হেথাও তো পশে সূর্যকর ।
ঘোর ঝটিকার রাতে দারুণ অশনিপাতে
বিদীরিল যে গিরিশিখর —
বিশাল পর্বত কেটে , পাষাণহৃদয় ফেটে ,
প্রকাশিল যে ঘোর গহ্বর —
প্রভাতে পুলকে ভাসি বহিয়া নবীন হাসি ,
হেথাও তো পশে সূর্যকর !
দুয়ারেতে উঁকি মেরে ফিরে তো যায় না সে রে ,
শিহরি উঠে না আশঙ্কায় ,
ভাঙা পাষাণের বুকে খেলা করে কোন্ সুখে
হেসে আসে , হেসে চলে যায় ।
হেরো হেরো হায় হায় , যত প্রতিদিন যায় —
কে গাঁথিয়া দেয় তৃণজাল ।
লতাগুলি লতাইয়া বাহুগুলি বিথাইয়া
ঢেকে ফেলে বিদীর্ণ কঙ্কাল ।
বজ্রদগ্ধ অতীতের নিরাশার অতিথের
ঘোর স্তব্ধ সমাধি – আবাস ,
ফুল এসে , পাতা এসে কেড়ে নেয় হেসে হেসে ,
অন্ধকারে করে পরিহাস ।
এরা সব কোথা ছিল , কেই বা সংবাদ দিল ,
গৃহহারা আনন্দের দল —
বিশ্বে তিল শূন্য হলে অনাহূত আসে চলে ,
বাসা বাঁধে করি কোলাহল ।
আনে হাসি , আনে গান , আনে রে নূতন প্রাণ ,
সঙ্গে করে আনে রবিকর —
অশোক শিশুর প্রায় এত হাসে এত গায়
কাঁদিতে দেয় না অবসর ।
বিষাদ বিশালকায়া ফেলেছে আঁধার ছায়া ,
তারে এরা করে না তো ভয় —
চারি দিক হতে তারে ছোটো ছোটো হাসি মারে ,
অবশেষে করে পরাজয় ।
এই যে রে মরুস্থল , দাবদগ্ধ ধরাতল ,
এইখানে ছিল ‘পুরাতন’ —
একদিন ছিল তার শ্যামল যৌবনভার ,
ছিল তার দক্ষিণপবন ।
যদি রে সে চলে গেল , সঙ্গে যদি নিয়ে গেল
গীত গান হাসি ফুল ফল —
শুষ্ক স্মৃতি কেন মিছে রেখে তবে গেল পিছে ,
শুষ্ক শাখা শুষ্ক ফুলদল ।
সে কি চায় শুষ্ক বনে গাহিবে বিহঙ্গগণে
আগে তারা গাহিত যেমন।
আগেকার মতো করে স্নেহে তার নাম ধরে
উচ্ছ্বসিবে বসন্তপবন ?
নহে নহে , সে কি হয় ! সংসার জীবনময় ,
নাহি হেথা মরণের স্থান ।
আয় রে , নূতন , আয় , সঙ্গে করে নিয়ে আয় ,
তোর সুখ , তোর হাসি গান ।
ফোটা নব ফুলচয় , ওঠা নব কিশলয় ,
নবীন বসন্ত আয় নিয়ে ।
যে যায় সে চলে যাক , সব তার নিয়ে যাক ,
নাম তার যাক মুছে দিয়ে ।
এ কি ঢেউ – খেলা হায় , এক আসে , আর যায় ,
কাঁদিতে কাঁদিতে আসে হাসি ,
বিলাপের শেষ তান না হইতে অবসান
কোথা হতে বেজে ওঠে বাঁশি ।
আয় রে কাঁদিয়া লই শুকাবে দু – দিন বই
এ পবিত্র অশ্রুবারিধারা ।
সংসারে ফিরিব ভুলি , ছোটো ছোটো সুখগুলি ,
রচি দিবে আনন্দের কারা ।
না রে , করিব না শোক , এসেছে নূতন লোক ,
তারে কে করিবে অবহেলা ।
সেও চলে যাবে কবে , গীত গান সাঙ্গ হবে ,
ফুরাইবে দু – দিনের খেলা ।