Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » বীরবলের হালখাতা || Pramatha Chaudhuri » Page 16

বীরবলের হালখাতা || Pramatha Chaudhuri

বীরবল

আমি সেদিন দিল্লি গিয়ে আবিষ্কার করে এসেছি যে, আর্যাবর্তে আমি ‘বীরবল’ বলে পরিচিত, অবশ্য শুধু প্রবাসী বাঙালিদের কাছে। এ আবিষ্কারে আমি উৎফুল্ল হয়েছি, কি মনঃক্ষুণ্ণ হয়েছি, বলা কঠিন। লেখক হিসেবে আমি যে বাংলার বাইরেও পরিচিত, এ তো অবশ্য আহ্লাদের কথা; কিন্তু আমার ধার-করা নামের পিছনে যে আমার স্বনাম ঢাকা পড়ে গেল, এইটিই হয়েছে ভাবনার কথা। কারণ আমি স্বনামেও নানা কথা ও নানা রকম জিনিস লিখি। এর পর আমি যে কেন ও-নাম আত্মসাৎ করেছি ও বীরবল লোকটি যে কে ছিলেন, সংক্ষেপে তার পরিচয় দেওয়াটা আমি আমার কর্তব্য বলে মনে করি।

আমি যখন বালক, তখন আমার পিতার কর্মস্থল ছিল বেহার। কাজেই তিনি সেকালে বছরের বেশির ভাগ সময় সেই দেশেই বাস করতেন। আর আমি বাস করতুম বাংলায়, স্কুলে পড়বার জন্য। আমার বিশ্বাস এর কারণ, বাবা মনে করতেন বেহারের আবহাওয়ায় মানুষের মাথা তাদৃশ খোলে না, যাদৃশ ফোলে তার দেহ।

এর ফলে তিনি অপিসের পুজোর ছুটিতে বাংলায় আসতেন, আর আমরা কেউ কেউ বেহারে যেতুম স্কুলের শীতের ছুটিতে।

আমার বয়েস যখন এগারো বৎসর, তখন একবার আমি শীতকালে মজঃফরপুর যাই। সঙ্গে ছিলেন আমার একটি ভ্রাতা ও একটি ভগ্নী। আমিই ছিলুম সবচাইতে বয়ঃকনিষ্ঠ। দিনটে একরকম খেলাধুলায় কেটে যেত। সন্ধের পর বাড়ির জন্য মন কেমন করত।

বাবা তাই ঘরের ভিতর প্রকাণ্ড একটা আঙুঠি জ্বালিয়ে, তার চার পাশে আমাদের বসিয়ে একখানি উছু বই থেকে আমাদের কেচ্ছা পড়ে শোনাতেন। এর অধিকাংশ কেচ্ছাই এই বলে শুরু হত ‘আকবর বীরবল নে পুছা’, আর শেষ হত বীরবলের উত্তরে।

২.

আমি তখন তারিণীচরণের ভারতবর্ষের ইতিহাসের পারগামী হয়েছি, সুতরাং আকবরশাহের সঙ্গে আমার পরিচয় ছিল; অর্থাৎ তিনি যে জাহাঙ্গীরের বাবা ও হুমায়ুনের ছেলে, এ কথা আমার জানা ছিল।

কিন্তু বীরবল লোকটি যে কে, হিন্দু কি মুসলমান, বাদশাহের মন্ত্রী কি ইয়ার, সে বিষয়ে আমি সম্পূর্ণ অজ্ঞ ছিলুম; কারণ তারিণীচরণ তার নাম পর্যন্ত উল্লেখ করেন নি।

কিন্তু সেইসব উহু কেচ্ছা শোনাবার ফলে আমার মনে বীরবলের নাম বসে যায়। আকবরের প্রশ্নের উত্তরে বীরবলের চোখাচোখা জবাবু শুনে আমি মনে মনে তার মহাভক্ত হয়ে উঠলুম। প্রশ্ন করতে পারে সবাই, কিন্তু উত্তর দিতে পারে কজন? আর যে পারে, আমার বালক-বুদ্ধি তাকেই প্রশ্নকর্তার চাইতে উঁচু আসনে বসিয়ে দিলে। (মুখের চাইতে হাত যে বড় হাতিয়ার, বুদ্ধিবলের চাইতে বাহুবল যে শ্রেষ্ঠ, সে কথা আমি তখন বুঝতুম না; কারণ সে বয়েসে আমি সভ্য হই নি, ছিলুম শুধু আদিম মানব। সেকালে বাহুবলের একমাত্র পরিচয় পেতুম গুরুজনদের ও গুরুমহাশয়দের বাহুতে। জোয়ান লোকদের কর্তৃক ছোট ছোট ছেলেদের গালে চপেটাঘাত ও কর্ণমদনের মাহাত্ম্য ও-বয়েসে হৃদয়ংগম করতে পারি নি। আমাদেরই ভালোর জন্য যে তারা আমাদের কানের রং লাল করে দিচ্ছেন ও আমাদের গালে তাদের পাঁচ আঙ লের ছাপ দেগে দিচ্ছেন, তা বোঝবার মত সূক্ষ্মবুদ্ধি তখন আমার ছিল না। এই পরোপকারের চেষ্টাটা সেকালে অত্যাচার বলেই রক্তমাংসে অনুভব করতুম। তাই তখন মনে ভাবতুম, হায়, আমার মুখে যদি বীরবলের রসনা থাকত, তাহলে। এই সব ঘরো আকবরশাহদের বোকা বানিয়ে দিতুম। দুর্বলের উপর বলপ্রয়োগের নামই যে বীরত্ব, তা বুঝলুম ঢের পরে, যখন কালাইলের Hero-Worslip পড়লুম।

