Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » বিষ্ণুপুরাণ || Prithviraj Sen » Page 10

বিষ্ণুপুরাণ || Prithviraj Sen

সূর্যের পুত্র মনু এক সময় পুত্র কামনায় বশিষ্টদেবকে প্রধান পুরোহিত করে যজ্ঞ করেন। সেই যজ্ঞে তাঁর স্ত্রী কিন্তু কন্যা কামনার সংকল্প করলেন। কাজেই যজ্ঞশেষে রানির গর্ভে জন্মাল এক কন্যা। রানি খুব খুশি কিন্তু বিস্মিত হলেন স্বয়ং মনু। তিনি পুত্র কামনায় যজ্ঞ করে পেলেন কন্যা। এ কেমন করে হয়? ক্ষুণ্ণমনে জিজ্ঞেস করলেন– বশিষ্টদেবকে।

তখন বশিষ্টদেব কন্যার আকাঙ্ক্ষায় রানির অন্তরের প্রবল বাসনার কথা বলে সান্ত্বনা দেবার চেষ্টা করলেন। কিন্তু রাজা আরও ক্রুদ্ধ হলেন। রাজার ইচ্ছার থেকে রানির ইচ্ছাটাই বড় হল মহর্ষির কাছে?

অগত্যা মহর্ষি তাকে বললেন– হে রাজন, আপনি ক্ষুব্ধ হবেন না। শান্ত হোন, আমি আমার যোগবলে আপনার কন্যাকে পুত্রে পরিণত করে দেব।

মন্ত্র বলে কন্যা হল পুত্র। রাজার মনে আনন্দ আর ধরে না। নাম সুদ্যুম্ন। ধীরে ধীরে সে বড় হতে লাগল। নানান শাস্ত্র এবং শাস্ত্র বিদ্যা শিখল। সুদুম্নের বড় শখ শিকার করা। একদিন তীর ধনুক নিয়ে বেরিয়ে পড়ল মৃগয়ার উদ্দেশ্যে। একটা ঘোড়ায় চড়ে সারাদিন ধরে অনেক শিকার করল। তবু তার শখ মেটে না। রাত্রি হয়ে গেল, তখন সে বনের মধ্যেই তাঁবু গাড়ল, এইভাবে অরণ্য অভ্যন্তরে বেশ কয়েকটা দিন কেটে গেল।

সেই সুস্মের তাঁবুর অল্প দূরে ছিল এক যক্ষের ঘর, তার সঙ্গে তার বউ থাকে। দুজনে নির্জনে বাস করে। খায়, দায়, মনের আনন্দে থাকে। কিন্তু কোথাকার এক রাজপুত্র এসে তাদের নির্জনতায় বাধা হয়ে দেখা দিল। বনের কত জন্তু জানোয়ার ঘুরে বেড়াত। এই রাজকুমার আসার জন্য অরণ্য প্রায় পশুশূন্য, যক্ষ চিন্তা করে কিভাবে এই রাজপুত্রকে অরণ্য থেকে বিতরণ করা যায়।

একদিন যক্ষ তার বউকে বলল- তুমি ওকে উমাবনে নিয়ে যাও লোভ দেখিয়ে, তাহলেই বাছাধন জব্দ হবে।

বড়ই অদ্ভুত এই উমাবন। এই বনে যে ঢুকবে, সঙ্গে সঙ্গে সে নারী হয়ে যাবে। শিবের অভিশাপ আছে। যক্ষিণী একদিন সুদ্যুম্নকে ভুলিয়ে নিয়ে গেল সেই বনে, সঙ্গে সঙ্গেই সে নারীতে পরিণত হল। লজ্জায় তার মাথা ছোট হয়ে গেল। বনে বনে ঘুরছে। লজ্জায় আর প্রাসাদে ফিরতে পারে না।

তারার গর্ভে চন্দ্রের এক পুত্রের নাম বুধ। সুদ্যুম্নের রূপ দেখে সে বিমোহিত হল। একে অন্যের প্রেমে পড়ল এবং মনের আনন্দে বিয়ে করলো, নারী রূপে সুদ্যুম্নের নাম হল ইলা। সে গর্ভবতী হল। তারপর যথা সময়ে বিয়ে করলো। এক পুত্র হল– নাম রাখলেন পুরুরবা।

কিন্তু মনুর আর কোন সন্তান না থাকায় পরবর্তীকালে রাজ্য শাসন করবে কে?

বশিষ্টদেব এ বিষয়ে গভীরভাবে চিন্তা করে শিবের কাছে গিয়ে তার বহু স্তবস্তুতি করে বললেন– হে মহেশ, আপনার অভিশপ্ত উমাবনে প্রবেশ করে সুদ্যুম্ন নারী হয়ে গেছে। এখন মনু বংশ রক্ষা হয় কিসে? আপনি একটা কিছু ব্যবস্থা করে দিন।

শিব বললেন–আমার আর কি করার আছে? তবে একটা ব্যবস্থা করছি সুদ্যুম্ন একমাস পুরুষ ও একমাস নারী হয়ে থাকবে। শেষ পর্যন্ত তাই হল। সুদ্যুম্ন একমাস পুরুষরূপে রাজ্য শাসন করলেন। পরবর্তী একমাস নারীরূপে বুধের সঙ্গে কাটালেন। তারপর আবার রাজা হলেন। এইভাবে বহুকাল রাজত্ব করার পর সুদ্যুম্ন বৃদ্ধ বয়সে তার পুত্র পুরুরবাকে প্রতিষ্ঠানপুরের সিংহাসনে বসালেন।

রাজা হওয়ার পর পুরুরবার জীবনে একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা ঘটল। স্বর্গলোকে যত অপ্সরা আছে তাদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ হল উর্বশী। তাই দেবরাজ ইন্দ্র উর্বশীকেই বেশি ভালোবাসেন। কিন্তু তাদের এত ভালবাসা মিত্র-বরুণের সহ্য হল না। একদিন সামান্য কারণে তিনি অভিশাপ দিলেন উর্বশীকে অভিশাপের কারণে উর্বশী স্বর্গলোকে ছেড়ে সাধারণ নারীর বেশে ঘুরতে লাগলো এই মর্ত্যধামে।

সহসা একদিন পুরুরবাকে দেখতে পেল। পুরুরবাও উর্বশীকে দেখল। উভয়ই বিস্মিত হল। পুরুরবা ভাবছে– জগতে এমন নারী সে আগে কখনও দেখেনি। আর উর্বশী ভাবছে মর্তে মানুষ কি এত সুন্দর হতে পারে? উভয় উভয়কে ভালবেসে ফেলল।

কিন্তু উর্বশীর মনে ভয় হল, শাপের মেয়াদ ফুরোলে তাকে স্বর্গে চলে যেতে হবে। তখন পুরুরবার কি অবস্থা হবে? আবার এমন একজন পুরুষের সঙ্গলাভের প্রবল বাসনা। তাই মনে মনে তিনটে শর্ত ঠিক করল– প্রথম শর্ত হল সে কেবল ঘী খাবে। অন্য কিছু খাবে না। দ্বিতীয় শর্ত হল দুটো ভেড়া থাকবে তার শোবার ঘরে তাদের কেউ দূরে সরাতে পারবে না। আর তৃতীয় শর্ত হল সে যেন রাজাকে কখনও বিবস্ত্র না দেখে।

এমন সুন্দরী মেয়েকে দেখে পুরুরবা কোন চিন্তা না করেই স্বীকার নিল তিনটে শর্ত। মনের আনন্দে কাটাল বহুদিন। নানারকম মনোরম স্থানে ঘুরে বেড়াতে লাগল। এতদিন উর্বশী ভুলেই গেল যে সে স্বর্গের অপ্সরা।

এদিকে উর্বশীকে হারিয়ে ইন্দ্রের খুব খারাপ অবস্থা। বন্ধুর এমন অবস্থা দেখে গন্ধর্বরাজ বিশ্বাবসু খুবই চিন্তিত। উর্বশীকে স্বর্গে ফিরিয়ে আনার জন্য মর্তে গেলেন। গোপনে ঢুকলেন পুরুরবার শয়ন কক্ষে। রাতের বেলায় ঘন অন্ধকারে উর্বশীর ভেড়া চুরি করলেন। তারা চিৎকার করে উঠল। উর্বশী জেগে উঠে পুরুরবাকে জাগিয়ে বলল- কেউ ভেড়া চুরি করতে এসেছে। এই বলে কাঁদতে লাগলো। ঘুম ভেঙ্গে গেল পুরুরবার।

ভেড়া চোরকে ধরতে বিছানা ছেড়ে উঠল, কিন্তু অন্ধকারে কিছুই দেখা যাচ্ছে না। বিশ্বাবসু কৌশলে আলো জ্বেলে দিলেন। সেই সময় পুরুরবা ছিল বিবস্ত্র। উর্বশী সেই অবস্থায় দেখে শর্তানুযায়ী স্বর্গে চলে গেল।

এতদিন উর্বশীকে নিয়ে পুরুরবা মনের আনন্দেই ছিল কিন্তু এখন আর সে নেই। তাই মন খুব খারাপ। রাজ কাজে মন নেই। খিদে নেই, পাগলের মতো খুঁজে বেড়াল উর্বশীকে। না পেলে তার প্রাণ বোধ হয় চলে যায়।

একদিন উর্বশী তার কয়েকজন সখীকে নিয়ে মতে এল। অম্ভোজ সরোবরে এসে। মনের আনন্দে স্নান করছিল। দৈবক্রমে সেই পথে পুরুরবা যাচ্ছিল। উর্বশীকে খুঁজতে খুঁজতে দেখতে পেল। তারই কামনার ধন সেখানে তার সখীদের সঙ্গে। সোজা চলে গেল তার কাছে। তার কাছে ফিরে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করল।

উর্বশী পুরুরবাকে দেখে অবাক। একি চেহারা হয়েছে তার, সেই রূপ আর নেই। একেবারে জীর্ণ, মলিন বেশ, পুরুরবাকে বলল– আমি গন্ধর্বলোকের বাসিন্দা, মর্তে শাপভ্রষ্ট হয়ে ছিলাম। এখন আর থাকা সম্ভব নয়। তবে তোমার ঔরসে আমার গর্ভে এক পুত্র হয়েছে, নাম আয়ু, একে তুমি নাও।

পুরুরবা বলল- আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারব না। তুমি ছাড়া জগতে আমার আর কোন অভাব নেই।

তখন উর্বশী কয়েকজন গন্ধর্বকে পুরুরবার কাছে রেখে চলে গেল। সেই গন্ধর্বগণ পুরুরবার দুঃখ দূর করার চেষ্টা করল। তবুই রাজার দুঃখ দূর হল না।

তখন তারা রাজাকে একটি অগ্নিস্থালী দিল। বলল, আপনি উর্বশীর সাথেই আছেন মনে করে ঈশ্বর চিন্তা করে এই অগ্নির পূজা করবেন তিনবার, তবে আপনার ইচ্ছা পূর্ণ হবে।

উর্বশীকে না পেয়ে পুরুরবার মনে শান্তি নেই। বনের মধ্যে ফেলে দিল সেই অগ্নিস্থালী ফিরে এল প্রাসাদে পুত্র আয়ুকে নিয়ে। আবার কি ভেবে সেই বনে গেল অগ্নিস্থালীটি আনবার জন্যে কিন্তু দেখল–সেখানে একটা শাল গাছ তার ভেতরে আবার একটি অশ্বথ গাছ। পুরুরবা সেই জোড়া গাছকেই নিয়ে এল প্রাসাদে। সেই কাঠে কাঠ ঘষে আগুন জ্বালিয়ে হোম করলেন– তিনবার। কিন্তু বড়ই আশ্চর্য ব্যাপার ঘটল। যতক্ষণ হোম করে, ততক্ষণ উর্বশীর সঙ্গসুখ অনুভব করে।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10
Pages ( 10 of 10 ): « পূর্ববর্তী1 ... 89 10

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *