বাঞ্ছনীয় শেষ |

“ ত্রিজগতে জীবশ্রেষ্ঠ নির্জ্জর অমর,
অদিতি-নন্দনগণ চির আয়ুষ্মান্,
অনশ্বর দেববীর্য্য, শরীর অক্ষয়,
সর্ব্বকালে সর্ব্বলোকে প্রসিদ্ধ এ বাদ |

“অসুর অচিরস্থায়ী, অদৃষ্ট অস্থির ;
চঞ্চল দানবচিত্ত রিপু পরবশ ;
মন্ত্রী মিত্র কেহ নহে চির আজ্ঞাবহ ;
জয়োত্সাহ প্রভুভক্তি অনিত্য সকলি ;

“সর্ব্বকালে সর্ব্বজনে জান তথ্য এই,
দুরন্ত দানব তবে কত দিন সবে
দুর্ব্বার সমরক্ষেত্রে সুরবীর্য্যানল,
কতকাল রবে দৈত্য সে রণে তিষ্ঠিয়া ?

“মম ইচ্ছা সুরবৃন্দ দুরন্ত আহবে,
দহ হে দানবকুল ভীম উগ্র তেজে,
যুগে যুগে কল্পে কল্পে নিত্য নিরন্তর
জ্বলুক গগন ব্যাপী অনন্ত সমর !

“জ্বলুক দেবের তেজ অমরা ঘেরিয়া
অহোরাত্র অবিশ্রান্ত প্রখর শিখায় ;
দহুক দানবকুল দেবের বিক্রমে,
পুত্রপরম্পরা ঘোর চিরশোকানলে |

“চিরযুদ্ধে দৈত্যদল হইবে ব্যথিত,
না জানিবে কোনকালে বিশ্রামের সুখ,
নারিবে তিষ্ঠিতে স্বর্গে দেব-সন্নিধানে,
হইবে অমর-হস্তে পরাস্ত নিশ্চিত |

“অদৃষ্ট এতই যদি সদয় দানবে,
কোনযুগে নাহি হয় যুদ্ধে পরাজিত,
ভুঞ্জুক অদৃষ্ট তবে তিক্ত আস্বাদনে
চিরযুদ্ধে সুরতেজে দানব দুর্ম্মতি |

“ধিক্ লজ্জা ! অমরের এ বীর্য্য থাকিতে
নিষ্কন্টকে স্বর্গভোগ করে বৃত্রাসুর !
সুখে নিদ্রা যায় নিত্য দেবে উপেক্ষিয়া,–
স্বর্গ-বিরহিত, দেব চিন্তায় ব্যাকুল !

“নাহিক বাসব হেথা সত্য বটে তাহা,
কিন্তু যদি পুরন্দর আরো বহুযুগ
প্রত্যাগত নাহি হন, তবে কি এখানে
এই ভাবে রবে সবে চির অন্ধকারে ?

“চল হে আদিত্যগণ প্রবেশি শূন্যেতে,
দৈত্যের কন্টক হ’য়ে অমরা বেষ্টিয়া,
দগ্ধ করি দৈত্যকুল যুগ যুগ কাল,
যুদ্ধের অনন্তবহ্নি জ্বালায়ে অম্বরে |

“স্বর্গের সমীপবর্ত্তী পর্ব্বত সমূহে
শিখরে শিখরে জাগি শস্ত্রধারীবেশে,
সুশাণিত দেব-অস্ত্র নিত্য বরিষণে
দনুজের চিত্তশান্তি ঘুচাই আহবে |”

কহিলা এতেক সূর্য্য | ঝটিকার বেগে
চারিদিক্ হ’তে দেব ছুটিতে লাগিল
উথ্বিত বালুকা যথা, যখন মরুতে
মত্ত প্রভঞ্জন রঙ্গে নৃত্য করি ফেরে |

কিম্বা যথা যবে ঘোর প্রলয়ে ভীষণ
সংহার অনলে বিশ্ব হ’য়ে ভস্মাকার
উড়ে অন্তরীক্ষ পথে দিগন্ত আচ্ছাদি,
তেমতি অমরবৃন্দ ঘেরিলা ভাস্করে |

সকলে সম্মত শীঘ্র উঠি ব্যোমপথে,
বেষ্টিয়া অমরাবতী অরাত্রি অদিবা,
চিরস্মরের স্রোতে ঢালিয়া শরীর,
দেবনিন্দাকারী দুষ্ট অসুরে ব্যথিতে |

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *