Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » নিভৃত বেদনা || Sukanta Gangopadhyay

নিভৃত বেদনা || Sukanta Gangopadhyay

অ্যাই মেরেছে গো, এ কী সব্বোনেশে কাণ্ড!

মহিলা কণ্ঠের চিলচিৎকারে ঘুরে তাকায় সুমন্ত। পরক্ষণেই বুঝতে পারে, কী মারাত্মক বিপদ ঘটে গিয়েছে তার! কোমরে আঁচল গোঁজা কাজের মেয়েটা হাতে ন্যাতা নিয়ে বড় বড় চোখ করে দাঁড়িয়ে আছে দরজায়। প্রাথমিক বিস্ময় কাটিয়ে ন্যাতা ফেলে মেয়েটা এবার এগিয়ে আসছে।

খোলা আলমারির দিকে পিঠ করে দাঁড়িয়ে আছে সুমন্ত। হাতে মুঠোর থেকে সামান্য বড় সাইজের কাঠের বাক্স।

কী ঝাড়লে দেখি? বিচ্ছিরিভাবে জানতে চায় মেয়েটা। ততক্ষণে হাতটা পিছনে করে নিয়েছে সুমন্ত।

লুকোচ্ছ কেন? দেখি না কী নিলে?

অপ্রস্তুত ভাব কাটানোর আপ্রাণ চেষ্টা করে সুমন্ত! বলে, কী উলটো পালটা বকছ! আমি চুরি করছি নাকি? ওরা আমাকে চাবি দিয়ে গিয়েছে…

চাবি দিয়ে গিয়েছে না ঘেঁচু! তোমাকে কতটা কী দিয়েছে, সব আমার জানা।

একথা বলতেই পারে মেয়েটা। কলকাতা শহরের কাজের মেয়েরা যে কী সাংঘাতিক, তা মোটামুটি শোনা আছে সুমন্তর। ঢিলেপড়া ব্যক্তিত্ব গুছিয়ে নিয়ে সুমন্ত বলে, তুমি তোমার কাজে যাও তো। সব ব্যাপারে নাক গলাতে এসো না।

কথা কানে তোলে না মেয়েটা। বলে যায়, ছিঃ ছিঃ, বউদির বাপের বাড়ির লোক হয়ে… যারা বিশ্বাস করে গোটা বাড়ি রেখে গেল তোমার জিম্মায়, তুমি কিনা তাদেরই আলমারি থেকে, আমি তো ভাবতাম, গ্রাম ঘরের ছেলেরা একটু বিশ্বাসী হয়…

কমেন্টটা আঁতে লাগে। ঝাঁঝ এসে যায় সুমন্তর গলায়, কে বলেছে তোমাকে বৈদ্যবাটি হচ্ছে গ্রাম? আর এলাকা তুলে একদম কথা বলবে না।

বেশ করব বলব। চেঁচিয়ে পাড়া মাথায় করব। পাবলিক এসে বেঁধে মারবে তোমাকে। সুমন্তর প্রায় হতবুদ্ধি অবস্থা। এ মেয়ের সঙ্গে তর্কে এঁটে ওঠা যাবে না। কাঠের বাক্সটা যদি এখন আলমারিতে রেখেও দেয়, বাচাল মেয়েটা নালিশ করবেই নন্দাকে।

কী ভাবছ? একেবারে অন্যরকম গলার স্বর। চমকে চোখ তোলে সুমন্ত। মেয়েটা মিটিমিটি হাসছে, চোখে-মুখে কীসের যেন অভিসন্ধি। দু’পা এগিয়ে এসে বলে, মালটা নিয়ে তোমার ঘরে যাও। আমি চা নিয়ে আসছি। বাক্সটা খুলে দেখতে হবে কী কী আছে। আমারও হিস্যা লাগবে কিন্তু।

খুলে যাওয়া আঁচলটা ফের কোমরে গুঁজে চলে গেল মেয়েটা। শুধু চলে গেল বলা ভুল হবে, সুমন্তর বাইশ বছর বয়সের সমস্ত রেপুটেশন আঁচলে বেঁধে নিয়ে চলে গেল।

পাল্লা খোলা আলমারিটা অবলা নারীর মতো দাঁড়িয়ে আছে, যার হৃদয়টা কি সুমন্তর হাতে? কী আছে এই বাক্সটায়? আলমারির পাল্লা ভেজিয়ে গেস্টরুমে এসে বসেছে সুমন্ত। নন্দারা এই ঘরটাই তার জন্য নির্দিষ্ট করে গিয়েছে। যদিও গোটা বাড়ির কোনও ঘরেই তালা দেয়নি। এটা এক ধরনের ভদ্রতা। এই সুভদ্র আচরণের জন্যই সুমন্ত এভাবে ফেঁসে গেল। বাবা বলেন, প্রত্যেক মানুষই জীবনে অন্তত একবার চরম ভুল করে। সেই গাঁটটা পেরোতে পারলেই নাকি আর ফিরে তাকাতে হয় না। এই কি সেই ভুল? সমস্যাটা সহজে সামলানো যাবে বলে মনে হচ্ছে না।

বয়সে সুমন্তর থেকে বছর তিন-চারেকের ছোট হলেও, কাজের মেয়েটা যে ভীষণ ধূর্ত, ইতিমধ্যেই তার প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে। শ্যামলা রং, তেল চকচকে চেহারা। মাথার চুলে, ভুরুতে বিউটি পার্লারের ছোঁওয়া। মেয়েটাকে কালই প্রথম দেখেছিল সুমন্ত। ঠিকে কাজ করে এ বাড়িতে। নন্দা মেয়েটাকে দেখিয়ে বলেছিল, বাইরের লোক বলতে একমাত্র একেই দরজা খুলে দিয়ো। এক বেলায় কাজ সেরে চলে যাবে।’

ঘর মুছতে মুছতে মেয়েটা তখন নিরীহ, ভীরু চাউনিতে মাপছিল সুমন্তকে। ওর অভিব্যক্তি চোখ এড়ায়নি নন্দার। খানিকটা হয়তো আশ্বস্ত করার জন্য বলেছিল, বুঝলি জবা, এই দাদা খুব লাজুক। ঠিকঠাক খাওয়া দাওয়া করছে কিনা লক্ষ রাখবি। তুই যখন আসবি, একবার অন্তত চা বা কফি করে দিবি দাদাকে। অন্য সময় কী করবে, কে জানে! আমি তো ফ্রিজে, রান্নাঘরের তাকে সব গুছিয়ে রেখে যাব।

জবা ভিজে বেড়ালের মতো মাথা হেলিয়ে ছিল। এখন সেই মেয়েটাই মওকা বুঝে বাঘিনি হয়ে উঠেছে!

ভুলটা কিন্তু ঠিক সুমন্তর নয়, সে অতি সাবধানী। হয়তো সেই কারণেই এভাবে ফেঁসে গেল! ঘণ্টাখানেক হয়েছে, নিজেদের গাড়িতে দিঘা বেড়াতে গেল নন্দা আর ওর বর। চারদিনের টুর। বাড়ি পাহারা দেবে সুমন্ত। দায়িত্বটা সে যেচে নেয়নি। এক প্রকার চাপিয়ে দিয়েছে নন্দা। যেমনটা বিয়ের আগে করত। আবদারের সঙ্গে অভিমানটা এত সুন্দর মেশাতে জানে নন্দা, এড়ানো বড় কঠিন হয়ে পড়ে। শুধু একবারই ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ সময়ে নন্দাকে এড়াতে সমর্থ হয়েছিল সুমন্ত। সে দিন অবশ্য নন্দা আবদার করেনি, জোর খাটিয়েছিল। সে সব এখন অতীত। নন্দা ফিরে এসেছে ওর আগের অভিব্যক্তিতে, যার ধার এখনও এতটুকু কমেনি। নয়তো কী করে সুমন্ত রাজি হয়ে গেল, যোধপুর পার্কের মতো অভিজাত এলাকার একটা গোটা বাড়ি পাহারা দিতে।

আবাল্য মফস্সলের ছেলে সে। যোধপুর পার্ক এলাকাটা কোথায়, তাই জানত না! কালই প্রথম এসেছিল ঠিকানা খুঁজে নন্দাদের বাড়ি। এসেই এরকম গুরুদায়িত্ব! বৈদ্যবাটিতে নন্দার বাপের বাড়ি। সুমন্তদের বাড়ির চারটে বাড়ি পরেই। নন্দার মা যখন শুনলেন সুমন্ত কলকাতায় যাচ্ছে, এবার থেকে ওখানেই থাকবে, একটা কাজ চাপিয়ে দিলেন কাঁধে। নন্দার ঠিকানা আর একটা ঝোলামতো ব্যাগ দিয়ে বললেন, নন্দা ফোন করলেই

তোর কথা জিজ্ঞেস করে। মাঝে মধ্যে যাস ওদের বাড়ি। আর এই ব্যাগটা তাড়াতাড়ি দিয়ে দিস, খাবার জিনিস আছে।

ফোনে খোঁজ নেওয়ার ব্যাপারটা নির্জলা মিথ্যে। বিয়ের পর দু’বার নন্দার মুখোমুখি হয়েছে সুমন্ত। দু’বারই জানত, যে আচরণ সে নন্দার প্রতি করেছে, সম্পর্কটা ঠিক থাকার কথা নয়। কাকিমা মেয়ের বাড়ি জিনিস পাঠাবেন বলে ছলনার আশ্রয় নিয়েছিলেন। কিছু মনে করেনি সুমন্ত। তারও একবার নন্দাকে দেখার ইচ্ছে হয়েছিল। ন্যায্য কারণে সে যদি নন্দার সামনে দাঁড়ায়, তা হলে তো এড়াতে পারবে না।

কাল যাদবপুর ইউনিভার্সিটিতে ভরতি হয়েছে সুমন্ত। মাস্টার্স করবে ইংলিশে। থাকবে যাদবপুরে এক আত্মীয়ের বাড়ি। সেখানে না গিয়ে প্রথমেই চলে আসে যোধপুর পার্কে।

নন্দার অ্যাটিটিউড যেমনটা হবে ভেবেছিল, এখানে এসে দেখে তার উলটো। কাঁপা

হাতে বেল টিপেছিল সুমন্ত। দরজা খোলার পর নন্দার চোখে-মুখে সে কী অপূর্ব উচ্ছ্বাস। খপ করে সুমন্তর হাত ধরে টেনে নিয়ে এল ভিতরে। অরিন্দমদা, মানে নন্দার বর বসেছিল ড্রয়িংরুমের সোফায়। নন্দা বলল, এই দেখো, কে এসেছে! সুমন্ত, আমার বন্ধু। এক পাড়ায়…

অরিন্দমদার মুখে এক গাল হাসি। বলে, আরে বাবা, অত আলাপ করাতে হবে না। বিয়ের দিন কত গল্প হল।

তোমার মনে আছে! নন্দার গলায় বিস্ময় মেশানো প্রশস্তি। দু’জনেই পাকা অভিনেতা! সুমন্তর একটা হাত নন্দার হেফাজতে! কাঁধে নিজের ব্যাগের মধ্যে কাকিমার পাঠানো ঝোলা। পর্যায়ক্রমে স্বামী-স্ত্রীকে অবাক চোখে দেখে যাচ্ছিল সুমন্ত। ওদের বিয়ের অনুষ্ঠানে সুমন্ত যায়ইনি!

সোফা ছেড়ে উঠতে উঠতে অরিন্দমদা বললেন, যাক, আমাদের প্রবলেম তা হলে

সল। চারটে দিন সুমন্ত এ বাড়িতেই থাকবে। ট্রিপটা ক্যানসেল হল না আমাদের। প্রতিরোধের কোনও সুযোগ না দিয়ে স্বামী-স্ত্রী ঠিক করে ফেলল, এই ক’টা দিন বাড়ির কেয়ারটেকার সুমন্ত। অন্য কার ওপর যেন দায়িত্বটা দেওয়া হয়েছিল, সে ডুবিয়েছে। সেই মুহূর্তে ভীষণ রাগ হয়েছিল নন্দার ওপর। কলকাতায় এসে কেমন ওপর চালাক হয়ে গিয়েছে। স্বার্থের কারণে সব অভিমান ধুয়ে জল! জোর করে ঝামেলা এড়াতে পারত সুমন্ত। কিন্তু তারও যেন একটু লোভ হচ্ছিল পরখ করতে, কত সুখে আছে নন্দা? ড্রয়িংরুমে বসেই টের পেয়েছিল এ বাড়ির বৈভব। বুক ছমছম করছিল ভেবে, নন্দার মতো সৌভাগ্যবতীকে কোন দুঃসাহসে কোনও দুর্বল মুহূর্তে নিজের জীবনসঙ্গিনী করার কথা ভেবেছিল সে। অবশ্য এটাও মানতে হবে, সুমন্তর মতো বিবেচক প্রেমিক খুব কম দেখা যায়। সমবয়স্ক প্রেমিকার সুপাত্র জোগাড় হতেই সে সরে আসে। বিয়ের পর এই তিনমাস পুরোপুরি আড়ালে ছিল। কালই প্রথম দেখা করতে আসা, আশঙ্কা ছিল অনেক। সুমন্তকে দেখেই হয়তো তাড়িয়ে দেবে নন্দা অথবা নিভৃতে কাঁদবে। কিন্তু কোথায় কী, কে যেন ডাস্টার দিয়ে নন্দার মুখ থেকে মুছে দিয়েছে বিগত প্রেমের স্মৃতি। আর্থিক স্বচ্ছলতা নাকি অরিন্দমদার ভালবাসা এর জন্য দায়ী, সেটা জানতেই ক’দিন নন্দার সুখের ভুল-ভুলাইয়ার মধ্যে থাকতে

চেয়েছিল সুমন্ত। এখন নিজেই পথ হারিয়ে ফেলেছে। ভুল তার একটাই। নন্দারা বেরিয়ে যাওয়ার পর সে ঢুকেছিল নন্দার লিভিংরুমে। এসি বসানো ঘর, ঝাঁ চকচকে সব ফার্নিচার। আলমারিটা দেখে মনে হয়েছিল, চাবি দিয়েছে তো? হ্যান্ডেলে যেই হাত দিয়েছে, ঝপ করে নেমে গেল। নির্ঘাত ভুলে গেছে লক করতে। খুলে যখন গিয়েছেই, দেখা যাক আলমারির অন্দরমহলের প্রাচুর্য। নেহাতই নিষ্পাপ কৌতূহল। পাল্লা খোলার পর কাপড় জামার আড়াল থেকে উঁকি মারছিল কারুকাজ করা বাক্সটা। এমনিই জাস্ট হাতে নিয়েছিল সুমন্ত। তখনই বজ্রপাত, জবার সেই পিলে চমকে দেওয়া চিৎকার!

কাঠের বাক্সটা এখন বিছানার মাঝখানে। ওটার দিকে তাকিয়ে ভেতরে কী কী থাকতে পারে তার একটা সম্ভাব্য তালিকা করছে সুমন্ত। জিনিসটার আয়তন খুব কম, তালিকা লম্বা হওয়ার কথা নয়।

হিরে থাকতে পারে, জানো, জবার গলা। ফের চমকায় সুমন্ত, তবে আগের মতো নয়। এখন খানিকটা অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে। মেয়েটা কি মনের কথাও পড়তে পারে?

ট্রে-তে চা ছাড়াও আরও কিছু প্লেটে করে নিয়ে এসেছে জবা। বিছানায় ট্রে নামিয়ে বলল, ব্রেকফাস্টও বানিয়ে নিলাম। হেভি খিদে পেয়ে গিয়েছিল। খেতে খেতে ধীরে সুস্থে বাক্সটা খোলা যাবে।

বিছানায় উঠে গুছিয়ে বসল জবা। বলল, নাও, খোলো তাড়াতাড়ি।

কী সাবলীল ভঙ্গি! এত বড় একটা অপরাধ ঘটতে চলেছে, কোনও তাপ-উত্তাপ নেই। মুখে একটা স্যান্ডউইচ পুরে জবা ফের বলে, কী হল, ভ্যাবলার মতো তাকিয়ে রইলে যে। এই তো যন্তর এনেছি।

ট্রে দেখায় জবা। সেখানে সবজি কাটার ছুরি। নিজেকে স্টেডি

মেয়েটা বড্ড পেয়ে বসছে। চায়ের কাপ তুলে চুমুক দিয়ে সুমন্ত বলে

আচ্ছা, ওটা নিয়ে বাড়ি যাবে ভেবেছ?

করার চেষ্টা করে সুমন্ত, , বাক্সটা আমি খুলব না।

না, কোথাও যাব না। নন্দা ফিরলে যা ঘটেছে, সব বলব। কী বলবে?

আলমারিতে চাবি দেওয়া ছিল না হ্যান্ডেলে হাত দিতেই…

কথা কেড়ে নিয়ে জবা বলে, খুলে গেল। তখন যদি বউদি বলে, হ্যান্ডেলে হাত দিয়েছিলে কেন? যদি বা দিলেই, আলমারি খুলে বাক্সটা বার করার কী দরকার ছিল?

অকাট্য যুক্তি। মাথা নামিয়ে চা খেয়ে যাচ্ছে সুমন্ত। মেয়েটার বুদ্ধিশুদ্ধি বেশ ভালই। বেচারির কপাল খারাপ, ভুল পরিবেশে বড় হয়েছে।

কী ভাবছ বলো তো এত? খোলো না তাড়াতাড়ি। আমি দেখেছি, বউদি বেরোনোর সময় সোনার মফ চেনটা খুলে রাখল। মনে হয়, এটাতেই রেখেছে। আরও অনেক কিছুই আছে। বউদির প্রচুর গয়না। এসব পরে আজকাল কেউ বাইরে বেরোয় না।

হায় কপাল। কার মুখে কী ডায়লগ! সুমন্ত এবার বেশ জোর দিয়ে বলে, আমি পারব না খুলতে। খোলার হয়, তুমি খোলো।

ইল্লি আর কী! আমি কি এত বোকা, ওই বাক্সে হাত দিয়ে কেস খাব? তোমার হাতের ছাপ যখন ওটাতে আছে, তুমিই বাকি কাজ করবে। আমার চাই মালের হাফ, ব্যস।

হয়তো স্কুলের গণ্ডিও পেরোয়নি মেয়েটা! তাতেই সুমন্তর মতো ভাল স্টুডেন্টকে কোণঠাসা করে ফেলেছে। জবা যে অচিরেই অপরাধ জগতের মক্ষিরানি হয়ে উঠতে যাচ্ছে, ভালভাবেই টের পায় সুমন্ত। কিছুটা মরিয়া হয়ে ও বলে ওঠে, তুমি বিশ্বাস করো জবা, করার কোনও ইনটেনশন আমার ছিল না, এমনিই জাস্ট… চুরি

বুঝেছি, লোভ আছে, সাহস নেই। প্রথমবারের কাজ তো। ঠিক আছে, আজ দুপুরটা সময় দিচ্ছি মাথা ঠান্ডা করে নাও। বিকেলে আসব। তখন যদি কোনও পাঁয়তারা মারতে দেখি, পাড়ার লোক জোগাড় করে ফেলব একডাকে। বিছানা থেকে নেমে দাঁড়িয়েছে জবা। ফের বলে, আর যদি এর মধ্যে পালানোর কথা ভাবো, নিজের বিপদ নিজেই ডেকে আনবে। এ পাড়ায় ফাঁকা বাড়িতে তালা মারা, চোরের বাড়িতে মাল পৌঁছে দেওয়ার সমান। সব কিছু লুঠ হয়ে যাবে। বাক্সটা ঝাড়ার জন্য কেস তো খাবেই, অন্যের চুরির দায়ও নিজেকে নিতে হবে।

কথা শেষ করে দরজার কাছে চলে গেছে জবা। হঠাৎ কী যেন মনে পড়তে বলে ওঠে, আর হ্যাঁ, যদি নিজের বাড়ি না ফিরে গা ঢাকা দিয়ে থাকবে ভাবো, খুব ভুল করবে। কলকাতার পুলিশকে তো চেনো না, অর্ডার পেলে লাদেনকেও মনুমেন্টের সামনে দাঁড় করিয়ে দিতে পারে।

হুমকির চোটে হাত-পা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে সুমন্তর। দুলকি চালে জবা ঘর ছেড়ে বেরিয়ে যায়। কী ভীষণ প্রত্যয় মেয়েটার। আসলে বুঝে গিয়েছে সুমন্তর দৌড়। আত্মসমর্পণ করতেই হবে। সময় দিল মানসিক প্রস্তুতির। সুমন্তর মনে পড়ে সেই সন্ধের কথা, মন্দিরবাড়ির ঘাটে দেখা করতে এল নন্দা। প্রায় একমাস পর দেখা। নন্দা ওর বন্ধু মারফত খবর পাঠিয়েছিল। সুমন্ত জানত নন্দা কী বলবে। দুঃসংবাদটার জন্য মনে মনে প্রস্তুত ছিল সে। তাই তখন এড়িয়ে চলছিল নন্দাকে।

আন্দাজ মিলে গিয়েছিল, নন্দা বলল, ওর বিয়ে ঠিক হয়ে গিয়েছে।

নন্দা ভীষণই সুন্দরী। বি এ ফাইনাল দেওয়ার পর থেকে বাড়িতে দেখাশোনা শুরু হয়। কথাটা সুমন্তর কানে দিয়েছিল নন্দা। মনে প্রচণ্ড শক খেলেও, সুমন্ত উপর-উপর ছিল নির্বিকার। বলেছিল, এটাই তো হওয়ার কথা। আমরা সমবয়সি, একে অপরকে ভালবাসার

গোড়া থেকেই জানতাম সমস্যাটা আসবে। আমার পক্ষে তো এখন বিয়ে করা সম্ভব নয়। তখনকার মতো জোরাজুরি কিছু করেনি নন্দা। সত্যি বলতে কী, সুমন্ত যেহেতু জানত যে, সম্পর্কটা একদিন এভাবেই শেষ হবে, তাই প্রেমের মাঝে শরীরকে কখনও আসতে দেয়নি। উদ্দেশ্য ছিল, অন্য কাউকে বিয়ে করতে গিয়ে নন্দার মনে যেন কোনও অপরাধবোধ না আসে। সমস্ত ক্যালকুলেশন লন্ডভন্ড করে, সেদিন সন্ধেবেলা মন্দিরবাড়ির ঘাটে সুমন্তর বুকের কাছে টি-শার্ট খামচে নন্দা বলেছিল, তুমি একটা কিছু করো। এখনই চলো আমাদের বাড়ি। আমি এখনও পর্যন্ত কোনও পাত্রপক্ষর সামনে বসিনি। কখন যে লুকিয়ে কারা আমায় পছন্দ করে গেল, জানতেই পারলাম না। এবার পাত্র দেখতে আসবে।

কিন্তু আমি কী করব বলো? সবে বি এ ফাইনাল দিলাম। চাকরি দূর অস্ত। কী বলব তোমাদের বাড়ি গিয়ে? আর্ত অসহায় কণ্ঠে বলেছিল সুমন্ত।

নন্দা বলে, বলবে, তুমি আমাকে ভালবাসো। চাকরি পেলেই বিয়ে করবে।

ব্যস, তা হলেই তোমার গার্জিয়ানরা মেনে নেবেন? ওঁরা বোঝেন না, চাকরি কোনও গাছের ফল নয়, খানিকটা বিরক্তির সুরে বলেছিল সুমন্ত।

উত্তরে নন্দা বলে, বোঝেন সবই। আমি এটাও বুঝিয়ে দিতে চাই, তাঁদের মেয়ে একজনকে ভালবেসে বসে আছে। সম্বন্ধ করতে গিয়ে তাঁরা যেন দু’বার ভাবেন।

এরপরও নন্দাদের বাড়ি যেতে রাজি হয়নি সুমন্ত। বলেছিল, আমার অনিশ্চিত ভবিষ্যতের সঙ্গে তোমাকে জড়াই কোন অধিকারে? কাউকেই কোনও কথা দিতে পারব না আমি। তুমি যদি আমার জন্য অপেক্ষা করতে চাও, নিজের দায়িত্বে করো।

স্থির হয়ে সুমন্তর দিকে খানিকক্ষণ তাকিয়ে ছিল নন্দা। তারপর শুধু একটাই কথা উচ্চারণ করে, কাপুরুষ। তারপর হনহন করে হাঁটা দেয়।

অবশেষে একদিন সারা পাড়া জুড়ে কেঁদে বেড়াল সানাইয়ের সুর। বিয়ে হয়ে গেল নন্দার। সুমন্ত শুনল, বর দেখতে-শুনতে বেশ ভাল। নন্দার থেকে বছর ছয়-সাতেকের বড়। বেমানান লাগছে না। ভদ্রলোক কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার। নিজের কেমিক্যাল ফ্যাক্টরি আছে। ব্যাবসা খুবই ভাল চলে। কতটা ভাল, সেটা এ বাড়িতে এসে বুঝতে পারছে সুমন্ত। দুধসাদা মার্বেলের বাথরুম, বিশাল বাথটব, ডিজাইন করা কল, শাওয়ার। বারবার স্নান করতে মন চায়। সুমন্ত শুনেছে, নন্দা বাপের বাড়ি গেলে এসি গাড়িতে যায়। গাড়ি আজকাল অনেকেই কেনে। লোন পাওয়া যায় সহজে। এ-বাড়িতে এসে দেখল নন্দাদের দুটো গাড়ি। একটায় বেড়াতে যায় ওরা, অন্যটায় ফ্যাক্টরি যায় নন্দার বর। এখন নিশ্চয়ই নন্দা মনে-মনে ধন্যবাদ জানায় সুমন্তকে। একটা কাপুরুষের জন্য তার ভাগ্যটা বেজায় ভাল হয়ে গিয়েছে। এরপর যদি শোনে, তার প্রাক্তন প্রেমিকটি শুধু কাপুরুষ নয়, একজন চোরও বটে, তা হলে কতটা ঘৃণা ফুটে উঠবে মুখে— ভাবতে ভাবতে অস্থির হয়ে ওঠে সুমন্ত। কিছু একটা উপায় বার করতে হবে এখনই। মুক্ত হতে হবে এই অপবাদ থেকে। চড়াং করে একটা আইডিয়া খেলে যায় মাথায়। নন্দাদের মোবাইলে একটা ফোন করলে কেমন হয়? নম্বর দিয়ে গিয়েছে। ফোন করে কী বলবে সুমন্ত? যা সত্যি তাই বলবে। সত্যির জোর অনেক। তাতেও যদি নন্দা ভুরু কোঁচকায়, কেন বের করেছে বাক্সটা, জিজ্ঞেস করে। যদি অপমান করে সুমন্তকে, মাথা পেতে নেবে। ওর দুর্মুল্য জিনিসগুলো তো বাঁচবে। ফোন স্ট্যান্ডের কাছে গিয়ে রিসিভার তোলে সুমন্ত। ফোন ডেড।

ডোরবেল বাজল বিকেলে। দরজা খুলল সুমন্ত। জবার পরনে রংচঙে সালোয়ার কামিজ। গম্ভীরভাবে জিজ্ঞেস করল, কী ঠিক করলে?

কোনও উত্তর না দিয়ে গোমড়া মুখে দাঁড়িয়ে রইল সুমন্ত। জবা ফের বলে, কারও সঙ্গে পরামর্শ করলে? কোনও ইয়ার-দোস্ত…

কী করে করব কে আছে এখানে? ফোনটাও ডেড, সুমন্তর গলায় অনুযোগের সুর।

জবা পায়ে পায়ে চলে গেল গেস্টরুমে, দেখে নিল বাক্সটা অটুট কিনা। ফিরে এসে বলল, ফোনের লাইন আমিই কেটে দিয়ে গিয়েছি। যাতে কারও সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পারো।

সুমন্ত আক্ষরিক সত্যিই হাঁ হয়ে গিয়েছে। জবা পায়চারি করতে করতে বলে যায়, একটা কথা জেনে রাখো, তুমি পড়েছ ডেঞ্জারাস মেয়ের পাল্লায়। জন্ম ইস্তক আমি সাউথ ক্যালকাটার জল খাচ্ছি। আমার সঙ্গে চালাকি করার চেষ্টা কোরো না। জিনিসটা তোমাকে ভাঙতেই হবে।

নিজেকে গুছিয়ে নিয়ে সুমন্ত এবার সূক্ষ্ম একটা চাল খেলে, আচ্ছা, চুরি যদি করতেই হয়, তোমাকে ভাগ দিতে যাব কোন দুঃখে? হাফ চুরি বলে পুলিশ তো আমাকে হাফ শাস্তি দেবে না।

এখানেই তো ভুল করে ফেললে! পার্টনারের সঙ্গে কাজ করার মজাটাই তুমি জানো না। পুরো মস্তানদের সুরে কথাটি বলল জবা। সুমন্ত জানতে চায়, কী মজা শুনি?

বাক্স খুলে যা পাওয়া যাবে, ভাগ-বাঁটোয়ারা করে লুকিয়ে ফেলতে হবে আজকের মধ্যেই। কাল সকালে যখন কাজে আসব, দু’জনে মিলে হাল্লা মচিয়ে দেব! পালাল, পালাল, ডাকাত, ডাকাত… বলে, ভড়কি খাইয়ে দেব আশেপাশের লোকদের। বলব, বন্দুক চমকে ডাকাতি করে নিয়ে গিয়েছে। আমাদের মধ্যে সাঁট থাকতে পারে, পাবলিকের মাথায় আসবে না।

কেন? জানতে চায় সুমন্ত।

উফ, তুমি হচ্ছ বাবুবাড়ির লোক আর আমি ঠিকে কাজের মেয়ে।

জবা কি ঘুরিয়ে বুঝিয়ে দিল সুমন্ত এখন ওর শ্রেণির? এইসব খুচরো অপমান এখন গায়ে মাখলে চলবে না। জবাকে যে করেই হোক আটকাতে হবে। সুমন্ত বলে, ডাকাত পড়েছে শুনলে পুলিশ আসবেই। তুমি নিজের মুখে স্বীকার করেছ কলকাতা পুলিশের ক্ষমতা।

সব দিকটাই আমি ভেবে রেখেছি। আগে শোনো, তারপর বলো প্ল্যানে কোনও খুঁত আছে কিনা, বলে দম নেয় জবা। ফের শুরু করে, পুলিশ আমাদের ধরে বাড়ির মালিককে ডেকে পাঠাবে। দাদা-বউদি কেমন নরম মনের মানুষ আমি জানি। কোর্ট-পুলিশের দিকে ঘেঁসতে চাইবে না। তা ছাড়া দু’জনেই আমাদের বিশ্বাস করে। থানা থেকে ঠিক ছাড়িয়ে আনবে।

সুমন্ত চুপ করে থেকে কী যেন ভাবে। একটু পরে বলে, প্ল্যানটা মন্দ নয়। তবে আর একটু খতিয়ে দেখা উচিত। কোনও ফাঁক থেকে যাচ্ছে না তো?

সুমন্তর অভিনয় বিশ্বাস করে ফেলে জবা। বলে, সেই ভাল। তুমি চিন্তা করে নাও, আমি ততক্ষণ সরকার বাড়ির কাজটা সেরে আসি।

জবা চলে যাওয়ার মিনিট পাঁচেকের মধ্যে বাড়িতে তালা মেরে বেরিয়ে আসে সুমন্ত। বিকেল ফুরিয়ে সন্ধে নেমেছে। রাস্তাঘাট মোটামুটি ফাঁকা। আশেপাশে কোনও টেলিফোন

বুথ পেলেই নন্দাদের ফোন করবে সুমন্ত। এ ছাড়া বাঁচার এবং বাঁচানোর আর কোনও পথ খোলা নেই।

গেট থেকে ফিট কুড়িও যায়নি, একটা লোক এসে দাঁড়ায় সামনে। বলে, দেশলাই হবে

ভাই?

একটু থমকে গিয়ে সুমন্ত বলে, সরি দাদা, আমি সিগারেট খাই না।

লোকটা প্রায় গায়ের উপর এসে পড়ে বলে, ফোন করতে যাচ্ছেন?

সুমন্ত পলকে বুঝে যায় লোকটা জবার রিক্রুট। অর্থাৎ নজরবন্দি হয়ে গিয়েছে সুমন্ত। আর কোনও আশা নেই। কর্কশ কণ্ঠে লোকটা ফের বলে, ভালয় ভালয় ফিরে যাও বাড়িতে। আমি জবাকে নিয়ে যাচ্ছি।

আধঘণ্টা পর। নন্দাদের ড্রইংরুমে এখন তিনজন। জবা, গুন্ডা লোকটা আর সুমন্ত। কাঠের বাক্সটা গুন্ডাটার হেফাজতে। চাবির গর্তে তার ঢুকিয়ে নানা কসরত করে যাচ্ছে সে। বুদ্ধি করে দু’হাতে গ্লাভসও পরেছে। সুমন্ত এখন নির্বিকার দর্শক। বাক্সটা খুলতে না পেরে খুবই অধৈর্য হয়ে উঠেছে লোকটা। কখনও সেন্টার টেবিলের ওপর রাখছে বাক্সটা, কখনও বা কোলের ওপর। বিরক্ত হয়ে বলে উঠছে, কী জিনিস রে বাবা, কিছুতেই খুলছে না। কত বড় বড় লকার খুলে ফেলেছি তার ঘুরিয়ে।

জবার দৃষ্টি যেন এক্স রে, বাক্সের ভিতরটা বুঝি দেখতে পাচ্ছে। বলছে, মফ চেনটা যদি পাই না! বেচব না। বিয়ের সময় পরব। বউদি দেখে অবাক হয়ে যাবে।

এই দুই অপরাধীর উপস্থিতিতে সুমন্তও খানিক প্রভাবিত হয়ে পড়ে। তারও যেন মনে হয়, লুঠ হয়ে যাক নন্দার কিছুটা সম্পদ। বড্ড বেশিই পেয়েছে সে।

এমন সময় ‘খুট’ করে একটা শব্দ হয়। খুলে গিয়েছে লক। গুন্ডার চোখ চকচক করছে। এখনই ডালা না খুলে বাক্সটা নিয়ে রাখল সেন্টার টেবিলে। জবার সাড়াশব্দ নেই, দমবন্ধ করে অপেক্ষা করছে হয়তো। সুমন্ত এখন গুন্ডা লোকটার আড়ালে। তার কোনও আগ্রহ নেই, বাক্সের ভিতর কী আছে না-আছে তা দেখার। সম্ভবত ডালা খুলেছে লোকটা। বাক্সের দিকে তাকিয়ে বলে উঠল, যা বাব্বা!

জবাও সেদিকে তাকিয়ে বলল, এ কী রে মাইরি!

এবার সুমন্তকে আসতেই হয় খোলা বাক্সের সামনে

। ভিতরের জিনিসগুলো দেখে সেও ভারী অবাক হয়েছে। সব থেকে যেটা আশ্চর্যের, জিনিসগুলো তার ভীষণ চেনা।

চাঁটির শব্দে সংবিৎ ফেরে সুমন্তর। মুখ তুলে দেখে, জবা নিজের মাথায় হাত বোলাচ্ছে। গুন্ডাটা এই মাত্র তাকে মেরেছে। এখন বলছে, এই সব ক্যাচড়া দেখাতে নিয়ে এসেছিস আমাকে।

রাগে গরগর করতে করতে লোকটা হেঁটে যাচ্ছে দরজার দিকে। জবাও যাচ্ছে পিছন পিছন। বলছে, আমি মাইরি কী করে বুঝব, বউদিটা এরকম ছিটিয়াল?

খুব একটা ভুল বলেনি জবা। পাগলিই বটে নন্দা। নইলে সুমন্তর লেখা খানছয়েক চিঠি,

উপহার দেওয়া বাদামি পেন, মেলা থেকে কিনে দেওয়া ডোকরার লকেট, এমনকী খামচে ধরা টি-শার্টের নীল বোতামটাও যত্ন করে রেখে দিয়েছে এই বাক্সে। ঝগড়ার পরে শার্টের একটা বোতাম না দেখে সুমন্ত ভেবেছিল, ছিঁড়ে পড়ে গিয়েছে ঘাটে।

জিনিসগুলো উলটেপালটে দেখে ফের বাক্সে রেখে দেয় সুমন্ত। চিন্তা একটাই, বাক্সের লকটা ভেঙে গিয়েছে। এই তুচ্ছ জিনিস ক’টাই নন্দার মহার্ঘ সুখ ছিনিয়ে নিতে পারে। কেন যে এখনও রেখে দিয়েছে এগুলো!

পরের দিন সকালে ঝোলার মধ্যে বাক্সটা নিয়ে বেরিয়ে পড়ল সুমন্ত। লকটা যে করেই হোক সারাতে হবে। তারপর বাক্সটা রেখে দেবে যথাস্থানে। বড় বড় পা ফেলে হেঁটে যায় সুমন্ত। কলকাতার মতো নামীদামি শহরে নিশ্চয়ই দুঃখ গোপন করার নিশ্ছিদ্র ব্যবস্থা আছে।

উনিশ কুড়ি অক্টোবর ২০০৫

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *