বিমান কাহিনি
সার্থকনামা মানুষ বিমানচন্দ্র। তাঁর পদবি এই ক্ষুদ্র কাহিনিতে প্রয়োজনীয় নয়। শুধু বিমানচন্দ্র লিখলেই চলবে। বিমানচন্দ্রের বয়েস, মাত্র দু-এক বছর আগে, পঞ্চাশের কোঠায় এসে পৌঁছেছে। চর্বিহীন, সুন্দর সুগঠিত দেহ। তাকে যুবক না বললেও বৃদ্ধ, এমনকী প্রৌঢ় বলাও সঙ্গত হবে না। একটিও চুল পাকেনি, একটিও দাঁত নড়েনি। ঋজু, দীর্ঘ শরীর।
বিমানচন্দ্র জন্মেছিলেন সেই চল্লিশের দশকের গোড়ায় কলকাতার শহরতলিতে জাপানি বোমার বছরে। কলকাতার আকাশে তথাকথিত শত্রুপক্ষের, মিত্রপক্ষের বিমানের ক্ষিপ্র আনাগোনা। সাইরেন, ট্রেঞ্চ। দু-চারটি বোমা, দু-দশটি মৃত্যু। খবরের কাগজের পাতায় পাতায় বিমানযুদ্ধের রোমাঞ্চকর কাহিনি। ভীত, সন্ত্রস্ত নাগরিকেরা শহর থেকে শহরতলিতে পালাচ্ছে, শহরতলি থেকে গ্রামে। ভয় যতটা ছিল, ভয়ের কারণ ততটা ছিল না। জাপানি বিমানের বোমাবর্ষণে কলকাতায় সবসুদ্ধ যত লোক মারা গিয়েছিল, তার চেয়ে অনেক বেশি লোক মারা যায় যেকোনও সময় নৌকোডুবিতে বা বাস দুর্ঘটনায়। এমনকী কখনও কখনও কলেরা বা টাইফয়েডে প্রতি সপ্তাহে তার চেয়ে বেশি লোক মারা যেত তখনকার কলকাতায়।
সে যাই হোক, সেই বিমানযুদ্ধের বছরে কলকাতায় যেদিন প্রথম বোমা পড়ল, তার পরদিন ঘুঘুডাঙায় পৈতৃক ভদ্রাসনে বিমানচন্দ্র জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর অবশ্য ভবানীপুরে মাতুলালয়ে জন্মানোর কথা ছিল। কিন্তু জাপানি বিমানের আক্রমণের ভয়ে বিমানচন্দ্রের পিতামহ, পুত্রবধূকে তার পিত্রালয়ে পাঠাননি। পাঠিয়েও কোনও লাভ ছিল না। কিছুদিন আগে তারা, অর্থাৎ বিমানচন্দ্রের মাতুল বংশীয়েরা, ভবানীপুরের বাসাবাড়ি তালাবন্ধ করে খুলনায় তাদের গ্রামের বাড়িতে পালিয়ে গিয়েছিলেন।
এইরকম পরিস্থিতিতে বিমানচন্দ্রের জন্ম। স্বাভাবিকভাবেই তার পিতামহ তাঁর বিমান নামকরণ করেন। বিমানচন্দ্র ভাল ছাত্র ছিলেন। পরে বিদেশে গিয়ে পড়াশোনা করেছেন। সেখান থেকেই বিদেশি কোম্পানিতে চাকরি সংগ্রহ করেন। চাকরিসূত্রে বিমান বহুদিন বিদেশে ছিলেন। সম্প্রতি খোলামেলা অর্থনীতির হাওয়ার সুবাদে তিনি দেশে ফিরে এসেছেন। তার কোম্পানি দিল্লিতে একটি শাখা স্থাপন করেছে। সেখানেই উচ্চপদে তিনি আসীন হয়েছেন।
বিমানবাবু যে কোম্পানিতে কাজ করেন, তাঁদের বিমার ব্যবসা। সেও সাধারণ বিমা বা জীবনবিমার কারবার নয়, বিমানবিমার কারবার।
বিমানপথে যাত্রী, মালপত্র সব কিছুরই বিমা করা হয়ে থাকে। বিমান দুর্ঘটনা হলে কারও যদি মৃত্যু হয়, তার জন্যে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয় নিকটজনকে। শারীরিক ক্ষতি, অঙ্গহানি ইত্যাদি হলেও ক্ষতিপূরণ পাওয়া যায়। এ ছাড়াও বিমানযাত্রীর মালপত্র হারিয়ে গেলে তার জন্যেও যাত্রীকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়।
