নয়া গ্রামের লোক দেবী -মা সাঁতাইবুড়ি
সে অনেক কাল আগের কথা॥ধর্মশাস্ত্র অননুমোদিত,অঞ্চলবিশেষের লোক সমাজের অধিদেব, ,,,,,লোকদেবতা বা দেবী॥ বনের ভেতরে,ঝোরার ধারে,ডুংরিটিলায়,শাল,,,মহুয়া,বট,,,অশ্বথ্থের তলায়,নদী সমুদ্রের চড়ায়, খোলামাঠে তাঁদের আশ্রয়॥প্রকৃতি পরিবেশ যেখানে একটু বিস্ময়ের, রহস্যের,আতঙ্কের ছোঁয়া,,,,,,,,সেখানেই লোকদেবতা তাঁর আসনটুকু পেতেছেন॥ তাঁকে ঘিরে রয়েছেপ্রকৃতির অনাবিল পরিবেশ,,,,,,,অক্ষোদিত শিলাখন্ড,,মাটিরবেদী, পোড়ামাটির কিছু ”ছলন”,,,,,,এই তার আরাধনার মন্দির ওউপকরণ॥
এমনই এক লোকদেবীর লৌকিক পরাণকথা শোনাই,,,,,,,,,,,,,,,,!
নয়াগ্রামের ডাহি গ্রামের”মা সাঁতাইবুড়ি”,,,,,,,,,!
ভসরাঘাট থেকে সুবর্ণরেখা নদী পেরিয়ে নয়াগ্রামে প্রবেশের মুখেই নদীর গর্ভের ডানদিকে দেবীর থান॥
দেবীর কোন আচ্ছাদিত মন্দির নেই॥ বেদীর ওপর হাতি ঘোড়ার ছলনেই পূজো ! সাঁতাইবুড়ি আসলে সাঁতারেবুড়ি,,,,, যিনি নদীর করাল গ্রাস থেকে আর্ত কে উদ্ধার করেন॥ মা এখানে গ্রামচন্ডী হিসেবে মর্যাদা পেয়ে থাকেন॥এই দেবী সম্পর্কে না না উপকথা শোনা যায় এলাকার মানুষের মুখে॥ জনশ্রুতি যে রোজ রাতে মা বেড়াতে বের হন!আর মাকে যাতে কেউ দেখতে না পায় তাই এলাকা দিয়ে যাবার আগে গলাখাঁকারি দিতে হয়॥যাতে মা নিজেকে আড়ালে সরিয়ে নিতে পারেন॥ কথিত আছে একজন এটা না করায় মায়ের হাতের চড় খেতে হয়ে ছিলো তাকে॥ মানুষের এমনই বিশ্বাস॥
আরও শোনা যায় যে মায়ের নাম করে খরস্রোতা নদী নাকি ভাসাশিলা চড়ে পারহয়েছিলেন॥ তিনি মাকে ”দামুজুড়ি”পাঁঠা বলি দিয়ে মায়ের পূজো দিয়েছিলেন॥”দামুজুড়ি’,’ অর্থে ৫,,,৭,,টি পাঁঠা॥
নদী এখন খাত থেকে প্রায় দেড় কিমি সরে গেছে॥
এই দেবীর পূজক হলেন ‘,,,”দন্ডছত্রী” মাঝি বা নৌকোচালকেরা॥দিনরাত নৌকোচালান ও মাছ ধরেন বলেই এরাই মায়ের দর্শন পান॥এরাই তাই ”দেহুরি”॥ জনৈক অভিমন্যু ভুঞ্যা এই পুজোর প্রচলন করেন॥শনি,,মঙ্গল বারের নিত্যপূজোর সাথে সাথে মকর সংক্রান্তিতে হয় বাৎসরিক উৎসব॥ মেলাও বসে,,,,,গ্রামীন মেলা॥পূজোর নৈবেদ্য হিসেবে নারকেল,ফলমূল,পায়েস এমন কি মদ ও উৎসর্গ করা হয়॥ উৎসর্গ করাহয় ,,”ছলন”,,,অর্থাৎ মাটির হাতিঘোড়ার মূর্তি॥সুতোতে ঢিল বেঁধেও মানত করে অনেকে॥এমনিও মানত করে সবাই !পরে পূজো দিয়ে মানত রক্ষা করে! কেউ ছলন উৎসর্গ করে,কেউ বা বলি না দিয়ে মমায়ের উদ্দেশ্যে পঁাঠা,মোরগ,ছেড়ে দেন! পায়রা উড়িয়ে দেন॥
কথিত আছে মা সঁাতাইবুড়ির আরও ছয় বোন আছেন॥তাঁরা হলেন,,,,,
১)নদীর অপর পারে আটাঙ্গা গ্রামের রুকনীবুড়ি
২)ঝাড়েশ্বরপুরের বাশুলিবুড়ি
৩)নয়াগ্রামের ভগীরথমহাকুলদের পুকুরে কেতকি বুড়ি
৪)কুৃড়চিবনীর খরখাই বুড়ি
৫)জামিরাপালের কুঙারসাইবুড়ি
৬)নিমাইনগরের রামেশ্বর মন্দিরের নিচের দিকে দুয়ারসিনিবুড়ি॥
এই সাত বোন স্থানীয় ভাষায়,,,”সাতবহনা”’ নামেও পূজিত হন॥
সুবর্ণরেখার বাঁকে বাঁকে এমনই লোকায়ত দেব দেবীর থান বা আটনও তার পরাণকথা যা এই বিশাল টাঁড়,,,,চর কে এক অপার্থিব মায়ায় জড়িয়ে রেখেছে॥ যেন বলছে,,,,,,”বসে আছে মা জননী আমায় নিতে কোল বাড়িয়ে”,,,,,,,,,,,
নমি নমি চরণে॥