Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » নীলবসনা সুন্দরী || Panchkari Dey » Page 50

নীলবসনা সুন্দরী || Panchkari Dey

অরিন্দম বাবু বলিলেন, “বল কি, এমন লোক সে! তাহা হইলে ত, এইবার তোমার স্বর্ণসুযোগ উপস্থিত-ইহার জন্য আবার দুঃখিত হইতে আছে? যশস্বী হইবার ত এই একমাত্র পন্থা। ইহা ত্যাগ করা কদাচ বুদ্ধিমানের কাজ নহে। গোয়েন্দাগিরি করিয়া বাহাদুরী লইবার যোগ্য প্রতিদ্বন্দ্বী আজকাল দুর্ল্লভ। আগেকার মত কি আর সে রকম চতুর, সে রকম সুদক্ষ চোর ডাকাত, খুনী পাওয়া যায় হে? তা’ পাওয়া যায় না। এখনকার অপরাধীরা ও সব সাদা সিধে রকমের, নিতান্ত সরল প্রকৃতির; তাহাদের অপরাধগুলাও তেমনি সরল এবং নির্জ্জীব-তাহার মধ্যে দুরূহতা বা দুরাবগাহতার কিছুই পাইবে না। আজ-কালকার চোর ঘটী বাটী চুরি করিয়াই একটা মস্ত চোর; খুনী রক্তপাতের উত্তেজনা নিজের বুকের মধ্যে নিজেই সংবরণ করিতে না পারিয়া আত্মপ্রকাশ করিয়া ফেলে। তাহাদিগকে ধরিবার জন্য বিশেষ কোন কষ্ট স্বীকারের আবশ্যক দেখি না। কাহাকেও ধরিতে হইলে, সটান্ একখানা গাড়ী ভাড়া কর-সটান্ তাহার বাড়ীতে গিয়া হাতকড়ি লাগাইয়া দাও-ব্যস, আসামী গ্রেপ্তার হইয়া গেল। ইহাতে চিন্তাই বা কি এত, উদ্বেগেই বা কি এত? তুমি যে ইহার মধ্যে এমন একজন সুযোগ্য প্রতিদ্বন্দ্বী পাইয়াছ, শুনিয়া সুখী হইলাম। তোমার অপরাধীর অপরাধটা কি রকম আমাকে বল দেখি; তাহা হইলে অনেকটা বুঝিতে পারিব, তিনি কিরূপ উচ্চদরের লোক।”
দেবেন্দ্রবিজয় বলিলেন, “তিনি খুব উচ্চদরের লোক, সন্দেহ নাই। পথিমধ্যে একজন স্ত্রীলোককে অতি অদ্ভুত উপায়ে হত্যা করিয়া একেবারে অন্তর্হিত হইয়াছেন।”
অরিন্দম বাবু বলিলেন-পর পর তিনবার তিন রকমস্বরে বলিলেন, ‘বটে! বটে! বটে!’ যেন তিনটি লোকের মুখ হইতে তিনটা ‘বটে’ বাহির হইল। ক্ষণেক চিন্তার পর বলিলেন, “খুনটা হয়েছে কোথায়?”
দেবেন্দ্রবিজয় বলিলেন, “মেহেদী-বাগানের একটা গলি মধ্যে।”
অরিন্দম বাবু বলিলেন, “ওঃ! আমি এ কথা শচীন্দ্রের মুখে একবার শুনিয়াছিলাম বটে। তা’ ছাড়া একখানা খবরের কাগজেও এই খুনের বিষয় একটু লিখিয়াছিল। সে খুনটার তুমি কি এখনও কোন কিনারা করিতে পার নাই? কি আশ্চর্য্য! তোমার হাতে কেস্ পড়ায় হত্যাকারী যখন এখনও নিরুদ্দেশ-তখন অবশ্যই সে একজন যোগ্য লোক বটে! ব্যাপারটা সব খুলিয়া আমাকে বল দেখি; দেখি আমার ক্ষুদ্র বুদ্ধিতে যদি তোমার কিছু সাহায্য করিতে পারি। আচ্ছা, পরে তোমার শুনিব। (নিম্নস্বরে) তার আগে পা টিপিয়া টিপিয়া গিয়া, ধাঁ করিয়া এই দরজা টা খুলিয়া ফেল দেখি-একটা বড় মজা দেখিতে পাইবে। নিশ্চয়ই একজন কেহ দরজার পাশে দাঁড়াইয়া আমাদের পরামর্শ শুনিবার চেষ্টায় আছে। আমি এখান থেকে তাহার নিঃশ্বাস-প্রশ্বাসের শব্দ স্পষ্ট শুনিতে পাইতেছি।”
কবাট ভিতর হইতে ভেজান ছিল। দেবেন্দ্রবিজয় ধীরে ধীরে উঠিয়া গিয়া দ্রুতহস্তে কবাট খুলিয়া ফেলিলেন। চকিতে দেখিলেন, সম্মুখে দাঁড়াইয়া-রেবতী। দেখিয়া দেবেন্দ্রবিজয় খুব বিস্মিত হইলেন। অরিন্দম বাবু খুব একটা উচ্চহাস্য করিয়া উঠিলেন, এবং রেবতী খুব লজ্জিত হইয়া মাথার কাপড় টানিয়া পলাইবার পথ পাইলেন না।
অরিন্দম বাবু এখনও হাস্য সম্বরণ করিতে পারেন নাই। হাসিতে হাসিতে বলিলেন, “তাই ত’ দিদি যে আবার আমাদের উপরে ডিটেক্টিভগিরি করিতে আসিবে, তা’ আমি ভাবি নাই; যাহা হউক, খুব ধরা পড়িয়া গিয়াছে।” তাহার পর হাস্য সম্বরণ করিয়া, সুর বদ্লাইয়া বলিলেন, “দেখ্লে দাদা, পুরুষের হৃদয় হইতে স্ত্রীলোকের হৃদয় কত তফাৎ! আমি রোগে শয্যাশায়ী হইয়া পড়িয়াছি; তুমি পুরুষ মানুষ-মনে করিলেই এখানে আসিতে পার, তাই আসো না; কিন্তু দিদি আমাকে ভুলিতে পারে নাই-সংসারের শত কাজ-কর্ম্ম ফেলিয়াও তাড়াতাড়ি আমাকে দেখিতে আসিয়াছে।”
দেবেন্দ্রবিজয় বলিলেন, “আপনি আপনার দিদির কত উপকার করিয়াছেন!”
অরিন্দম বাবু বলিলেন, “দাদারই বা কি অনুপকার করিয়াছি?”
দেবেন্দ্রবিজয় বলিলেন, “আমার যে উপকার করিয়াছেন, তাহাতেও প্রকারান্তে আপনার দিদিরই উপকার করা হইয়াছে।”
অরিন্দম বাবু বলিলেন, “আর দিদির যে উপকার করিয়াছি, তাহাতে বুঝি প্রকারান্তে দাদার কোন উপকার করা হয় নাই? যাক্ ভাই, আর তর্কের প্রয়োজন নাই; এখন কাজের কথাই হউক।”
দেবেন্দ্রবিজয় মেহেদী-বাগানের খুনের মোকদ্দমা হাতে লওয়া অবধি যখন যাহা ঘটিয়াছে, যাহা তিনি করিয়াছেন, আদ্যোপান্ত অরিন্দম বাবুকে বেশ গুছাইয়া বলিতে লাগিলেন।
শুনিতে শুনিতে অরিন্দম বাবুর মুখভাব বদ্লাইয়া গেল; রোগের যন্ত্রণা তিনি একেবারে বিস্মৃত হইয়া গেলেন, অখণ্ড মনোযোগের সহিত শুনিয়া যাইতে লাগিলেন। কখন বা শুনিতে শুনিতে কি-এক তীব্র উত্তেজনায় দুই হস্তে শয্যাস্তরণ মুষ্টিবদ্ধ করিয়া উঠিবার উপক্রম করেন, আবার একান্তে তন্ময়ভাবে নীরবে শুনিতে থাকেন। পরমভক্ত বৈষ্ণব যেমন সুমধুর হরিনামের মধ্যে মগ্ন হইয়া যান, আমাদের অরিন্দম বাবুও দেবেন্দ্রবিজয়ের কাহিনীর মধ্যে তেমনি মগ্ন হইয়া গেলেন। কেবল এক-একবার তাঁহার মুখ হইতে বাহির হইতে লাগিল, ‘পূর্ব্বে যদি ইহা শুনিতাম’, ‘পূর্ব্বে যদি আমি খবর পাইতাম’, ‘তখন যদি আমি সেখানে উপস্থিত থাকিতাম! ‘ ইত্যাদি।
তাহার পর দেবেন্দ্রবিজয়ের কাহিনী শেষ হইলে তিনি অধিক উত্তেজনায় উভয় হস্তে হস্তাবমর্ষণ করিতে করিতে বলিয়া উঠিলেন, “বড় মজাই হইয়াছে-বিরাট ব্যাপার! একরূপ লুকোচুরি খেলাই আরম্ভ হইয়াছে-খেলা জমিয়াছে-এখন বুড়ি ছুঁইবার পালা। আরে দাদা, তুমি ত এ কেস্টা বুদ্ধিমানের মত পরিচালিত করিতেছ।”
হতাশ দেবেন্দ্রবিজয় বলিলেন, “আপনি উপহাস করিতেছেন-ইহাতে আমার নির্ব্বুদ্ধিতাই প্রকাশ পাইয়াছে।”
জিহ্বা ও তালুর সংযোগে একটা অব্যক্ত শব্দ করিয়া অরিন্দম বাবু বলিলেন, “নিশ্চয়ই না-তোমার কথা শুনিয়া এ বুড়ার বুকে আনন্দ ধরিতেছে না! এখন আমি বুঝিয়াছি, আমি মরিলেও আমার আসন অধিকার করিবার একজন যোগ্য লোক রাখিয়া যাইতে পারিব। আমার ইচ্ছা হইতেছে, একবার উঠিয়া, তোমার বুকে করিয়া নৃত্য করি।”
দেবেন্দ্রবিজয়ের মনে এখনও সন্দেহ যে, অরিন্দম বাবু তাঁহাকে উপহাস করিতেছেন। তিনি বলিলেন, “আপনি আমাকে উপহাসই করিতেছেন; আমি কিসে এতটা প্রশংসার যোগ্য-বুঝিতে পারিলাম না। হত্যাকারী এখনও ধরা পড়ে নাই; আমার এ কাজে যতটুকু যশঃ ছিল, বরং তাহা এখন যাবার দাখিলে পড়িয়াছে।”
বিশ্রী মুখভঙ্গি করিয়া অরিন্দম বাবু বলিলেন, “কিছু না-কিছু না-ব্যস্ত হইয়ো না-ইহাতে তোমার যশঃ শতগুণে বাড়িয়া যাইবে। আমার ত খুবই মনে হয়, তুমি এই কেস্টা বেশ ভাল রকমেই পরিচালিত করিয়া আসিতেছ; কিন্তু আরও ভাল রকম হওয়া দরকার ছিল। মনোযোগ থাকিলে খুবই ভাল পরিচালিত করা যাইতে পারিত। তোমার মুখে যেরূপ শুনিলাম, তাহাতে তোমার বুদ্ধি ও সাহসের যথেষ্ট পরিচয় পাওয়া যায়। কেবল একটু অভিজ্ঞতার অভাব, একটুতেই তুমি লাফাইয়া ওঠ, আবার একটুতেই একেবারে হতাশ হইয়া পড়। স্থিরসঙ্কল্প হওয়া চাই-একটা বিষয়ে স্থির লক্ষ্য চাই-এখনও তুমি অনেক ছেলেমানুষ-পাকাচুলের অবশ্যই একটা মূল্য আছে। যাহা হউক, তুমি ইহাতে কয়েকটা বিষয়ে বড় ভুল করিয়াছ; আমি তাহা তোমাকে এখন সরলভাবে বুঝাইয়া দিতেছি।”

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49 50 51 52 53 54 55 56 57 58 59 60 61 62 63 64 65 66

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *