Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » নুন আনতে পান্তা ফুরোয় || Samarpita Raha

নুন আনতে পান্তা ফুরোয় || Samarpita Raha

সুজনবাবু হলেন প্রাইমারি স্কুলের মাস্টার।ময়না হলেন সুজনবাবুর স্ত্রী।
বড়ছেলে ‘কমল’ উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দেবে আর ছোটটি ‘অমল’ বেশ ছোট ,তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্র।

কোনো রকমে টেনেটুনে সংসার চালায় ময়না।আগে প্রাইমারি স্কুলের বেতন ছিল সামান্য।বাড়িতে কিছু ছাত্র ছাত্রী পড়ত।তারা সবাই ছিল দুঃস্হ পরিবারের।তাদের পরিবারে দৈনন্দিন খাওয়ার জোটে কিনা সন্দেহ।ইচ্ছা হলে গাছের সবজি দিয়ে গুরুদক্ষিনা মিলত।
কমল পড়তে বসলেই ভাই অমল নানান প্রশ্ন ক‍রে দাদাকে ব‍্যস্ত করে তুলতো।
এই দাদা শুনছিস??
“মধ্যবিত্ত পরিবার “—-দিয়ে রচনা লিখে দিবি।
কমল বলে লেখ নিজে,এ তো আমাদের জীবন।
না দাদা তুই বলে দে আমি লিখি।

কমল বলে মধ‍্যবিত্ত মানে হল-” স্বপ্নখুনি”।প্রতিনিয়ত হাজার হাজার স্বপ্নকে খুন করতে হয় তাদের—যুদ্ধ করে বাঁচতে হয়—
অনেক ইচ্ছে থাকে—- সেগুলো পূরণ করতে পারেনা—-কান্না চেপে হাসতে হয়—-।
অমল বলে দাদা তুই কত জানিস রে??

দাদা বলে পড়াশুনা করে বড় হ ,তুই ও অনেক কিছু জানবি।
এই দেখ আমরা মধ্যবিত্ত— বিজ্ঞান নিয়ে পড়ার ইচ্ছে ছিল—-তারপর ডাক্তার হবার—-আমার বাবার টাকা থাকলে ঠিক পড়তাম।

দুই ভায়ের গল্প শুনে সুজনবাবুর একটু কষ্ট হয়-।
বাবা বলে ভায়ের সাথে এত কথা বললে পড়বি কখন??
সামনেই তো পরীক্ষা মন দিয়ে পড়??সবাইকে বিজ্ঞান নিয়ে পড়তেই হবে এর কোনো কারণ আছে কি??
কমল বাবার টিপ্পনি কথা ভালো লাগে নি।এরপর পরীক্ষা হয়।প্রথম বিভাগে কলা বিভাগে পাশ ও করে।তারপর”ল”তে ভর্তি হয় কোলকাতায়।

মেসে একটা ঘরে চারজন থাকে।তাও খাবার নিয়ে হাজার টাকা লাগে।তারপর কলেজের মাহিনা।
কলেজে বেশ কয়েকজন বন্ধু হয়।ওরা সবাই মিলে বেশ কয়েকটি টিউটোরিয়ালে পড়ানোর ব‍্যবস্হা করে দেয়।তিনটে টিউটোরিয়ালে পড়িয়ে সাড়ে চার হাজার টাকা পায়।
এত টাকা কমলের কাছে স্বপ্ন।ও টাকা দিয়ে পড়ার বই কেনে। একদিন বন্ধুদের ফুচকা পার্টি দেয়।এর বেশী সামর্থ্য ও নেই।

কলেজের কাছাকাছি একটা মেস খোঁজার চেষ্টা করছে—টিউটোরিয়াল সব কলেজের কাছেই—-কলেজ চারটেই ছুটি হলে—- টিউটোরিয়াল খোলে ছটায়।

টিউটোরিয়ালের কাছে একটা মাঠে বসে—- মশার কামড় খেতে খেতে—- এক ঠোঙা মুড়ি খেতে খেতে পড়াশোনা করে।
মনে মনে ভাবে এখানে ঘর ভাড়া বেশি।যেখানে থাকে প্রায় দু ঘন্টা হেঁটে লাগে।সামনের দুই তিন মাস টাকা জমিয়ে একটা সাইকেল কিনে নেবে।

এই টিউটোরিয়ালের “গজাদার “ধাক্কায় ঘুমটা ভাঙে।তারপর বই গুছিয়ে টিউটোরিয়ালে ঢোকে।
গজাদা বলে তোর সমস্যা কি খুলে বল??
না গজাদা আমার সমস্যা নেই।
তুমি টিউটোরিয়ালে না পড়াতে দিলে আমি মরে যাব।
আরে তোর সমস্ত কথা বল?
তারপর সমস্যা সব শুনে এই টিউটোরিয়ালে থাকতে দেয়।বিনা টাকায় থাকবে।শুধু ঘর বাড়ি বাথরুম পরিষ্কার রাখতে হবে।আর প্রতিদিন ছটায় টিউটোরিয়াল খুলতে হবে।খাবারটা নিজের ব‍্যবস্হা করতে হবে।যে মিনি গ‍্যাস আছে তাতে রান্না করতে পারে।তবে গ‌্যাস ফুরিয়ে গেলে নিজেকেই টাকা দিয়ে ভরাতে হবে।কিন্তু টিউটোরিয়ালে চা পাতা কিনে দেওয়া হবে।ঐ গ‍্যাসের জন্য মাসে ৫০টাকা দেওয়া হবে।
কমল বলে আমার এ মাসে বাসন কেনা হবে না।বই কিনেছি।
গজাদা বলে বাড়ি থেকে কাল বাসন এনে দেবে।
কমল আজ খুব খুশি।
রাত দশটার পর পড়িয়ে কমল বের হয় মেসের দিকে।
গজাদা বলে আয় আমার সাইকেলে বোস—গজাদা বাড়িতে নেমে বলে—- সাইকেল চালিয়ে মেসে যা—-কাল জিনিসপত্র আনবি তো—সাইকেলটা রাখ—-মেসের চাবিটা নিয়ে কমল মহানন্দে সাইসাই করে সাইকেল চেপে মেসে যায়।

টাকা পয়সা মিটিয়ে পরদিন সকালে মেসে আসে।
দুটি ঘর,একটা ছোট কিচেন ,বাথরুম , পায়খানা ,ঘেরা ছাদ ।

সারা বাড়ি পরিস্কার করে একটা খাটিয়াতে চাদর পেতে টানটান ঘুম।কতদিন যে ভালো করে ঘুমায় নি ।ঠিক চারটে নাগাদ ফোন গজাদার।
কলেজ ছুটি হয়েছে? সাইকেল নিয়ে আমাকে নিয়ে যা।
হ‍্যাঁ আসছি গজাদা।
সাইকেল নিয়ে গজাদাকে আনতে যাওয়ার পথে পাউরুটি কেনে।বৌদির কি আপ্রায়ণ।পরোটা,তরকারি ,চা খেতে দেয়।
বৌদি বলে কমল তুমি বড্ড উপকার করলে।তোমার গজাদাকে প্রতিদিন কোচিং করে বাড়ি এসে খেয়ে শুতে যেতে হতো।
কমল বলে আরে বৌদি আমি গজাদার ঋণ কখনো শোধ করতে পারব না।
চলতে থাকে কমলের সুন্দর জীবন—এ মাসে একটা সাইকেল কিনবে কমল—তাহলে কলেজ যেতে—গজাদার বাড়ি যেতে— কোনো অসুবিধা নেই।
হঠাৎ মার ফোন বাবা পুকুরে স্নান করতে গিয়ে মারা গেছে—তিনদিনে কাজ মিটিয়ে ফিরে আসা—এরপর সংসারের হাল মাথায় এসে পড়ে।

মাকে বলে,ভেব না আমি আছিতো।
কমলের শুধু মঙ্গলবার কোচিং নেই।ঐ দিন আর রবিবারের বিকেলে কেউ পড়ে তাহলে বাড়তি আয় হবে।
বন্ধুদের বলে ভাই একটা টিউশনি খুঁজে দে।কমলদা হঠাৎ বলে একটু সময় বার করে আমার মেয়েকে পড়া।কমল বলে মঙ্গলবার আর রবিবার পড়াতে পারি।
কমল জিজ্ঞেস করে তোমার মেয়ে কোন ক্লাসে পড়ে।?
গজাদা বলে একাদশ ক্লাসে পড়ে।তোর যা বিষয় ছিল ওর ও তাই।এইভাবে আরও তিন বছর কাটে।কমলের সাইকেল কেনা আর হয় না।এই হল মধ‍্যবিত্তদের জীবনের কথা।

” ল” পাশের পর প্রাকটিস শুরু করেছে।টিউটোরিয়ালে ও পড়ায়।
গজাদার মেয়ে ও “ল”পড়ছে।
গজাদা বলে মেয়েকে “ল”তেও পড়াতে।ভালো হয়েছে কয়েকমাস পরে সাইকেল নয় কমল ভাবে টাকা জমিয়ে স্কুটি কিনবে।

ভাই ও মাধ্যমিক দেবে।একদিন মা নালিশ করে জানিস তোর ভাই আর্ধেক দিন স্কুল যায় না।
ফোনে ভাইকে বলে কেন রে স্কুল যাস না??আমতা আমতা করে বলে সামনে পরীক্ষা,দু মাইল হাঁটলে তারপর স্কুল।
কমল বলে—সে তো ভাই আমিও যেতাম।
ভাই বলে—না রে দাদা —জুতার তলায় ছেঁড়া —হাঁটতে গেলে পা কেটে যায়।
তোকে দাদা মধ‍্যবিত্ত পরিবারের রচনা লিখে দিতে বলেছিলাম এখন আমি নিম্নবিত্ত পরিবারের রচনা লিখতে পারি।

কমল ফোনটা রেখে বেথুয়াডুরি গিয়ে একটা সাইকেল কিনে দিয়ে আসে।ভাইকে বলে “ল”পরীক্ষায় প্রথম হয়ে সোনার মেডেল পেয়েছিলাম।সেটা বেচে তোকে সাইকেলটা কিনে দিলাম।তুই ভাই আমার মেডেল।

হ‍্যাঁ বাইক চড়ে এখন কমল ও কমলের বৌ কোর্ট যায়—বিয়েতে জামাইকে বাহনটা যৌতুক হিসেবে গজাদা দিয়েছে।

মা মারা যাবার পর কমল বেথুয়াডুরির বাড়ি ও জমি এক প্রোমোটার কে বেচে দিয়ে কোলকাতায় দুটি ফ্ল্যাট কিনেছে।ভাই ও কোলকাতায় “ল”পড়ছে।

ভাই বলে দাদা গাড়ি করে কলেজ যাওয়া,কোলকাতার বুকে ফ্ল্যাট কেনা,মুদীর দোকানে মাসকাবারির জিনিস না কিনে শপিংমলে জিনিস কেনাকে কি উচ্চবিত্ত বলে??
দাদা বলে মধ্যবিত্ত থাকায় ভালো।সিঁড়ি দিয়ে আস্তে উপরে উঠলে পড়ে যাবার ভয় থাকে না।
তুইতো জানিস কত কষ্ট করে আমি লেখাপড়া শিখেছি ও তোকেও পড়িয়েছি।দেখিস ভেসে যাস না।নানান হায়না ওত পেতে আছে।আজ আমি আমার স্বপ্ন স্বার্থক করতে পারিনি।কিন্তু চেষ্টা করব পরবর্তী জেনারেশন যেন কষ্ট না পায়।অনেক পড়াশোনা কর,ভালো মানুষ হোস।তাহলে মা বাবার আত্মার শান্তি পাবে।

জানিস ভাই আজ একটা দিনের কথা খুব মনে পড়ছে।
কি কথা বল না দাদা??
বাড়িতে খাবার বলতে ছিল পান্তা।ঐ দুই ঘন্টা হাঁটার পর স্কুল।কিছুতেই খালি পান্তা গিলতে পারছিলাম না।মা পয়সা দিল নুন কিনে আনতে।লবন কিনে এসে দেখি,ভাত নেই ।তোর ক্ষিদে পেয়েছিল খেয়ে নিয়েছিস।

ভাই বলে তারপর তুই স্কুল গিয়েছিলি?
কমল বলে না রে ভাই।ক্ষিদেতে পেট ব‍্যথা করছিল।
এই ছোট্ট ছোট্ট পায়ে চলতে চলতে ঠিক পৌঁছে যাব।
এই মানসিকতায় বড় হয়েছিলাম।
আর আমার জীবনের ভগবান হলো গজাদা।উনিএত সাহায্য করেছিলেন বলে আমি ও তুই ভাই সমাজের বুকে মাথা তুলে দাঁড়াতে পেরেছি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress