বিবেক
আজ ১৮ই নভেম্বর। আমার বিবাহিত জীবনের পঁচিশ বছর পূর্ণ হলো।বর অফিসের কাজে বারো মাস প্রায় বাইরে থাকেন। আমাকে কতবার সাথে নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু আমি স়ংসারে আষ্টেপিষ্টে এমন জড়িয়ে পড়েছিলাম,স্বামী সঙ্গ থেকে বঞ্চিত ছিলাম।
আজ আমার বিবেক
আঙ্গুল তুলে বলল খুব ভুল করেছিস।তোর শরীরে এত মায়া কিসের???চলে গেলি না কেন বরের সাথে।বরের যে কর্তব্য দাদু ঠাম্মা, বাবা মাকে করা উচিৎ ছিল, সেই দায়িত্ব তুই নিলি কেন?কে বলেছিল ভালো নাত বৌ হয়ে দেখাতে,।কে বলেছিল শ্বশুর-বাড়িতে সবাইকে আপন করতে!!
বিবেক কি বলছে তোকে?
আমি সব ভুল করে গেছি জীবনে।
দাদু ও ঠাম্মা বারো মাস অসুস্থ থাকেন।বাবা ও মা একা পারতেন না। অগত্যা আমাকে করতে হয়।।
আজ যদি নিজেকে চিঠি লিখি,তবে প্রথমে বিবেকের কাছে একটা কথা জিজ্ঞেস করতে চাই শ্বশুর- শাশুড়ি কে সেবা করা কি অনুচিৎ???
বর আমাকে কত যেতে বলেছিলেন তখন দাঁত থাকতে দাঁতের মর্ম বুঝি নি।আমকে ছেড়ে আরেকজনকে নিয়ে অবসর কাটান। দিনান্তে আমার জীবন শূন্য। পরিবারের যাদের সেবাই ব্রতী ছিলাম তাঁরা পৃথিবীতে আর নেয়।বরের অকাট্য যুক্তি বিবাহিত জীবনের যে মূল্য বোঝে না ,তার জীবন একাকীত্বে কাটানো শ্রেয়। আমি নাকি সম্পত্তির লোভে বরের বাড়ির সবার সেবা করেছি।
আমি ভাবছি আর ভালো মানুষ হয়ে থাকব না।বরের লিগাল বৌ থাকা সত্ত্বেও পরকীয়া করে সহবাস করে কি করে!!! বিবেক তাই চিঠি তে জানালাম। কিছু একটা উপায় বার করে দাও। চটজলদি উকিলের চিঠি দিলাম ।সুরসুর করে হাজির হলেন। আজকে ডায়েরীর পাতায় বিবেকের উদ্দেশ্যে লিখি বর এখন আমার কবলে। চিঠি যখন লিখতে বসেছি ,তখন আত্মকথারা সব চোখের সামনে নাচানাচি করতে লাগলো।মনে পড়ে শৈশবের কথা,বি এস সি পড়বার সময় বিয়ে,পাড়ার ছেলেদের সঙ্গে ডাংগুলি খেলা, ঘুড়ি ওড়ানো। জন্ম থেকে মৃত্যু, অনেক ধাপ পার করেই জীবন সমাপ্ত হয়।
এখন তো একটাই গান মনে আসে
“হরি দিন তো গেল সন্ধ্যা হলো পার করো আমারে”।