প্রথম সর্গ
বসিয়া পাতালপুরে ক্ষুব্ধ দেবগণ,–
নিস্তব্ধ, বিমর্ষভাব চিন্তিত, আকুল ;
নিবিড় ধূমান্ধ ঘোর পুরী সে পাতাল,
নিবিড় মেঘডম্বরে যথা আমানিশি |
যোজন সহস্র কোটি পরিধি বিস্তার—
বিস্তৃত সে রসাতল, বিধুনিত সদা ;
চারিদিকে ভয়ঙ্কর শব্দ নিরন্তর
সিন্ধুর আঘাতে স্বতঃ নিয়ত উথ্বিত |
বসিয়া আদিত্যগণ তমঃ আচ্ছাদিত,
মলিন নির্ব্বাণ-প্রায় কলেবর-জ্যোতি
মলিন নির্ব্বাণ যথা সূর্য্য ত্বিষাম্পতি,
রাহু যবে রবিরথ গ্রাসয়ে অম্বরে ;
কিম্বা সে রজনীনাথ হেমন্ত-নিশিতে
কুঞ্ঝটি-মণ্ডিত যথা হীন দীপ্তি ধরে,
পাণ্ডু বর্ণ, সমাকীর্ণ পাংশুবৎ তনু ;–
তেমতি অমরকান্তি ক্লান্ত অবয়বে |
ব্যাকুল, বিমর্ষ ভাব, ব্যথিত অন্তর,
অদিতি-নন্দনগণ রসাতল-পুরে,
স্বর্গের ভাবনা চিত্তে ভাবে সর্ব্বক্ষণ —
কিরূপে করিবে ধ্বংস দুর্জ্জয় অসুরে |
চারিদিকে সমুথ্বিত অস্ফুট আরাব
ক্রমে দেব-বৃন্দমুখে বহে গাঢ় শ্বাস,—
ঝটিকার পূর্ব্বে যেন বায়ুর উচ্ছ্বাস
বহে যড়ি চারিদিক্ আলোড়ি সাগর |
সে অস্ফুট ধ্বনি ক্রমে পূরে রসাতল
ঢাকিয়া সিন্ধুর নাদ গভীর নিনাদে ;
দেব-নাসিকায় বহে সঘন নিশ্বাস,
আন্দোলি পাতালপুরী, তীব্র ঝড়বেগে |
দেব-সেনাপতি স্কন্দ উঠিয়া তখন
কহিলা গম্ভীর স্বরে,—শূন্যপথে যেন
একত্র জীমূতবৃন্দ মন্দ্রিল শতেক—
মহাতেজে সুরবৃন্দে সম্ভাষি কহিলা :—
“জাগ্রত কি দানবারি সুরবৃন্দ আজ ?
জাগ্রত কি অস্বপন দৈত্যহারী দেব ?
দেবের সমরক্লান্তি ঘুচিল কি এবে ?
উঠিতে সমর্থ কি হে সকলে এখন ?
“হা ধিক্ ! হা ধিক্ দেব ! আদিতি-প্রসূত !
সুরভোগ্য স্বর্গ এবে দনুজের বাস !
নির্ব্বাসিত সুরগণ রসাতল ভূমে,
অবসন্ন, তেজঃশূন্য, অশক্ত, অলস !
“দুর্ব্বিনীত, দেবদ্বেষী দনুজ-প্রবেশে
পবিত্র অমরধাম কলঙ্কিত আজ,
অজর অমর শূর স্বর্গ অধিকারী,
দেববৃন্দ স্বর্ ভ্রষ্ট পড়িয়া পাতালে !
“ভ্রান্ত্ কি হইলা সবে ? কি ঘোর প্রমাদ !
চিরসিদ্ধ দেবনাম খ্যাত চরাচরে,
‘অসুরমর্দ্দন’ আখ্যা—কি হেতু হে তবে
অবসন্ন আজি সবে দৈত্যের প্রতাপে ?
“চিরযোদ্ধা — চিরকাল যুঝি দৈত্য সহ
জগতে হইলা শ্রেষ্ঠ, সর্ব্বত্র পূজিত ;
আজি কি না দৈত্য ভয়ে ত্রাসিত সকলে
আছ এ পাতাল পুরে অমরা বিস্মরি !
“কি প্রতাপ দনুজের, কি বিক্রম হেন,
শঙ্কিত সকলে যাহে স্ববীর্য্য পাশরি ?
কোথা সে শূরত্ব আজি বিজয়ী দেবের
শত বার রণে যায় দনুজে দলিলা ?
“ ধিক্ দেব ! ঘৃণাশূন্য, অক্ষুদ্ধ-হৃদয়,
এত দিন আছ এই অন্ধতম পুরে,
দেবত্ব, ঐশ্বর্য্য, সুধা, স্বর্গ তেয়াগিয়া
দাসত্বের কলঙ্কেতে ললাট উজলি |
“ধিক্ হে অমর নামে, দৈত্যভয়ে যদি
অমরা পশিতে ভয় এতই পরাণে,
অমরতা পরিণাম পরিশেষে যদি
দৈত্য-পদাঙ্কিত পৃষ্ঠ, চিরনির্ব্বাসন !
“ বল হে অমরগণ—বল প্রকাশিয়া
এইরূপে চিরদিন থাকিবে কি হেথা ?
চির অন্ধতম পুরী এ পাতাল দেশে,
দনুজের পদ-চিহ্ন ললাটে আঁকিয়া ?”
কহিলা পার্ব্বতীপুত্র দেব-সেনাপতি |
দেবগণ বিচলিত করিয়া শ্রবণ,
কাঁপিতে কাঁপিতে ক্রমে সক্রোধ মূরতি,
নাসারন্ধ্রে বহে শ্বাস নিকট উচ্ছ্বাসে |
যথা দগ্ধগিরি-স্রাব উদ্গিরণ আগে,
অগ্নির-ভূধরে ধূম সতত নির্গমে
ঘন জলকম্প, ঘন কম্পিত মেদিনী ;
পার্ব্বতী–নন্দন বাক্যে সেইরূপ দেবে |
তুলিয়া সুপৃষ্ঠে তৃণ, পাশ, শক্তি ধরি,
উঠিলা অমরবৃন্দ চাহি শূন্যপানে,
পুনঃ পুনঃ খরদৃষ্টি নিক্ষেপি তিমিরে,
ছাড়িতে লাগিল ঘন ঘন হুহুঙ্কার |
সর্ব্বাগ্রে অনলমূর্ত্তি —দেব বৈশ্বানর,
প্রদীপ্ত কৃপাণ করে, উন্মত্ত স্বভাব,
কহিতে লাগিল, দ্রুত কর্কশ বচনে,
স্ফুলিঙ্গ ছুটিল যেন ঘোর দাবাগ্নিতে !
কহিলা “হে সেনাপতি ! এ মণ্ডলী-মাঝে
কোন ভীরু আছে হেন, ইচ্ছা নহে যার
অমর-নিবাস স্বর্গ উদ্ধারিতে পুনঃ ?
পুনঃ প্রবেশিতে তায় স্ববেশ ধরিয়া ?
“দানবে যুঝিতে, আর কি ভয় এখন ?
ভীরুতার হেতু আর আছে কিহে কিছু,
অমরের তিরস্কার সম্ভব যতেক
ঘটেছে দেবের ভাগ্যে, দৈব-বিড়ম্বন |
“ স্বর্গ অধোদেশে মর্ত্ত, অধোদেশে তার,
অতল গভীর সিন্ধু— তাহার আধোতে,
অন্ধতম পুরী এই বিষম পাতাল,
তাহে এবে দৈত্য-ভয়ে লুক্কায়িত সবে |
“দুঃখে বাস,—ধূমময় গাঢ়তর তমঃ
মুহূর্ত্তে মুহূর্ত্তে, ঘন ঘন প্রকম্পন,
সিন্ধুনাদ শিরোপরি সদা নিনাদিত
শরীর-কম্পন হিমস্তুপ চারিদিকে |
“ এ কষ্ট অনন্তকাল যুগ যুগান্তরে
ভুঞ্জিতে হইবে দেবে থাকিলে এখানে,
যত দিন প্রলয়ে না সংহার অনলে
অমর-আত্মার ধ্বংস হয় পুনর্ব্বার |
“অথবা কপটী হ’য়ে ছদ্মবেশ ধরি
দেবের ঘৃণিত ছল ধূর্ত্ততা প্রকাশি,
ত্রিলোক ভিতরে নিত্য হইবে ভ্রমিতে,
মিথ্যুক বঞ্চক বেশে নিত্য পরবাসী |
“নিরন্তর মনে ভয় কাপট্য প্রকাশ
হয় পাছে কার (ও ) কাছে চিত্তে জাগরিত
বিষম দুঃসহ চিন্তা, ঘৃণা লজ্জাকর
সতত কতই আরো হৃদয়ে যন্ত্রণা !
“সে কাপট্য ধরি প্রাণে জীবন যাপনা,
শরীর বহন আর, দুর্গতির শেষ ;
বরঞ্চ নিরয়-গর্ভে নিয়ত নিবাস
শ্রেয়স্কর শতগুণ জিনি সে শঠতা !
“অথবা প্রকাশ্যভাবে হইবে ভ্রমিতে
চতুর্দ্দশ-লোক-নিন্দা সহি অবিরত,
শত্রু-তিরস্কার অঙ্গে অলঙ্কার করি,
কপালে দাসত্ব চিহ্ন ধরিয়া লাঞ্ছিত !
“যখন ভ্রূকুটি করি চাহিবে দানব,
কিম্বা সে অঙ্গুলি তুলি ব্যঙ্গ-উপহাসে
দেখাইবে এই দেব স্বর্গের নায়ক,
শত নরকের বহ্নি অন্তর দহিবে !
“অথবা বর্জ্জিত হ’য়ে দেবত্ব আপন
থাকিতে হইবে স্বর্গে মার আছে যথা,
অসুর-উচ্ছিষ্ট গ্রাসি পুষ্ট কলেবর,
অসুর-পদাঙ্ক-রজঃ ভূষণ মস্তকে |
“তার চেয়ে শতবার পশিব গগনে
প্রকাশি অমরবীর্য্য, সমরের স্রোতে
ভাসিব অনন্তকাল দনুজ সংগ্রামে,
দেবরক্ত যতদিন না হইবে শেষ |
“অমর করিয়া সৃষ্টি করিলা যে দেবে
পিতামহ পদ্মাসন—সুমনস্ খ্যাতি ;
ব্রহ্মাণ্ড ভিতরে যারা সর্ব্বগরীয়ান্
অদৃষ্টের বশে হায় তাদের এ গতি !
“দেবজন্ম লাভ করি অদৃষ্টের বশ,
তবে সে দেবত্ব কোথা হে অ-মর্ত্ত্যগণ ?
দেব অস্ত্রাঘাতে নহে দানব বিনাশ,
সে দেববিক্রমে তবে কিবা ফলোদয় ?
“নিয়তি স্বতঃ কি কভু অনুকূল কারে ?
দেব কি দানব কিম্বা মানব সন্তানে ?
সাহসে যে পারে তার কাটিতে শৃঙ্খল,
নিয়তি কিঙ্কর তার শুন দেবগণ |
“ধর শক্তি শক্তিধর, হও অগ্রসর,
জাঠা, শক্তি, ভিন্দিপাল, শেল, নাগপাশ,
সুরবৃন্দ সুরতেজে কর বরিষণ,
অদৃষ্ট খণ্ডন করি সংহার অসুরে |”
কহিলা সে হুতাশন সর্ব্ব-অঙ্গে শিখা
প্রজ্বলিত হৈল তেজে পাতাল দহিয়া ;
অগ্নির বচনে মত্ত আদিত্য সকলে
ছুটিল হুঙ্কার শব্দে পুরি রসাতল |
একেবারে শত দিকে শত প্রহরণে,
কোটি বিজলীর জ্যোতিঃ খেলিতে লাগিল ;
পাতলের অন্ধকার ঘুচায়ে নিমিষে
দেখাদিল চারিদিকে জ্যোতির্ম্ময় দেহ |
তখন প্রচেতা—মর্ত্তে বরুণ বিখ্যাত—
উঠিলা গম্ভীরভাব, ধীর মূর্ত্তি ধরি,
পাশ-অস্ত্র শূন্য’পরে হেলাইয়া যেন,
উন্মত্ত জলধিজল প্রশান্ত করিল |
দেখিয়া প্রশান্ত-মূর্ত্তি দেব প্রচেতার
নিস্তব্ধ অমরগণ নিস্তব্ধ যেমন
স্নিগ্ধ বসুন্ধরা, যবে ঝটিকা নিবারে
ত্রিরাত্রি ত্রিদিবা ঘোর হুহুঙ্কার ছাড়ি |
কহিলা প্রচেতা ধীর গম্ভীর বচন—
তিষ্ঠ দেবগণ ক্ষণকাল শান্তভাবে,
হেন প্রগল্ ভতা নহে মহতে উচিত,
এ ঔদ্ধত্য অল্পমতি প্রাণীদের সম্ভবে |
“যুদ্ধে দৈত্য বিনাশিয়া স্বর্গ উদ্ধারিতে
অনিচ্ছা কাহার দৈত্যঘাতী দেবকুলে ?
কে আছে নারকী হেন দেব—নাম—ধারী
দ্বিরুক্তি করিবে হেন পবিত্র প্রস্তাবে ?
“তথাপি প্রতিজ্ঞা বাক্য উচ্চারণ আগে
উচিত ভাবিয়া দেখা ফলাফল তার ;
সামান্যের ( ও ) উপদেশ শুভপ্রদ কভু ,
জ্ঞানীর মন্ত্রণা কভু না হয় নিস্ফল |
“ কি ফল প্রতিজ্ঞা করি বিফল যদ্যপি ?
সর্ব্বজন হাস্যস্পদ হ’য়ে কিবা ফল ?
অসিদ্ধপ্রতিজ্ঞ লোক অনর্থ প্রলাপী ;
নমস্য জগতে, কার্য্যে সুসিদ্ধ যে জন |
“অনেক মহাত্মা বাক্য কহিলা অনেক,
কার্য্যসিদ্ধি নহে শুধু বাক্য-আড়ম্বরে ;
কোদণ্ড-নির্ঘোষ কর্ণে প্রবেশের আগে
শরলক্ষ্য ধরাশায়ী হয় শরাঘাতে |
“দেব-তেজ, দেব অস্ত্র, দেবের বিক্রম,
বার বার এত যার কর অহঙ্কার,
এত দিন কোথা ছিল, অসুরের সনে
যুঝিলে যখন রণে করি প্রাণপণ ?
“কোথা ছিল সে সকল যবে দৈত্য-শূল
নিক্ষেপিল সুরবৃন্দে এ পুরী পাতালে ?
সমর্থ কি হয়েছিলো করিতে নিস্তেজ
দুর্জ্জয় বৃত্রের হস্ত দেব অস্ত্রাঘাতে ?
“অস্ত্র সেই, বীর্য্য সেই, সেই দেবগণ,
অক্ষুণ্ণ অসুর( ও ) সেই, সুপ্রসন্ন বিধি
এখনো রক্ষিছে তারে অনিবার্য্য তেজে,
কি বিশ্বাসে পুনঃ চাহ পশিতে সংগ্রামে ?
“ভাগ্য নাই ! ভাগধেয় মূঢ়ের প্রলাপ !
সাহস যাহার সদা সেই ভাগ্যধর !
তবে কেন ইন্দ্র-বাণ-তেজঃ দুর্নিবার
অক্ষত-শরীরে দৈত্য ধরিলা বক্ষেতে ?
“কেন ইন্দ্র সুরপতি সর্ব্বরণজয়ী
দনুজমর্দ্দন নিত্য, শূলের প্রহারে
অচেতন রণস্থলে হইলা আপনি,
চেতন বিরতি যার নহে ক্ষণকাল ?
“কেন বা সে ইন্দ্র আজি নিয়তির ধ্যানে,
সঙ্কল্প করিয়া দৃঢ় প্রগাঢ় মানসে,
কুমেরু-শিখরে একা কাটাইছে কাল,–
কেন সুরপতি বৃথা এ ধ্যানে নিরত ?
“দেবগণ, মন বাক্য অকর্ত্তব্য রণ
যত দিন ইন্দ্র আসি না হন সহায় ;
অগ্রে কোন দেব তাঁর করুন উদ্দেশ,
পশ্চাৎ যুদ্ধকল্পনা হ’বে সমাপিত |”
বরুণের বাক্যে সূর্য্যদেব ত্বিষাম্পতি
উঠিলা প্রখর তেজঃ —কহিলা সবেগে—
বক্তব্য আমার অগ্রে শুন সর্ব্বজন
ভাবিও সে বৈধাবৈধ বাঞ্ছনীয় শেষ |
“ ত্রিজগতে জীবশ্রেষ্ঠ নির্জ্জর অমর,
অদিতি-নন্দনগণ চির আয়ুষ্মান্,
অনশ্বর দেববীর্য্য, শরীর অক্ষয়,
সর্ব্বকালে সর্ব্বলোকে প্রসিদ্ধ এ বাদ |
“অসুর অচিরস্থায়ী, অদৃষ্ট অস্থির ;
চঞ্চল দানবচিত্ত রিপু পরবশ ;
মন্ত্রী মিত্র কেহ নহে চির আজ্ঞাবহ ;
জয়োত্সাহ প্রভুভক্তি অনিত্য সকলি ;
“সর্ব্বকালে সর্ব্বজনে জান তথ্য এই,
দুরন্ত দানব তবে কত দিন সবে
দুর্ব্বার সমরক্ষেত্রে সুরবীর্য্যানল,
কতকাল রবে দৈত্য সে রণে তিষ্ঠিয়া ?
“মম ইচ্ছা সুরবৃন্দ দুরন্ত আহবে,
দহ হে দানবকুল ভীম উগ্র তেজে,
যুগে যুগে কল্পে কল্পে নিত্য নিরন্তর
জ্বলুক গগন ব্যাপী অনন্ত সমর !
“জ্বলুক দেবের তেজ অমরা ঘেরিয়া
অহোরাত্র অবিশ্রান্ত প্রখর শিখায় ;
দহুক দানবকুল দেবের বিক্রমে,
পুত্রপরম্পরা ঘোর চিরশোকানলে |
“চিরযুদ্ধে দৈত্যদল হইবে ব্যথিত,
না জানিবে কোনকালে বিশ্রামের সুখ,
নারিবে তিষ্ঠিতে স্বর্গে দেব-সন্নিধানে,
হইবে অমর-হস্তে পরাস্ত নিশ্চিত |
“অদৃষ্ট এতই যদি সদয় দানবে,
কোনযুগে নাহি হয় যুদ্ধে পরাজিত,
ভুঞ্জুক অদৃষ্ট তবে তিক্ত আস্বাদনে
চিরযুদ্ধে সুরতেজে দানব দুর্ম্মতি |
“ধিক্ লজ্জা ! অমরের এ বীর্য্য থাকিতে
নিষ্কন্টকে স্বর্গভোগ করে বৃত্রাসুর !
সুখে নিদ্রা যায় নিত্য দেবে উপেক্ষিয়া,–
স্বর্গ-বিরহিত, দেব চিন্তায় ব্যাকুল !
“নাহিক বাসব হেথা সত্য বটে তাহা,
কিন্তু যদি পুরন্দর আরো বহুযুগ
প্রত্যাগত নাহি হন, তবে কি এখানে
এই ভাবে রবে সবে চির অন্ধকারে ?
“চল হে আদিত্যগণ প্রবেশি শূন্যেতে,
দৈত্যের কন্টক হ’য়ে অমরা বেষ্টিয়া,
দগ্ধ করি দৈত্যকুল যুগ যুগ কাল,
যুদ্ধের অনন্তবহ্নি জ্বালায়ে অম্বরে |
“স্বর্গের সমীপবর্ত্তী পর্ব্বত সমূহে
শিখরে শিখরে জাগি শস্ত্রধারীবেশে,
সুশাণিত দেব-অস্ত্র নিত্য বরিষণে
দনুজের চিত্তশান্তি ঘুচাই আহবে |”
কহিলা এতেক সূর্য্য | ঝটিকার বেগে
চারিদিক্ হ’তে দেব ছুটিতে লাগিল
উথ্বিত বালুকা যথা, যখন মরুতে
মত্ত প্রভঞ্জন রঙ্গে নৃত্য করি ফেরে |
কিম্বা যথা যবে ঘোর প্রলয়ে ভীষণ
সংহার অনলে বিশ্ব হ’য়ে ভস্মাকার
উড়ে অন্তরীক্ষ পথে দিগন্ত আচ্ছাদি,
তেমতি অমরবৃন্দ ঘেরিলা ভাস্করে |
সকলে সম্মত শীঘ্র উঠি ব্যোমপথে,
বেষ্টিয়া অমরাবতী অরাত্রি অদিবা,
চিরস্মরের স্রোতে ঢালিয়া শরীর,
দেবনিন্দাকারী দুষ্ট অসুরে ব্যথিতে |