লিমেরিক
লিমেরিক (পাঁচ লাইনের কবিতা),
এর নামকরণ কেন হল লিমেরিক?
লিমেরিক আসলে একটি জায়গার নাম,
এর নিজস্ব একটা ইতিহাস আছে, সে ইতিহাস লিমেরিকের মতই অদ্ভূত আকর্ষণীয়।
লিমেরিক আয়ারল্যান্ডের একটি জায়গার নাম, ফ্রান্সের সৈন্যদলের আইরিশ ব্রিগেডিয়াররা ওই স্থানে (লিমেরিকে) অবস্থান কালে এই রকম ছড়ার গান গাইত, সেখানে ধুয়ার মত শেষ লাইনে থাকত এই কথাটি “ Let us come up to Limerick”. সুর করে কোরাসের মাধ্যমে গাইত তা’রা। কোন অজানা কবির হাত ধরে প্রথম এই ধরণের গান চালু হয়েছিল তা কেউ জানে না। লিমেরিকের এই ধরণটার অনুকরণে সৈন্যরা নিজেরাই মুখে মুখে ছড়া তৈরী করে নিজেরাই সে গান গাইত।
যুদ্ধ শেষ হয়ে গেলে, যে যার বাড়ি ফিরে গিয়ে সেইসব গান শোনাত তাদের বংশধরদের।
লিমেরিক (আয়ারল্যান্ডের একটি জায়গা) থেকে আমদানী বলে এবং শেষে ধুয়ার মতো এই কথাটি থাকার ফলে “Let us come to Limerick” লিমেরিক (“Limerick”) বলে ছড়াগুলোর নাম হয়ে গেল । এই ছড়াগুলির আলাদা করে কোন নামকরণ থাকে না।
পাঁচ লাইনের এই ধরণের ছড়া বহুযুগ ধরেই চালু ছিল। যেমন –
“Hickory dickory dock
The mouse ran up the clock
The clock struck one
The mouse ran down
Hickory dickory dock”
( হিকরি ডিকরি ডক
ইঁদুরটি ঘড়িতে দৌড়ায়
ঘড়িটি একটা ধাক্কা মারলে
ইঁদুরটি দৌড়ে গেল
হিকরি ডিকরি ডক)
সাহিত্যে প্রথম এর অবতাড়না করেন ‘এডোয়ার্ড লিয়র’ । লিয়র ছিলেন সে রকম একজন মানুষ যার মজার উৎসটুকু ছিল তার বেদনাবোধ সঞ্জাত। নিজের ব্যথা-বেদনার কথা আশ্চর্যজনক ভাবে নিছক হাসিতে রূপান্তরিত করে গেছেন তিনি ‘লিমেরিক’-য়ে।
তবে আজকাল বিভিন্ন ভাবনায় লিমেরিক লেখা হচ্ছে বাংলা ভাষায়। তার কিছু উদাহরণ এখানে দেওয়া হলো #শংকর_ব্রহ্মর লেখা থেকে।
————————————————————
এক).
“মদ্য খেয়ে পদ্য লিখি” সবই
বলেছিলেন,একদা শক্তি কবি
সেই কবে,
আজ তবে
সবই,স্মৃতি পাতায় এক ছবি।
দুই).
একখানা কাব্য লিখেছিল দিয়ে মন
আমাদের এ’পাড়ার বিখ্যাত মিলটন
শহরের দোকানে
শোভা পায় সেখানে
বইটা দেখে বটে কেনে খুব কম জন।
তিন).
জৈষ্ঠমাসের রোদের তাপে গলছে পীচ
এখন আর কোথায় পাবে গাছের নীচ?
গাছ কেটেছো
বেশ করেছো
চলো যাই ঘুরতে এবার দূরে সমুদ্র বীচ।
চার).
নিরাবরণ চাঁদকে দেখে সোম যখন ক্লান্ত
মঙ্গল এসে জানান দিল চিন্তাটা তার ভ্রান্ত,
ভ্রান্ত কারণ
ছিল না মন
ভালবেসে জ্যোৎস্না মাখার,যা ছিল অভ্রান্ত।
পাঁচ).
বলব কি ভাই সেদিন দেখি রাসবিহারীর মোড়ে
রঙ বেরঙের সাজ পোষাকে কত মানুষ ঘোরে,
ফুটপাথ দখল করে বসে থাকে হকার
সেখান দিয়ে যাবার সাধ্য আছে কার
তার মধ্যেও পকেটমার এ’দিক সে’দিক ঘোরে।
ছয়).
মাঝে মাঝে ভালবাসতে ইচ্ছে করে মনে
তখন তোমায় ভালবাসি গোপনে নির্জনে
কেউ জানে না, কেউ বোঝে না
মনের হদিস কেউ খোঁজে না
সবাই ভাবে উদাস কেন থাকি ক্ষণে ক্ষণে।
সাত).
বলব কি ভাই সেদিন দেখি নিশুতি রাতে মাঠে
রঙ বেরঙের সাজ পোষাকে ভূত প্রেতেরা হাঁটে
আমায় দেখে বলল ওরা
মানুষ নাকি বলতো তোরা?
তোদের ভয়ে আমাদের যে দিন রাত্তির কাটে।
আট).
আজ চোর চোট্টা চিটিংবাজে
সব ব্যস্ত যখন দেশের কাজে
সমাজ হবে ছাড়খার
বলার আছে দরকার?
সূর্য বসেছে পাটে এখন সাঁঝে।
নয়).
আমি আছি আমার মতো তোমার তাতে কি
ভেবেই নাও না পান্তা ভাতে খাচ্ছি আমি ঘি
ঘরে আমার চাল বাড়ন্ত
তবু জানি আমি ছুঁ মন্ত্র
এক তালিতেই ঘরে ভর্তি চালের বস্তা ও ঘি।
দশ).
বলে, ধরণীর সেরা জীব যদিও মানুষ
তবু দেখি নেই তাদের কোন মান হুঁশ
স্বার্থ লোভে তারা
হয়ে যে দিশেহারা
পাপ পুণ্য কেঁচে করে একসাথে গন্ডুষ।
এগারো).
আমায় দেখে হাসছো যারা বলি তাদের শোনো
আমার বয়স মাত্র কুড়ি আসেনি তো যৌবনও
এটা আমার একটা অসুখ
মনে যে নেই তাই তো সুখ
দুঃখ পাই এমন কথা কেউ বলো না কক্ষনো।
বারো).
ঘরেই যে আছে আমার বুড়ি
একেবারে যেন মিছরির ছুরি,
আসতে যেতে
দিনে ও রাতে
কাটে সে আমাকে সরাসরি।
তেরো).
সব লোক দেখানো ঝাড়ু দেওয়া
স্ট্যাটাস দিয়ে মন কেড়ে নেওয়া
ধন্য তোমরা বাবু সমাজ
মনকে সাফ করো আজ
সহজে দেশ বদলে যাবে দেওয়া।
চোদ্দ).
এলো যেই মহামারী, জীবনটা ঘেঁটে ঘ
চা-দোকান,মেলা-মেশা সব কিছু বন্ধ
ঘরে বসে একা একা
বই পড়া, টি-ভি দেখা
ভাল আর কত লাগে, আছে তাতে সন্দ?
পনেরো).
বই-মেলায় যাবে নাকি আর?
সেখানে ঘোরে পকেটমার
রূপা দত্ত নাম তার
অভিনয় কারবার
কেন যে এ’অভিপ্রায় হল তার?
ষোল).
না জেনে সব জান্তা ভাব, আঁতেল বলে তাকে
সে-ই সর্বদা কথার প্যাঁচে অন্যকে বশে রাখে
হাব-ভাব তার ষোল আনা
হোক জানা বা না জানা
যেন সে জ্ঞানের উচ্চ মার্গে সর্বদা বসে থাকে।
সতেরো).
কবি যদি হয় খুব নামী
যা বলবে তা হবে দামী
বিচার না করে
নাম-মোহে পড়ে
মানতে পারি না আমি।
আঠারো).
ঘুষ খাওয়া ঘুষ দেওয়া যদি হয় নীতি
জানি না যে এদেশের কি যে হবে গতি?
ঘুষ খাবে ঘুষ দেবে
কার যে কি ক্ষতি হবে?
ক্ষতি হবে জনতার,এটা এক বড় দুর্নীতি।
উনিশ).
স্বার্থ লোভে ঘুলিয়ে তোলে মনের আশা
মনের ভিতর আছে যে এক ঘুঘুর বাসা
সুখের খোঁজে অসুখ ডেকে
গোপন অসুখটা ঢেকে রেখে
আমরা সবাই সত্যি কি ভাই আছি খাসা?
কুড়ি).
গাছে কাঠাল গোঁফে তেল
কচু গাছে আজ হচ্ছে বেল
কী কান্ড !
আন্ ভান্ড
গাছের গোড়ায় দেব তেল।
একুশ).
দাঁড়িয়ে ছিলো পথের মোড়ে
গঞ্জিকা টেনে নেশার ঘোরে
বাবা এসে
দেখে শেষে
সম্বিত ফেরালো একটি চড়ে।
বাইশ).
ঠেলার নাম যে বাবাজি
না ঠেললে আর খাবা কি
সংসার
ছাড়বার
মনে ইচ্ছে তার আছে কি?
তেইশ).
বেশ তো ছিলাম একলা মনে
দুখের এই জীবন সন্ধিক্ষণে
তুমি কাছে এলে
বুকে টেনে নিলে
প্রেমে পড়লাম আমি মনে মনে।
চব্বিশ).
ধরি মাছ না ছুঁই পানি
এটাই তোর স্বভাব জানি
তবু আসি
ভালবাসি
মোহ বশে সেটাও মানি।
পঁচিশ).
গোপনে আমার প্রিয়ার সাথে
লুকিয়ে দেখা করে সে রাতে
আকাশের ওই চাঁদ
এই জীবনটা বরবাদ
যদি তাকে ধরতে পেতাম হাতে।