নিশিথের অন্ধকার – 4
নিশীথ যে গেঞ্জির কারখানা কাজ করে তার মালিকের বড় মেয়ের বিয়ে ১৭ই জৈষ্ঠ। বিয়ে বাড়ি শ্যামবাজার। মালিকের বাড়ি আহিড়িটোলা। বিয়ে বাড়িতে তাদের দুজনকে
নিমন্ত্রণ করেছে যাওয়ার জন্য।
১৭ই জৈষ্ঠ দামী একটা শাড়ি কিনে নিয়ে, নিশীথ চন্দ্রনীকে নিয়ে বিয়ে বাড়িতে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হল। চন্দ্রানীর যাওয়ার ইচ্ছে ছিল না মোটেও। সে বলেছিল, তুমি একাই যাও না। আমাকে আবার কেন নিয়ে যাচ্ছো?
তোমার রূপ দেখাতে। বলে হিমাংশু তাকে বিদ্রুপ করে চোখ রাঙিয়ে ছিল।
চন্দ্রানী তার চোখ মুখ দেখে বুঝেছিল, এরপরও সে না যেতে চাইলে নিশীথ রুদ্র মূর্তি ধরবে। তাই সে আর কোন কথা না বাড়িয়ে, সেজেগুজে তার সঙ্গে বেরিয়ে ছিল শ্যামবাজার যাওয়ার জন্য।
সেখানে পৌঁছে দেখে বিরাট আয়োজন।
নিশীথ সেখানে পৌঁছে মালিকের সঙ্গে চন্দ্রানীর পরিচয় করিয়ে দিল। চন্দ্রানী হাতজোড় করে তাকে নমস্কার করল। তিনিও প্রতি নমস্কার করে, একটা দিকে নির্দেশ করে, তাদের সেখানে গিয়ে বসতে বললেন।
সেটা একটা হল ঘরের মতো। ছড়িয়ে ছিটিয়ে ঘরে টেবিল চেয়ার পাতা। একটা টেবিল ঘিরে চারটে করে চেয়ার। নিশীথ আর চন্দ্রানী একটা টেবিলে গিয়ে দু’টোে চেয়ার টেনে নিয়ে বসল। একটু পরে নিশীথ বলল, তুমি একটু বসো, আমি গিয়ে শাড়িটা দিয়ে আসি বিয়ের কনেকে।
চন্দ্রানী বলল, বেশ।
নিশীথ চলে যেতে, চন্দ্রানী ঘাড় ঘুরিয়ে, অন্য সব দিকে বসে থাকা লোকদের দেখতে লাগল। দেখতে দেখতে হঠাৎ একজনের দিকে চোখ পড়তেই চন্দ্রানী চমকে উঠল। আরে মলয়দা না !
সে নিজের চেয়ার ছেড়ে উঠে গিয়ে মলয়ের পাশে গিয়ে দাঁড়াল। মলয়ও তাকে দেখে চমকে উঠে বলল, চন্দ্রানী তুমি এখানে?
চন্দ্রানী হেসে বলল, আমারও তো একই প্রশ্ন।
নীলিমা তখন অন্দরে গেছে। ভিতরে গিয়ে মেয়ে মহলের সকলের সঙ্গে মেতে উঠেছে, মলয়কে এখানে একা বসিয়ে রেখে।
মলয় বলল, ইস কতদিন পরে দেখা তোমার সঙ্গে। চলো আমরা এই কোলাহল ছেড়ে একটু বাইরে কোথাযও গিয়ে কথা বলি।
চন্দ্রানী বলল, বেশ তাই চলো তবে।
ওরা দু’জনে বাইরে বেরিয়ে এলো। কথা বলতে বলতে সামনের দিকে এগোল। হাঁটতে হাঁটতে তাদের এতদিনকার জমানো কথা আর ফুরায় না। পথও ফুরায় না। হাজার বছর ধরে পথ হেঁটে চলে তারা পৃথিবীর পথে, নিশিথের অন্ধকার নীলিমা পেরিয়ে।