বিমানচন্দ্রের কাজ হল তদন্ত করা। এই রকম প্রতিটি ক্ষেত্রে যাত্রীটির আঘাত কতটা গুরুতর কিংবা জিনিসপত্র খোয়া গেলে সত্যিই খোয়া গেছে কি না, নাকি মিথ্যে করে ক্ষতিপূরণ চাওয়া হচ্ছে। আর সত্যিই যদি খোয়া গিয়ে থাকে, সেইসব জিনিসের মূল্যমান কত–বিমানচন্দ্রকে অকুস্থলে গিয়ে সরেজমিন তদন্ত করে কোম্পানিকে রিপোর্ট দিতে হয়। আর সেই রিপোর্টের ভিত্তিতে তার কোম্পানি ক্ষতিপূরণ নির্ধারণ করে।
রীতিমতো কঠিন কাজ। বিমানচন্দ্রকে অনবরতই ছোটাছুটি করতে হয় ভারতবর্ষের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে।
আজকাল বিমান দুর্ঘটনা খুব বিশেষ একটা হয় না। কিন্তু মালপত্র খোয়া যাওয়ার ব্যাপারটা হামেশাই ঘটছে। দিল্লিতে ব্রেকফাস্ট, কলকাতায় লাঞ্চ আর লাগেজ মাদ্রাজে, বিমানযাত্রীদের এরকম ঝামেলা প্রায়ই পোহাতে হয়। অবশ্য অনেক ক্ষেত্রে দু-চারদিন পরে মালপত্র যথাস্থানে ফিরে আসে। তখন ঝামেলা মিটে যায়। বহুক্ষেত্রেই ঝামেলা এত সহজে মেটে না, অনেক সময় মাল ফেরত পেয়ে যাত্রী বলে, আমার সুটকেসটা পেয়েছি, কিন্তু ভেতরের জিনিসপত্র কিছু নেই।
এসব ক্ষেত্রে বিমানকে ছুটতে হয়। যথাস্থানে পৌঁছে যাত্রীকে খুঁজে বার করেন, তার কাছে জানতে চান, সুটকেসের মধ্যে কী কী জিনিস ছিল?
যাত্রী তখন বলেন, জামাকাপড় ছিল, অফিসের কাগজপত্র ছিল, পঞ্চাশ হাজার টাকা ছিল, সাঁইবাবার ফটো ছিল, আমার শ্বশুরমশায়ের বাঁধানো দাঁতজোড়া ছিল।
বিভ্রান্তের মতো বিমান জিজ্ঞাসা করেন, আপনার শ্বশুরমশায়ের বাঁধানো দাঁত প্লেনে করে নিয়ে যাচ্ছিলেন কেন?
অদমিত প্যাসেঞ্জার সাহেব জবাব দেন, আমার শ্বশুরমশায় আগে পাটনায় পোস্টেড ছিলেন কিনা। সেখানেই দাঁত বাঁধিয়েছিলেন। আমি পাটনায় আসছি শুনে দাঁতজোড়া আমাকে দিয়ে বললেন, তার পুরনো ডেন্টিস্টকে দিয়ে সেটা মেরামত করিয়ে নিয়ে আসতে। এখন বলুন তো শ্বশুরবাড়িতে মুখ দেখাই কী করে, আমার এই বেইজ্জতির খেসারত আপনি দেবেন? উদাহরণ বাড়িয়ে লাভ নেই। বোম্বাই-মাদ্রাজ ফ্লাইটের বাথরুমে এক চিত্রতারকার উইগ চুরি গিয়েছিল। কী করে গিয়েছিল বলা কঠিন। কিন্তু সেই সুন্দরীকে ন্যাড়ামাথা ঢাকতে স্কার্ট তুলে ঘোমটা দিতে হয়েছিল। এভাবে কোনও সিনেমায় অবতীর্ণ হলে দর্শকসাধারণ লুফে নিতেন, কিন্তু বিমানের ভিতরে সে এক হাস্যকর অবস্থা। সবার দৃষ্টি তার দিকে। অবশেষে খবরের কাগজ দিয়ে টুপি বানিয়ে বিমান থেকে অবতরণ করেন। আর দুঃখের কথা এই যে, তার সঙ্গেই সুটকেসের মধ্যে আরও পাঁচটি উইগ ছিল কিন্তু সেগুলো ছিল বিমানের খোলের মধ্যে এবং মাদ্রাজে নামার ঘণ্টাখানেক বাদে যখন সুটকেসটা পেলেন, সেটার মধ্যে থেকে উইগসমেত অন্যান্য সব জিনিস হাওয়া হয়ে গেছে। বিমানচন্দ্র আযৌবন বিদেশে ছিলেন। সেই উনিশ বছর বয়সে বি. এসসি. পরীক্ষায় রসায়নশাস্ত্রে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হয়ে তিনি মার্কিন দেশে স্কলারশিপ নিয়ে গিয়েছিলেন। তারপর কালেভদ্রে ছুটি-ছাটায় দেশে, মানে কলকাতায় এসেছেন। এতদিন পরে আবার স্বদেশে দিল্লিতে ফিরে এসে তিনি কিঞ্চিৎ ইতস্তত বোধ করছেন। দু-চারদিনের জন্যে অল্পবয়সের কলকাতায়ও তিনি গিয়েছিলেন। কিন্তু কোথায় যেন, কী যেন মিলছে না। এমনকী নতুন কলকাতা তাঁর সেই পুরনো কলকাতার চেয়ে ভাল কি খারাপ, সেটাও বিমানচন্দ্র বুঝতে পারলেন না। মনে মনে মেনে নিলেন হয়, হয়, জীবনে এরকম হয়, হয়ে থাকে।
কিন্তু তিনি মেনে নিতে পারছেন না বিমানবিমা সম্পর্কিত তার অভিজ্ঞতাগুলো।
বিমানচন্দ্রের বিমানবিমা কোম্পানির খদ্দেরদের অভিযোগ হাজার রকম। দুটি উদাহরণ আগে। দেওয়া হয়েছে, দু-একটি উল্লেখযোগ্য
১) সর্দার মস্ত সিং দিল্লি থেকে চণ্ডিগড় বিমানে গিয়ে অভিযোগ করেছেন যে, বিমানের মধ্যে আবহচাপ অত্যন্ত বেশি ছিল। তিনি যে পাগড়ি মাথায় দিয়ে দিল্লি থেকে টানটান প্লেনে উঠেছিলেন, সেই পাগড়ি ঢিলে হয়ে, তাঁর অনিচ্ছা সত্ত্বেও, চণ্ডিগড় বিমানবন্দরে তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে তাকে রিসিভ করতে আসা তার নবযৌবনা, অবিবাহিতা শ্যালিকার পদপ্রান্তে পড়ে যায়।
২) একজন দিল্লি প্রবাসী বাঙালি লেখক দিল্লি থেকে তাঁর সদ্যরচিত উপন্যাসের পাণ্ডুলিপি কলকাতায় প্রকাশের কাছে নিয়ে আসছিলেন, পাণ্ডুলিপিটি একটি খামের মধ্যে ছিল। খুব সাবধানে, অতি সন্তর্পণে কলকাতা বিমানবন্দর থেকে বেরোনোর সময়, সেই অমূল্য পাণ্ডুলিপিটি ছিনতাই হয়।
অবশ্য এই ধরনের অধিকাংশ কেসই বিমা ক্ষতিপূরণের আওতায় আসে না। কিন্তু এই সব বিচিত্র ক্ষতিপূরণের কেসের তদন্তের সূত্রে বিমানবাবুকেও সারা দেশে অনবরত ঘুরপাক খেতে হয়।
বিমানবাবু নিজেও একজন ভুক্তভোগী হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন বিমানভ্রমণের। তাঁর অবশ্য জিনিসপত্তর হারায় না। সে বিষয়ে তিনি খুব সাবধান। ছোট একটা বহনযোগ্য হাতব্যাগে কিছু জামাকাপড়, তোয়ালে, দাড়ি কামানোর জিনিস, টুথব্রাশ নিয়ে তিনি যাতায়াত করেন, সেটা সঙ্গেই রাখেন।
দীর্ঘকাল বিদেশে থাকায় একটু খুঁতখুঁতে স্বভাব হয়েছে বিমানবাবুর। তিনি সর্বদাই সচেতন থাকেন যে এ দেশটা বিলেত বা আমেরিকা নয়, কিন্তু সবসময় সামলিয়ে উঠতে পারেন না।
এ দেশে যাঁরা নিয়মিত বিমানযাত্রী, তাদের অভিজ্ঞতা থেকে বিমানচন্দ্রের অভিজ্ঞতা মোটেই স্বতন্ত্র নয়, কিন্তু এখনও তিনি মানিয়ে উঠতে পারেননি।
বিমান চলাচল সম্পর্কে যেগুলো সাধারণ অভিযোগ–যেমন ঠিক সময়ে ছাড়ে না, পাইলট সাহেব আসেননি কিংবা কলকবজা খারাপ, রানওয়েতে শকুন নেমেছে, লাটসাহেবের শ্যালিকা এখনও এসে পৌঁছয়নি, বিমানে বোমা রাখা আছে, বোর্ডিং পাশের তুলনায় যাত্রীর সংখ্যা একজন কম, কুড়িবাইশটি নারকেল ভরতি একটি চটের বস্তার মালিক খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। বাস্তব-অবাস্তব নানারকম অজুহাত।
আর অজুহাতই বা কে দিচ্ছে। বিমান ছাড়ছে না, ছাড়বে না। যাচ্ছে না, যাবে না।
বিমানে ওঠার পর বিমান না ছাড়লে আরও কষ্ট। গরম, ঘাম, তৃষ্ণা, গলা শুকিয়ে ওঠা, নিশ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়া দমবন্ধ ভাব। এ রকম অবস্থায় একবার সিট থেকে উঠে বিমানচন্দ্র সামনের পর্দাঘেরা জায়গাটায় গিয়েছিলেন এক গ্লাস জল কিংবা একটা কোল্ড ড্রিঙ্কের অনুসন্ধানে। কিন্তু পর্দা সরাতেই যে দৃশ্যটি তার নজরে আসে, তাতে কিছু না চেয়েই তড়িদাহতের মতো তিনি সিটে দ্রুত ফিরে আসেন। অবশ্য সেই দৃশ্যকাব্যের পাত্র-পাত্রীরাও বিমানবাবুর এই অনধিকার প্রবেশে কম চমকিত হয়নি।
বিভিন্ন বিমানবন্দরে বিভিন্ন রকমের শিক্ষা ও অভিজ্ঞতা হয়েছে বিমানচন্দ্রের। কিন্তু গত সপ্তাহে পাটনায় যা হয়েছে তার কোনও তুলনা নেই।
বিমানবাবুকে গৌহাটি এয়ারপোর্টে প্লেনের মধ্যে হাজার হাজার মশায় কামড়ে ছালাফালা করে দিয়েছে। মাদ্রাজে প্লেনে ওঠার সময় সিঁড়ি ভেঙে পড়ে হাঁটু মচকিয়েছেন। একবার বাগডোগরায় প্লেন থেকে নামামাত্র একটা শুয়োর কোথা থেকে এসে তাকে আক্রমণ করে। শুয়োরটার বোধহয় মাথা খারাপ ছিল। কিংবা কাকে, কেন সে আক্রমণ করছে সেটা সে জানত না। বিমানবাবুর ভাগ্য ভাল, দাঁত দিয়ে ফুলপ্যান্টের নীচের দিকটা কামড়ে ধরে শুয়োরটা একবার মাথা উঁচু করে বিমানবাবুকে দেখেই কামড় ছেড়ে দিয়ে যেদিক থেকে এসেছিল, সেদিকে দৌড়ে পালিয়ে যায়।
দুর্ভোগের ফিরিস্তি বাড়িয়ে লাভ নেই। কিন্তু পাটনায় যা ঘটল, সেটা অকল্পনীয়। বিমানচন্দ্র প্লেনে উঠে সিটে বসার আগে মাথার ওপরের বাঙ্কে একটা আমের ছোট ঝুড়ি রাখতে গেছেন। পাটনায় এই সময়ে ভাল আম পাওয়া যায়, তাই কিনেছিলেন। ঝুড়িটা বাঙ্কের মধ্যে ঢুকিয়ে দিয়েছেন, সেই সময়ে একটা ফোঁস করে শব্দ হল তার সঙ্গে তাঁর হাতে কী একটা কামড়িয়ে না আঁচড়িয়ে দিল।
ঘাবড়িয়ে গিয়েছিলেন বিমানবাবু। সর্বনাশ! সাপে কামড়াল নাকি? এই সময়ে মিউ মিউ আওয়াজ শুনে বুঝতে পারলেন এবং দেখতেও পেলেন ওই মালপত্র রাখার জায়গায় মেনি বিড়াল বাচ্চা দিয়েছে। বাচ্চাগুলো খুব ছোট নয়, চোখ ফোঁটার স্টেজ পার হয়ে এসেছে। তার মানে বেশ কিছুদিন হল বেড়ালটা এখানে আছে। আরও অনেক প্যাসেঞ্জারকে হয়তো আঁচড়ে কামড়ে দিয়েছে।
দিল্লিতে ফিরে এসে পরদিন অফিসে গিয়ে প্রথমেই একটা খুব কড়া চিঠি লিখলেন সংশ্লিষ্ট প্লেন কোম্পানির প্রধান কর্মকর্তাকে। এরকম তদারকির অভাব, এরকম দায়িত্বজ্ঞানহীনতা একটি বিমান কোম্পানির কাছে আশা করা যায় না। যেকোনও দিন এদের বিমানে যেকোনও রকম দুর্ঘটনা ঘটলে সেটা আশ্চর্যের কিছু হবে না। এইরকম সব কঠিন কঠিন বাক্য।
চিঠিটা রাগের মাথায় লিখেছিলেন বিমানচন্দ্র, ধরেই নিয়েছিলেন কেউ উত্তর দেবে না। কিন্তু আশ্চর্যের কথা, সেই বিমান কোম্পানির খোদ প্রধান কর্মকর্তা নিজে সই করে চিঠি দিয়েছিলেন।
চিঠি পড়ে স্তম্ভিত হয়ে গেলেন বিমানচন্দ্র। এতটা তিনি আশা করেননি। পত্রের প্রথমেইকর্মকর্তা ক্ষমা প্রার্থনা করে বলেছেন যে, তাদের কোম্পানিকে চিঠি লিখে ব্যাপারটা জানানোর জন্য তারা অতিশয় কৃতজ্ঞ বোধ করছেন।
কর্মকর্তা জানিয়েছেন যে, বিমানচন্দ্রের চিঠি পাওয়ার পরেই তিনি পাটনা অফিসের সমস্ত কর্মচারিকে আন্দামানে বদলি করে দিয়েছেন। পাটনা বিমানবন্দরে যাঁর দায়িত্ব ছিল, সেই অফিসারকে এবং বিমানের পাইলট ও কো-পাইলটকে বরখাস্ত করা হয়েছে। এয়ারহোস্টেস যাঁরা ছিলেন, তাঁদের প্রত্যেককে ছুটিতে যেতে বলা হয়েছে। সেই বিমানে যে মেনি বিড়ালটি ছিল, বাচ্চাসহ সেটাকে ধরে বিমানে করে ব্যাঙ্কক পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে, সেখানে বিমানবন্দরে ছেড়ে দেওয়া হবে।
পত্রটি আদ্যোপান্ত পাঠ করে স্তম্ভিত হয়ে গেলেন বিমানচন্দ্র। সামান্য একটি অভিযোগের এত বড় প্রতিক্রিয়া। মনে মনে সাবাস জানালেন ওই কর্মকর্তাকে।
কিন্তু স্তম্ভিত হওয়ার আরও একটু বাকি ছিল। চিঠিটি আদ্যোপান্ত বেশ কয়েকবার পড়ে খামের মধ্যে ভরে রাখতে গেছেন বিমানচন্দ্র, তখন দেখেন খামের মধ্যে আরও একটা কাগজ রয়েছে। সেটা বার করে দেখলেন তার সেই চিঠিটা, যাতে তিনি অভিযোগ করেছিলেন। সেই চিঠিটার ওপরে লাল পেন্সিলে লেখা
মিসেস গোমেস,
আরও একটা পাগলের চিঠি। প্লেনের মধ্যে বেড়ালঃফুঃ। সেই বেড়ালের চিঠির একটা কপি একেও পাঠিয়ে দিন। চিঠির নীচে সইটা আমার হয়ে আগের চিঠিগুলোর মতো আপনিই করে দেবেন। চিঠির নীচে স্বাক্ষর অস্পষ্ট। তবে মার্জিনে মার্কা করা আছে, মিসেস গোমেস, পি এ।