প্রকৃতি ও ফুলরসায়ন (“Havan Hibiscus ” , and Tungsten , Molybdenum micro Test)
[Havan–Home, ritual aspects…
Tungsten / Wolfrum. Chemical
symbol of Wolfrum–W
— Molybdenum –Mo
both are rare metals.]
“জবা” ( Hibiscus) নামটি ভারি সুন্দর, শুনলেই চোখের সামনে ফুটে ওঠে লাল টকটকে রক্ত জবা, যেন যথার্থ নাম, আর বাঙ্গালী হিন্দুদের মনে ‐—
“আমার মায়ের পায়ের জবা হয়ে উঠ না ফুটে মন । ও তার গন্ধ না থাক, যা আছে সে নয় রে ভুয়ো আবরণ ….. ” পূজোর মরশুমে জবা ফুলটি যেন আরও জীবন্ত হয়ে মনে ধরা দেয়।
সারা পৃথিবী জুড়ে আছে জবা— না কোন গন্ধ তার নেই,তবু আছে নামে, বাজারে ” Hibiscus perfume”। যেমন আছে Rain , Firefly, Tomato…
….তা যাক্
জগতে যে কত ধরনের আছে জবা, দু’শোর চেয়েও বেশি , হ্যাঁ,আর তাদের কত তুলনাহীন রঙ বাহার!!! মোটামুটি তিন ধরনের জবা জগতে ভাগ জমিয়ে চলে আসছে–
১)hardy hibiscus, ২)rose of sharon, আর ৩) tropical hibiscus.
এত গেল স্থান বুঝে ভাগ। কিন্তু এর মধ্যেও রয়েছে আবার অসংখ্য ধরনের জবা, তাদের রঙ বৈচিত্র্যে, পাপড়ি বিন্যাসে, আকারে-প্রকারে ।
একই রঙের তারতম্য ত আছেই, যেমন, লাল রঙের নানা আভার, আছে দু-তিন রঙের বাহারি নক্সার আলপনা।
হরদম দেখছি “রক্ত জবা”, “ঝুমকো জবা ” “লঙ্কা জবা”, “রাজেন্দ্র”, “পঞ্চমুখী”, “হলুদ” বা “সাদা” বা “গোলাপী জবা”, “লক্ষ্মী জবা”, “চন্দন জবা”… আর কত বলবো। প্রসঙ্গত আরও একটি কথা বলতে চাই লাল রঙের জবার ঔষধি গুণও আছে। জবা চা অর্থাত লাল শুকনো জবা গরম জলে ফুটিয়ে চায়ের মতো এক পানীয়– অতি উপাদেয়। বিশেষ মিশরে এ পানীয় খুব চালু সর্বত্র । খেজুর ইত্যাদির সাথে শুকনো জবা বা তার গুড়ো সেখানে রপ্তানী আওতায়ও পড়ে। এই শরৎকালেই দেখে এসেছি কায়রোর বাজারে ঢালাও বস্তা বস্তা লাল শুকনো জবা বা ও তার লাল পাউডারের বিক্রি ব্যবস্থা। কায়রো, লাক্সার , নীল নদ-ক্রুসিং ….এ সর্বত্র এই “হিবিসকাস চা” খাবার হিরিক, হালকা কাঁচের স্বচ্ছ গ্লাসে —দেখতে পানীয়টি যেমন মনোরম টকটকে লাল, ( red wineও হার মানে)খেতেও সুস্বাদু অল্প চিনি দিয়ে, কিন্তু কোন গন্ধ নেই। রূপচর্চার ব্যাপারেও জবার অবদান অনস্বীকার্য। এখন হয়ত, ভাবছেন, জবার কথায় আবার তাহলে Tungsten Molybdenum …. micro test এসব আবার কি? প্রলাপ? না “ধান ভানতে শিবের গীত” ? ঠিক, আমিও ঠিক বিষয়টি কিভাবে লিখে উঠব, ভাবছি— রসায়ন বিষয়টি কিন্তু সত্যিই রসিক, মিশ্রিত যৌগ লবন চিনবার কষ্টকর প্রাকটিক্যাল বিশ্লেষণ শেষে চমৎকার সব রঙ মাধুর্যের পুরস্কার তথা তৃপ্তি। রসিক নয়ত কি? এইখানেই “হ্যাভেন হিবিসকাস” আর “টাংষ্টেন” “মলিবডেনাম ” নিয়ে এল এক রঙের খেলা।
একদম যেন “মেড ফর ইচ্ অদার” হাভেন জবা (নীচে ছবি দেওয়া আছে), দু’রঙের ত বটেই আবার বহু বর্ণের সমন্বয়ও আছে, সেই সাথে অবশ্যই পাপড়ির সংখ্যা
Fibonacci নিয়মে(0,1,1,2,3,5,8,13, 21…. )।
না, একথা বলছি না যে জবার রঙের জন্য ঐ দুটি ধাতুর কোন অবদান আছে— বর্ণের রসায়নে বিরল ধাতুরা নেই সেখানে। কোন সম্পর্ক নেই। নেই তাদের যৌগ পদার্থেরও । ফুলপাপড়ির রঙের জন্য আছে জৈব যৌগ পদার্থ , কিন্তু W, Mo ত বিরল ধাতু, অজৈব রসায়নের জটিল যৌগ পদার্থের নানা রঙ দেয়। Prof. N.N.Ghose(আমার পিতা) বিজ্ঞান কলেজে,কলকাতা Inorganic — micro test সংক্ষেপে “spot test ” প্রচলন করেন( আগে হতো macro test)। খুব যৌগ লবনের তরল দ্রবন ছোট্ট ছোট্ট ফোঁটার ব্যবহারে হাতে কলমে analysis হতো spot plate বা filter paper এ ।
সফলভাবে বলা যায় একটি spot test ছিল সনাক্তকরনের জন্য একসাথে টাংষ্টেন ও মলিবডেনাম এর একটি ফিল্টার পেপারে টেষ্ট, যদি সে স্যাম্পলে ঐ দুটি একসঙ্গে বিদ্যমান থাকে। বিশদে বলা একটু মুশকিল, বিজ্ঞান ব্যতিরেকে শুধু রঙের কথাই বলি– সে বিশ্লেষণ পরীক্ষায় ফুটে উঠত গোল ফিল্টার পেপারে দু-রঙা এক ফুলের ছবি– তখন ত জানতাম না, এমন রঙ বিন্যাসের ফুলের সন্ধান সত্যিই আছে!!! এক “হাভেন হিবিসকাস”। মনে দাগ রেখেছিল ঐ রসায়ন ফুলের চমকপ্রদ নক্সা। মধ্যখানে লাল ও চারপাশে গভীর উজ্জ্বল নীল রঙ (royal blue)। প্রথম দেখা পাওয়া যেতো কেন্দ্রে অজানা লাল এক ফুলপাপড়ি নক্সা,( W- confirmation) পরে তা হাওয়ায় শুকিয়ে নিয়ে আর এক drop দিলে হতো লাল ফুলের চারপাশে গোলাকার নীল বৃত্তের শোভা,(Mo-confirmation)। অবশ্যই এর পেছনে রসায়ন বিজ্ঞান জটিল কথা আছে। পরবর্তীতে সুযোগ হয়নি চাকুরী জীবনে বা গবেষণাকালে ঐ বিরল ধাতুর আর বিশ্লেষণ।
হারিয়ে গিয়েছে কি সে মনকাঁড়া ফুলের মাধুর্য ? না, চমৎকারীত্বও যায় নি মন থেকে, হয় নি একটুকুও ম্রিয়মান সে স্মৃতি…. তাই হঠাৎই “হাভেন হিবিসকাস ” কাছে পেয়ে আজ লিখতে পারছি আমার “প্রকৃতি ও ফুলরসায়ন”।
এখন অপেক্ষায় আছি আমার ছোট্ট গাছটিতে কবে আসবে কুঁড়ি, কবে প্রষ্ফুটিত হবে “হাভেন জবা ” আর পূর্ণ হবে সাধ, আমার কাঁচা বয়সের টাংষ্টেন/ মলিবডেনাম ফুল- রসায়ন-মোহ- অনুরাগ।