বিবাহ বিচ্ছেদ -2
রোশনী ইতিমধ্যে একটা এন জিও তে প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটরের কাজ পেয়েছে।সুজন গুরুত্ব দেয় না।তার সোজা কথা বিয়ের পরে ঐ চাকরি ছাড়তে হবে রোশনীকে।রোশনীও রাজি। সুজন মাঝে মাঝে ভাবে রোশনী সমাচার বাড়িতে বলবে।সমুর উপদেশ মেনে সারপ্রাইজ দেবে বলে আপাতত কিছুই বলে নি।মনে মনে ছটফট করে মরে। রোশনীও সমুর সুরে সুর মিলিয়েছে। দেখতে দেখতে ছ মাস কেটে গেল।সুজনের চাকরি পাকা হলো। কথা অনুযায়ী সুজন দু দিন পার্টি দিল। একদিন আত্মীয় স্বজনদের নিয়ে আর অন্য দিন বন্ধু এবং অফিস কলিগ। রোশনীও খুব উত্তেজিত। সুজন চ্যাটে লিখলো এইবার ছবি দাও বাড়িতে বলি, রোশনী উত্তরে লেখে একদিন দেখা করো এবার ছবির কি দরকার , তখন আমার ছবি তুলে বাড়িতে দেখাও। সুজন খুব খুশি এই প্রস্তাবে। পারলে পরেরদিনই দেখা করে। রোশনী মিনতি মাখা সুরে বলে সে এন জিওর একটা বিশেষ দায়িত্বে এই মূহুর্তে আছে আর মাত্র কিছুদিন কাজটা শেষ হয়ে যাবে তখন দেখা করবে। সুজন মনে ব্যাথা পেলেও লম্বা ভবিষ্যতের কথা ভেবে রোশনীর চেহারা কল্পনা করতে করতে ঘুমে ঢলে পড়ে।সুজনের নিত্যকার একঘেয়ে জীবনের একমাত্র রঙিন সময় ঐ রাতের বেলা। রোশনীর কথা সমুও সমর্থন করে। সমু রোশনীর সঙ্গে চ্যাট করলে রোশনী উত্তর দেয় যে সে তো সুজনের সব কথা মেনে নিয়েছে বিয়ের পরে সে এই চাকরিটা ছেড়ে দেবে কিন্তু এখন যে দায়িত্ব তার ঘাড়ে আছে তা সে এড়ায় কি করে। তাই যদি রোশনী করে তবে কে জানে আগামীকাল সংসার করার সময় সুজন তাকে দায়িত্বজ্ঞানহীন বলবে না ? এই ব্যাপারটা উপলব্ধির। সমু রোশনীর দাদা , সমু যেন সুজনকে বুঝিয়ে বলে। সমুও রোশনীর কথায় মোহমুগ্ধ হয়ে মেনে নিয়ে সুজনকে বলে। ইতিমধ্যে সুজনের মা, চিত্রা দেবী হালকা সুরে ছেলেকে বিয়ের ব্যাপারে বলতে শুরু করেছেন। সুজন মেসির মত ডজ করে পাশ কাটাচ্ছে। ক্রমে এলো সেই মধুক্ষণ , ঠিক হলো দিন ,সময়। নন্দন চত্বরে দুজনের প্রথম সাক্ষাৎ হবে বিকেল পাঁচটায়। চ্যাটে কথা হচ্ছে। সুজন রোশনীর ফোন নম্বর চাওয়াতে সে বলে তোমার নম্বর আগে দাও। সুজন দিলো। তখন রোশনী বললো কাল ঠিক টাইমে সে পৌঁছে যাবে সুজনও যেন পৌঁছে যায়। ফোন রোশনীই করবে এখন নম্বর দেবে না। সুজন খুব রেগে গেলেও মাত্র কয়েক ঘন্টার ব্যবধান , দেখা তো হবেই তাই চুপ করে যায়। সুজন কি পোষাক পড়ে যাবে সেই ব্যাপারেও রোশনী হুইপ জারি করে। মাঝে চ্যাটে রোশনীর কথা মেনে তার বিভিন্ন দেহভঙ্গিমার ছবি পাঠিয়েছিল। কখন ফর্মাল ড্রেসে কখনও বাড়ির পোষাকে আবার গভীর রাতে কিছু উত্তেজনা মূলক কথাবার্তার সময় খালি গায়েরও। তাছাড়া সুজনের আলমারির খবর রোশনীর জানাই আছে। সুজন তাই আর কথা না বাড়িয়ে রোশনীর দেওয়া ড্রেস কোড মেনে নেয়। পরের দিন সকালে সমুকে সুজন সব কথা বলে ওকেও যেতে বলে, সমু প্রচন্ড উত্তেজিত হয়ে সুজনকে বাধাই দেয় আরও বলে সুজন আগে দেখা করে আসুক পরে একদিন সমু ওদের নামি রেস্টুরেন্টে লাঞ্চ করাবে। মনে মনে প্রচন্ড উত্তেজিত সুজন আজ হটাৎই অফিস যাবার সময় মা বাবাকে প্রণাম করে। কুমার বাবু আর চিত্রা দেবী অবাক হয়ে কারণ জানতে চাইলে রহস্যের হাসি দিয়ে সুজন বলে সে একটা কাজে যাচ্ছে রাতে ফিরে বলবে। অফিসে গিয়েও সুজনের কাজে মন বসে না। ওপরওয়লা, অফিসারকে বলে আজ তার কিছু ব্যক্তিগত কাজ আছে তাকে যেন আউটডোর কাজ আজ না দেওয়া হয়। তিনিও মেনে নে’ন । চারটের সময় অফিস ছাড়ে সুজন। স্বল্প দূরেই নন্দন, সাড়ে চারটের মধ্যেই পৌঁছে যায় সে। আজ সুজনকে দুর্ধর্ষ হ্যান্ডসাম লাগছে। গায়ে সাদা লিনেনর ফুলস্লিভ শার্ট তা’তে ভ্যানিস স্ট্রাইপস্ ,ডিপ ব্লু ডেনিম ,রে ব্যানের সানগ্লাস ,রুপোর চওড়া রিস্টলেট, পায়ে উডল্যান্ডের জুতো। সুজন প্রথমেই গোটা নন্দন চত্বরটা সরজমিনে ঘুরে দেখলো কোনো মেয়ে যে তার কল্পনা সুন্দরী একা আছে কি’না। হতাশ হলো। আধুনিকা , সুন্দরী অনেকেই আছে তবে একা কেউ নেই , হয় জোড়ায় না হলে দলবলের সঙ্গে। অনেক ভেবে নন্দন প্রেক্ষাগৃহের সামনেই দাঁড়ালো এসে। পকেট থেকে বের করলো ফোন, নেট অন করে ম্যাসেঞ্জারে দেখলো রোশনী অনলাইন। লিখলো সে পৌঁছে গেছে, চটজলদি উত্তর- রাস্তায় আছে রোশনী,পাঁচ মিনিটে পৌঁছে যাবে,গিয়েই ফোন করবে।সুজন তার অবস্থান জানিয়ে দিয়ে বললো রোশনীর হৃত্তিক ওখানে একজনই আছে। রোশনী একটা কিস স্টিকার পাঠিয়ে দিল। পাঁচ – দশ – পনেরো – কুড়ি মিনিট কেটে গেল , রোশনীর পাত্তা নেই। অধৈর্য সুজনের চোখ বারবার মোবাইলের স্ক্রীনে আর চারপাশে ঘুরে চলেছে – এই বুঝি এলো এই বুঝি এলো। হলো অপেক্ষার অবসান একটা আলতো টোকা পেছন থেকে সুজনের কাঁধে পড়লো কিঞ্চিত কর্কশ মেয়েলি কন্ঠ – হৃত্তিক আমি এসে গেছি , তোমার রোশনী। চট করে ঘুরেই সুজন অবাক এ সে কি দেখছে , নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে না। এটাই রোশনী ? মেয়েদের পোষাক পরে এ তো এক পুরুষ সমকামী।