কে বলে পরশমণি অলীক স্বপন ?
অই যে অবনীতলে পরশমাণিক জ্বলে
বিধাতা-নির্মিত চারু মানব-নয়ন |
পরশমণির সনে লৌহ-অঙ্গ-পরশনে,
সে লৌহ কাঞ্চন হয় প্রবাদ-বচন,—
এ মণি পরশ যায়, মানিক ঝলসে তায়,
বরিষে কিরণধারা নিখিল ভূবন |
কবির কল্পিত নিধি মানবে দিয়াছে বিধি,
ইহার পরশগুণে মানব-বদন
দেব তুল্য রূপ ধরি’ আছে ধরা আলো করি’,
মাটির অঙ্গেতে মাখা সোনার কিরণ |
পরশমণি যদি অলীক হইত,
কোথা বা এ শশধর, কোথা বা ভানুর কর,
কোথা বা নক্ষত্র-শোভা গগনে ফুটিত ?
কে রাখিত চিত্র করে চাঁদের জোছনা ধ’রে
তরঙ্গে মেঘের অঙ্গে এমন মাখায় ?
কে বা এই সুশীতল বিমল গঙ্গার জল
ভারত-ভূষণ করি রাখিত ছড়ায়ে ?
কে দেখা’ত তরুকুল, নানা এঙ্গে নানা ফুল,
মরাল, হরিণ,মৃগে পৃথিবী শোভিয়া ?
ইন্দ্রধনু-আলো তুলে সাজায়ে বিহঙ্গ-কুলে,
কে রাখিত শিখি পুঞ্জে শশাঙ্ক আঁকিয়া ?
দিয়াছে বিধাতা যাই এ পরশমণি—
স্রগের উপমাস্থল হয়েছে এ মহীতল,
সুখের আকর তাই হয়েছে ধরণী !
কি আছে ধরণীর অঙ্গে, নয়নমণির সঙ্গে
না হয় মানব চিত্তে আনন্দদায়িনী !
নদীজলে মীন খেলে, বিটপীতে পাতা হেলে,
চরে বালুকণা ফুটে, তৃণেতে হিমানী,
পক্ষী পাখে উড়ে যায়, কীটেরা শ্রেণীতে ধায়,
কঙ্করে তুষার পড়ে, ঝিনুক চিক্কণী |
তাতেও আনন্দ হয়— অরণ্য কুজ্ঝটিময়,
জ্বলন্ত বিদ্যুত্লতা, তমিস্রা রজনী |
অপূর্ব মাণিক এই পরশ-কাঞ্চন !
জননী-বদন-ইন্দু জগতে করুণা-সিন্ধু
দয়াল পিতার মুখ, জায়ার বদন |
শত শশি-রশ্মিমাখা চারু ইন্দীবর-আঁকা
পুত্রের অধর-ওষ্ঠ, নলিন আনন ;
সোদরের সুকোমল, স্বসা-মুখ নিরমল,
পবিত্র প্রণয়পাত্র, গৃহির কাঞ্চন—
এই মণি পরশনে হয় সুখ দরশনে,
মানব-জনম সার, সফল জীবন |—
কে বলে পরশমণি অলীক স্বপন ?