Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » নারী এবার জাগো || Maya Chowdhury

নারী এবার জাগো || Maya Chowdhury

নারী এবার জাগো

বাংলার নারী ভালোবেসে তার ছোট্ট সংসার কে। আঠারো বছর পার হলেই তার মধ্যে নানা স্বপ্ন বিরাজ করে। একটা একটা করে প্রতিটা স্বপ্ন সে যত্ন করে রক্ষা করে। লিপিকা আমার কাছের বন্ধু ছিল। চুপচাপ_খুব মিশুকে। তবে ধীর-স্থিরভাবে কথা বলে। অংশু ওর হাজব্যান্ড। বছর দশেক হলো ওদের বিয়ে হয়েছে। একটা ছোট্ট মেয়ে রয়েছে। লিপিকার মা পছন্দ করে ব্যাংকের ম্যানেজারের সঙ্গে বিয়ে দিয়েছে। ওর বিয়েতে আমরা নিমন্ত্রিত ছিলাম। খুব ঘটা করেই বিয়েটা হয়েছে। আশীর্বাদের দিন ওর শ্বশুর শাশুড়ি এসে দামী গয়না পরিয়ে দিয়েছিল। সবাই বলছিল, খুব ভালো শ্বশুরবাড়ি হয়েছে। বর ও খুব ভালো। শ্বশুরের গাড়িতে ও যাতায়াত করতো। তাই খুব বেশি দেখা করার সুযোগ ঘটতো না। সকালে এসে বিকালে চলে যেত। তাছাড়া, নামকরা পরিবার, ওদের বাড়িতে অনেক কাজ থাকত। মাঝেমধ্যে ধুমধাম করে বিভিন্ন অনুষ্ঠান হতো। বরের বন্ধু সুকুমার আমাদের পাড়ায় একটি মেয়েকে বিয়ে করেছে। সেই সূত্রে সম্বন্ধটা ওর মা পাকা করেছে। বেবি বাম্প-এ প্রচুর ঘটা হয়েছিল। বেশ সুখে শান্তিতে লিপিকা দিন কাটাচ্ছে। মেয়ে হওয়াতে আর কোন অনুষ্ঠান হয়নি। কিছুদিন বাদে লিপিকাকে একবার দেখেছিলাম। খুব রোগা হয়ে গেছে। আমার মা জিজ্ঞাসা করায় জানিয়েছিল, শরীরটা ঠিক নেই। ওর মা কয়েকবার গিয়েছিল নিয়ে আসতে। কিছুদিন বাপের বাড়িতে থেকে শরীরটা ঠিক করবে। ওর শাশুড়ি মা রাজি হননি। মেয়ে এখন ক্লাস থ্রিতে পড়ে। নামকরা ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে। অংশু কিছুদিন কর্মসূত্রে বাইরে রয়েছে। মেয়ের স্কুল ,শ্বশুর-শাশুড়ির দেখাশোনা এছাড়া ওদের নিজস্ব ব্যবসা রয়েছে সে কারণে লিপিকা বরের ওখানে যেতে পারেনি। ফোনে রোজ কথা হয়। সেদিন লিপিকা মেয়েকে টিফিন করে দেওয়ার জন্য রান্না ঘরে ছিল। হঠাৎ করে অনুভব করে জামার পিছনটা গ্যাসের মধ্যে জ্বলে গেছে। দৌড়ে বাইরে বেরিয়ে এসে শাশুড়ি মাকে চিৎকার করে ডাকতে থাকে। বড় ঘেরা বাড়ি। কয়েকটা গেট পার হয়ে হয়ে বাইরে বেরোতে হবে। তখন ওর মাথার মধ্যে কোন বুদ্ধি আসে নি। দৌড়ে শাশুড়ির ঘরে চিৎকার করতে থাকে। শাশুড়ি মা দেখলেও খুব একটা গুরুত্ব দেননি। মেয়ে সঙ্গে সঙ্গে বাবাকে ফোন করে। বাবা জানার পর সবাইকে পাঠালেও ততক্ষণে লিপিকা অনেকটাই পুড়ে গিয়েছে। প্রতিবেশীরা হসপিটালে ভর্তি করলে, শ্বশুর-শাশুড়ি একেবারেই হসপিটালে যাননি। এমনকি ছেলে আর কোনো খোঁজখবর নেয়নি। লিপিকার বাবা-মা ডায়েরি করলে নানা অজুহাত দেখিয়েছে। এদিকে লিপিকা মৃত্যুর সাথে লড়াই করছে। পুলিশ বয়ান নিয়ে জানতে পারে অনেকদিন ওকে ঠিকমত খেতে দেওয়া হতো না। ছেলের সাথে বেশিক্ষণ ফোনে কথা বলা নিষেধ ছিল। শশুর মশাই একেবারে ভাল লোক ছিলেন না। অনেক দিন ইচ্ছে ছিল কোন ভাবে কষ্ট দিয়ে ওকে বাড়ি থেকে বের করা। কিন্তু লিপিকা প্রাণপনে চেষ্টা করেছিল মুখ বন্ধ করে সহ্য করতে। ওর স্বপ্ন ছিল মেয়েটাকে মানুষ করা। নিজের মতো করে স্বপ্ন দেখা। ঈশ্বর সে স্বপ্ন পূরণ করতে দিলেন না। তার আগেই লিপিকা বিদায় নিল। কেস চললেও সবাই জামিনে মুক্ত। শুধুমাত্র লিপিকার বাবা মা ও মেয়ে লিপিকার জন্য কষ্ট করতে লাগলো। এখন আমাদের পাড়ায় লিপিকার মেয়ে বড় হয়েছে। একেবারে মায়ের মত দেখতে হয়েছে। ওর বাবা মা মেয়ের মধ্যে লিপিকাকে খুঁজে পেয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *