ফিরে পাওয়া
নদীতে উথাল পাথাল অবস্থা।মাঝ গঙ্গায় পরপর দুটি নৌকা টাল মাটাল ।হয়তোপারের কিছু আগেই ….
অমাবস্যার রাত, নিকষ কালো আঁধারে দুটো নৌকা উল্টিয়ে যায়। চারিদিকে কান্নার শব্দ।শেয়ালের হুক্কা হুয়া। কে কোথায় ভেসে যায়!
কত মানুষ মারা গেছে!
সকাল হতে পাঁচ বছরের মুন্না খুঁজে পায় তার বাবা ও মা কে। মুন্না তখন পাঁচ নয় ঠিক পঁচিশ বছর যেন। মুনিয়া মুনিয়া করে যমজ বোনকে খুঁজতে থাকে। বাবা ও মা একমাত্র কন্যা কে খুঁজে না পেয়ে শোকে পাথর।
তাদের কন্যা কি আর নেই!
দুদিন ধরে অনেক খোঁজাখুঁজি চলে। যে যার পরিবারের লোকজন হারিয়েছে সবাই অপেক্ষা করতে থাকে। খোঁজ খবর কিছু মেলে না।অগত্যা বাড়িতে ফিরে আসা।মুন্না মুনিয়া কে ছাড়া থাকতে পারে না। হারিয়ে যায় বাড়ির আলো। মুনিয়া র কলকল শব্দে বাড়ি গমগম করত।
মুন্না খেতে চায় না।এরপর মুন্নার বাবা মোহনের বদলির হুকুম আসে। বর্ধমান থেকে সোজা দিল্লি ব্রাঞ্চে। উনি এলাহাবাদ ব্যাঙ্কে ম্যানেজার হয়ে দিল্লিতে আসেন।
মুনিয়া ভাসতে ভাসতে এগিয়ে গেছিল বহুদূর। বাড়ি ঘর ঠিকানা কিছু বলতেও পারে নি।এক মাড়োয়ারি পরিবারে মানুষ হচ্ছে।
এরপর বাংলা ভুলে হিন্দি শেখে।
এরপর বহু বছর কেটে গেছে।
ছেলেদের কলেজ হোস্টেলে হৈ হৈ মেয়েদের হোস্টেলে এক জুনিয়র মেয়ে এসেছে। খুব সুন্দরী। সবাই মারপিট শুরু করেছে।কে মেয়েটাকে ছিপে তুলবে। মুন্না ও কম যায় না।তক্কে তক্কে থাকে । লাইব্রেরী তে আলাপ করে।কোন বই টা ভালো এইসব আলোচনা করে।
লাইব্রেরী তে মেয়েটি টাকার ব্যাগটি ফেলে শ্রেণী কক্ষে চলে যায়। মুন্না ব্যাগটি খুলে দেখে নাম সৌরভী। নানা ছবির মধ্যে ছোট বেলার একটি ছবি।হুবহু মুন্নার ছবি।ও ছবিটি বার করে নিয়ে সৌরভির ব্যাগটা দিয়ে আসে। বাড়িতে এসে অ্যালব্যাম খুলে মেলায়।মা বলে ওঠে ও তো মুনিয়া।এই তো কপালে তিল টা। আমার হারিয়ে যাওয়া আলো।
পরদিন সৌরভিকে বলে এই মুনিয়া এই নাও তোমার ছবি।সৌরভি বলে তুমি আমার নাম জানলে কি করে।
মুনিয়া তোমার মুন্না কে মনে পড়ে!!!
মুন্না নামটা আমার খুব চেনা। আচ্ছা মুনিয়া তুই যদি আমার বোন হোস। মুনিয়া স্বাভাবিক ভাবেই বলে হতেই পারে। আমি তো আমার বাবা ও মা হারিয়েছি। সব শোনা কথা নুতন মার কাছে।তবে ঠিক আমার একটা ভাই ছিল। আচ্ছা মুনিয়া তোর কপালে ও নাভির পাশে তিলটা আছে।হ্যাঁ তুমি জানলে কি করে সৌরভ দা।
সৌরভি আমি সেই তোর যমজ দাদা রে।তুই তো নাম বদল করিস নি।
আসলে যেখানে মানুষ হয়েছি সেখানে নাম বলতে পেরেছিলাম।
হারিয়ে যাওয়া আলো আবার বাড়িতে চাঁদের হাট বসিয়ে দেয়।আসলে মুনিয়ার হৈচৈ করা স্বভাবটা পাল্টে যায় নি।