পাতাল-খন্দক : 13 – মর্মান্তিক
আগাগোড়া সব শোনার পর রাঘবেন্দ্র উত্তেজিতভাবে বললেন, “তাহলে এখনই গিয়ে ছোটকুমারসাবকে গ্রেফতার করা দরকার।”
কর্নেল বললেন, “কেন?”
রাঘবেন্দ্র ভীষণ অবাক হয়ে গেলেন। “কেন করব না? তিনিই তো রমলা দেবীকে”।
কর্নেল হাসলেন। বাধা দিয়ে বললেন, “ইন্ডিয়ান পেনালকোড অনুসারে মার্ডার একটা কগনিজি অফেন্স। পুলিশ কারুর কাছে অভিযোগ না পেলেও নিজে থেকে অ্যাকশান নিতে পারে। ঠিক কথা। কিন্তু এক্ষেত্রে রমলার ডেডবডি কোথায়? ডেডবডি পেলে তবে তো কাউকে গ্রেফতারের কথা ওঠে। তাছাড়া জয় তো নালিশ করছে না। করলেও প্রথমে দরকার ডেডবডি।”
আউটহাউসের সেই ঘরটায় বসে কথা বলছিলেন তারা। জয় দ্রুত বলল, “না। আমার কোনো নালিশ নেই কারুর বিরুদ্ধে।”
রাঘবেন্দ্র বললেন, “আপনাকে আমরা প্রসিকিউশন উইটনেস করতে পারি।”
“বাট ইউ নিড দি ডেডবডি! পাতাল-খন্দকে ডুবুরি নামাতে পারেন অবশ্য।”
রাঘবেন্দ্র গম্ভীর হয়ে বললেন, “চেষ্টা করে দেখব।”
“কিন্তু ডেডবডি যতক্ষণ না পাচ্ছেন, বিজয়কে গ্রেফতার করবেন কোন আইনে?”
রাঘবেন্দ্র বিব্রত হয়ে একটু হাসলেন। তারপর বললেন, “কেন? বিপ্রদাসকে মার্ডারের চার্জ আনা যায় না?”
“না। কারণ আমি তার ডিফেন্স উইটনেস। বিজয় কাল সারা সকাল থেকে আমার সঙ্গে ঘুরছিল। বিপ্রদাসবাবুকে খুন করেছে বুদ্বুরাম এবং জয়াকে যে অজ্ঞান করেছিল–সেও বুদ্বুরাম। কাজেই আইনত বিজয়কে ততক্ষণ গ্রেফতার করতে পারছেন না, যতক্ষণ না বুদ্বুরামকে গ্রেফতার করে তার কাছে কনফেসন আদায় করতে পারছেন। আমি আইনের কথাই বলছি মিঃ শর্মা!”
রাঘবেন্দ্র হাসতে হাসতে বললেন,”ওকে, ওকে! কিন্তু আপনি তো দেখতেই পাচ্ছেন, বিজয়সাবই বুদ্বুরামের সাহায্যে–”
কথা কেড়ে কর্নেল বললেন, “লেট বুদ্বুরাম কনফেস। আগে তাকে গ্রেফতার করুন। সে কী বলছে আগে জানা দরকার।”
রাঘবেন্দ্র উঠে দাঁড়ালেন। “চলুন–দেখি ওদিকে কী হল।”
টিলা থেকে নামবার সময় বললেন, “এটাই আশ্চর্য লাগছে, বিজয় কেন আপনাকে ডেকে নিয়ে এল? সে তো জানে, আপনি রহস্যভেদী ধুরন্ধর মানুষ। আপনি জেনে ফেলবেন সব কথা। অথচ সে আপনাকে একটা বাজে অজুহাত দেখিয়ে নিয়ে এল।”
কর্নেল বাইনোকুলারে পাখি দেখছিলেন নামিয়ে বললেন, “কী বলছিলেন যেন।”
“বিজয় আপনাকে নিয়ে এল কেন? নিজেকে ধরিয়ে দেবার জন্য নিশ্চয় নয়?”
“নিশ্চয় নয়।”
“তাহলে?”
কর্নেল আবার বললেন, “আগে বুদ্বুরামকে গ্রেফতার করুন। লেট হিম কনফেস।”
“কর্নেল! তাহলে দুঃখের সঙ্গে বলব, রহস্যভেদী হিসেবে আপনি নিশ্চয় একজায়গায় এসে ব্যর্থ হয়েছেন।”
“ঠিকই বলেছেন মিঃ শর্মা!” কর্নেল শ্বাস ফেলে অন্যমনস্কভাবে বললেন, “একটা জায়গায় এসে আমি সামনে দেয়াল দেখছি। আর এগোনো যাচ্ছে না।”
“হু–সম্ভবত সেটা হল? কেন বিজয় আপনাকে ডেকে আনল–এই তো?”
“ইউ আর এগেন ড্যাম রাইট।” বলে কর্নেল লম্বা পায়ে হঠাৎ জোরে হাঁটতে থাকলেন।
রাঘবেন্দ্র সঙ্গ ধরার চেষ্টা করে বললেন, “কেন হঠাৎ আপনি এমন উত্তেজিত হয়ে উঠলেন কর্নেল?”
“শিগগির চলুন! রাজবাড়িতে আবার কী ঘটেছে মনে হচ্ছে।”