Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » বরাহমিহিরের উপাখ্যান || Tarapada Roy

বরাহমিহিরের উপাখ্যান || Tarapada Roy

বরাহমিহিরের উপাখ্যান

০১.

বৃষ্টিটা থেমে গিয়েছিল। হঠাৎ আবার কেঁপে বৃষ্টি এল। যে দোকানের বারান্দা ছেড়ে ভরসা করে। বেরিয়েছিলাম, ছুটে সেখানেই ফিরতে হল। মধ্যে থেকে যথেষ্টই ভিজে গেলাম। হাঁটু মুড়ে উবু হয়ে বসলাম বারান্দায়, মাথাটা ভীষণ ভেজা, সর্দি হয়ে জ্বর আসতে পারে, কিন্তু আমার পকেটে রুমাল। পর্যন্ত নেই যে মুছে ফেলি।

মাথার সামনেই এক ভদ্রলোকের বাগানো কোঁচা কিছুটা শুকনো অন্তত সাতসেঁতে ভেজা নয় বলেই মনে হল।

আস্তে আস্তে মাথাটা তার কোঁচায় ঘষতে লাগলাম। ভদ্রলোক প্রথমে বিশেষ আপত্তি করলেন না, সাহস পেয়ে একটু জোরে ঘষতেই, তিনি সামান্য সরে গিয়ে পকেটে হাত দিয়ে একটা শুকনো রুমাল বার করে আমার মুখের দিকে একবারও না তাকিয়ে নির্বিকারভাবে বললেন, নিন মাথাটা মুছে ফেলুন। যা ঠান্ডা হাওয়া দিচ্ছে, জল বসে নিউমোনিয়া হয়ে যেতে পারে।

মুখটা দেখতে পাচ্ছি না, কিন্তু গলার স্বরটা? কে বরাহমিহির না? আমি উঠে দাঁড়ালাম।

সত্যিসত্যিই বরাহমিহির। আমি উঠে দাঁড়াতেই যেন কিছুই ঘটেনি এইভাবে আমাকে হাসিমুখে অভ্যর্থনা করলেন, কী খবর, আপনিও আটকে গেছেন দেখছি। আমি বিনীতভাবে ঘাড় নেড়ে স্বীকার করলাম। একটু আগের ঘটনায় লজ্জিত হব কিনা স্থির করার আগেই লক্ষ করলাম বরাহমিহিরের। হাতে ছোট ছোট চার-পাঁচটা ঠোঙায় যেন কী সব রয়েছে। বরাহমিহির তাহলে বিয়ে করে পুরোপুরি সংসারী হয়ে গেছেন। রাত দশটায় সওদা করে বাড়ি ফিরছেন।

এগুলোর মধ্যে কী? আমার প্রশ্নের উত্তরে বরাহমিহির বললেন, আর বলবেন না মশায়, আমি তো এদিকে হোটেলে খাই। রাত দশটা হয়ে গেল, আটকা পড়লুম বৃষ্টিতে, এদিকে হোটেল বন্ধ হয়ে যায়।

আমার প্রশ্নের কিন্তু উত্তর হল না। আমাকে আরেকবার কৌতূহল প্রকাশ করতে হল, কিন্তু এগুলো কী, এইসব ছোট ছোট ঠোঙায়?

এবার আমার জবাব না দিয়ে বরাহমিহির বারান্দার বাইরে হাত বাড়িয়ে একটু পরীক্ষা করে নিয়ে তারপর এক লাফে রাস্তায় নেমে পড়লেন এবং সঙ্গে সঙ্গে আমাকে এক টান, বৃষ্টি ধরে গেছে, নেমে আসুন, আমার সঙ্গে হোটেল পর্যন্ত আসুন দেখতেই পাবেন, এগুলো কী? একটু থেমে ঘুরে তাকিয়ে বললেন, এর থেকে ভাগ পাবেন না কিন্তু।

কিছুটা হেঁটে হিয়ে হোটেলে উঠলাম। দেখলাম বরাহমিহির এখানে বেশ পরিচিত। আমি আর বরাহমিহির বসলাম। দূরে এক কোণে একটা ব্ল্যাকবোর্ড টাঙানো রয়েছে দেয়ালে, তার উপরে সাদা হরফে লেখা রয়েছে খাদ্যতালিকা আর নীচে সাত আনার কম খাওয়া নাই, এবং আমাদের কোনও ব্রাঞ্চ বা শাখা নাই।

সে যাহোক, বরাহমিহির খুব ধৈর্য সহকারে খাদ্যতালিকাটি পর্যবেক্ষণ করলেন প্রায় মিনিট পাঁচেক ধরে। বহুবিধ খাদ্যদ্রব্য আর তার মূল্য লেখা চকখড়ি দিয়ে, দু একটার পাশে এরই মধ্যে ক্রশ চিহ্ন দেয়া, বোধহয় ফুরিয়ে গেছে কিংবা পাওয়া যাবে না।

যতক্ষণ বরাহমিহির খাদ্যতালিকা নিয়ে গবেষণা করছিলেন, পাশে একটি ছোকরা বয় মৃদু হাস্যময় মুখে দাঁড়িয়েছিল, এইবার তার সঙ্গে বরাহমিহির নিচুগলায় কী একটু আলোচনা করে ঠোঙাগুলো তুলে দিলেন তারপর ম্যানেজারের দিকে মুখ করে অর্ডার দিলেন, দুপ্লেট ভাত, ডাল দুবাটি, আলুভাজা চারানা, পটল সেদ্ধ দুটো, রুই মাছের মাথা দুটো ইত্যাদি হরেক খাদ্যদ্রব্য, সব দুটো করে।

আমি আপত্তি জানালাম, না, না বাড়িতে আমার রান্না হয়ে রয়েছে, আমি কিছু খাব না। কিছু খাবেন না, যেন কিছু নয় এইভাবে বরাহমিহির বললেন, ঠিক আছে আমি একাই খেতে পারব। এর মধ্যে বাচ্চা বেয়ারাটা প্লেটে করে অনেকগুলো কাঁচালঙ্কা, পাঁচটা আস্ত পেঁয়াজ ফালি করা, তিনটে তিনটে করে লেবু আর লঙ্কার তেল-আচার এনে দিল। বরাহমিহির মৃদু হেসে বললেন, এগুলো আমার ঠোঙায় ছিল বুঝলেন, হোটেলে আসার সময় মুদিখানা আর পানের দোকান ঘুরে কিনে আনি।

খাওয়ার ওই অর্ডারের পরে আমার আর অবাক হওয়ার উপায় ছিল না, আমি মনে মনে গুনে দেখলাম চব্বিশটা কাঁচালঙ্কা। ছটা কাঁচালঙ্কা, একটা তেল লঙ্কা, দেড়টা পেঁয়াজ সহযোগে একবাটি ডালভাত দিয়ে মেখে খেয়ে, পরের বাটিতে চুমুক দিতে দিতে আমাকে বললেন, আপনি কিছু খান। অন্তত একটা আম।

আমি দুসপ্তাহ মাছ খাইনি, আর বরাহমিহির এর পরে ওই মাছের মাথা দুটো একলা আমার সামনে বসে বসে খাবে। এইসব ভাবতে ভাবতে আমি বললাম, তা, আম পাওয়া যাবে এখানে?

বরাহমিহির খাদ্যতালিকার দিকে অঙ্গুলি নির্দেশ করলেন। দেখলাম একেবারে নীচের দিকে কলার পাতা পাঁচ পয়সা, মাটির ভাঁড় চার পয়সা, তার উপরে লেখা রয়েছে, আম পঞ্চাশ পয়সা।

আপত্তি করে কোনও রকম বোকামির মধ্যে না গিয়ে আমি সোজাসুজি রাজি হয়ে গেলাম, ঠিক আছে একটা আম খাওয়া যাক। নিচু হয়ে রুইয়ের মাথাটা যথেষ্ট যত্নসহকারে চিবুতে চিবুতে তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, কত দাম লেখা রয়েছে পাশে একটু দেখুন তো। সব জিনিসই খাওয়ার আগে দাম জেনে নেওয়া ভাল। না জেনে আমি একবার যা বিপদে পড়েছিলুম। একটা দীর্ঘনিশ্বাস ছেড়ে বরাহমিহির তার হাতের তর্জনী দিয়ে ডান চোখের ওপর দিকে একটা কাটা দাগ দেখালেন।

নিশ্চয়ই এর পিছনে খুব করুণ কাহিনি রয়েছে, যা শুনলে হয়তো অশ্রু সংবরণ করা কঠিন হবে। কিন্তু রাত্রে বাড়ি ফিরে আমাকে অদ্বিতীয়ের এই সপ্তাহের কিস্তি দিতে হবে, কোনও করুণ কাহিনির সুযোগ সেখানে নেই সুতরাং অশ্রুসম্বরণ করতে হল। আমি সোজা কথায় ফিরে গেলাম, আমের দাম দেখছি পঞ্চাশ পয়সা লেখা রয়েছে।

দ্বিতীয় মস্তকটির গোড়ার দিকটি কিছুতেই আয়ত্ত করতে পারছিলেন না, একবার হাঁ করে মুখের মধ্যে পুরোটা ঢুকিয়ে দিয়ে প্রায় দমবন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হতে প্লেটে নামিয়ে রেখে একটু হাঁপালেন। মোটা মানুষ অল্পেই হাঁপিয়ে পড়েন। একটা আম খাওয়াচ্ছেন বলেই হোক বা অন্য যেকোনও কারণেই হোক আমার একটু মায়া হল।

একটু জিরিয়ে নিয়ে আঙুল দিয়ে মুখ ঘাঁটলেন, বেশ পরিতৃপ্তিসহকারে একটা সেঁকুর তুললেন, ধীরে-সুস্থে প্লেটস্থিত মাছের মাথাটার দিকে তাকিয়ে আবার হাতে তুলে নিলেন। ৫২৬

মুখের ভিতর মাছের মাথার সামনের দিকটা চালিয়ে দিতে দিতে আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, কত দাম বললেন? তারপর আমার জবাবের জন্য প্রতীক্ষা না করে নিজেই মাথা ঘুরিয়ে ব্ল্যাকবোর্ডটার দিকে তাকালেন, উচ্চারণ করে পাঠ করলেন, আম পঞ্চাশ পয়সা। এই স্বগত উক্তিটুকু করে নিয়ে চোয়াল শক্ত করে মাড়ি দিয়ে মাছের মাথাটায় চাপ দিলেন, এবার মাথাটা বোধহয় মুখের মধ্যে ভেঙে গেল, কিছুক্ষণ আপনমনে চিবিয়ে আমাকে বললেন, আপনার কাছে একটা টাকা হবে?

একটা টাকা? মুখে বলতে বলতে আমি মনে মনে ভাবলুম আম খেতে রাজি না হলেই ভাল ছিল।

হ্যাঁ, দুজনে দুটো আম খেতুম। এক যাত্রায় পৃথক ফল হয় কেন? আর আম হল সেরা ফল, বুঝলেন কিনা? নিজের রসিকতার আনন্দেই হোক বা রুইয়ের মাথাটা আয়ত্তে আনার সার্থকতাতেই তোক তিনি আকর্ণ হাসলেন।

আমি থিতিয়ে থিতিয়ে জানালাম, তা হতে পারে একটা টাকা। বরাহমিহির ম্যানেজারের দিকে তাকিয়ে অর্ডার দিলেন, ম্যানেজার তাঁর কাউন্টার থেকে চেঁচিয়ে, ভেতরে যেখানে রান্না হয়। খাবার-দাবার থাকে সেদিকে মুখ করে বললেন, এই দুটো আম, আলাদা আলাদা করে মিহিরবাবুর টেবিলে।

বাচ্চা বেয়ারাটা খাবারের ঘরের বাইরে দাঁড়িয়ে ছিল। ম্যানেজারবাবুর আদেশ শুনে সামনের তাক থেকে দুটো ডিশ নিয়ে ভেতরে চলে গেল, একটু পরই বেরিয়ে এল ফঁকা ডিশ দুটো নিয়ে, এসে যেখান থেকে নিয়েছিল সেখানে রেখে আমাদের টেবিলে বরাহমিহিরের পাশে এসে দাঁড়াল। বরাহমিহির তখন চোখ বুজে ডিমের ঝোল থেকে ডিম তুলে নিয়ে, যেভাবে বাচ্চারা লজেঞ্জস চোষে, সেইভাবে চুকচুক করে চুষছেন। বেয়ারাটা ওঁকে একটু পর্যবেক্ষণ করল, তারপর আমার দিকে একবারও না তাকিয়ে ম্যানেজারের কাছে গিয়ে কী জানাল। ম্যানেজার শুনে নিয়ে আবার খাবার ঘরের দিকে মুখ করে চিৎকার করে বললেন, এই ভজুয়া আম কাট, আম কেটে দে তাড়াতাড়ি।

অনুমান করলাম ভজুয়া নামে কোনও ভিতরস্থ কর্মচারি কোনও কারণে আম কাটতে অক্ষমতা জানিয়েছে। কিছু সময় গেল, এর মধ্যে বরাহমিহির খাওয়া প্রায় গুছিয়ে এনেছেন। দ্বিতীয় ডালের বাটির অর্ধেকটা বাঁচিয়ে রেখেছিলেন, ডিমের ঝোলের দুটো আলু ছিল, একটা লেবুর আচার আর কিছু লঙ্কা, পেঁয়াজ তখনও ছিল; আরেক প্লেট ভাত এনে চটকিয়ে মেখে চেটেপুটে খেয়ে নিলেন।

আম কিন্তু দিল না। বরাহমিহির হাত ধুয়ে এলেন, আমের কথা তিনিও আর কিছু বললেন না। কিন্তু আমি ভাবলাম ম্যানেজার তো আম কাটতে বলেছিলেন, দাম না চায় আবার। কাউন্টারে ম্যানেজারকে এসে বললাম, আম কিন্তু দেয়নি।

আজ্ঞে, আম তো কাটা হয়ে গেছে। ম্যানেজারের বিনীত নিবেদনের উত্তরে আমি বললাম, কাটা হয়েছে কিন্তু আমাদের দেয়া হল না কেন?

বরাহমিহির একটা কনুই দিয়ে গুতো দিয়ে আমাকে বললেন, আরে তা নয়, ফুরিয়ে গেছে বলে কেটে দিয়েছে। ওই দেখুন। ব্ল্যাকবোর্ডের দিকে তাকালাম আমের পাশে একটা কাটা চিহ্ন পড়েছে, কখন এর মধ্যে আম এবং আরও কিছু কিছু কেটে দেয়া হয়েছে।

এবার বুঝলেন তো,বরাহমিহির মৃদু হেসে বললেন, আমের দামটা তো লাগল না, এবার তাহলে আমার মিলের চার্জটা দিয়ে দিন। আমের দামের বদলে আমার দাম। হেঁ হেঁ বরাহমিহির পুনরায় আকর্ণ হলেন।

০২.

অনিবার্য কারণবশত আজ এই বিবাহ-উৎসব বন্ধ রহিল। অভ্যাগতদের পরবর্তী সময় এবং স্থান পরে জানানো হইবে।

কলকাতা থেকে ছত্রিশ মাইল রাস্তা লোকাল ট্রেনে গলদঘর্ম হয়ে ঝুলতে ঝুলতে এসে, তারপর খোয়ার রাস্তা রিকশায় কিছুটা, কিছুটা পায়ে হেঁটে পৌনে দুই মাইল, শ্রান্ত, ক্ষুধার্ত অবস্থায় এই ধরনের বিজ্ঞাপন দেখব নিমন্ত্রণ বাড়িতে এসে এরকম আমরা কেউ কখনও দুঃস্বপ্নেও ভাবিনি।

সঙ্গী বন্ধুরা মারমুখী। ধরতে গেলে বরাহমিহিরের বিয়েতে আমিই জোর করে তাদের ধরে এনেছি। কে আর কলকাতা ছেড়ে শনিবার সন্ধ্যাবেলা আসতে চায়? আর সকলেরই খটকা ছিল বউভাত কেন মেয়ের বাড়িতে হবে, ছেলের যেখানে কলকাতায় বাড়ি রয়েছে। এই বিজ্ঞপ্তি দেখবার পর অবশ্য আর কোনও খটকাই রইল না, ব্যাপারটা জলের মতো পরিষ্কার মনে হল।

কেউ কেউ বলল, বিয়ে-টিয়ে সব বাজে কথা, বরাহমিহিরের আবার বিয়ে। কিন্তু ম্যারেজ রেজিস্ট্রারের অফিসে আমি নিজে অন্যতম সাক্ষী ছিলাম। বিয়েটা যে অন্তত সত্যি সেটা আমি আইনত অস্বীকার করতে পারব না।

সুতরাং আমি চুপ করে রইলাম। এমন সময় সমস্ত রহস্যের উপর যবনিকা টেনে বরাহমিহির নিজেই পাশের একটা গলি থেকে বেরিয়ে এলেন, মুখে অমল হাসি, এই যে আপনারা এসে গেছেন।

বরাহমিহিরকে দেখে সকলের সঙ্গে আমিও প্রচণ্ড খেপে গেলাম। এসে গেছি মানে? এসব ইয়ার্কির মানে কী, মশায়?

বরাহমিহির কিন্তু বিচলিত হলেন না। বললেন, কী করব এ বাড়িটা বড় ছোট, জায়গা হবে না। বিয়েবাড়ি যদি একটু খোলামেলা না হয়।

যদি একটু খোলামেলা না হয়, তাই বলে খাওয়া হবে না, বিয়ে বন্ধ থাকবে? একজন নিমন্ত্রিত উত্তেজিতকণ্ঠে বললেন।

বিয়ে বন্ধ থাকবে কেন, বিয়ে তো আগেই হয়ে গেছে। আর খাওয়ার বন্দোবস্ত পিছনের ওই বাড়িতে। বরাহমিহির কিছু দূরে আলোকিত একটি বাড়ির দিকে অঙ্গুলি নির্দেশ করলেন।

তাহলে এই নোটিশ এখানে লটকানো রয়েছে কেন? এতক্ষণ রাগে সমর কিছু বলতে পারছিল না, এবার গিয়ে একটানে সাইনবোর্ডটা টান দিয়ে নামাল।

বরাহমিহির খুব করুণ প্রায় পরিতাপের কণ্ঠে বললেন, কী করব বলুন, ওটা আমার শ্যালীরা টাঙিয়েছে, কতবার না করলুম কিছুতেই শুনল না। ওদের বাড়িতেই যখন ব্যাপারটা হচ্ছে আমি আর কী করি?

অভ্যাগতদের অধিকাংশই অবিবাহিত, সুতরাং এই শ্যালীঘটিত প্রসঙ্গের উল্লেখে সবাই কেমন যেন কাবু বোধ করলেন। কিন্তু তখনও ঢের বাকি ছিল।

এতক্ষণ বরাহমিহির বলে যাঁর উল্লেখ করেছি তার আসল নামের সঙ্গে বরাহ অংশটুকু যোগ করে এই পুরো নামটা বন্ধুদের প্রদত্ত। অবশ্য এই পশুত্ব অর্জনে তাকে বিশেষ শ্রমস্বীকার করতে হয়নি, তার স্বভাব-চরিত্রই এর জন্য দায়ী বলা যায়। বিভিন্ন বাংলা পত্রিকায় সপ্তাহ দুয়েক আগে এই বিজ্ঞাপনটি নিশ্চয়ই অনেকের নজরে পড়েছিল:

নিম্ন স্বাক্ষরকারীর বিবাহ রেজেস্ট্রিকৃত হইয়া গিয়াছে সুতরাং বন্ধুদের জানাইতে আর বাধা নাই। আলাদাভাবে অসংখ্য বন্ধুকে নিমন্ত্রণ করা অসম্ভব। সুতরাং এই বিবাহ উপলক্ষে আয়োজিত ভোজসভায় যাঁহারা যোগদান করিতে ইচ্ছুক আগামী শনিবার বিকাল পাঁচ ঘটিকায় মনুমেন্ট পাদদেশে সমবেত হইয়া ব্যক্তিগতভাবে আমার নিকট হইতে নিমন্ত্রণপত্র গ্রহণ করিতে আবেদন করিতেছি।

বলা বাহুল্য, এই বিজ্ঞাপন বরাহমিহিরের বিয়ের। এর পরে বরাহত্ব প্রসঙ্গে কোনও প্রশ্নই বোধহয় ওঠে না। এবং এর পরেও কী করে এই নিমন্ত্রণে এত লোক এল, কোনও আত্মমর্যাদাসম্পন্ন পাঠক নিশ্চয়ই এরকম প্রশ্ন তুলতে পারেন, কিন্তু তিনি বরাহমিহিরের বন্ধুদের একবার জানলে আর এ প্রশ্ন তুলবেন না।

সে যাহোক, বরাহমিহিরের শ্যালী প্রসঙ্গে প্রত্যাবর্তন বাঞ্ছনীয়। আমি অঙ্কে কাঁচা। সূতরাং তার শ্যালীর সংখ্যা কয়টি এ আমার পক্ষে গণনাতীত। নিমন্ত্রিতদের মধ্যে বিশুদ্ধ অঙ্কে একজন ডি-ফিল ছিলেন, তাঁকে প্রশ্ন করায় তিনি খুব অপমানিত বোধ করে মুখ-চোখ লাল করে বললেন, আমি কি চৌকিদার না সেন্সাস অফিসার? এ প্রশ্নের উত্তর নেই, বলতে কী সেদিন সেই নিমন্ত্ৰণবাড়িতে আমাদের অনেকেরই এরকম সংশয় দেখা দিয়েছিল যে, আমাদের সমীপবর্তিণী সমস্ত কুমারীই বুঝি বরাহমিহিরের শ্যালীসম্পর্কীয়া।

সব একরকম দেখতে। একই ভঙ্গির কবরী রচনা, প্রত্যেকের চোখে একই কটাক্ষ, গ্রীবায় অবিকল এক বঙ্কিমতা। এই মুহূর্তে যাঁকে জানা গেল টেলিফোন একসচেঞ্জে কাজ করেন বলে, পরমুহূর্তে আবিষ্কার করলাম তিনি তিনি নন, তিনি পাড়ার শখের থিয়েটারে জনপ্রিয় অভিনেত্রী এবং সঙ্গে সঙ্গে জানা গেল তিনি তিনিও নন, তিনি এখন ঘি পরিবেশন করছেন আর সেই তিনি জুনিয়র হাইস্কুলে হেডমিস্ট্রেস। সমস্ত ব্যাপারটা ভীষণ গোলমেলে হয়ে ঘুলিয়ে গেল। সমরেন্দ্র খেতে খেতে কার কাছে আলোয়ান জমা দিয়েছিল, আমি নেমেই কাকে আমার ব্যাগ রাখতে দিয়েছিলাম সব জড়িয়ে গেল। যাকে একটু আগে স্কুলের ছাত্রী জেনে শংকর এক গ্লাস জল চাইল, এই খুকি, এক গ্লাস জল দাও তো। খুকি বলমাত্র তিনি রেগে দুটো কাঁচের গ্লাস আর একটা আয়না ভাঙার পর জানা গেল, তার বয়স সাতচল্লিশ। তিনি স্কুল ছেড়েছেন আজ তিরিশ বৎসর, সেই প্রায় নন-কো-অপারেশনের সময়।

০৩.

সকালবেলা দোতলার বারান্দায় দাঁড়িয়ে রোদ পোহাব কিনা মনস্থির করতে পারছি না এমন সময়ে একসঙ্গে গোটা কয়েক কোকিলের ডাকে খেয়াল হল রোদ পোহানোর দিন চলে গেল। কিন্তু শুধু কোকিলই নয় আরও নানা পাখি আমাদের বাড়ির বাইরে ভীষণ কিচিমিচি লাগিয়ে দিয়েছে। আমার বারান্দা থেকে সদর রাস্তা দেখা যায় না, সিঁড়ি দিয়ে নেমে রাস্তায় যেতে হল। বিশাল দুই খাঁচায় অজস্র ভিন্ন জাতের, বিচিত্র রঙের পাখি, দূর দূর জঙ্গল আর জনপদের খ্যাত-অখ্যাত বিহঙ্গ সমিতি।

কী মনে করে পাখিওলার কাছ থেকে প্রায় পনেরো মিনিট দামদর করে দুটো টিয়াপাখি কিনে ফেললাম। এক ধরনের পাখি, চোখটা লাল টুকটুকে, চারপাশে বেগুনি অঞ্জন মাখা, মধ্যে মধ্যে এদিক ওদিক তাকিয়ে নির্লিপ্তভাবে সিটি দিচ্ছে, এমনই সেই সিটি যে অ্যান্টি-রাউডি পুলিশের আওতায় পড়ে যায়। সেটাও কিনব ভাবছি, রাজেনবাবুর স্ত্রী এর মধ্যে বারান্দায় এসে দাঁড়িয়েছেন, তিনি বললেন, এই পাখিগুলো মিছরি ছাড়া কিছুই খায় না।

পাখিওলা শুনে বললে, না, তাজা ফড়িংও খায়। একই সঙ্গে এমন শর্করাবিলাসী এবং মাংসাশী প্রকৃতির পরিচয় পেয়ে চমৎকৃত হলাম। কিন্তু এই দুর্দিনের বাজারে মিছরি জোগাড় করা কিংবা গড়ের মাঠে গিয়ে অফিস কামাই করে ফড়িং ধরা কোনওটাই আমার পক্ষে সম্ভবপর বলে মনে হল না।

পাখিওলা টিয়াপাখি দুটোর দাম চেয়েছিল চৌদ্দ টাকা, আর সঙ্গে খাঁচা পাঁচ টাকা এবং করজোড়ে বকশিশ এক টাকা, সব মিলে কুড়ি টাকা। এই টিয়াগুলো নাকি মোটেই সাধারণ টিয়া নয়, নেপালে জয়বাবা হরহর ত্রৈলোকেশ্বর পাহাড় (পাখিওলা বর্ণনার সময় এইখানে এসে কপালে হাত ঠেকিয়েছিল) তার পেছনে নামাঈকা আশ্রম (আবার কপালে হাত), সেই আশ্রমের টিয়া বহু শ্রমে সংগৃহীত।

আমি শুনে তাজ্জব বোধ করছিলাম, বারাসত, দমদম কিংবা শ্রীরামপুর, ত্রিবেণী থেকে না ধরে নন্দামাঈকা আশ্রম পর্যন্ত ধাওয়া করতে হয়েছিল টিয়া ধরবার জন্যে, এর পরে দামদরের বোধহয় প্রশ্নই ওঠে না। রাজেনবাবুর স্ত্রী কিন্তু বাদ সাধলেন, কোনও রকম অবান্তরতায় না গিয়ে সোজাসুজি বললেন, খাঁচার দাম পাবে না। টিয়া দুটো রেখে দুটো টাকা নিয়ে যাও। যদি বেঁচে থাকে সামনের মাসে এসে আর এক টাকা নিয়ে যেয়ো

এই প্রস্তাবে পাখিওলা তা-না না করতে লাগল আর আমি ভীষণ অবাক হয়ে গেলাম এই দেখে যে কত সহজেই সবসুদ্ধ পাঁচ টাকায় পাখিওলা পাখি দুটো দিয়ে দিল।

কিন্তু কেন কিনলাম টিয়া দুটো? বারান্দায় কাপড় ঝোলানোর তারে খাঁচা ঝুলিয়ে ভাবতে লাগলাম। এখন এর জন্যে কাঁচালঙ্কা, ছোলা এইসব নিয়মিত সংগ্রহ করা সে আর এক দায় হয়ে দাঁড়াল। এই সব অন্যমনস্ক হয়ে ভাবছিলাম, খাঁচার ভেতর থেকে ঠোঁট বার করে একটা টিয়া কখন আমার ঘাড়ের নীচে খুবলে ধরেছে। ব্যাপারটা বুঝতে কয়েক সেকেন্ড গেল, কিন্তু ততক্ষণে কাঁধ দিয়ে গলগলিয়ে রক্ত পড়তে আরম্ভ করেছে। প্রাণভয়ে পরিত্রাহী চিৎকার করতে লাগলাম। নিচতলার অধিবাসীরা সিঁড়ি দিয়ে দৌড়ে উঠে এলেন, আশেপাশের বাড়ির জানলায় তোকজন দাঁড়িয়ে গেল। কিন্তু টিয়া নাছোড়বান্দা, কিছুতেই কামড় ছাড়ে না। মধ্যে মধ্যে অল্প অল্প ঘাড়ে আঁকি দিচ্ছি, কিন্তু ভয়ংকর যন্ত্রণা, টিয়া কিছুতেই ছাড়ে না।

ডানদিকের বাড়ির ছাদে এক ভদ্রলোক দাড়ি কামাচ্ছিলেন, তিনি দাড়ি কামানোর আয়নাটা রৌদ্রে। ঘুরিয়ে টিয়াপাখির চোখে আলো ফেলে বিব্রত করতে চাইলেন। কিছু হল না, তখন নিরাশ কণ্ঠে বললেন, এসব পাখি একবার ধরলে বেঁচে থাকতে ছাড়ে না।

নন্দামাঈকা আশ্রমের পাখি এত হিংস্র স্বভাবের, এ কখনওই ভাবা যায় না। এই সময়ে ভাগ্য ভাল কোথা থেকে একটা বিড়াল রেলিং টপকে আমাদের দোতলায় ঢুকল আর সঙ্গে সঙ্গে টিয়াটা আমার ঘাড় ছেড়ে গুটিসুটি মেরে খাঁচার এক কোনায় সরে গেল।

ঘাড়ে ডেটল লাগাতে লাগাতে স্থির করলাম টিয়া দুটোকে বিদায় করব। পাঁচ টাকা খরচ করে পাখি কিনে উড়িয়ে দেব, বুকটা খচখচ করতে লাগল, কিন্তু কী করা যায়?

০৪.

ঘাড়ের ব্যথা কমলে মাথায় বুদ্ধি এল, পাখি দুটো কাউকে উপহার দিলে বেশ হয়। তেমন কাউকে, যার দংশন চিরদিন আমাকে পীড়া দিয়েছে তারই বিনিময়ে এই সামান্য উপহার। কিন্তু কলকাতায় কাউকে নয়, সে তাহলে পরদিনই ফেরত পাঠিয়ে দিতে পারে; দূরে, বহু দূরে কাউকে যার পক্ষে এটা ফেরত পাঠানো অসম্ভব হবে।

কিন্তু কাকে দেয়া যায়? ভাবতে ভাবতে বরাহমিহিরের কথা মনে পড়ল। বরাহমিহিরের বিয়েতে কিছু উপহার দেয়া হয়নি, সেই ছলে এই দংশনপ্রিয় টিয়া দুটি দেয়া যেতে পারে, সুমধুর দাম্পত্যজীবনের প্রতীকরূপে। তবু কীভাবে পাঠাব, এই প্রশ্ন ঝুলে রইল সামনে। বারান্দায় পায়চারি না করলে আমার বুদ্ধি তেমন খোলে না, কিন্তু বারান্দায় টিয়ার খাঁচা ঝোলানো রয়েছে, কিছুতেই আর সাহস হচ্ছে না বারান্দায় যেতে। বালিশে চিত হয়ে শুয়ে ভাবব তারও অবস্থা নেই, ঘাড়ে দগদগে কাটা ঘা।

ডাকে কি পাখি পাঠানো যায়? একবার ডাকঘরে গেলাম। অনুসন্ধান কাউন্টারে যে মহিলা বসেছিলেন তাকে বিহঙ্গমের ডাকযোগ্যতা সম্বন্ধে প্রশ্নে বোধহয় আমার কিছু ত্রুটি হয়েছিল, তিনি দুবার শুনলেন প্রশ্নটা তারপর বড় উত্তেজিত হয়ে পড়লেন, কী বললেন, এতবড় আস্পর্ধা। পাখি ডাকে যায় কিনা, ভদ্রমহিলাকে অপমান। তিনি তারস্বরে চেঁচাতে লাগলেন, ভিড় জমে গেল। এই সর্বপ্রথম লক্ষ করলাম ডাক বিভাগের কর্মীরা বড় বলশালী হয়। পাখি ডাকে যায় কিনা এই সামান্য সংবাদটি সংগ্রহ করা ছাড়া আমার আর কোনও উদ্দেশ্যই ছিল না–এই কথাটা বোঝাতে আমার আধ ঘণ্টা সময় গেল।

ব্যর্থ, ক্ষুব্ধ, অপমানিত হয়ে বাড়ি ফিরে তখনই খাঁচা হাতে বেরিয়ে পড়লাম। সোজা বরাহমিহিরের ওখানে যাব। দুই হাতে কবজি পর্যন্ত পুরু করে তোয়ালে জড়িয়ে নিলাম। আত্মরক্ষার্থে।

এবার বাস। কিন্তু প্রথমেই বাধা। বাসে উঠতেই কন্ডাক্টর বললেন, নেমে যান, নেমে যান, বাসে পাখি নিয়ে যাওয়া আইনে নিষেধ আছে।

আমি তখন উত্তেজিত, কীসের আইন মশায়। কোথায় আপনার আইন? কন্ডাক্টর পকেট থেকে একটা দুমড়ানো কাগজ বের করে দেখালেন, তাতে লেখা রয়েছে, মাতাল বা উন্মাদ অবস্থায়, বসন্ত হইলে অথবা কুকুর ও সাইকেলসহ বাসে ওঠা নিষিদ্ধ। এইসব সময়ে বিশেষ করে সাইকেল নিয়ে লোকে কেন বাসে উঠতে যাবে বুঝতে পারলুম না, কিন্তু টিয়াপাখির কথা কোথাও লেখা নেই।

তখন কন্ডাক্টর বললেন, তাহলে টিকেট লাগবে। দুটো টিয়ের দুটো আলাদা টিকেটকন্ডাক্টর যে বিজ্ঞপ্তি বার করেছিলেন তারই নীচের দিকে অঙ্গুলি নির্দেশ করে আমি দেখালাম, এই দেখুন তিন বৎসরের কম বয়স্কদের টিকেট লাগিবে না। আমার এই টিয়ে দুটো নেহাত বাচ্চা, দুগ্ধপোষ্য; এখনও ছমাস হয়নি।

সামনের সিট থেকে এক বুড়ো ভদ্রলোক আমার সপক্ষে বললেন, আর তা ছাড়া টিয়েপাখি তিন বছর বাঁচেই না।

কন্ডাক্টর গজগজ করতে লাগলেন। শেয়ালদা অবধি আসা গেল। এইবার মূল সমস্যা। রেলওয়ে আইনে স্পষ্ট লেখা রয়েছে পশুপাখির আলাদা বুকিং লাগবে। গেটে চেকার-সাহেবের সঙ্গে এই নিয়ে কিঞ্চিৎ বচসা হল। ইতিমধ্যে সুযোগ মতো টিয়া দুটো ইতস্তত তিনজন যাত্রী, একজন কুলি এবং একজন রেলকর্মচারিকে আহত করে ফেলেছে। প্রাথমিক শুশ্রূষার অঙ্গ হিসেবে আমি একশিশি ডেটল সঙ্গে এনেছিলাম, সেটা কিছু কাজ দিল। হয়তো মারধোরও কিছু হত আমার উপরে, কিন্তু আমার হাতে শাণিত চক্ষু দুটি টিয়া, কেউ আমাকে আক্রমণ করতে সাহস পেল না। পনেরো গজ ব্যাসে বৃত্তাকারে মারমুখী জনতা আস্ফালন করতে লাগল।

গতিক বুঝে আমি বুকিং করতে রাজি হয়ে গেলুম। বুকিংয়ে প্রথম ধাপ ওজন করা। এই রকম মারাত্মক দুটি জীব আলাদা আলাদা ওজন করা কী করে সম্ভব, ভাবতে ভাবতে বুকিং অফিসে এসে পৌঁছলাম। বুকিংয়ে যে ভদ্রলোক বসেছিলেন তিনি, আমি কিছু বলবার আগেই, খাঁচার দরজাটা যেই খুলেছেন, একটা টিয়া বেরিয়ে গিয়ে তাঁর নাক থাবা দিয়ে ধরল। দ্বিতীয় টিয়াটি কোনও গতিকে ছুটে ওপাশের প্ল্যাটফর্মে এক ভদ্রলোক আপনমনে তরমুজের ফালি কামড়াচ্ছিলেন তাকে কিচমিচ করে জাপটে ধরল।

আর এক মুহূর্তও নয়। কোলাপুরি চপ্পলের মায়া ত্যাগ করে আমি এক লাফে স্টেশন থেকে সামনের ফুটপাথে, পরের লাফে একটা চলন্ত ট্যাকসিতে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress