পাতাল-খন্দক : 12 – রহস্যের শেষ প্রান্তে
ভুতুড়ে ছড়াটা সত্যি হল তাহলে! কর্নেলের সত্যিই দাড়ি ছেঁড়ার অবস্থা। কলাবতী রোজ সকালে সব ঘরে ঝাড় দেয়। ওপরতলার তিনটে বন্ধ ঘর বাদে সব ঘরে তাকে ঝাড়ু দিতে হয়। হলঘর আর বিপ্রদাসজির ঘরের একটা করে ডুপ্লিকেট চাবি তার কাছে থাকে। বিপ্রদাসজি তাকে বিশ্বাস করতেন। গতকাল সকালে যখন সে বিপ্রদাসজির ঘরে ঝাড় দেয়, তখন বিপ্রদাসজি ঘরে ছিলেন। বলেছিলেন, জরুরি কাজে ভাগলপুর বহিনজির বাড়ি যাবেন আটটার ট্রেনে। দুদিন থাকবেন। আজ সকালে কলাবতী প্রথমে হলঘর ঝাড়ু দিতে গিয়ে বদ গন্ধ পায়। সে ভেবেছিল কোথাও চুহা মরে পড়ে আছে। হলঘর থেকে বিপ্রদাসজির ঘরে ঢোকা যায়। কিন্তু সে দরজাটা বন্ধ। তার সন্দেহ হয়, তাহলে বিপ্রদাসজির ঘরে চুহা মরেছে। সে বারান্দায় এসে বিপ্রদাসজির ঘরের তালা খোলে। জানালা বন্ধ ছিল। পচা গন্ধে অস্থির হয়ে সে জানালা, ওপাশের দরজা সব খুলে দেয়। আলো জ্বেলে চুহাটাকে খুঁজতে থাকে। তারপর তার। চোখে পড়ে, খাটের তলা থেকে মানুষের একটা পা বেরিয়ে আছে। সে ভয় পেয়ে চেঁচামেচি শুরু করে। তখন নছি সিং, বৈজু, তারপর জয়া দৌড়ে আসে। রঙ্গিয়া ইঁদারায় পাম্প চালিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। সেও দৌড়ে আসে। শেষে আসে বিজয়। এসে হুকুম দেয় টেনে বের করতে। নছি সিং টেনে বের করলে সবাই চমকে উঠে দ্যাখে, বিপ্রদাসুজির মাথার মাঝখানটা থ্যাতলানো। রক্ত জমাট বেঁধে আছে। হাতুড়ি বা ওইরকম কিছু শক্ত ভারী জিনিস দিয়ে মাথায় মারা হয়েছে। মেরে বডিটা খাটের তলায় ঢোকানো হয়েছে।
জয় আসে অনেক পরে। একটু দাঁড়িয়েই সে চলে যায়।
কর্নেল গিয়েই নছি সিংকে থানার পাঠিয়েছিলেন। পুলিশের গাড়ি এল প্রায় আধঘণ্টা পরে। জয়া তার ঘরে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েছিল। তাকে কলাবতী সান্ত্বনা দিচ্ছিল। বিজয়ও দুহাতে মুখ ঢেকে শিশুর মতো কাঁদছিল হলঘরে বসে।
কানাজোল পুলিশ স্টেশনের ও সি রাঘবেন্দ্ৰ শৰ্মা কর্নেলকে দেখে অবাক হয়েছিলেন। হাসতে হাসতে বললেন, “প্রবাদ শুনেছিলুম, যাহা ভি যাতা হ্যায় কর্নেল, উঁহাভি খুনখারাপিকা খেল। ক্ষমা করবেন কর্নেল সরকার! গতবছর। কলকাতার ডিটেকটিভ ট্রেনিং সেন্টারে একটা কনফারেন্সে গিয়ে প্রবাদটা শুনেছিলুম। যাই হোক, ব্যাকগ্রাউন্ড তো ইতিমধ্যে আপনার নিশ্চয় জানা হয়ে গেছে। বলুন–হাউ টু প্রসিড!”
কর্নেল আস্তে বললেন, “যত শিগগির পারেন, বুদ্বুরামকে গ্রেফতার করুন।”
“কে বুদ্বুরাম?”
“এই রাজবাড়ির চাকর। আমার ধারণা, পুরনো রেকর্ডে ওর পরিচয় থাকা সম্ভব।”
রাঘবেন্দ্র তার সঙ্গে আসা সাব-ইন্সপেক্টরের দিকে ইশারা করলেন। তখন কর্নেল দ্রুত বললেন, “বুদ্বুরাম রাজবাড়িতে নেই। তাকে পাঠানো হয়েছে বিপ্রদাসজির খোঁজে। আমার মনে হয়, এই সুযোগে আসলে সে গা ঢাকা দিয়েছে। তাকে খুঁজে বের করা দরকার।”
সাব-ইন্সপেক্টর বেরিয়ে গেলেন সঙ্গে সঙ্গে। রাঘবেন্দ্র কর্নেলের দিকে। তাকালেন। কর্নেল বললেন, “আপনাদের রুটিন ওয়ার্ক শেষ হোক। তারপর কথা হবে।”
একটু পরে অ্যামবুল্যান্স এল। ফোটোগ্রাফার এল। মর্গের লোকেরা এল। প্রাথমিক তদন্ত ও একে একে বাড়ির সবাইকে ডেকে স্টেটমেন্ট নেওয়া হল শুধু জয় আর নানকু বাদে।
কর্নেল বললেন, “আপনার কলিগরা বাকি কাজ সেরে ফেলুন। ততক্ষণ আউটহাউসে বড়কুমার আর নানকুর স্টেটমেন্ট নেবেন চলুন মিঃ শর্মা।”
দক্ষিণের বাগান আর পোডড়া জমি দিয়ে যাবার সময় ঠাকুরদালানের কাছে এসে কর্নেল দেখলেন, মাধবজি তার ঘরের ভেতর রান্না করতে বসেছেন। রাঘবেন্দ্র বললেন, “এখানে কে থাকে?”
কর্নেল দাঁড়িয়ে পড়েছিলেন। রাজবাড়ির ভেতর দেড়ঘণ্টা যাবৎ যে হুলুস্থূল চলেছে, মাধবজি নিশ্চয়ই টের পাননি। তাহলে এমন নিশ্চিন্তে বসে রান্না করতে পারতেন না। ছুটে যেতেন।
আসলে লোকটিকে কেউ গণ্য করে না রাজবাড়ির একজন বলে। কর্নেল রাঘবেন্দ্রের প্রশ্নের জবাবে বললেন “মাধবজি এই ঠাকুরদালানের সেবায়েত। মিঃ শর্মা, উনি আপনার কেসের একজন শক্ত সাক্ষী।”
“বলেন কী! তাহলে তো আগে ওঁর সঙ্গেই কথা বলতে হয়।”
কর্নেলের ডাকে মাধবজি বেরিয়েই ভড়কে গেলেন। কাঁপা কাঁপা স্বরে বললেন, “নমস্তে”!
কর্নেল বললেন, “খবর খারাপ, মাধবজি। আপনি জানেন না কিছু?”
মাধবজি ভাঙা গলায় বললেন, “বড়কুমারকে গ্রেফতার করেছেন, মালুম হচ্ছে ।”
‘না। বিপ্রদাসজিকে কে খুন করে গেছে!”
মাধবজি আর্তনাদের সুরে বললেন, “হায় ভগবান! কে এমন কাজ করল? অমন সাচ্চাদিল মানুষটাকে–তার হাতে কুষ্ঠব্যাধি হবে। আমি অভিশাপ দিচ্ছি!”
নাক ঝেড়ে চোখ মুছে মাধবজি ফের বললেন, “হাম সমঝ লিয়া, হুজুর! আমি সব বুঝতে পেরেছি কেন বিপ্রদাসজিকে খুন করেছে।”
“কেন মাধবজি?”
“সেই অচেনা বে-পহচান লেড়কিকে খুন করার কথা বিপ্রদাসজি আর আমিই শুধু জানি। তাই প্রথমে বিপ্রদাসজিকে খুন করে মুখ বন্ধ করে দিল। এবার আমাকেভি খুন করবে। আমাকে আপনারা বাঁচান, হুজুর!”
মাধবজি করজোড়ে কান্নাকাটি করতে থাকলেন। রাঘবেন্দ্র অবাক হয়ে বললেন, “মনে হচ্ছে, আরও একটা মার্ডারের ব্যাপার আছে এবং সেজন্যই আপনার এখানে আসা, কর্নেল!”
কর্নেল বললেন, “দ্যাটস এ লং স্টোরি, মিঃ শর্মা। একটু অপেক্ষা করুন।” বলে মাধবজির দিকে ঘুরলেন, “মাধবজি, হরটিলার শিবলিঙ্গের বেদিটা কীভাবে খোলা যায় আপনি তো জানেন!”
“জি হাঁ কর্নেলসাব! বিপ্রদাসজির কাছে চাবি ছিল। সেই চাবি দিয়ে খোলা যায়।”
“ওই গোপন সিন্দুকটা।”
বাধা দিয়ে মাধবজি বললেন, “সিন্দুক নয় হুজুর, ওটা একটা পাতাল-খন্দক। ইঁদারার মতো। নিচে পাতাল-গঙ্গা বইছে। আমি কেমন করে জানব বলুন? বিপ্রদাসজি বলেছিলেন।”
“বলেন কী! তাহলে তো সেই লাশটা পাওয়া যাবে না?”
“না পাতাল গঙ্গায় গিয়ে পড়লেই তো মাগঙ্গা ওকে টেনে নেবেন।” মাধবজি আবার ফোঁস ফোঁস করে নাক ঝেড়ে বললেন, “বিপ্রদাসজি বলেছিলেন, আগের আমলে রাজাবাহাদুররা দুশমন লোকেদের মেরে ওইখানে লাশ ফেলে দিতেন। কেউ জানতে পারত না।”
কর্নেল পা বাড়িয়ে বললেন, “আপনি রান্না করুন নিশ্চিন্তে। আর কোনো ভয় নেই আপনার। বিপ্রদাসজির খুনীকে ধরতে পুলিশ বেরিয়ে পড়েছে।”
মাধবজি অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন। কর্নেল বললেন, “মিঃ শৰ্মা, একটু ধৈর্য ধরুন। দ্যাটস এ লং স্টোরি।”
আউটহাউসের দিকে যেতে যেতে কর্নেল ভাবছিলেন, বিপ্রদাসজি জয়াকে ডেকে ওই পাতাল-খন্দকের চাবি দেন। তার খুনী ওঁত পেতে বেড়াচ্ছিল তাঁকে খুন করার জন্য। ভাগলপুর যাচ্ছেন শোনামাত্র সে সুযোগ পেয়ে যায়। তখনই খুন করলে সে লাশ পাচারের জন্য একটা রাত্রি সময় পাবে। কলাবতী ঘরে। ঝাড় দিতে ঢুকবে পরের দিন সকালে–সে জানে। রাত্রে লাশটা সরিয়ে ফেললে আর কেউ টের পাবে না কিছু। সবাই ভাববে, বিপ্রদাসজি ভাগলপুরে বোনের বাড়ি গেছেন এবং তারপর তার নিপাত্তা হওয়া নিয়ে পুলিশ অন্ধকারে হাতড়ে বেড়াবে।
তাহলে সে জনত, লাশ নিপাত্তা করে দেওয়ার একটা চমৎকার জায়গা আছে এবং ওই হরটিলার শিবলিঙ্গের তলায় পাতাল-খন্দক।
এমন কি সে আরও জানত জানত, বেদিটা খোলার জন্য গোপন তালা ও চাবি আছে। বিজয় ও জয়ার সঙ্গে কথা বলে মনে হয়েছে, তারা এই পাতাল খন্দকের কথা জানে না। জানে তাদের ভাইবোনের মধ্যে একমাত্র জয়। কারণ জয় বলেছে, রমলার লাশ ওখানে লুকানো আছে। কিন্তু জয় জানে না ওটা পাতাল-খন্দক। জানেন শুধু মাধবজি, আর জানতেন বিপ্রদাসজি। তার চেয়ে বড় কথা, তার, হত্যাকারী কে সেকথা ভালই জানতেন।
অতএব সে কি বিপ্রদাসজির অনুগত লোক? কিংবা দৈবাৎ জানতে পেরেছিল?
ঘটনাটা সাজানো যাক ও খুনী ওঁত পেতে বেড়াচ্ছিল। জয়াকে বিপ্রদাসজি চাবির কৌটোটা গোপনে দিচ্ছেন, তার নজর এড়ায়নি। জয়া সেটা নিয়ে ওপরে চলে গেলে সে বিপ্রদাসজির ঘরে ঢোকে। ওই সময় কর্নেল বিজয়কে নিয়ে গঙ্গার ধারে অন্ধ প্রজাপতি খুঁজে বেড়াচ্ছেন। বিপ্রদাসজির ঘরে ঢুকে–
হঠাৎ কর্নেলের মনে পড়ল, ও-ঘরেও জয়ার মতো আবছা ক্লোরোফর্মের গন্ধ পাচ্ছিলেন।
ঠিক তাই। খুনী প্রথমে ক্লোরোফর্মে বিপ্রদাসজিকে অজ্ঞান করে তারপর মাথায় শক্ত কিছুর আঘাত করে। খুলি ফেটে যায়। বডিটা খাটের তলায় ঢুকিয়ে পকেট হাতড়ে চাবি নিয়ে দরজায় তালা এঁটে সে ওপরে চলে যায়। জয়াকে অজ্ঞান করে চাবির কৌটো হাতিয়ে নেয়। কাল বিকেলে হরটিলায় গিয়ে সে কি পরীক্ষা করে দেখছিল পাতাল-খন্দক আছে কি না? চাবিটা ভেঙে যায়। তারপর কর্নেল ও বিজয় গেলে সে লুকিয়ে পড়ে।
হ্যাঁ, কর্নেল তারই ছায়া দেখেছিলেন। সম্ভবত তার মতলব ছিল কর্নেলকেও খুন করবে। সাহস পায়নি। রাতে জয় ও তার কুকুর পাহারা দিচ্ছিল। কাজেই সে ওখানে আর যেতে পারেনি–নইলে বেদি ভেঙে ও বিপ্রদাসজির লাশ নিপাত্তা করে দিত।…
আউটহাউসের টিলায় উঠতে উঠতে হঠাৎ রাঘবেন্দ্র ডাকলেন, “কর্নেল সরকার!”
“বলুন!”
“বুদ্বুরামকে কেন আপনার সন্দেহ?”
কর্নেল একটু হাসলেন। “সামান্য একটা কারণে। তার গায়ে একটা ছাইরঙা স্পোর্টিং গেঞ্জি দেখেছি আজ সকালে। অবশ্য কাছে থেকে নয়, বাইনোকুলারে দূর থেকে। তবে আমার বাইনোকুলারটি অত্যন্ত শক্তিশালী এবং বিশ্বাসযোগ্য।”
“আপনার হেঁয়ালি বোঝা কঠিন।” রাঘবেন্দ্র হাসতে লাগলেন।…
জয় কাঁধে কাকাতুয়া নিয়ে নির্বিকার ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে কর্নেল ও রাঘবেন্দ্রকে দেখছিল। নানকু ঘাস কুচো করছিল। পাশে গামলায় ভেজানেনা মটর আর ছোলা। মুখ ঘুরিয়ে সে একবার দেখল মাত্র।
কর্নেল বললেন, “এক মিনিট মিঃ শর্মা। আমি আগে জয়কে কয়েকটি প্রশ্ন করে নিই।”
রাঘবেন্দ্র বললেন, “ওক্কে। করে নিন।”
কর্নেল বললেন, “জয়, তুমি কি জানো হরটিলার শিবলিঙ্গের বেদিটা সিন্দুক নয়, আসলে একটা পাতাল-খন্দক এবং নিচে গঙ্গা বইছে?”
জয় অবাক হল। কয়েকমুহূর্ত তাকিয়ে থাকার পর মাথাটা নাড়ল।
“তুমি ওই বেদির চাবি থাকার কথা জানতে?”
“না। শুধু জানতাম বেদির তলায় নাকি গুপ্তধন আছে।”
“কে বলেছিল তোমাকে?”
“মনে নেই। ছোটোবেলায় শুনেছি কারো কাছে।”
“তাহলে চাবির কথা জানতে না?”
“না, না, না। এক কথা হাজারবার বলতে ভাল লাগে না।” বলে রাঘবেন্দ্রের দিকে ঘুরল। “আমাকে গ্রেফতার করতে এসে থাকলে করুন। দেরি করে লাভ নেই।”
কর্নেল বললেন, “আরও প্রশ্ন আছে জয়!”
“ঝটপট করুন।” বলে সে বাঁকা হাসল। “পরিতোষ সম্পর্কে প্রশ্ন থাকলে বলে দিচ্ছি, সে ভাগলপুরে চলে গেল। রমলার মেয়েকে নিয়ে চলে যাবে। কলকাতা। তাকে”
বাধা দিয়ে কর্নেল বললেন, “জয়, বিজয়ের কাছে তোমার তো কোনো কথা গোপন থাকেনি কোনোদিন–তাই না?”
হ্যাঁ, কেন?”
“৯ই সেপ্টেম্বর রমলা আসছে, তাকে বলেছিলে?”
জয় তাকালো কর্নেলের দিকে। নাসারন্ধ্র ফুলে উঠল। বলল, “হ্যাঁ।”
“বিজয় দাড়ি রাখতে শুরু করেছে, ৯ই সেপ্টেম্বরের পরে–তাই তো?”
জয় চুপ করে থাকল।
“জবাব দাও, জয়!”
নানকু কাজ থামিয়ে এদিকে ঘুরে কান করে শুনছিল। সে বলে উঠল, “কুমারসাব। আর মুখ বন্ধ করে থাকবেন না। এরপর আপনার জানটাও চলে যাবে”
জয় ঘুরে গিয়ে তাকে লাথি মারল। নানকু লাথি খেয়ে পড়ে গেল। তারপর দ্রুত উঠে একটু তফাতে সরে গেল। “আর আমি চুপ করে থাকব না। সব বলে দেবকে ময়ালসাপের খাঁচা খুলে দিয়েছিল, কে কাকাতুয়ার জিভ কেটে যোবা করে দিয়েছেল, কে বহুরানীকে স্টেশন থেকে : করে এনে”।
জয় আবার তাকে লাথি মারতে গেল, কর্নেল ধরে আটকালেন। জয় হাঁপাতে হাঁপাতে বলল, “নেমকহারাম! মিথ্যাবাদী! যা–আজ থেকে তোর চাকরি খতম! দূর হয়ে যা গিদ্ধড় কা বাচ্চা! বোবা কাকাতুয়া ভয় পেয়ে তার কাঁধ থেকে উড়ে ক্যানারি পাখির খাঁচার ওপর বসল। তখন নানকু পাখিটাকে ধরে দাঁড়ে বসাতে গেল।
কর্নেল এবার পকেট থেকে একটা ভাজ করা কাগজ বের করে বললেন, “এই লেখাটা তুমি চিনতে পারো কি না দেখ তো জয়!”
জয় তাকিয়ে দেখে বলল, “আমি বাংলা পড়তে পারি না।”
“মিথ্যা বোলো না জয়! তোমরা দুভাই-ই বাংলা শিখেছিলে কলকাতায়।” কর্নেল তার কাঁধে হাত রাখলেন। জয় মুখ নামিয়ে কাঁদতে থাকল। কর্নেল বললেন, “এই পদ্যটা বিজয়ের হাতের লেখা–তাই না?” জয় মাথাটা একটু দোলালো। এবার কর্নেল রাঘবেন্দ্রের দিকে ঘুরে বললেন, “আমার প্রশ্ন শেষ। আপনি স্টেটমেন্ট নিতে চাইলে নিতে পারেন এবার।”
রাঘবেন্দ্ৰ কাঁধ ঝাঁকিয়ে দুহাত একটু দুলিয়ে হাসতে হাসতে বললেন, “আগে আপনার কাছে পুরো ব্যাকগ্রাউন্ড না নিয়ে আমি আর একপাও বাড়াতে চাইনে কর্নেল!”