পুনর্মিলন
এটা কি সম্ভব অরু!
কেন সম্ভব নয় মেঘ?
হায়রে এখন তোমার এত জোর এলো কোথা থেকে রে গরু।
এই মেঘ ভালো হবে না বলছি। একদম অরুকে গরু বলবে না।
বেশ করেছি বলব।
কিসের অধিকারে বলবে শুনি?
বাবালে কি কথা শোনো গরু বলব তাও নাকি …….!!
হ্যাঁ চোখ ছলছল করে বলে অরুকে শৈশব, যৌবনের প্রাক লগ্নের বন্ধু হিসেবে গরু বলেছি।
তারপর মেঘমালার আবার দুষ্টু কথা।এই অরু ষাড় বলব তাহলে।
তারপর দৌড়তে যাবে মেঘমালা হাঁটুতে টান ধরে।
অরু বলে পালাতে পারলে নাতো।হাতটা খপাত করে ধরে মেঘের।
আশা করেছিল অরু…মেঘ হয়তো বলবে…এই অরুনদা। কি হচ্ছে।সবাই দেখো দেখছে।
সে সব মেঘ কিছু বলল না।
উল্টে হা হা করে হেসে বলে ভাগ্যিস ধরলে!নাহলে কোমর ভেঙে বিছানায় থাকতে হতো।
এই মেঘ তোমার হাত ধরে আছি তোমার খারাপ লাগছে না।
তোমার লজ্জা কোথায় গেল!
আশ্রমের কিছু মেয়ে ছুটে আসে।মাসী তোমার কিছু হয়নি তো!
ধন্যবান কাকু। তুমি আমাদের প্রিয় মাসীকে বাঁচালে।
নারে মা তোরা যা। উনি আমার আপনজন।
কি কাকু কাল থেকে কিছু মুখে দাও নি। এবার পরিচিতা পেয়ে মন ভালো থাকবে নিশ্চয়।
ঠিক বলেছ!আর মন খারাপ লাগবে না। আমার মনে *হাজার দীপের আলো জ্বলছে।
জানো মেঘ ছেলে – মেয়ে আমেরিকাতে বিয়ে করে বসবাস করছে। আমি একা কি করি! বাড়ি ছেড়ে বিদেশে মরতে চাইনা। আবার বৃদ্ধাশ্রমেও না।
কিন্তু কেন অরু!
তোমাকে শেষ দেখা দেখব বলে।
আচ্ছা মেঘ তুমি নিশ্চয় বিবহিতা।
করেছিলাম বিয়ে।তবে আমার বর তোমার কথা জানতেন। এইজন্য উনি আমাকে অচ্ছুত ভেবে ত্যাগ করেছিলেন।এক বছরের মধ্যে ডিভোর্স।তারপর লেখাপড়া শেষ করে ।স্কুলের শিক্ষিকা হয়ে দীর্ঘ বছর দিদিমনি হয়ে এই জানুয়ারিতে অবসর জুটেছে।
যাও অরুণ খেয়ে নাও।ছেলে মেয়েদের বড়ো হবার স্বপ্ন দেখিয়েছ ..আজ ওরা বহু দূরে চলে গেছে।। কিন্তু ওদের মা থাকত তবে বিদেশিনীর দিকে লক্ষ্য দিতনা। সিটিজেন পাবার জন্য বিয়ে করে নেয়। তোমাকে বর্তমানকে মানিয়ে নিতে হবে।তালের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হবে।যুগ পাল্টিয়েছে।
কিন্তু মেঘ আমরাতো এরকম ছিলাম না
আরে অরুকে গরু বলি এইজন্য।
দেব গাট্টা তোমাকে।
আরে শোনো আমাদের দেখা এক ঘন্টা বিয়াল্লিশ মিনিট হলো। এরমধ্যে গাট্টা জুটল।
আসল কথা অরু আমাদের বয়সটা বেড়েছে।মনের বয়সটা সেই ছোটবেলার মতো আনচান করছে।
আমরা মা বাবাকে ভয় পেতাম।তারপর যৌথ পরিবার সকলের। মামার বাড়ি থেকে একমাস থেকে বাড়ি ফিরে আমার প্রিয় বান্ধবীর কাছে শুনলাম তোমার বিয়ে হয়ে গেছে।তারপর খুব কেঁদেছিলাম।সব কষ্ট বুকে চেপে আমি মামার বাড়ি গিয়ে এম -এ পাশ করি।বি- এড করতে করতে বিয়ে হয়ে গেল। কিন্তু সে তোমার – আমার প্রেম কাহিনী সব জানতে পারে।বলতে পারো বাবা মার পছন্দের বিয়ে করে কি লাভ হয়েছিল!!
মেঘ আমার সঙ্গে খাবে নাকি?
না গো আমি যখন তখন খেতে পারি না।এখনো সেই স্কুলের নিয়ম পালন করে যাচ্ছি। আমি তোমার ঘরে অপেক্ষা করছি অরু খেয়ে এসো ।
খেয়ে আসার পর আবার দুজনের গল্প পুরানো স্মৃতি আদান প্রদান সব চলছিল।
সন্ধ্যা আরতি শুরু হয়ে গেছে ।চলো অরু প্রার্থণা করে আসি।
সবাই আড়ালে আবডালে জোড়া কবুতর নাম দিয়েছিলেন।
ঘুম থেকে ওঠা শুরু থেকে দুজনের কলকাকলি শুরু হয় ।
এরপর তিন মাস কেটে যায়।
কাকু – মাসীকে নিয়ে বৃদ্ধাশ্রমে হৈচৈ। পুরানো প্রেম তাদের। বিয়ে দিতে হবেই। অরুণের সমস্যা নেই, সন্তানদের পরোয়া করে না।
তারাতো বাবার কথা ভাবেনা। কিন্তু মেঘমালার আপত্তি। লজ্জা লাগছে।কেউ কোথাও বাঁধা দেবার নেই তবুও অবসর প্রাপ্ত দিদিমনির একটু দ্বিধা লাগছে।
সকলের পীড়াপীড়িতে আগামী কাল বিয়ে।আশ্রমে নানান ভাবে সাজানো হয়েছে।মেঘ – অরুণ সবাইকে নতুন জামা কাপড় ,কিনে দিয়েছে।তেষট্টি – একষট্টি বছরের বর – কনে বেশ খোশমেজাজে আছে। সত্যি সত্যিই বিয়ে হয়।, হাজার দীপের আলো জ্বলে। বৃদ্ধাশ্রমে কদিন থাকার পর জানায়, এবার নিজের বাড়িতে ফিরে যাবেন। ওনারা মেঘের ফ্ল্যাটে থাকতে শুরু করে । রাঁধুনি ও ঝি ,ড্রাইভার সব আছে ।তাই কোনো অসুবিধা নেই।
হঠাৎ অরুণ বাবুর ফোনে মেয়ের ফোন সে একেবারে জামাইকে ডিভোর্স দিয়ে ইন্ডিয়াতে ফিরছে। অরুণ বাবুর স্ত্রী মেঘমালা বলে ভালোতো হলো। আমারতো সন্তান নেই।ও যদি আমাকে মেনে নেইতো সমস্যা নেই।
বাবা মেয়েকে জানাই আমি বৃদ্ধাশ্রমে বিয়ে করে ওই স্ত্রীর ফ্ল্যাটে সুখে আছি। তোমার নতুন মায়ের ইচ্ছা তুমি তার ফ্ল্যাটে কন্যারূপে এসো।যদি না চাও একা আমার বাড়িতে থাকতে পারো।
তারপর মেয়ে নতুন মার সাথে অনেক কথা হয় ভিডিও তে।
মেয়ে বিদেশ থেকে বাবা -মার সংসারে বেশ সুখে আছে।হয়তো কোনদিন হয়ত শুনবেন ছেলে ও ফিরতে চাইছে।
বাড়িতে সানাই বাজছে।ঠিক ধরেছেন মেয়ের পুনর্বিবাহ হচ্ছে।
মেয়ে কদিনে মায়ের ভালোবাসাতে এতটা তৃপ্ত ..তাই কনকাঞ্জলি মাকে দেবার সময় প্রচণ্ড কাঁদে। মায়ের ভালোবাসা কি ,সেটা ভাই বোনের বোধগম্য ছিলনা।
মেয়ে জামাই নিয়ে বেশ আনন্দে কাটছে ওনাদের জীবন।
“এমনি করে যাক সে দিন যাক না”