৩.

এর পর বহুকাল যাবৎ বীরবলের নাম আমার গুপ্তচৈতন্যে সুপ্ত হয়ে ছিল। আমার যখন পূর্ণযৌবন, তখন আবার তা জেগে উঠল। বিলেতে আমার অনেক মুসলমান বন্ধু জোটে, তাদের কারও বাড়ি লক্ষ্ণৌ, কারও দিল্লি, কারও নাগপুর, কারও হাইদ্রাবাদ। এদের মধ্যে কেউ কেউ ছিলেন আবার

নবাবজাদা।

এই নববন্ধুদের মুখে বীরবলের রসিকতার দেদার গল্প শুনি। এসব রসিকতা যে অন্য লোকের বানানো, সে বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। কেননা এসব গল্পের উদ্দেশ্য হচ্ছে এই প্রমাণ করা যে, আকবরের সভায় বীরবলের চাইতেও আর-একজন ঢের বড় রসিক ছিলেন, যিনি কথায় কথায় বীরবলকে উপহাসম্পদ করতেন। এই রসিকরাজের নাম হচ্ছে মৌলবী দো-পিঁয়াজা। উক্ত মৌলবীসাহেবের সুভাষিতাবলী যে সাহিত্যে স্থান লাভ করে নি, তার কারণ তাঁর রসিকতা তার নামেরই অনুরূপ তীব্রগন্ধী, সে রসিকতা শুনে যুগপৎ কানে হাত ও নাকে কাপড় দিতে হয়।

এইসব কেচ্ছা শুনে আমার এই ধারণা জন্মালে যে, বীরবল ছিলেন আকবরশাহের বিদূষক, আর তিনি জাতিতে ছিলেন হিন্দু। বিদূষক হিসেবে তিনি হিন্দুস্থানে দেশব্যাপী খ্যাতি লাভ করেছিলেন বলে তার পালটা জবাবু দিতে পারে এমন একজন মুসলমান রসিক কল্পিত হয়েছে। তার নামেই প্রমাণ যে, উক্ত নামধারী কোনো মৌলবী আকবরশাহের সভাসদ হতে পারত না।

সে যাই হোক, বছর কুড়িক আগে আমি যখন দেশের লোককে রসিকতাচ্ছলে কতকগুলি সত্য কথা শোনাতে মনস্থ করি, তখন আমি না ভেবেচিন্তে বীরবলের নাম অবলম্বন করলুম। এ নামের দুইটি স্পষ্ট গুণ আছে : প্রথমতঃ নামটি ছোট, দ্বিতীয়তঃ শ্রুতিমধুর। এ নাম গ্রহণ করে আমি স্বজাতিকে বাদশাহের পদবীতে তুলে দিয়েছি, সুতরাং তাদের এতে খুশি হবারই কথা। আর মুসলমান ভ্রাতৃগণের কাছে নিবেদন করছি যে, আমি যত বড়ই রসিক হই না কেন, মৌলবী দো-পিঁয়াজার নাম গ্রহণ করা আমার শক্তিতে কুলোয় না। ইংরেজিশিক্ষিত ব্রাহ্মণসন্তান অকাতরে পলা ভক্ষণ করতে পারে, কিন্তু নিজেকে পলাতু বলে ভদ্রসমাজে পরিচিত করতে পারে না। জাতি জিনিসটে এমনি বালাই।

৪.

মৌলবী দো-পিঁয়াজার অস্তিত্ব অসিদ্ধ, প্রমাণাভাবাৎ। কিন্তু বীরবল যে এককালে সশরীরে বর্তমান ছিলেন, সে বিষয়ে আর সন্দেহ নেই; কারণ আকবরের সমসাময়িক ঐতিহাসিক মৌলবীসাহেবেরা তার মৃত্যুর বর্ণনা খুব ফুর্তি করে করেছেন। যার মৃত্যু হয়েছে, সে অবশ্য এককালে বেঁচে ছিল। তিনি আকবরশাহের অতিশয় প্রিয়পাত্র ছিলেন। ফলে আকবরের বহু প্রসাদবিত্তদের তিনি সমান অপ্রিয় হয়ে উঠেছিলেন। আর ইতিহাসে সেই ব্যক্তিরই নাম স্থান পায়, যে নিন্দা প্রশংসা দুয়েরই সমান ভাগী। বীরবলের ভাগ্যে দুই যে সমান জুটেছিল, তার পরিচয় পরে দেব।

জনৈক ইংরেজ ঐতিহাসিক ফারসি ভাষার সব পাজিপুঁথি ঘেঁটে বীরবলের আসল নামধাম উদ্ধার করেছেন। বীরবল নামটিও রাজদত্ত।

বীরবলের প্রকৃত নাম ছিল মহেশ দাস। তিনি ১৫২৮ খৃস্টাব্দে কাল্পি নগরে এক দরিদ্র ব্রাহ্মণের ঘরে জন্মগ্রহণ করেন। এই দরিদ্র ব্রাহ্মণসন্তান প্রথমে জয়পুরের রাজা ভগবান দাসের আশ্রয়ে বাস করতেন, পরে রাজাবাহাদুর তাকে বাদশাহের কাছে পাঠিয়ে দেন। মহেশ দাসের কবিতা, তার সংগীত, তাঁর রসালাপ, তার গল্প আকবরকে এত মুগ্ধ করে যে, তিনি তাঁকে ‘কবিরায়’ উপাধিতে ভূষিত করেন। ঐতিহাসিকেরা তাকে কখনো আকবরের মন্ত্রী, কখনো বা প্রধানমন্ত্রী বলে উল্লেখ করেছেন। পরে আকবরশাহ তাঁকে ‘রাজা বীরবল’ উপাধি দেন, এবং সেই সঙ্গে বুন্দেলখণ্ডের কালাঞ্জর রাজ্য ও কাংরা প্রদেশ জায়গীর দেন। ১৫৮৬ খৃস্টাব্দে আকবর বীরবলকে সেনাপতি করে কাবুল-যুদ্ধে পাঠান, এবং সেই যুদ্ধক্ষেত্রে পাঠানদের হস্তে তিনি ভবলীলা সংবরণ করেন।

এইসব তথ্য আমি ইংরেজ ঐতিহাসিক ভিনসেন্ট স্মিথের Akbar The Great Mojul নামক পুস্তক হতে সংগ্রহ করেছি। আমি পূর্বে বলেছি যে, বীরবলের প্রতি মৌলবীসাহেবরা যে অত্যন্ত অসন্তুষ্ট ছিলেন তার যথেষ্ট প্রমাণ আছে, এবং এ অসন্তোষের কারণও ছিল। আবদুল কাদির নামক আকবর শাহের জনৈক ঘোর সুন্নি সভাসদের তারিখ-ইবাদাউনি নামক পুস্তকের একবার পাতা উলটে গেলেই দেখতে পাবেন যে, তার প্রায় পাতায় পাতায় বীরবলের উপর গালিগালাজ আছে। এমনকি, স্বধর্মনিষ্ঠ মৌলবীসাহেব বীরবলের নাম পর্যন্ত মুখে আনেন না, তার পূর্বে ‘দাসীপুত্র’ বিশেষণটি জুড়ে না দিয়ে। মৌলবীসাহেবের রাগের কারণ পরে উল্লেখ করব। এ স্থলে একটি কথা বলে রাখা দরকার। আকবর শাহের আমলের যত ইতিহাস ফারসি থেকে ইংরেজিতে অনূদিত হয়েছে, তার মধ্যে তারিখ-ই-বাদাউনিই আমার সর্বাপেক্ষা প্রিয়। এর প্রথম কারণ, মৌলবীসাহেব অত্যন্ত স্পষ্টভাষী; দ্বিতীয়তঃ, তাঁর মনে রাগদ্বেষ ছিল বলে তাঁর। লেখায় মুন-ঝাল দুই আছে; অপরাপর ইতিহাসের মত পাসে নয়। তা ছাড়া, তার গ্রন্থ ইতিহাস না হোক, সাহিত্য। যদিচ বইখানির নাম তারিখ, তাহলেও সেটি শুধু ক্রনোলজি নয়, অর্থাৎ পাঁজি নয়, পুঁথি। তিনি যাদের নাম করেছেন, তাদেরই চেহারা তিনি ফুটিয়ে তুলেছেন। আকবর, আবুল ফজল, ফৈজি, বীরবল প্রভৃতি তার লেখায় শুধু নামমাত্র নয়, রূপবিশিষ্টও বটে। তিনি মহা রাগী পুরুষ ছিলেন; তার জন্য দুঃখ করবার কোনো কারণ নেই; কেননা কথায় বলে রাগই পুরুষের লক্ষণ। তাঁকে অবশ্য নিরপেক্ষ ঐতিহাসিক বলা যায় না, কিন্তু এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই যে, তিনি ইতিহাসের দরবারে মিথ্যা সাক্ষ্য দেন নি। তিনি ভুল করতে পারেন কিন্তু জেনেশুনে মিছে কথা বলেন নি। বাদাউনি বলেছেন যে, বীরবল প্রথমে রেওয়ার রাজা রামচন্দ্রের আশ্রয়ে ছিলেন, তিনিই বীরবল ও তানসেনকে তাঁর সভার দুটি রত্ন হিসেবে বাদশাহকে উপঢৌকন দেন। এই কথাই, আমার বিশ্বাস, সত্য।

বীরবলের উপর বাদাউনির রাগ বোঝা যায়। কিন্তু স্মিথ সাহেবও যে কি কারণে বীরবলের প্রতি বিরক্ত তা বোঝা কঠিন, কারণ তিনি মুসলমানও নন, মুসলমান প্রণয়ীও নন, তা যে তিনি নন যে-কেউ তার Oxford History of India পড়েছেন, তিনিই জানেন। স্মিথ সাহেব বীরবলকে অবশ্য দাসীপুত্র বিশেষণে বিশিষ্ট করেন না, কিন্তু ফাঁক পেলেই তিনি বীরবলকে আকবরশাহের ভাড় বলে উল্লেখ করেন। যে ব্যক্তি একাধারে কবি গায়ক গল্পরচয়িতা ও সুরসিক, তাকে শুধু জেস্টার বলে উল্লেখ করে স্মিথ সাহেব গুণগ্রাহিতার পরিচয় দেন নি। স্মিথ সাহেব বলেন যে, বীরবল যে আকবরবাদশার। মন্ত্রী ছিলেন, এ কথা ভুল; তিনি অনুমান করেন যে, বীরবল ছিলেন আকবরের আস্তাবলের জমাদার। তার ভাষায় কবিরায়ের ইংরেজি প্রতিবাক্য হচ্ছে পোয়েট-লরিয়েট। টেনিসনকে ইংলণ্ডের রাজা তার অশ্বপালনে নিযুক্ত করেন নি, আর এ দেশে আকবরবাদশা যে তার কবিরায়কে ঘোড়ার খিদমতগারিতে নিযুক্ত করেছিলেন, এমন কথা মৌলবী বাদাউনিও বলেন নি। যদি তিনি করতেন, তাহলে তিনি Akbar the Great হতেন না, হতেন শুধু Akbar the Mogul.

কিন্তু এই অদ্ভুত অনুমানের কারণ আরও অদ্ভুত। আকবর ফতেপুরশিক্‌রীতে বীরবলের বাসের জন্য একটি বাড়ি তৈরি করেছিলেন, সে ইমারত আজও দাঁড়িয়ে আছে। সে বাড়ির বর্ণনা স্মিথ সাহেবের কথাতেই নিম্নে উদ্ধৃত করে দিচ্ছি—

The exquisite structure at Fathpur-Sikri known as Raja Birbal’s hotiseas erected in 1571 or 1572… The beauty and lavishness of the decoiation testify to the intensity of Akbar’s affection for the Raja…

The proximity of his beautiful house in the palace of FathpurSikri to the stables lias suggested the hypothesis that he may have been Master of Horse.

বিলেতি লজিকের কোন্ সূত্র অনুসারে যে এইরূপ প্রক্সিমিটি থেকে এইরূপ হাইপথেসিস্ এ পৌঁছনো যায়, তা আমার কাছে সম্পূর্ণ অবিদিত। আমি মিল এর ইন্ডাটিব লজিক পড়ি নি; তাই আস্তাবলের পাশে যার বাড়ি, সেই যে সহিস এ কথা মেনে নিতে আমি কুণ্ঠিত। আলিপুরে লাটসাহেবের বাড়ির পাশেই আছে পশুশালা, এর থেকে লাটসাহেবকে পশুশালার অধ্যক্ষ বলে ধরে নেওয়াটা ঐতিহাসিক বুদ্ধির কাজ হতে পারে, কিন্তু সহজ বুদ্ধির কাজ নয়।

বর্তমান যুগে আমি একটিমাত্র ব্যক্তিকে জানি, যিনি একাধারে কবি দু হাত দূরে আস্তাবল আছে। আমি তার কাছে করজোড়ে প্রার্থনা করি যে, তিনি যেন ও-আস্তাবল অবিলম্বে ভূমিসাৎ করেন, নচেৎ ভবিষ্যতের স্মিথ সাহেবরা তার সম্বন্ধে কি যে হাইপথেসিস করবেন, তা বলা যায় না।

৬.

আকবর শাহ যেমন শোকাতুর হয়েছিলেন, মৌলবী বাদাউনি প্রভৃতি তেমনি আনন্দে অধীর হয়ে উঠেছিলেন। স্মিথ সাহেব এ মৃত্যুকে বলেছেন inglorious death; কারণ যে যুদ্ধে তার প্রাণ যায়, সে যুদ্ধে তার সৈন্যসামন্ত প্রায় সমূলে নিপাত হয়। যুদ্ধে হারাটা দুঃখের বিষয় হতে পারে, কিন্তু সব সময়ে লজ্জার বিষয় নয়। রানী দুর্গাবতী আকবরের বিরুদ্ধে লড়তে গিয়ে যুদ্ধে হেরেছিলেন ও যুদ্ধক্ষেত্রেই প্রাণত্যাগ করেছিলেন; অথচ ঐতিহাসিক মাত্রেই তাঁর মৃত্যুকে glorious death বলেছে।

স্মিত সাহেবের বিশ্বাস যে

The disaster appears to have been duc in large part to his folly and inexperience. Akbar made a serious mistake in sending such people as Birbal and the Hakim to command military forces operating in a difficult country against a formidable enemy.

৭.

আকবর শাহের সভাকবি যে যুদ্ধবিদ্যায় পারদর্শী ছিলেন না, এ কথা সহজেই মনে হয়। টেনিসনকে ক্রিমিয়ার যুদ্ধের সেনাপতি করে পাঠালে যে একটা-না-একটা বিভ্রাট ঘটত, সে বিষয়ে আর সন্দেহ নেই। তবে বীরবল তত শুধু কবি ছিলেন না, উপরন্তু তিনি ছিলেন বিদূষক ও গল্পরচয়িতা। ভাসের অবিমারক নামক নাটকে পড়েছি যে, রাজপুত্র তার বিদূষককে হারিয়ে এই বলে দুঃখ করেছিলেন যে, আমার এমন বয়স্য গেল কোথায়, যে ঘরে ছিল নৰ্মসচিব ও যুদ্ধক্ষেত্রে অগ্রগণ্য যোদ্ধা। অতএব বিদূষকও যে যোদ্ধা হতে পারে, তার সংস্কৃত নজির আছে।

আর গল্পরচয়িতাও যে সেনাপতি হতে পারে, তার প্রমাণ টলস্টয় ছিলেন ক্রিমিয়ান ওয় এ রুশ পক্ষের একজন সেনাপতি। সে যুদ্ধে রুশপক্ষ জয়লাভ করে নি; এবং তার জন্য টলস্টয় ইউরোপীয় সমাজে অবজ্ঞার পাত্র হন নি। ক্রিমিয়াতে রুশপক্ষের যত লোক যুদ্ধে প্রাণত্যাগ করে, তার চাইতে ঢের বেশি সৈন্য প্রাণত্যাগ করে ওলাউঠায়। উক্ত যুদ্ধক্ষেত্রে ও-রোগের এমন ভীষণ প্রকোপ হয়েছিল যে, টলস্টয় পাছে ও-রোগে আক্রান্ত হন এই ভয়ে, স্বয়ং জার তাঁকে সেখান থেকে চলে আসতে আদেশ করেছিলেন। কিন্তু টলস্টয় সে আদেশ অমান্য করেন এই বলে যে, তিনি তার অধীনস্থ দীনহীন অসহায় সৈনিকদের এই বিপদের মধ্যে ত্যাগ করে নিজের প্রাণরক্ষার জন্য পলায়ন করতে প্রস্তুত নন, রাজার হুকুমেও নয়।

সুতরাং কাবুলের যুদ্ধে যে বীরবলের অজ্ঞতা ও কাপুরুষতার দরুনই হার হয়েছিল, এমন কথা জোর করে বলা যায় না। বিশেষতঃ স্মিথ সাহেব এই ঘটনা যখন আকবরেরও আহাম্মকির প্রমাণস্বরূপ গণ্য করেন, তখন তাঁর মত একেবারেই অগ্রাহ। ধরে নিচ্ছি যে, বীরবলের রসিকতাই আকবরকে মুগ্ধ করেছিল। কিন্তু যুদ্ধ করা যে রসিকতা নয়, তা আর কেউ না জানেন, আকবর জানতেন। আর কোন্ লোকের দ্বারা কোন্ কাজ উদ্ধার হয়, তাও যে তিনি জানতেন, তার পরিচয় তিনি চিরজীবনই দিয়েছেন। সুতরাং স্মিথ সাহেবের it appears’ কথাটার কোনোরূপ ঐতিহাসিক মূল্য নেই। স্মিথ সাহেব কিন্তু শুধু বীরবলকে অজ্ঞ ও অক্ষম বলেই ক্ষান্ত হন নি। তিনি আরও বলেন যে–

He secins to have frankly run away in a vain attempt to save his life.

8.

স্মিথ সাহেব এ সত্য কোথা থেকে উদ্ধার করলেন? অবশ্য তারিখ-ইবাদাউনি থেকে। সুতরাং মৌলবী সাহেব বীরবলের মৃত্যু সম্বন্ধে কি বলেন, তা তার মুখেই শোনা যাক। বাদাউনির কথা হচ্ছে এই–

Bir Bar also, who had fled from fear of this life, was slain, and entered the row of the dogs in hell, and thus got something for the abominable deeds he had done during his lifetime.

বাদাউনির কথা যদি বেদবাক্য হিসেবে মেনে নিতে হয়, তাহলে এ কথাও স্বীকার করতে হয় যে, বীরবল যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পালিয়ে এক দৌড়ে গিয়ে। নরকের কুকুরের দলে ভর্তি হয়েছিলেন। অর্থাৎ জীবনে যিনি বাস করতেন। ঘোড়ার সঙ্গে, মরে তিনি গিয়ে বাস করতে লাগলেন কুকুরের সঙ্গে। এ ঘটনা যে ঘটেনি তা বলা অসম্ভব, কারণ নরকে যে Birbal’s House ঠিক কোন্ জায়গায়, তা বাদাউনিও নিজচক্ষে দেখেন নি, স্মিথ সাহেবও দেখেন নি। সুতরাং বাদাউনির উক্তির শেষ অংশটা যদি ঐতিহাসিক সত্য হিসেবে অগ্রাহ্য হয়, তাহলে তার প্রথম অংশটা সত্য কি না, সে বিষয়ে সন্দেহের বিশেষ অবসর থাকে।

শাস্ত্রে বলে ‘যঃ পলায়তে স জীবতি’। আর শাস্ত্রবচন যে মিথ্যা নয়, তার প্রমাণ উক্ত যুদ্ধক্ষেত্র হতে যে-দুটি মুসলমান সেনাধ্যক্ষ পলায়ন করেছিলেন, তারা দুজনেই বেঁচেছিলেন। এই কারণে এ বিষয়ে আবুল ফজল তাঁর আকবরনামায় যা লিখেছেন, it seeins to me, সেই কথাটাই সত্য। তার কথা এই–

In the conflict 500 men perished. Among them was Rajah Birbal, whose loss the Iimperor greatly deplored.

যদি স্মিথ সাহেব বলেন যে, আবুল ফজলের উক্তি অগ্রাহ, কেননা তাতে বীরবলের প্রতি গালিগালাজ নেই; তাহলে বলি আবুল ফজল বলেছেন যে, বীরবল মরেছেন–আর মরার বাড়া গাল নেই।

৯.

বীরবল কি ভাবে মরেছিলেন— শুয়ে কি বসে, দাঁড়িয়ে কিংবা দৌড়তে দৌড়তে–তা জানবার কোনোরূপ কৌতূহল আমার নেই। আমি জানতে চাই তার জীবন, তার মৃত্যু নয়। কেননা মৃত্যুতে আমরা সবাই এক, শুধু জীবনে বিভিন্ন।

তাঁর মৃত্যুর কথাটা তুলেছি এই জন্য যে, উক্ত ঘটনায় আর পাঁচজনে কতটা আনন্দিত বা দুঃখিত হন, তার থেকে তার চরিত্র কতকটা অনুমান করা যায়।

বীরবলের মৃত্যুসংবাদে আকবর যে শোকে অভিভূত হয়ে পড়েছিলেন, সে বিষয়ে সকল ঐতিহাসিক একই সাক্ষ্য দিয়েছেন। অপরপক্ষে বীরবলের মৃত্যুতে দেশের পাপ গেল মনে করে বাদাউনি প্রমুখ মৌলবীর দল তাদের উল্লাস যে কি রকম তারস্বরে ব্যক্ত করেছিলেন, তার পরিচয় তো বাদাউনির পূর্বোক্ত কথাতেই পাওয়া যায়। তিনি বলেছেন, বীরবল জীবনে যেসকল জঘন্য কাজ করেছিলেন, সেইসব পাপের শাস্তিস্বরূপ তিনি নরকের কুকুরশ্রেণীভুক্ত হয়েছেন। এই জঘন্য কাজগুলি কি?

আকবরশাহ স্বধর্মের মায়া কাটিয়ে স্বকল্পিত এক নতুন ধর্মের সৃষ্টি করেছিলেন। বাদাউনির বিশ্বাস বীরবলই তাকে ধর্মভ্রষ্ট করে।

আকবরের সভায় মোল্লা মহম্মদ ইয়াজিজি নামক এক ব্যক্তি উপস্থিত হয়ে সুন্নি মতের নানারূপ নিন্দা করে বাদশাহকে শিয়া মতাবলম্বী করতে প্রাণপণ চেষ্টা করে, পরে বাদাউনির ভাষায়

This man was soon left behind by Birbal, that bastard, and by Shaik Abul-Fazal.

এঁদের কুপরামর্শে আকবর শাহ কতদূর ধর্মভ্রষ্ট হয়েছিলেন, তার পরিচয় বাদাউনির বক্ষ্যমান কথাগুলিতেই পাওয়া যায়–

The daily prayers, the fasts and prophecies were all pronounced delusions, as being opposed to sense. Reason and not revelation was declared to be the basis of religion.

আর এ সবই বীরবলের কুবুদ্ধিতে। আকবর যে একজন রিজ্‌নএর ভক্ত অর্থাৎ র‍্যাশনালিস্ট হয়েছিলেন, এ কথা সহজেই বিশ্বাস হয়। কারণ বৈষয়িক লোকমাত্রেই দার্শনিক হতে গেলেই ন্যাশনালিস্ট হয়। ন্যাশনালিস্ট হলে মানুষের মাথা খোলে না, কিন্তু তার হৃদয় খুব উদার হয়। আকবরেরও তাই হয়েছিল। তিনি র‍্যাশনালিস্ট হবার পর প্রকাশ্য দরবারে বলেন যে, ‘আমি পূর্বে বহু ব্রাহ্মণকে জোর করে মুসলমান করেছি, আর তারা প্রাণভয়ে সে ধর্ম গ্রহণ করতে বাধ্য হয়েছে। এখন বুঝছি যে, আমি অতি গর্হিত কাজ করেছি।‘ তাঁর এ কথায় সকলেই সায় দেবে।

১০.

ধর্মবিশ্বাস সম্বন্ধে কোনো ব্যক্তিবিশেষের মনের অথবা মতের কি বদল হয়, তাতে অপরের কিছু যায় আসে না, যতক্ষণ সে অপরের ক্রিয়াকলাপের উপর হস্তক্ষেপ না করে। আকবর শাহ তাঁর নব মতানুসারে যেসব হুকুম প্রচার করেন, তার দরুনই স্বধর্ম-নিরত মুসলমানগুণ ক্ষোভে আক্রোশে অধীর হয়ে উঠেছিল। স্মিথ সাহেব তাঁর গ্রন্থে এইসব নব রাজশাসনের যে ফর্দ দিয়েছেন, সংক্ষেপে তার পরিচয় দিচ্ছি—

১ কোনো বালকের ‘মহম্মদ’ এই নাম রাখা হবে না। যদি কারও নাম মহম্মদ থাকে তো তার সে নাম বদলে নতুন নাম দিতে হবে;

২ তাঁর রাজ্যে কোনো নূতন মসজিদ কেউ নির্মাণ করতে পারবে না আর জীর্ণ মসজিদের কোনোরূপ সংস্কার কেউ করতে পারবে না;

৩ তার রাজ্যে গোহত্যা নিষিদ্ধ। আর এ অজ্ঞা অমান্য করবার শাস্তি প্রাণদণ্ড। উপরন্তু বৎসরের তিন শ পঁয়ষটি দিনের মধ্যে এক শ দিন মাংস ভক্ষণ নিষিদ্ধ;

৪ তার রাজ্যে দাড়ি কেউ রাখতে পারবে না, সকলকেই তা কামাতে হবে;

৫ পিঁয়াজ রশুন ও গোমাংস ভক্ষণ তার রাজ্যে নিষিদ্ধ;

৬ উপাসনার সময় হিন্দুমুসলমান নিবিচারে সকলকে পট্টবস্ত্র ও স্বর্ণ ধারণ করতে হবে।

এইরকম আরও অনেক খামখেয়ালি রাজাজ্ঞা তিনি প্রচার করেছিলেন। পুঁথি বেড়ে যায় বলে সেসবের আর উল্লেখ করলুম না। স্মিথ সাহেব বলেছেন যে–

The whole gist of the regulations was to further the adoption of Ilindu, Jaina, and Parsce practices, while discouraging or positively probibiting essential Muslim rites.

স্মিথ সাহেব যখন এসকল বিধিনিষেধকে silly regulations বলেছেন, তখন বাদাউনি যে তাকে abominable deeds বলবেন, তাতে আর আশ্চর্য কি। আর র‍্যাশনালিস্ট-এর এইসব বাদশাহী পাগলামির জন্য বাদাউনি বীরবলকেই প্রধানতঃ দায়ী মনে করেন। তাঁর বিশ্বাস ছিল যে, ফৈজী, আবুল ফজল ও বীরবল, এই তিন গ্রহ একত্র মিলে আকবরের কুবুদ্ধি ঘটায়; আর এ তিনের মধ্যে শনি ছিলেন বীরবল।

১১.

অপরপক্ষে সেকালের হিন্দুরা যে বীরবলের মহাভক্ত ছিলেন, তার পরিচয় পাওয়া যায় কেশবদাসের কবিতায়। আকবর শাহের আমলে তুলসীদাস প্রমুখ অনেক হিন্দি কবির আবির্ভাব হয়, কেশবদাস তাদের অন্যতম। কেশবদাস রামসিংহ নামক বুন্দেলখণ্ডের জনৈক রাজার ভ্রাতা ইন্দ্রজিত সিংহের সভাকবি ছিলেন। তিনি রসিকপ্রিয়া নামক একখানি কাব্য হিন্দি ভাষায় রচনা করেন। হিন্দিভাষীরা এ কাব্যকে আজও হিন্দি কাব্যসাহিত্যের একখানি রত্ন বলে মনে করেন।

বীরবলের মৃত্যুসংবাদ শুনে কেশবদাসের শোক নিম্নলিখিত শ্লোকরূপ ধারণ করে–

পাপকে পুংজ পোবজ কেসব সোককে সংখ শুনে সুষমা মেঁ।
ঝুটকী ঝালরি ঝাঁঝ অলীককে আবঝ জগন জানি জমা মেঁ।
ভেদ কী ভেরী বড়ে ডরকে ডফ কৌতুক ভো কলি কে করম মেঁ।
জুঝত হী বলবীর বজে বহু দারিদ কে দরবার দমামেঁ।

আন্দাজ করছি পূর্বোক্ত শ্লোকদ্বয়ের কথা এই যে–

কেশব পাপপুঞ্জের পাথোয়াজ আর শোকশঙ্খের সুষমা শুনতে পাচ্ছে। মিথ্যা কথার ঈসর বাজছে, আর জানি যে অলীকের আওয়াজ, যেখানেই পশুপাল জমা হচ্ছে সেখানেই শোনা যাচ্ছে। ভেদের ভেরীর ভয়ংকর জোর ডঙ্কা বাজছে। কলি কুকর্মে বড় কৌতুক লাভ করেছে। কিন্তু বহু দরিদ্র লোকের দরবারে বীরবল যুদ্ধ করেছেন ও তাঁর নামের দামামা বাজছে।

হিন্দী ভাষা আমি শিক্ষা করি নি। সুতরাং আমার অনুবাদের মধ্যে এখানে ওখানে ভুল থাকতে পারে। তবে কবি কেশবদাসের মোদ্দা কথাটা বোঝা যাচ্ছে। বীরবলের মৃত্যুতে এক দিকে মিথ্যা কথার ঢাক-ঢোল ও ঘোর ভেদের ভেরী বেজে উঠেছিল। আর সেই ভীষণ ধ্বনির প্রতিধ্বনি ইতিহাসের মধ্যে আজও শোনা যাচ্ছে। অপর দিকে আবার তেমনি শোকশঙ্খের ধ্বনিও লোকের কানে ও মনে বেজে উঠেছিল। বহু দরিদ্রের দরবারে তার সুযশ ঘোষিত হয়েছিল। যার মৃত্যুতে দরিদ্রসমাজে শোকশঙ্খ নিনাদিত হয়, তার জীবনও ধন্য আর তার মৃত্যুও glorious death।

বীরবলের জীবনচরিত সম্বন্ধে উপরে যা নিবেদন করেছি, তার বেশি আর কিছু জানি নে।। কিন্তু এই সংক্ষিপ্ত বিবরণ থেকেই বুঝতে পারবেন যে, তাঁর নাম অবলম্বন করে আমি কতটা সুবুদ্ধির পরিচয় দিয়েছি। আমি কবিও নই, গায়কও নই, গল্পরচয়িতাও নই। তারপর রাজদরবার আমি কখনো দূর থেকেও দেখি নি। কাবুলে যুদ্ধ করতে যাবার আমার কোনোরূপ অভিপ্রায়ও নেই, সম্ভাবনাও নেই। তার পর আমি কাউকে নূতন ধর্ম প্রচার করতে কখনন প্ররোচিত করি নি। আমি বাঙালি জাতির বিদূষক মাত্র। তবে রসিকতাচ্ছলে সত্য কথা বলতে গিয়ে ভুল করেছি। কারণ নিত্য দেখতে পাই যে, অনেকে আমার সত্য কথাকে রসিকতা বলে, আর আমার রসিকতাকে সত্য কথা বলে ভুল করেন।

এখন এ ভুল শোধরাবার আর উপায় নেই। পাঠকেরা যে আমার লেখার ভিতর সত্য না পান, রস পেয়েছেন, এতেই আমি কৃতার্থ।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *