Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » বিশুপাল বধ – ব্যোমকেশ বক্সী || Sharadindu Bandyopadhyay » Page 3

বিশুপাল বধ – ব্যোমকেশ বক্সী || Sharadindu Bandyopadhyay

নাটক শেষ হবার পাঁচ মিনিট আগে যবনিকা পড়ে গেল। যেসব দর্শকেরা আগে নাটক দেখেছিল তারা বিস্মিত হল‌, যারা দেখেনি তারা ভাবল এ আবার কি! কিন্তু কেউ কোনো গোলমাল না করে যে যার বাড়ি চলে গেল।

থিয়েটারের অন্দর মহলে তখন কয়েকজন মানুষ স্টেজের ওপর‌, কেউ বসে কেউ দাঁড়িয়ে ছিল। কেবল দ্রৌপদী অর্থাৎ সূলোচনা নামী অভিনেত্রী মূৰ্ছিত হয়ে কীচকের পায়ের কাছে পড়ে ছিল। দারোয়ান প্রভুনারায়ণ সিং দরজা ছেড়ে স্টেজের উইংসে দাঁড়িয়ে অনিমেষ চোখে মৃত কীচকের পানে চেয়ে ছিল।

স্টেজের দরজা অরক্ষিত পেয়ে ব্যোমকেশ প্রতুলবাবুকে নিয়ে ঢুকে পড়েছিল। পরিস্থিতি স্বাভাবিক নয়‌, গুরুতর কিছু ঘটেছে সন্দেহ নেই; সুতরাং অনুসন্ধান দরকার।

স্টেজ থেকে তীব্র আলো আসছে। একটি লোক ব্যাগ হাতে বেরিয়ে দোরের দিকে যাচ্ছিল‌, প্রতুলবাবু তাকে থামিয়ে প্রশ্ন করলেন‌, ‘কী হয়েছে‌, ডাক্তার পাল?’

অমল পাল‌, যে প্লে আরম্ভ হবার আগে তাদের পাশে গিয়ে বসেছিল‌, উদভ্ৰান্তভাবে বলল‌, ‘দাদা নেই‌, দাদা মারা গেছেন।’

‘মারা গেছেন? কী হয়েছিল?’

‘জানি না‌, বুঝতে পারছি না। আমি পুলিসে খবর দিতে যাচ্ছি।’ অমল পাল দোরের দিকে পা বাড়াল।

এবার ব্যোমকেশ কথা কইল‌, ‘কিন্তু—আপনি বাইরে যাচ্ছেন কেন? যতদূর জানি এখানে টেলিফোন আছে।’

অমল পাল থমকে ব্যোমকেশের পানে চাইল‌, ধন্ধলাগাভাবে বলল‌, ‘টেলিফোন! ইহ্যাঁ হ্যাঁ‌, আছে বটে অফিস ঘরে—’

এই সময় দারোয়ান প্রভুনারায়ণ সিং এসে দাঁড়াল। লম্বা চওড়া মধ্যবয়স্ক লোক‌, থিয়েটারের পিছন দিকে কয়েকটা কুঠুরিতে সপরিবারে থাকে আর থিয়েটার বাড়ি পাহারা দেয়। সে অমল পালের পানে চেয়ে ভারী গলায় বলল‌, ‘সাব‌, মালিক তো গুজর গিয়ে। আব্র ক্যা করন হ্যায়?’

অমল পাল একটা ঢোক গিলে প্রবল বাম্পোচ্ছাস দমন করল‌, কোনো উত্তর না দিয়ে টেলিফোনের উদ্দেশ্যে অফিস ঘরের দিকে চলে গেল। প্রভু সিং ব্যোমকেশের পানে চাইল‌, ব্যোমকেশ বলল‌, ‘তুমি দারোয়ান? বেশ‌, দোরে পাহারা দাও। পুলিস যতক্ষণ না আসে কাউকে ঢুকতে বা বেরুতে দিও না।’

প্রভু সিং চলে গেল। সে সচ্চরিত্র প্রভুভক্ত লোক; তার সংসারে স্ত্রী আর একটি বিধবা বোন ছাড়া আর কেউ নেই। বস্তুত থিয়েটারই তার সংসার। বিশেষত অভিনেত্রী জাতীয়া স্ত্রীলোকদের সে একটু বেশি স্নেহ করে। এই তার চরিত্রের একটি দুর্বলতা; কিন্তু নিঃস্বার্থ দুর্বলতা।

ব্যোমকেশ ও প্রতুলবাবু যখন মঞ্চে গিয়ে দাঁড়ালেন তখন তিনজন পুরুষ দ্রৌপদীকে অর্থাৎ অভিনেত্রী সুলোচনাকে ধরাধরি করে তুলে নিয়ে গ্ৰীনরুমে যাচ্ছে। তারা চলে গেলে স্টেজে রয়ে গেল দু’টি লোক : একটি ছেলেমানুষ গোছের মেয়ে‌, সে উত্তরার ভূমিকায় অভিনয় করেছিল; সে পালঙ্কের পায়ের দিকে দাঁড়িয়ে বিভীষিকা-ভরা চোখে মৃত বিশু পালের মুখের পানে চেয়ে ছিল। সে এখনো উত্তরার সাজ-পোশাক পরে আছে‌, তার মোহাচ্ছন্ন অবস্থা দেখে মনে হয়। সে আগে কখনো অপঘাত মৃত্যু দেখেনি। তার নাম মালবিকা।

দ্বিতীয় ব্যক্তিটি যুবাপুরুষ‌, সে পালঙ্কের শিয়রের দিকে দাঁড়িয়ে ছিল এবং ক্রমান্বয়ে একবার মৃতের মুখের দিকে একবার মেয়েটির মুখের পানে চোখ ফেরাচ্ছিল। তার খেলোয়াড়ের মত দৃঢ় সাবলীল শরীর এবং সংযত নিরুদ্বেগ ভাব দেখে মনে হয় না যে সে এই থিয়েটারে আলোকশিল্পী। তার নাম মণীশ‌, বয়স আন্দাজ ত্ৰিশ।

ব্যোমকেশ ও প্রতুলবাবু স্টেজে প্রবেশ করে পালঙ্কের কাছে গিয়ে দাঁড়ালেন। মৃতের মুখে তীব্র আলো পড়েছে। মুখে মৃত্যু যন্ত্রণার ভান সত্যিকার মৃত্যু যন্ত্রণায় পরিণত হয়েছে। কিম্বা–

‘মুখের কাছে ওটা কী?’ প্রতুলবাবু মৃতের মুখের দিকে আঙুল দেখিয়ে খাটো গলায় প্রশ্ন করলেন।

ব্যোমকেশ সামনের দিকে ঝুকে দেখল‌, রুমালের মত এক টুকরো কাপড় বিশু পালের চোয়ালের কাছে পড়ে আছে। সে বলল‌, ‘ঠিক বোঝা যাচ্ছে না। রুমাল নয়। যখন লড়াই হচ্ছিল তখন ওটা চোখে পড়েনি।’

‘আমারও না।’

ব্যোমকেশ সোজা হয়ে বলল‌, ‘কোনো গন্ধ পাচ্ছেন?’

‘গন্ধ? প্রতুলবাবু দু’বার আত্মাণ নিয়ে বললেন‌, ‘সেন্ট-পাউডার‌, ম্যাকস ফ্যাকটর‌, সিগারেটের ধোঁয়ার গন্ধ। আর তো কিছু পাচ্ছি না।’

পাচ্ছেন না? এইদিকে ঝুকে একটু ওঁকে দেখুন তো। ‘ ব্যোমকেশ মৃতদেহের দিকে আঙুল দেখাল।

প্রতুলবাবু সামনে ঝুকে কয়েকবার নিশ্বাস নিলেন‌, তারপর খাড়া হয়ে ব্যোমকেশের সঙ্গে মুখোমুখি হলেন‌, ঘাড় নেড়ে বললেন‌, ‘আপনি ঠিক ধরেছেন। বাদাম তেলের ক্ষীণ গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। তার মানে—‘

যারা সুলোচনাকে সরিয়ে নিয়ে গিয়েছিল তারা ফিরে এল। তাদের মধ্যে একজন হচ্ছে ব্রজদুলাল‌, অর্থাৎ ভীম; দ্বিতীয় ব্যক্তিটি থিয়েটারের প্রমপটার‌, নাম কালীকিঙ্কর; তৃতীয় ব্যক্তির নাম দাশরথি‌, সে কমিক অভিনেতা‌, নাটকে বিরাটরাজার পার্ট করেছে।

তিনজনে অস্বস্তিপূর্ণভাবে খানিকক্ষণ দাঁড়িয়ে রইল; মাঝে মাঝে মৃতদেহের পানে তাকাচ্ছে। এ অবস্থায় কি করা উচিত বুঝতে পারছে না। ভীমের হাতে তার ব্যাগ ছিল (পরে দেখা গেল অভিনেতা অভিনেত্রীরা সকলেই বাড়তি কাপড়-চোপড় এবং প্রয়োজনীয় জিনিস নিয়ে অভিনয় করতে আসে)। ভীম ব্যাগটি স্টেজের ওপর রেখে নিজে সেখানে বসল; ব্যাগ খুলে আস্ত একটা হুইস্কির বোতল ও গেলাস বার করল‌, একবার সকলের দিকে চোখ তুলে গম্ভীর স্বরে বলল‌, ‘কেউ খাবে?

কেউ সাড়া দিল না। ভীম তখন গেলাসে খানিকটা মদ ঢেলে মালবিকার পানে চাইল। মালবিকার মুখ পাংশু‌, মনে হয় যেন তার শরীর অল্প অল্প টলছে। স্নায়ুর অবসাদ এসেছে‌, এখনি হয়তো মূৰ্ছিত হয়ে পড়বে। ভীম মণীশকে বলল‌, ‘মণীশ‌, মালবিকার অবস্থা ভাল নয়‌, এই নাও‌, একটু জল মিশিয়ে খাইয়ে দাও। নইলে ও যদি আবার অজ্ঞান হয়ে পড়ে‌, নতুন ঝামেলা শুরু হবে—‘

মণীশ তার হাত থেকে গেলাস নিয়ে বলল‌, ‘সুলোচনাদিদির জ্ঞান হয়েছে?’ ভীম বলল‌, ‘এখনো হয়নি। নন্দিতাকে বসিয়ে এসেছি। মণীশ‌, তুমি মালবিকাকে ওঘরে নিয়ে যাও। ওষুধটা জল মিশিয়ে খাইয়ে দিও‌, তারপর খানিকক্ষণ শুইয়ে রেখো। দশ মিনিট শুয়ে থাকলেই ঠিক হয়ে যাবে।’

মণীশ এক হাতে মালবিকার পিঠ জড়িয়ে অন্য হাতে হুইস্কির গেলাস নিয়ে গ্ৰীনিরুমের দিকে চলে গেল! ভীম তখন নিজের পুরুন্টু গোঁফজোড়া ছিঁড়ে ফেলে দিয়ে হুইস্কির বোতলের গলায় ঠোঁট জুড়ে চুমুক মারল।

আমাদের দেশের যাত্ৰা থিয়েটারে ভীমের ইয়া গোঁফ ও গালাপাট্টা দেখা যায়; যদিও মহাভারতে বেদব্যাস। ভীমকে তূরব বলেছেন। অর্থাৎ ভীম মাকুন্দ ছিল। অবশ্য বর্তমান নাটকে ভীম মাকুন্দ না হলেও ক্ষতি নেই; এ-ভীম সে-ভীম নয়‌, তার অর্বাচীন বিকৃত ছায়ামাত্র।

লম্বা এক চুমুকে প্রায় আধাআধি বোতল শেষ করে ভীম বোতল নামিয়ে রাখল‌, প্যাঁচার মত মুখ করে কিছুক্ষণ বোতলের পানে চেয়ে রইল। তার গোঁফ-বৰ্জিত মুখখানা অন্য রকম দেখাচ্ছে‌, ন্যাড়া হাড়গিলের মত। সে কতকটা নিজের মনেই বলল‌, ‘ভীম-কীচকের লড়াই-এর পর আমার রোজই এক গেলাস দরকার হয়‌, নইলে গায়ের ব্যথা মরে না। আজ এক বোতলেও শানাবে না।’

ব্যোমকেশ এতক্ষণ চুপ করে দাঁড়িয়ে সব দেখছিল‌, শুনছিল। এখন শান্ত স্বরে প্রশ্ন করল‌, ‘বিশু পাল মদ খেতেন?’

বলল‌, না। ওরা দরকার হত না। লোহার শরীর ছিল। কিসে যে মারা গেল।–1 ডাক্তার অমলকে দেখেছিলাম‌, সে কোথায় গেল?’

ব্যোমকেশ বলল‌, ‘তিনি পুলিসকে টেলিফোন করতে অফিসে গেছেন। পুলিস এখনি এসে পড়বে। তার আগে আমি আপনাদের দু’ একটা প্রশ্ন করতে পারি?

ভীম বোতলে আর এক চুমুক দিয়ে বলল‌, ‘করুন প্রশ্ন। আপনি কে জানি না‌, কিন্তু প্রশ্ন করার হক সকলেরই আছে।’

প্রতুলবাবু পরিচয় করিয়ে দিলেন‌, ‘ইনি সত্যান্বেষী ব্যোমকেশ বক্সী। থিয়েটার দেখতে এসেছিলাম একসঙ্গে‌, তারপর এই দুর্ঘটনা।’

ভীমের চোখের দৃষ্টি একটু সতর্ক হল‌, অন্য দু’জন ঘাড় ফিরিয়ে চাইল। ব্যোমকেশ বলল‌, ‘আজ আপনারা এখানে ক’জন উপস্থিত আছেন?’।

ভীম বলল‌, ‘শেষ দৃশ্য অভিনয় হচ্ছিল। সাধাণরত শেষ দৃশ্যে যাদের কোজ নেই তারা বাড়ি চলে যায়। আজ বিশু সুলোচনা আর আমি ছিলাম। আর কারা ছিল না ছিল খবর রাখি না।’

কমিক অভিনেতা দাশরথি বলল‌, ‘আমি আর আমার স্ত্রী নন্দিতা ছিলাম।’

ব্যোমকেশ সপ্রশ্ন নেত্রে চাইল। দাশরথির এখন কমিক ভাব নেই‌, চোখে উদ্বিগ্ন দৃষ্টি। সে ইতস্তত করে বলল‌, ‘বিশুবাবুর সঙ্গে আমার কিছু কথা ছিল‌, তাই নাটক শেষ হবার অপেক্ষায় ছিলাম। তৃতীয় অঙ্কে আমার প্রবেশ নেই।’

‘আর কেউ ছিল?’

‘আর মালবিকা ছিল। টেকনিশিয়ানদের মধ্যে মণীশ আর তার সহকারী কাঞ্চনজঙ্ঘা ছিল–’

‘কাঞ্চনজঙ্ঘা!’

‘তার নাম কাঞ্চন সিংহ‌, সবাই কাঞ্চনজঙ্ঘা বলে।’

‘ও‌, তিনি কোথায়?’

দাশরথি এদিক ওদিক চেয়ে বলল‌, ‘দেখছি না। কোথাও পড়ে ঘুম দিচ্ছে বোধহয়।’

‘আর কেউ?’ এতক্ষণে তৃতীয় ব্যক্তি কথা বলল‌, ‘আর আমি ছিলাম। আমি প্রমপটার‌, শেষ পর্যন্ত নিজের জায়গায় ছিলাম।’

‘আপনার জায়গা কোথায়?’

প্রমপটার কালীকিঙ্কর দাস। আঙুল দেখিয়ে বলল‌, ‘ওই যে উইংসের খাঁজের মধ্যে টুল পাতা রয়েছে‌, ঐখানে।’

স্টেজের ওপর যে ঘরের সেট তৈরি হয়েছিল তার প্রবেশদ্বার মাত্র দু’টি : একটি পিছনের দেয়ালে‌, অন্যটি বাঁ পাশে; কিন্তু প্রসিনিয়ামের দু’পাশে থেকে এবং আরো কয়েকটি উইংসের প্রচ্ছন্ন পথে যাতায়াত করা যায়। প্রমপটার যেখানে দাঁড়ায় সেখানে যাওয়া আসার সঙ্কীর্ণ পথ আছে; বিপরীত দিকে আলোর কলকব্জা ও সুইচ বোর্ড যেখানে দেয়ালের সারা গায়ে বিছিয়ে আছে সেদিক থেকে স্টেজে প্রবেশের সোজা রাস্তা। আলোকশিল্পীকে সর্বদা স্টেজের ওপর চোখ রাখতে হয়‌, মাঝখানে আড়াল থাকলে চলে না।

এই সময় পিছনের দরজা দিয়ে মণীশ মালবিকার বাহু ধরে স্টেজে প্রবেশ করল। মালবিকার ফ্যাকাসে মুখে একটু সজীবতা ফিরে এসেছে। ওরা মৃতদেহের দিকে চোখ ফেরাল না। মণীশ বলল‌, ‘ব্রজদুলালদা‌, এই নিন। আপনার গেলাস। মালবিকা এখন অনেকটা সামলেছে‌, ওকে এবার বাড়ি নিয়ে যাই?’

ভীম বলল‌, ‘এখনি যাবে কোথায়! এখনো পুলিস আসেনি।’

মণীশ সপ্রশ্ন চোখে ব্যোমকেশ ও প্রতুলবাবুর পানে চাইল। ব্যোমকেশ মাথা নাড়ল‌, ‘আমরা পুলিস নই। কিন্তু আপনাকে তো অভিনয় করতে দেখিনি—’

ভীম বলল‌, ‘ও অভিনয় করে না। ও আমাদের আলোকশিল্পী। মণীশ ভদ্র’র নাম শুনেছেন নিশ্চয়-বিখ্যাত সাঁতারু।’

মণীশ বলল‌, ‘আপনিও কম বিখ্যাত নন‌, ব্রজদুলালদা। এক সময় ভারতবর্ষের চ্যাম্পিয়ন মিড়ল-ওয়েট মুষ্টিযোদ্ধা ছিলেন।’

ভীম গোলাসে মদ ঢালতে ঢালতে বলল‌, ‘সে-সব দিন গেছে ভায়া। বোসো বোসো‌, আজ রাত দুপুরের আগে কেউ ছাড়া পাচ্ছে না।’

মণীশ বলল‌, ‘কিন্তু কেন? পুলিস আসবে কেন? বিশুবাবুর মৃত্যু কি স্বাভাবিক মৃত্যু নয়? আমার তো মনে হয় ওঁর হার্ট ভেতরে ভেতরে দুর্বল হয়েছিল‌, লড়াই-এর ধকল সহ্য করতে পারেননি‌, হার্ট ফেল করে গেছে।’

ভীম বলল‌, ‘যদি তাই হয় তবু পুলিস তদন্ত করবে।’

মণীশ আর মালবিক পাশাপাশি স্টেজের ওপর বসল। কিছুক্ষণ কোনো কথা হল না। কতক্ষণ অপেক্ষা করতে হবে ঠিক নেই; কমিক অভিনেতা দাশরথি ওরফে বিরাটরাজ পকেট থেকে সিগারেট বার করে মৃতদেহের পানে কটাক্ষপাত করে সিগারেট আবার পকেটে পুরল।

ব্যোমকেশ বলল‌, ‘আচ্ছা‌, একটা কথা। মণীশবাবু এবং শ্ৰীমতী মালবিকা হলেন স্বামী-স্ত্রী-কেমন? ওঁরা একসঙ্গে এই থিয়েটারে কাজ করেন। এই রকম স্বামী-স্ত্রী এ থিয়েটারে আরো আছেন নাকি?’

ভীম গেলাসে এক চুমুক দিয়ে বলল‌, ‘দেখুন‌, আমাদের এই থিয়েটার হচ্ছে একটি ঘরোয়া কারবার। যারা এখানে কাজ করে‌, মেয়ে-মদ কাজ করে। যেমন মণীশ আর মালবিকা‌, বিশু আর সুলোচনা‌, দাশরথি আর নন্দিতা। আমি অ্যাকটিং করি‌, আমার স্ত্রী শান্তি মিউজিক মাস্টার-গানে সুর বসায়। শাস্তির কাজ শেষ হয়েছে‌, সে রোজ আসে না। আজ আসেনি। এমনি ব্যবস্থা। ছুট্‌ লোক বড় কেউ নেই।’

ব্যোমকেশ বলল‌, ‘বুঝলাম। এখন বলুন দেখি‌, বিশুবাবু মানুষটি কেমন ছিলেন?’

ভীম মদের গেলাস মুখে তুলল। দাশরথি উত্তেজিত হয়ে বলল‌, ‘সাধু ব্যক্তি ছিলেন। উদার প্রকৃতির মানুষ ছিলেন‌, মুক্তহস্ত পুরুষ ছিলেন। তিনি যেমন অগাধ টাকা রোজগার করতেন তেমনি দুহাতে টাকা খরচ করতেন। মণীশকে নতুন মোটর কিনে দিয়েছিলেন‌, আমাদের সকলের নামে লাইফ ইনসিওর করেছিলেন। নিজে প্রিমিয়াম দিতেন। এ রকম মানুষ পৃথিবীতে কটা পাওয়া যায়?’

ব্যোমকেশ গম্ভীর মুখে বলল‌, ‘তাহলে বিশুবাবুর মৃত্যুতে আপনাদের সকলেরই লাভ হয়েছে।’ একথার উত্তরে হঠাৎ কেউ কিছু বলতে পারল না‌, মুখ চাওয়া-চাওয়ি করতে লাগল। শেষে ভীম বলল‌, ‘তা বটে। বিশু নিজের নামে জীবনবীমা করেছিল‌, কিন্তু উত্তরাধিকারী করেছিল আমাদের। তার মৃত্যুতে বীমার টাকা আমরাই পাব। কিন্তু সামান্য কাটা টাকার জন্যে বিশুকে খুন করবে। এমন পাষণ্ড এখানে কেউ নেই।’

‘তাহলে বিশুবাবুর শত্ৰু কেউ ছিল না?’

কেউ উত্তর দেবার আগেই বাঁ দিকের দোর দিয়ে ডাক্তার অমল পাল প্রবেশ করল। তার পিছনে একটি হিপি-জাতীয় ছোকরা। মাথার চুলে কপোল ঢাকা‌, দাড়ি গোঁফে মুখের বাকি অংশ সমাচ্ছন্ন; আসলে মুখখানা কেমন বাইরে থেকে আন্দাজ করা যায় না। সে মৃতদেহের দিকে একটি বঙ্কিম কটাক্ষ নিক্ষেপ করে চুপিচুপি মণীশদের পাশে গিয়ে বসল।

দাশরথি বলল‌, ‘এই যে কাঞ্চনজঙ্ঘা! কোথায় ছিলে হে তুমি?’

কাঞ্চনজঙ্ঘা যেন শুনতে পায়নি এমনিভাবে মণীশকে খাটো গলায় বলল‌, ‘ভীষণ মাথা ধরেছিল‌, মণীশদা। থার্ড অ্যাকটে আমার বিশেষ কোজ নেই‌, তাই সিন ওঠার পর আমি কলঘরে গিয়ে মাথায় খুব খানিকটা জল ঢালিলাম। তারপর অফিস ঘরে গিয়ে পাখাটা জোরে চালিয়ে দিয়ে টেবিলে মাথা রেখে একটু চোখ বুজেছিলাম। অফিসে কেউ ছিল না‌, তাই বোধহয় একটু ঝিমকিনি এসে গিয়েছিল—’

মণীশ বিরক্ত চোখে তার পানে চাইল। দাশরথি বলল‌, ‘এত কাণ্ড হয়ে গেল কিছুই জানতে পারলে না।

এবারও কাঞ্চনজঙ্ঘা কোনো কথায় কৰ্ণপাত না করে মণীশের কাছে আরো খাটো গলায় বোধকরি নিজের কার্যকলাপের কৈফিয়ৎ দিতে লাগল।

ব্যোমকেশ হঠাৎ গলা চড়িয়ে তাকে প্রশ্ন করল‌, ‘আপনার জন্যে বিশুবাবু কত টাকার বীমা করে গেছেন?’

কাঞ্চনজঙ্ঘা চকিতভাবে মুখ তুলল‌, ‘আমাকে বলছেন? বীমা! কই‌, আমার জন্যে তো বিশুবাবু জীবনবীমা করেননি।’

ব্যোমকেশ বলল‌, ‘করেননি? তবে যে শুনলাম–’

ভীম বলল‌, ‘ওর চাকরির এক বছর পূর্ণ হয়নি‌, প্ৰেবেশনে কাজ করছে‌, কাঁচা চাকরি—তাই—‘

কাছেই প্রতুলবাবু ও অমল পাল দাঁড়িয়ে নিম্নস্বরে কথা বলছিলেন‌, ব্যোমকেশ কাঞ্চনজঙ্ঘাকে আর কোনো প্রশ্ন না করে সেইদিকে ফিরল। অমল পাল অস্বস্তিভরা গলায় বলছিল‌, ‘দাদার সঙ্গে সুলোচনার ঠিক—মনে—ওরা অনেকদিন স্বামী-স্ত্রীর মতাই ছিল—’

ব্যোমকেশ প্রশ্ন করল‌, ‘বিশুবাবু বিয়ে করেননি?’

‘করেছিলেন বিয়ে। কিন্তু অল্পকাল পরেই বৌদি মারা যান। সে আজ দশ বারো বছরের কথা। ছেলেপুলে নেই।’

স্টেজের দোরের বাইরে মোটর হর্ন শোনা গেল। একটা পুলিস ভ্যান ও অ্যাম্বুলেন্স এসে দাঁড়িয়েছে। আট দশজন পোষাকী পুলিস ভ্যান থেকে নেমে প্রভু সিং-এর সঙ্গে কথা বলল। তারপর পিলপিল করে স্টেজে ঢুকল। একজন অফিসার ব্যোমকেশদের দিকে এগিয়ে এসে বললেন‌, ‘আমি ইন্সপেক্টর মাধব মিত্ৰ, থানা থেকে আসছি। কে টেলিফোন করেছিলেন?’

‘আমি-ডক্টর অমল পাল। আমার দাদা—’

‘কি ব্যাপার সংক্ষেপে বলুন।’

অমল পাল স্খলিত স্বরে আজকের ঘটনা বলতে আরম্ভ করলেন‌, ইন্সপেক্টর মাধব মিত্র ঘাড় একটু কাত করে শুনতে শুনতে স্টেজের চারিদিকে চোখ ফেরাতে লাগলেন; মৃতদেহ থেকে প্রত্যেক মানুষটি তাঁর দৃষ্টি প্রসাদে অভিষিক্ত হল। বিশেষত তাঁর অনুসন্ধিৎসু চক্ষু প্রতুলবাবু ও ব্যোমকেশের পাশে বারবার ফিরে আসতে লাগল। মাধব মিত্রের চেহারা ভাল‌, মুণ্ডিত মুখে চতুর্য ও সতর্কতার আভাস পাওয়া যায়; তিনি কেবলমাত্র তাঁর উপস্থিতির দ্বারা যেন সমস্ত দায়িত্বের ভার নিজের স্কন্ধে তুলে নিয়েছেন।

ডাক্তার পালের বিবৃতি শেষ হলে ইন্সপেক্টর বললেন‌, ‘মৃতদেহ সরানো হয়নি?’

ব্যোমকেশ বলল‌, ‘না। কাউকে কিছুতে হাত দিতে দেওয়া হয়নি। যাঁরা ঘটনাকালে মঞ্চে ছিলেন তাঁরাও সকলেই উপস্থিত আছেন।’

ইন্সপেক্টর ব্যোমকেশের পানে চেয়ে প্রশ্ন করলেন‌, ‘আপনারা-?’ তিনি বোধহয় অনুভব করেছিলেন যে এঁরা দু’জন থিয়েটার সম্পর্কিত লোক নন।

প্রতুলবাবু ব্যোমকেশের পরিচয় দিলেন‌, সহজাত বিনয়বশত নিজের পরিচয় উহ্য রাখলেন। মাধব মিত্রের মুখ এতক্ষণ হাস্যহীন ছিল‌, এখন ধীরে ধীরে তাঁর অধর-প্রান্তে একটু মোলায়েম হাসি দেখা দিল। তিনি বললেন‌, ‘আপনি সত্যান্বেষী ব্যোমকেশ বক্সী! আপনার যে থিয়েটার দেখার শখ আছে তা জানতাম না।’

ব্যোমকেশ বলল‌, ‘আর বলেন কেন‌, পণ্ডিত ব্যক্তির পাল্লায় পড়ে এই বিপত্তি। ইনি হলেন–’

ব্যোমকেশ প্রতুলবাবুর পরিচয় দিল। তারপর বলল‌, ‘মাধববাবু্‌, আমরা মৃতদেহের কাছে একটা গন্ধ পেয়েছি। এই বেলা আপনি সেটা শুকে নিলে ভাল হয়। গন্ধটা বোধহয় স্থায়ী গন্ধ নয়?

মাধববাবু তুরিতে ফিরে মৃতদেহের কাছে গেলেন‌, একবার তার আপাদমস্তক দেখে নিয়ে পাশে নতজানু হয়ে সামনের দিকে ঝুকে মৃতের মুখের কাছে মুখ নিয়ে গেলেন।

‘বিশ্বাস‌, শীগগির ডাক্তার ডেকে নিয়ে এস।’–মাধব মিত্র উঠে দাঁড়িয়ে ব্যোমকেশের দিকে ফিরলেন। তরুণ সাব-ইন্সপেক্টর বিশ্বাস প্রায় দৌড়তে দৌড়তে বাইরে চলে গেল। পুলিসের ডাক্তার পুলিস ভ্যানে অপেক্ষা করছিলেন।

‘আপনারা ঠিক ধরেছেন‌, গন্ধটা সন্দেহজনক।–এই যে ডাক্তার‌, একবার এদিকে আসুন তো—‘

ব্যাগ হাতে প্রৌঢ় ডাক্তার মৃতের কাছে গেলেন‌, মাধবাবু ক্ষিপ্রস্বরে তাঁকে ব্যাপার বুঝিয়ে দিয়েন।

পাঁচ মিনিট পরে শিব পরীক্ষা শেষ করে ডাক্তার উঠে দাঁড়ালেন।

‘খুব ক্ষীণ গন্ধ‌, কিন্তু সায়ানাইড সন্দেহ নেই। এখনি মর্গে নিয়ে গিয়ে ওটপ্সি করতে হবে‌, নইলে সায়ানাইডের সব লক্ষণই লুপ্ত হয়ে যাবে।’

‘সায়ানাইড কি করে প্রয়োগ করা হল‌, ডাক্তার?’

ডাক্তার মৃতের কাছ থেকে ন্যাকড়ার ফালিটা তুলে ধরে বললেন‌, ‘এই কাপড়ের এক কোণে গিট বাঁধা রয়েছে দেখছেন? ওর মধ্যে কাচের একটা অ্যামপুল ছিল‌, তার মধ্যে তরল সায়ানাইড ছিল। যখন স্টেজ অন্ধকার হয়ে যায়। সেই সময় আততায়ী স্টেজে ঢুকে ন্যাকড়ার খুঁট ধরে মাটিতে আছাড় মারে‌, অ্যামপুল ভেঙ্গে যায়। তারপর-বুঝেছেন? হায়ড্রোসায়নিক অ্যাসিড খুব ভোলাটাইল-মানে–’

‘বুঝেছি। —মাধব মিত্র হাত নেড়ে পরিচরদের হুকুম দিলেন। তারা কীচকের মরদেহ ধরাধরি করে বাইরে নিয়ে গেল। ডাক্তার ন্যাকড়ার ফালি ব্যাগে পুরে কীচকের অনুগামী হলেন।

অমল পালের গলার মধ্যে একটা চাপা শব্দ হল‌, যেন সে প্রবল কান্নার বেগ রোধ করবার চেষ্টা করছে।

মাধব মিত্র একবার চারিদিকে তাকালেন‌, ভীম প্রমুখ কয়েকটি লোক স্টেজের মধ্যে প্রস্তর পুত্তলিকার মত বসে আছে। ভীমের বোতল ব্যাগের মধ্যে অস্তহিঁত হয়েছে। মালবিকার চোখে মোহাচ্ছন্ন দৃষ্টি। মাধব মিত্র ব্যোমকেশের দিকে এগিয়ে গিয়ে বললেন‌, ‘আজ বোধহয় এজাহার নিতে রাত কাবার হয়ে যাবে। আপনাদের অতক্ষণ আটকে রাখব না। কী দেখেছেন বলুন।’

ব্যোমকেশ বলল‌, ‘দেখলাম। আর কই। যা কিছু ঘটেছে অন্ধকারে ঘটেছে।’

প্রতুলবাবু বললেন‌, ‘যেমন তেমন অন্ধকার নয়‌, সূচীভেদ্য অন্ধকার। আমরা চোখ থাকতেও অন্ধ ছিলাম।’

মাধববাবু নিশ্বাস ফেলে বললেন‌, ‘তাহলে আপনাদের আটকে রেখে লাভ নেই। আজ আসুন তবে। যদি কোনো দরকারী কথা মনে পড়ে। দয়া করে আমাকে স্মরণ করবেন। আচ্ছা‌, নমস্কার।

ব্যোমকেশের ইচ্ছে ছিল আরো কিছুক্ষণ থেকে পরিস্থিতির গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করে‌, কিন্তু এ রকম বিদায় সম্ভাষণের পর আর থাকা যায় না। দু’জনে দ্বারের অভিমুখে অগ্রসর হলেন। ব্যোমকেশ যেতে যেতে একবার ঘাড় ফিরিয়ে দেখল ইন্সপেক্টর অমল পালের সঙ্গে কথা কইছেন।

দোরের কাছে প্রভু সিং দাঁড়িয়েছিল। ব্যোমকেশ লক্ষ্য করল‌, দোরের বাইরে থেকে একটি মেয়ে ব্যগ্র চক্ষে স্টেজের দিকে উঁকি মারছে। যুবতী মেয়ে‌, মুখশ্ৰী ভাল‌, শাড়ি পরার ভঙ্গী ঠিক বাঙালী মেয়ের মত নয়। ব্যোমকেশদের আসতে দেখে সে সুন্টু করে অন্ধকারে অদৃশ্য হয়ে গেল।

ব্যোমকেশ প্রভু সিং-এর কাছে গিয়ে দাঁড়াল‌, বলল‌, ‘ও মেয়েটি কে?’

প্রভু সিং একটু অপ্রস্তুত হয়ে পড়ল‌, ‘জি-ও আমার ছোট বোন সোমরিয়া। আমার কাছেই থাকে‌, থিয়েটারের কাজকর্ম করে‌, ঝটপট ঝাড়পৌঁছ-এই সব। মালিক ওকে খুব স্নেহ করতেন—

‘হুঁ, সধবা মেয়ে মনে হল। তোমার কাছে থাকে কেন?’

প্রভু সিং বিব্রত হয়ে বলল‌, ‘জি‌, ওর মরদের সঙ্গে বনিবনাও নেই‌, তাই আমি নিজের কাছে এনে রেখেছি।’

‘তোমার সংসারে আর কেউ আছে?’

‘জি‌, ঔরৎ আছে‌, বাচ্চা মেয়ে আছে। থিয়েটারের হাতার মধ্যেই আমরা থাকি।’

প্রতুলবাবুর মোটর রাস্তার ধারে পার্ক করা ছিল। সেইদিকে যেতে যেতে ব্যোমকেশ দেখল থিয়েটারের হাতার মধ্যে পুলিসের ভ্যান ছাড়াও আরো দু’টি মোটর দাঁড়িয়ে আছে। একটি সম্ভবত বিশু পালের গাড়ি, আকারে বেশ বড় বিলিতি গাড়ি, খুব নতুন নয়; অন্য গাড়িটি কার অনুমান করা শক্ত। ভীমের হতে পারে‌, যদি ভীমের গাড়ি থাকে; আমল পাল ডাক্তার‌, তার গাড়ি হতে পারে; কিম্বা মণীশ ভদ্র’র হতে পারে। বিশু পাল মণীশকে গাড়ি কিনে দিয়েছিল

এই সব চিন্তার মধ্যে ব্যোমকেশ অনুভব করল সে প্রতুলবাবুর গাড়িতে চড়ে বাড়ির দিকে ফিরে চলেছে। সে অন্যমনস্কভাবে একটা সিগারেট ধরিয়েছে‌, পাশের অন্ধকার থেকে প্রতুলবাবু বললেন‌, ‘আমি অন্ধকারের মধ্যে স্টেজের ওপর কিছু দেখিনি সত্য‌, কিন্তু মনে হয় কিছু শুনেছি।’

‘কি শুনেছেন?’ ব্যোমকেশ তাঁর দিকে ঘাড় ফেরাল।

‘একটা মিহি শব্দ।’

‘কি রকম মিহি শব্দ?

‘ঠিক বর্ণনা করে বোঝানো শক্ত। এই ধরুন মেয়ের হাত ঝাড়লে যেমন চুড়ির আওয়াজ হয়‌, সেই রকম।’

‘কাচের চুড়ি‌, না সোনার চুড়ি?’

‘তা বলতে পারি না। আপনি কিছু শুনতে পাননি?’

‘আমার কান ওদিকে ছিল না।’

পথে আর কোনো কথা হল না।

Pages: 1 2 3 4

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress