Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » প্রার্থনালয় || Humayun Azad

প্রার্থনালয় || Humayun Azad

ছেলেবেলায় আমি যেখানে খেলতাম
তিরিশ বছর পর গিয়ে দেখি সেখানে একটি মসজিদ উঠেছে।
আমি জানতে চাই ছেলেরা এখন খেলে কোথায়?
তারা বলে ছেলেরা এখন খেলে না, মসজিদে পাঁচবেলা নামাজ পড়ে।

বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় বুড়িগঙ্গার ধারে বেড়াতে গিয়ে
যেখানে একঘণ্টা পরস্পরের দিকে নিষ্পলক তাকিয়ে ছিলাম আমি আর মরিয়ম,
গিয়ে দেখি সৌদি সাহায্যে সেখানে একটা লাল ইটের মসজিদ উঠেছে।
কোথাও নিষ্পলক দৃষ্টি নেই চারদিকে জোব্বা আর আলখাল্লা।

পঁচিশ বছর আগে বোম্বাই সমুদ্রপারে এক সেমিনারে গিয়ে
যেখানে আমরা সারারাত নেচেছিলাম আর পান করেছিলাম আর নেচেছিলাম,
১৯৯৫-এ গিয়ে দেখি সেখানে এক মস্ত মন্দির উঠেছে।
দিকে দিকে নগ্ন সন্ন্যাসী, রাম আর সীতা, সংখ্যাহীন হনুমান;
নাচ আর পান সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।

ফার্থ অফ ফোর্থের তীরের বনভূমিতে যেখানে সুজ্যান আমাকে
জড়িয়ে ধরে বাড়িয়ে দিয়েছিলো লাল ঠোঁট,
সেখানে গিয়ে দেখি মাথা তুলেছে এক গগনভেদি গির্জা।
বনভূমি ঢেকে আকাশ থেকে মাটি পর্যন্ত ঝুলছে এক ক্রুদ্ধ ক্রুশকাঠ।

আমি জিজ্ঞেস করি কেনো দিকে দিকে এতো প্রার্থনালয়?
কেনো খেলার মাঠ নেই গ্রামে?
কেনো নদীর ধারে নিষ্পলক পরস্পরের দিকে তাকিয়ে থাকার স্থান নেই?
কেনো জায়গা নেই পরস্পরকে জড়িয়ে ধরে চুম্বনের?
কেনো জায়গা নেই নাচ আর পানের?
তারা বলে পৃথিবী ভরে গেছে পাপে, আসমান থেকে জমিন ছেয়ে গেছে গুনাহয়
তাই আমাদের একমাত্র কাজ এখন শুধুই প্রার্থনা।

চারদিকে তাকিয়ে আমি অজস্র শক্তিশালী মুখমণ্ডল দেখতে পাই,
তখন আর একথা অস্বীকার করতে পারি না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *