Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।


নাম : প্রেমেন্দ্র মিত্র (Premendra Mitra)
জন্ম : ৪ সেপ্টেম্বর,১৯০৪, কাশী, বারাণসী, উত্তর প্রদেশ, ভারত
পিতা ও মাতা : জ্ঞানেন্দ্রনাথ মিত্র (বাবা) , সুহাসিনী দেবী (মা)
দাম্পত্য সঙ্গী : বীণা মিত্র
পেশা : কবি, ছোটগল্পকার, ঔপন্যাসিক এবং চিত্রপরিচালক
উল্লেযোগ্য কাব্য : ফেরারী ফেীজ , সাগর থেকে ফেরা , সম্রাট , জোনাকিরা , হরিন চিতা – চিল , কখনাে মেঘ , কিন্নর , কুয়াশা , নিশিথনগরী , বেনামী বন্দর , শ্রেষ্ঠ কবিতা
পুরস্কার : রবীন্দ্র পুরস্কার, আকাদেমি পুরস্কার, পদ্মশ্রী, দেশিকোত্তম
ছদ্মনাম : কৃত্তিবাস ভদ্র
মৃত্যু : ৩ মে ১৯৮৮


প্রেমেন্দ্র মিত্র (ইংরেজি: Premendra Mitra)( জন্ম:৪ সেপ্টেম্বর,১৯০৪ – মৃত্যু: ৩ মে, ১৯৮৮) কল্লোল যুগের একজন বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী বাঙালি কবি, ছোটগল্পকার, ঔপন্যাসিক এবং চিত্রপরিচালক। বাংলা সাহিত্যে তার সৃষ্ট জনপ্রিয় চরিত্রগুলি হল ঘনাদা, পরাশর বর্মা, মেজকর্তা এবং মামাবাবু।

প্রেমেন্দ্র মিত্র ১৯০৪ সালের ৪ সেপ্টেম্বর ভারতের উত্তর প্রদেশ রাজ্যে তার পিতার কর্মস্থল বারাণসীতে জন্মগ্রহণ করেন৷ তার পৈতৃক নিবাস ছিল বর্তমান পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ চব্বিশ পরগণা জেলার রাজপুরে৷ তিনি ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার কোন্নগরের সম্ভ্রান্ত মিত্র বংশের সন্তান৷ তার পিতার নাম জ্ঞানেন্দ্রনাথ মিত্র এবং তার মাতার নাম সুহাসিনী দেবী৷ খুব অল্প বয়সেই তিনি মাতৃহারা হন৷

প্রেমেন্দ্র মিত্র এক সময় কলকাতার ২৮ নম্বর গোবিন্দ ঘোষাল লেনের মেসবাড়িতে বাস করতেন৷ পরবর্তীকালে পড়াশোনার জন্য তিনি ঢাকাতে থাকতে শুরু করেন৷ একবার ১৯২৩ খ্রীষ্টাব্দের নভেম্বর মাসে ঢাকা থেকে কলকাতায় ফিরে এসে ওই মেসবাড়ির ঘরের জানলার ফাঁকে একটি পোস্টকার্ড আবিষ্কার করেন। চিঠিটা পড়তে পড়তে তার মনে দুটো গল্প আসে। সেই রাতেই গল্পদুটো লিখে পরদিন পাঠিয়ে দেন জনপ্রিয় পত্রিকা প্রবাসীতে। ১৯২৪ সালের মার্চে প্রবাসীতে ‘শুধু কেরানী’ আর এপ্রিল মাসে ‘গোপনচারিণী’ প্রকাশিত হয়, যদিও সেখানে তার নাম উল্লেখ করা ছিল না। সেই বছরেই কল্লোল পত্রিকায় ‘সংক্রান্তি’ নামে একটি গল্প বেরোয়। এরপর তার মিছিল(1928) এবং পাঁক(১৯২৬) নামে দুটি উপন্যাস বেরোয়। পরের বছর বিজলী পত্রিকায় গদ্যছন্দে লেখেন ‘আজ এই রাস্তার গান গাইব’ কবিতাটি।

প্রেমেন্দ্র মিত্রের প্রথম কবিতার বই ‌’প্রথমা’ প্রকাশিত হয় ১৯৩২ সালে। বৈপ্লবিক চেতনাসিক্ত মানবিকতা তার কবিতার প্রধান বৈশিষ্ট্য। প্রথম জীবনে তার ছোটোগল্পের তিনটি বই বেরোয় – ‘পঞ্চশর’, ‘বেনামী বন্দর’ আর ‘পুতুল ও প্রতিমা’। মানুষের সম্পর্কের ভাঙ্গা গড়া, মনের জটিলতা, মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তের ব্যথা বেদনার কথা প্রকাশে প্রেমেন্দ্র মিত্র ছিলেন স্বকীয়তায় অনন্য।

প্রেমেন্দ্র মিত্র সৃষ্ট জনপ্রিয়তম চরিত্র ঘনাদা, গল্পবাগীশ সর্বজ্ঞানী মেসবাড়ির ঘনশ্যাম দাস আজো সব বয়েসের পাঠকদের কাছে প্রিয়। তার এই অমর চরিত্র ৭২ নং বনমালী নস্কর লেনের মেসবাড়ির বাসিন্দা ঘনাদা প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯৪৫ সালে। এছাড়াও তিনি অনেকগুলি ছোট গোয়েন্দা গল্প ও উপন্যাস লিখেছেন যার মুখ্য চরিত্র পরাশর বর্মা, যে পেশায় গোয়েন্দা হলেও নেশায় কবি। তার সৃষ্ট চরিত্র মামাবাবুকে তিনি বহু এডভেঞ্চার উপন্যাস ও ছোটগল্পে এনেছেন যেগুলি কিশোরদের ভেতর জনপ্রিয় ছিল।এবং জনপ্রিয় সাহিত্যিক ছিলেন।

প্রেমেন্দ্র মিত্র প্রথম বাঙালি সাহিত্যিক যিনি নিয়মিত কল্পবিজ্ঞান বা বিজ্ঞান-ভিত্তিক গল্প-উপন্যাস রচনায় মনোনিবেশ করেন। তার বিজ্ঞান সাহিত্য রচনার শুরু ১৯৩০ সালে। রামধনু পত্রিকায় ক্ষিতীন্দ্রনারায়ণ ভট্টাচার্য তাকে ছোটদের জন্যে লিখতে অনুরোধ করলে ‘পিঁপড়ে পুরাণ’ কাহিনীটি লেখেন। এটিই তার প্রথম কল্পবিজ্ঞান রচনা। ‘কুহকের দেশে’ গল্পে তার কল্পবিজ্ঞান ও এডভেঞ্চার কাহিনীর নায়ক মামাবাবুর আত্মপ্রকাশ। ১৯৪৮ সালে ‘ড্র্যাগনের নিঃশ্বাস’ বের হলে মামাবাবু পাঠক মহলে জনপ্রিয় হন। তার রচিত কয়েকটি বিখ্যাত কল্পবিজ্ঞান গল্প ও উপন্যাসের নাম নিচে দেওয়া হল:

• ছোটোগল্প: “কালাপানির অতলে”, “দুঃস্বপ্নের দ্বীপ”, “যুদ্ধ কেন থামল”, “মানুষের প্রতিদ্বন্দ্বী”, “হিমালয়ের চূড়ায়”, “আকাশের আতঙ্ক”, “অবিশ্বাস্য”, “লাইট হাউসে”, “পৃথিবীর শত্রু”, “মহাকাশের অতিথি”, “শমনের রং সাদা”।
• বড়ো গল্প ও উপন্যাস: পিঁপড়ে পুরাণ, পাতালে পাঁচ বছর, ময়দানবের দ্বীপ, শুক্রে যারা গিয়েছিল, মনুদ্বাদশ, সূর্য যেখানে নীল।

এছাড়া আকাশবাণীর উদ্যোগে লিখিত “সবুজ মানুষ” নামে একটি চার অধ্যায়ের বারোয়ারি কল্পবিজ্ঞান কাহিনির প্রথম অধ্যায় রচনা করেন প্রেমেন্দ্র মিত্র। অবশিষ্ট তিনটি অধ্যায় লিখেছিলেন অদ্রীশ বর্ধন, দিলীপ রায়চৌধুরী ও সত্যজিৎ রায়।

পথ বেঁধে দিল, রাজলক্ষ্মী (হিন্দি), নতুন খবর, চুপি চুপি আসে, কালোছায়া, কুয়াশা, হানাবাড়ী, তার পরিচালিত ছবি। এছাড়াও তিনি বহু সিনেমার কাহিনীকার, চিত্রনাট্যকার ও উপদেষ্টা ছিলেন।

পনেরাে – ষােল বছর বয়সে শ্রমজীবীদের পত্রিকা সংবর্ততে ১৯২৭ খ্রিঃ তার লেখা ‘ পাঁক ’ উপন্যাস ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয় ।
বাংলার সায়েন্স ফিকসন রচনার সূত্রপাত তিনিই করেন । তাঁর সৃষ্ট সাহিত্যের এই শাখাটি বর্তমানে অনেক বলিষ্ঠ লেখকের । আবির্ভাবে যথেষ্ট পুষ্ট ও সমৃদ্ধ হয়েছে ।

বাংলা সাহিত্যে প্রেমেন্দ্র মিত্রের স্মরণীয় সৃষ্টি শ্রীঘনশ্যাম দাস ওরফে ঘনাদা চরিত্র । অন্য কোন রচনানা লিখলেও একমাত্র ঘনাদা । চরিত্র সৃষ্টির জন্যই তিনি সাহিত্যের ইতিহাসে স্থায়ী আসন লাভ করতেন ।

ঘনাদাকে নিয়ে তার প্রথম গল্প মশা প্রকাশিত হয় ১৯৩৭ খ্রিঃ । ঘনাদার অনুরূপ আরও তিনটি চরিত্র তিনি পরবর্তীকালে সৃষ্টি করেন । এগুলাে হল , বিজ্ঞান গবেষকমামাবাবু , রহস্যসন্ধানী পরাশর বর্মা এবং ভূত – শিকারী মেজোকর্তা । ঘনাদার মত প্রবাদপ্রতিম না হলেও এই চরিত্রগুলােও যথেষ্ট জনপ্রিয় হয়েছিল ।

পত্রিকা সম্পাদনার কাজেও প্রেমেন্দ্র মিত্রর যশ ও দক্ষতা ছিল । সঞ্জয় ভট্টাচার্যের সঙ্গে নিরুক্ত , বুদ্ধদেব বসুর সঙ্গে কবিতা পত্রিকা । এবং রঙমশাল , কালিকলম , নবশক্তি প্রভৃতি সম্পাদনা করেন ।

কিছুকাল শিশু মাসিক পক্ষীরাজ সম্পাদনা করেন ।

তার অনুদিত হুইটম্যানের কবিতা , লরেন্স ও সমারসেট মম – এর গল্প প্রশংসিত হয় ।

গীতিকার হিসেবেও খ্যাতি লাভ করেছিলেন । প্রথম গান লেখেন ভীষ্মদেব চট্টোপাধ্যায়ের অনুরােধে । যদি ভাল না লাগে তাে দিও না মন ’ কানন দেবীর কণ্ঠের এই জনপ্রিয় গানটির রচয়িতা তিনিই ।

কৃত্তিবাস ভদ্র ছদ্মনামেও তিনি লেখালেখি করেছেন ।

প্রেমেন্দ্র মিত্রের পরিচালিত প্রথম চলচ্চিত্র সমাধান ১৯৪৩ খ্রিঃ মুক্তি পায় ও খ্যাতি অর্জন করে ।

সব মিলিয়ে চোদ্দটি ছবি তিনি পরিচালনা করেন । তার মধ্যে । ময়লা কাগজ বিশেষ উল্লেখযােগ্য ।

রচিত গ্রন্থের সংখ্যা দেড় শতাধিক । ছােটদের ও বড়দের পদ্য ও গদ্য রচনা সমান দক্ষতায় লিখতে সক্ষম ছিলেন বলে সব্যসাচী লেখক রূপে আখ্যাত হতেন ।

এই সব গুণাবলীর জন্য তিন বহু পুরস্কার পান । সাগর থেকে ফেরা কাব্যগ্রন্থের জন্য ১৯৫৭ খ্রি : আকাদেমী পুরস্কার লাভ করেন । এর ঠিক পরের বছর অর্থাৎ ১৯৫৮ খ্রি : তিনি রবীন্দ্র পুরস্কার লাভ করেন । ১৯৫৭ খ্রি : আন্তর্জাতিক কবিতা , সম্মেলনে তাঁকে বেলজিয়ামে যেতে হয়েছিল ।

প্রেমেন্দ্ৰ মিত্রের উল্লেখযােগ্য কাব্য গ্রন্থ :

ফেরারী ফেীজ , সাগর থেকে ফেরা , সম্রাট , জোনাকিরা , হরিন চিতা – চিল , কখনাে মেঘ , কিন্নর , কুয়াশা , নিশিথনগরী , বেনামী বন্দর , শ্রেষ্ঠ কবিতা , শ্রেষ্ঠ কবিতা দ্বিতীয় পর্যায় প্রভৃতি ।

পদ্মশ্রী ও দেশিকোত্তম উপাধিতেও তিনি সম্মানিত হন ।

কলকাতায় পাকস্থলীর ক্যান্সারের কারণে অসুস্থ হয়ে ৩ মে, ১৯৮৮ মারা যান। ভগ্নস্বাস্থ্যেও সৃষ্টিশীল ছিলেন ১৯৮৭ পর্যন্ত।

Source : wikipedia

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *