Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » ফটিকচাঁদ || Satyajit Ray » Page 4

ফটিকচাঁদ || Satyajit Ray

দারোগা দীনেশ চন্দ আর একবার রুমালটা বার করে কপালের ঘামটা মুছে একটা কেঠো হাসি হেসে বললেন, আপনি অতটা ইয়ে হবেন না স্যার। আমরা তো অনুসন্ধান চালিয়েই যাচ্ছি। আমরা

মুণ্ডু!–হেঁকে উঠলেন মিস্টার সান্যাল। আমার ছেলে কী অবস্থায় আছে সেটাই বলতে পারছেন না আপনারা!

মানে, ব্যাপারটা—

আপনি থামুন। আমাকে বলতে দিন। আমি আপনাদের কথাই বলছি। –চারজন লোক, এ গ্যাঙ অফ ফোর, বাবলুকে কিডন্যাপ করেছিল। তারা একটা নীল রঙের চোরাই অ্যামবাসাডরে করে ওকে নিয়ে ঘাটশিলা ছাড়িয়ে সিংভূমের দিকে যাচ্ছিল।

ইয়েস স্যার।

ইয়েস স্যার, ইয়েস স্যার করার দরকার নেই, আমাকে শেষ করতে দিন।…পথে একটা লরি ওদের গাড়িতে ধাক্কা মেরে পালায়। মাঝরাত্তিরে। লরিটাকে পরে আপনারা ধরেছেন।

ইয়েস দারোগা সাহেব স্যারের আগে ব্রেক কষে নিজেকে কোনওমতে সামলে নিলেন।

অ্যাকসিডেন্টে দুজন লোক মারা যায়। সেই চারজনের মধ্যে দুজন।

বন্ধু ঘোষ আর নারায়ণ কর্মকার।

কিন্তু দলের পাণ্ডা বেঁচে আছে।

আজ্ঞে হ্যাঁ।

কী নাম তার?

তার আসল নামটা ঠিক জানা নেই।

চমৎকার।–কী নামে জানেন তাকে?

স্যামসন।

আর অন্যটি?

রঘুনাথ।

এও ছদ্মনাম?

হতে পারে।

যাকগে।…স্যামসন আর রঘুনাথ বলছেন বেঁচে আছে–অ্যাকসিডেন্টের পরে তারা পালায়। আর আপনারা বলছেন, বাবলু গাড়ি থেকে ছিটকে বাইরে পড়ে।–

আজ্ঞে, দশ বারো বছরের ছেলের সাইজের একটা জুতোর সোলের খানিকটা পাওয়া গেছে গাড়ি থেকে সাত হাত দুরে। রাস্তার পাশটা খানিকটা ঢালু হয়ে জঙ্গলের দিকে নেমে গেছে, সেই স্লোপের নীচের দিকে। তা ছাড়া রক্তের দাগও পাওয়া গেছে তার আশেপাশে। আর একটি নতুন ক্যাডবেরি চকোলেটের প্যাকেট।

কিন্তু তাকে পাওয়া যায়নি।

না স্যার।

জঙ্গলের ভিতর সার্চ করা হয়েছে? না কি বাঘের ভয়ে সেটা বাদ গেছে?

দারোগাবাবু হালকাভাবে হাসতে গিয়ে না পেরে কেশে বললেন, ও জঙ্গলে বাঘ নেই স্যার। জঙ্গলে তো সার্চ করেইছি, এমনকী কাছাকাছির গ্রামকটাও বাদ দিইনি।

তা হলে আপনারা কী রিপোর্ট করতে এসেছেন আমার কাছে? সমস্ত ব্যাপারটা তো জলের মতো পরিষ্কার। স্যামসন আর রঘুনাথ বাবলুকে নিয়েই পালিয়েছে।

দারোগা হাত তুলে মিস্টার সান্যালের কথা বন্ধ করতে গিয়ে বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে মনে করে হাতটা নামিয়ে বললেন, আশার আলো দেখা গেছে, সেইটেই আপনাকে–

ওসব আলো-টালো থিয়েটারি বাদ দিয়ে সোজাসুজি বলুন।

দারোগাবাবু আর একবার কপালের ঘাম মুছে নিয়ে বললেন, অমরনাথ ব্যানার্জি বলে এক ভদ্রলোক–জুট কর্পোরেশনে কাজ করেন–ঘাটশিলা থেকে কলকাতা ফিরছিলেন মোটরে করে ওই অ্যাকসিডেন্টের পরের দিন। উনি ঘাটশিলায় বাড়ি করেছেন; বউ আর ছেলেকে–

ফ্যাকড়া বাদ দিন।

হ্যাঁ স্যার, স্যরি স্যার। –খড়্গপুর থেকে ত্রিশ মাইল আগে একটা লরিতে একটি ছেলেকে দেখেন। তার হাতে-পায়ে ইনজুরি ছিল। লরির ড্রাইভার বলে, ছেলেটিকে নাকি রাস্তায় অজ্ঞান অবস্থায় কুড়িয়ে পায়, অ্যাকসিডেন্টের জায়গা থেকে মাইলখানেক উত্তরে, মেন রোডে। ভদ্রলোক ছেলেটিকে নিয়ে খড়গপুরে একটা ডাক্তারখানায় যান। সেখানে ফার্স্ট এড দেবার পর ছেলেটি বাথরুমে যাবার নাম করে পালায়। ভদ্রলোক পুলিশে রিপোর্ট করেন।

দারোগাবাবু থামলেন। মিস্টার সান্যাল এতক্ষণ তাঁর কাঁচের ছাউনি দেওয়া প্রকাণ্ড টেবিলটার উপর দৃষ্টি রেখে ভুরু কুঁচকে কথাগুলো শুনছিলেন, এ বার দারোগাবাবুর দিকে চোখ তুলে বললেন, এত কথা বললেন, আর ছেলেটি তার নামটা বলেছে কিনা বললেন না?

ওইখানে একটা মুশকিল হয়েছে স্যার। ছেলেটির বোধহয় লস অফ মেমরি হয়েছে।

লস অফ মেমরি?–অবিশ্বাসে মিস্টার সান্যালের নাক চোখ ভুরু সব একসঙ্গে কুঁচকে গেল।

সে নিজের নাম, আপনার নাম, কোথায় থাকে, কিচ্ছু নাকি বলতে পারেনি।

ননসেন্স!

অথচ চেহারার বর্ণনায় দস্তুরমতো মিল আছে।

কীরকম? রঙ ফরসা, দোহারা চেহারা, চুল কোঁকড়া–এই তো?

আজ্ঞে নীল প্যান্ট আর সাদা শার্টের কথাও বলেছে।

আর কোমরে জন্মদাগ বলেছে? থুতনির নীচে তিলের কথা বলেছে?

না স্যার।

মিস্টার সান্যাল চেয়ার ছেড়ে উঠে পড়লেন। তারপর হাতঘড়িটার দিকে দেখে বললেন, আজকে আমাকে কোর্টে যেতেই হবে। এ তিনদিন পারিনি দুশ্চিন্তায়। আমার তিন ছেলেকে টেলিগ্রাম করে দিয়েছি। একটি আবার খঙ্গপুরে আছে–আই আই টি-তে। ফোন করেছিল–আজই আসবে। অন্য দুটি বম্বে আর ব্যাঙ্গালোরে। আসবে নিশ্চয়ই, হয়তো দু-একদিন দেরি হবে। চিন্তা সবচেয়ে বেশি মাকে নিয়ে। বাবলুর মা নয়, আমার মা। বাবলুর মা বেঁচে থাকলে এ শক সইতে পারত না। আমি রাস্তা ঠিক করে ফেলেছি। ওই লোক দুটো যদি বাবলুকে নিয়ে গিয়ে থাকে, তা হলে টাকা ডিমান্ড করবেই। যদি করে তো আমি সে টাকা দেব, দিয়ে ছেলেকে ছাড়িয়ে নেব। তারপর তারা ধরা পড়ল কি না-পড়ল, সেটা আপনাদের লুক-আউট, আই ডোন্ট কেয়ার।

কথাটা বলে কলকাতার জাঁদরেল ব্যারিস্টার শরদিন্দু সান্যাল তাঁর তিনদিক বইয়ে-ঠাসা আপিস-ঘরের শ্বেতপাথরের মেঝেতে জুতোর আওয়াজ তুলে দারোগা দীনেশ চন্দের কপালে নতুন করে ঘাম ছুটিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress