Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।

সুশীল চক্রবর্তী থানাতেই ছিলেন

সুশীল চক্রবর্তী থানাতেই ছিলেন।

কয়দিন ধরে তিনি মালঞ্চর হত্যা ব্যাপারটা নিয়েই সর্বদা ব্যস্ত, এখানে ওখানে ছোটাছুটি করতে হচ্ছে তাঁকে। অফিস ঘরে বসে কতকগুলো কাগজপত্র দেখছিলেন সুশীল চক্রবর্তী। কিরীটীকে ঘরে ঢুকতে দেখে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে উৎফুল্ল কণ্ঠে তিনি বললেন, একেই বলে বোধ হয় মনের টান দাদা, আসুন, আসুন।

কিরীটী হাসতে হাসতে বললে, তাই নাকি?

–হ্যাঁ, আজ দুদিন থেকে আপনার কথাই ভাবছিলাম দাদা।

—তাই বোধ হয় আমারও তোমার কথা মনে পড়ল। তা ব্যাপার কি বল তো, হিন্দুস্থান রোডের মার্ডার কেসটা না কি?

—হ্যাঁ দাদা—

—আমিও কিন্তু এসেছিলাম সেই ব্যাপারেই সুশীল।

-সত্যি! বসুন দাদা। তা আমাদের বড়কর্তাদের পক্ষ থেকে, না সুরজিৎ ঘোষালের পক্ষ থেকে?

–আপাতত বলতে পারো আমার নিজের পক্ষ থেকেই। এখনো কেসটা আমি কারো পক্ষ থেকেই নিইনি ভায়া।

–কেসটা কিন্তু বেশ জটিলই মনে হচ্ছে দাদা সুশীল চক্রবর্তী বললেন।

—সত্যিই জটিল কিনা সেটা জানবার জন্যই তো তোমার কাছে এসেছি ভায়া, তোমার দৃষ্টিকোণ থেকে যা তোমার মনে হয়েছে বা হচ্ছে সেটা আমায় বল তো।

সুশীল চক্রবর্তী কিরীটীর অনুরোধে সেই প্রথম দিন থেকে মালঞ্চর হত্যার ব্যাপারে অনুসন্ধান করতে গিয়ে যা যা জেনেছেন একে একে সব বলে গেলেন এবং বলা শেষ করে বললেন, কি রকম মনে হচ্ছে দাদা ব্যাপারটা, সত্যিই কি বেশ একটু জটিলই নয়?

-খুব একটা জটিল বলে কিন্তু মনে হচ্ছে না, ভায়া। কিরীটী বলল, আমি বুঝতে পারছি মালঞ্চ হত্যার বীজটা কোথায় ছিল—

—বুঝতে পারছেন?

–হ্যাঁ, তুমিও একটু ভেবে দেখলে বুঝতে পারবে। একটি নারীকে ঘিরে—যে নারীর মধ্যে মনে হয় তীব্র যৌন আকর্ষণ ছিল—এক ধরনের নারী, যারা সহজেই পুরুষের মনকে রিরংসায় উদ্বুদ্ধ করে তোলে, সেইটাই এই হত্যার বীজ হয়ে ক্রমশ ডালপালা বিস্তার করেছিল বলেই আমার অনুমান।

—একটা বুঝিয়ে বলুন দাদা—সুশীল চক্রবর্তী বললেন।

—তিনটি পুরুষ এক্ষেত্রে—সুরজিৎ ঘোষাল ও দীপ্তেন ভৌমিক দুজনে বাইরের পুরুষ আর তৃতীয়জন মালঞ্চর হতভাগ্য স্বামী সুশান্ত মল্লিক ঘরের জন। মালঞ্চর যৌন আকর্ষণে ঐ তিনজন মালঞ্চকে ঘিরে ছিল।

—কিন্তু সুশান্ত মল্লিক তো তার স্ত্রীকে–

ভুলে যেও না, স্ত্রী ভ্ৰষ্টা হওয়া সত্ত্বেও সুশান্ত তার আকর্ষণ থেকে মুক্ত হতে পারেনি আর পারেনি বলেই তার স্ত্রী অন্যের রক্ষিতা জেনেও সেই স্ত্রীর সান্নিধ্য থেকে দূরে সরে যেতে পারেনি, হিন্দুস্থান রোডের বাড়িতেই পড়ে ছিল। তার স্ত্রী অন্যের রক্ষিতা জেনেও তারই হাত থেকে প্রত্যহ মদের পয়সা ভিক্ষা করে নিয়েছে।

তারপর একটু থেমে কিরীটী বলতে লাগল, তার স্ত্রী তার কাছে অপ্রাপণীয়া জেনেও তার মনের রিরংসা তাকে সর্বক্ষণ পীড়ন করেছে। তাকে ক্ষতবিক্ষত করেছে। এমনও তো হতে পারে ভায়া, সেই অবদমিত রিরংসা থেকেই কোন এক সময়ে একটা স্ফুলিঙ্গ তার মনের মধ্যে আকস্মিক আগুন ধরিয়ে দিয়েছিল এবং যার ফলে শেষ পর্যন্ত ঐ হত্যাকাণ্ডটা ঘটে গিয়েছে।

—কিন্তু যতদূর জানা গিয়েছে ঐ ব্যাপারের তিন দিন আগে থাকতেই সুশান্তবাবু ঐ বাড়ি ছেড়ে চলে গিয়েছিল—সুশীল চক্রবর্তী বললেন।

-হা গিয়েছিল, কিন্তু হত্যার পরের দিনই তার প্রত্যাবর্তন। চলেই যদি গিয়েছিল তো আবার ফিরে এলো কেন? এবং ফিরে এলো যে রাত্রে হত্যাটা সংঘটিত হয় তারই পরদিন প্রত্যুষে। এর মধ্যে দুটো কারণ কি থাকতে পারে না?

–দুটো কারণ?

-হ্যাঁ, প্রথমত, যারা কোন বাসনা চরিতার্থ করবার জন্যে কাউকে হত্যা করে তাদের মধ্যে একটা সাইকোলজি থাকে, হত্যার আনন্দকে চরম আনন্দে তুলে দেবার জন্যে আবার তারা অকুস্থলে ফিরে আসে, বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই সকলের মধ্যে উপস্থিত থেকে সেই চরম আনন্দকে রসিয়ে রসিয়ে উপলব্ধি করবার জন্যে। এবং দ্বিতীয়ত, সুশান্ত মল্লিক হয়তো অকুস্থল থেকে ঘটনার সময় দূরে থেকে প্রমাণ করবার চেষ্টা করেছে তার নির্দোষিতাটুকুই, an alibi.

সুশীল চক্রবর্তী বললেন, আমি দাদা অতটা–

–তলিয়ে দেখনি, তাই না ভায়া, কিন্তু কথাটা ভাবা উচিত ছিল না কি তোমার?

–ভাবছি আপনি বুঝলেন কি করে যে সুশান্ত মল্লিককে আমি সত্যি কিছুটা eliminate করেছিলাম–

–সে তো তোমার কথা শুনেই বুঝতে পেরেছিলাম। তুমি যত গুরুত্ব দিয়েছ ঐ দুজনের ওপরেই—সুরজিৎ ঘোষাল আর দীপ্তেন ভৌমিক। কিন্তু খুনের মামলার তদন্তে অমন বিশেষ প্রয়োজনীয় ব্যাপারটা তোমার অবহেলা করা উচিত হয়নি।

-কোন্ ব্যাপারটার কথা বলছেন?

–ঐ যে তোমার ঐ সুশান্ত মল্লিকের হঠাৎ অপ্রত্যাশিত ভাবে অকুস্থলে আবির্ভাব ও তার সেই কথাগুলো—দরজা আর খুলবে না, রতন আর মানদা যখন কিছুতেই দরজা খোলাতে না পেরে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে বন্ধ দরজার সামনে দাঁড়িয়ে ছিল। কথাটা সে বলল কেন? এমনি একটা কথার কথানা কি জেনেশুনেই সে মালঞ্চর মৃত্যুর ব্যাপারটা ঘোষণা করেছিল? যাকগে, rather late than never—তুমি দীপ্তেন ভৌমিকের সঙ্গে কথা বলেছ?

—বলেছি, গত পরশুই তার সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলাম। সে তো কাছাকাছিই। লেক রোডে থাকে, কিন্তু দেখা পাইনি। অফিসের কাজে নাকি তিনি আগের দিন পাটনায় গিয়েছেন আর আজকালের মধ্যেই তার ফেরার কথা। বলে এসেছি এলেই থানায় রিপোর্ট করতে–

ঐ সময়ে থানার সামনে একটা গাড়ি এসে থামার শব্দ পাওয়া গেল এবং একটু পরেই। একজন সুশ্রী ভদ্রলোক এসে ঘরে ঢুকলেন।

—কি চাই? সুশীল চক্রবর্তীহ প্রশ্ন করলেন।

—এখানকার ও. সি.-কে।

—আমিই–বলুন কি দরকার?

—আমার নাম দীপ্তেন ভৌমিক।

নাম কানে যেতেই কিরীটী দীপ্তেন ভৌমিকের দিকে তাকিয়ে দেখল। বেশ বলিষ্ঠ লম্বা চওড়া চেহারা, সুশ্রীও।

–বসুন মিঃ ভৌমিক–সুশীল চক্রবর্তী বললেন।

—আমার খোঁজে আপনি আমার ফ্ল্যাটে গিয়েছিলেন। দীপ্তেন বললেন।

–হ্যাঁ, আপনি জানেন নিশ্চয়ই, মালঞ্চদেবী খুন হয়েছেন—

–জানি। যেদিন আমি পাটনায় যাই, সেদিন পাটনাতেই সংবাদপত্রে newsটা পড়েছিলাম।

—আপনার সঙ্গে মালঞ্চদেবীর ঘনিষ্ঠতা ছিল?

-তা কিছুটা ছিল।

—যে রাত্রে মালঞ্চদেবী নিহত হন সেদিন সন্ধ্যারাত্রে আপনি ঐ মালঞ্চদেবীর হিন্দুস্থান রোডের বাড়িতে গিয়েছিলেন?

–গিয়েছিলাম।

–সেখান থেকে কখন চলে এসেছিলেন?

–আধঘণ্টাটাক পরেই, কারণ আমার ট্রেন ছিল রাত নটা চল্লিশে—

কিরীটী ঐ সময় বললে, কিন্তু মিস্টার ভৌমিক, আপনাকে ঐ বাড়ি থেকে বের হয়ে আসতে রতন বা মানদা কেউ দেখেনি–

–না দেখে থাকতে পারে।

আবার কিরীটীর প্রশ্ন : সদর দিয়েই বের হয়ে এসেছিলেন বোধ হয়?

-তা ছাড়া আর কোথা দিয়ে আসব। কিন্তু ব্যাপার কি বলুন তো? আপনাদের কি ধারণা ঐ জঘন্য ব্যাপারের সঙ্গে আমার কোন যোগাযোগ আছে?

—মনে হওয়াটা কি খুব অস্বাভাবিক মিঃ ভৌমিক? সুশীল চক্রবর্তী বললেন।

How fantastic-তা হঠাৎ ঐ ধরনের একটা absurd কথা আপনাদের মনে হল কেন বলুন তো অফিসার?

কিরীটী বললে, যে স্ত্রীলোক একই সঙ্গে দুজন পুরুষের সঙ্গে প্রেমের লীলাখেলা চালাতে পারে এবং সেখানে যাদের যাতায়াত, তাদের প্রতি ঐ ধরনের সন্দেহ জাগেই যদি–

কিরীটীকে বাধা দিয়ে দীপ্তেন ভৌমিক বললেন, থামুন। একটা কথা ভুলে যাচ্ছেন, সে রাত্রে আমি নটা চল্লিশের ট্রেনে কলকাতা ছেড়ে যাই। আমি কি চলন্ত ট্রেন থেকে উড়ে এসে তাকে হত্যা করে হাওয়ায় উড়তে উড়তে আবার চলন্ত ট্রেনে ফিরে গিয়েছি? সত্যি মশাই, আপনাদের পুলিসের উর্বর মস্তিস্কে সবই বোধ হয় সম্ভব। ঐ সব আবোল-তাবোল কতগুলো প্রশ্ন করার জন্যেই কি আমার বাড়িতে গিয়েছিলেন?

–Listen দীপ্তেনবাবু, যতক্ষণ না আপনি প্রমাণ করতে পারছেন, কিরীটী বললে, সে সত্যিই সে রাত্রে আপনি হিন্দুস্থান রোডের বাড়ি থেকে আধঘণ্টার মধ্যে বের হয়ে এসেছিলেন, পুলিসের সন্দেহটা ততক্ষণ আপনার ওপর থেকে যাবে না।

—আমি একজন ভদ্রলোক, আমি বলছি, সেটাই কি যথেষ্ট নয় মশাই?

—না মিঃ ভৌমিক, যথেষ্ট নয়। যথেষ্ট হত যদি ঐ রাত্রেই আপনার বিশেষ ভাবে পরিচিত ও ঘনিষ্ঠ একজন ঐ ভাবে না নিহত হত।

-মালঞ্চর সঙ্গে আলাপ ছিল ঠিকই কিন্তু সেটা আমার ব্যক্তিগত ব্যাপার।

-আচ্ছা দীপ্তেনবাবু, কিরীটীর প্রশ্ন, আপনি জানতেন নিশ্চয়ই, যে মালঞ্চদেবী, অনেকদিন ধরে সুরজিৎ ঘোষালের রক্ষিতা হিসাবে ছিল—

—জানব না কেন? জানতাম।

—সে ক্ষেত্রে আপনার সঙ্গে মালঞ্চর ঘনিষ্ঠতাটা সুরজিৎ ঘোষাল যে ভাল চোখে দেখতে পারেন না সেটা তো স্বাভাবিক

-আমি অতশত ভাবিনি মশাই, তাছাড়া ভাববার প্রয়োজনও বোধ করিনি।

–ভাবাটা বোধ হয় উচিত ছিল, যাক সে কথা। আপনি ভাল করে ভেবে বলুন, কখন। কোন্ পথ দিয়ে সে রাতে আপনি সেই বাড়ি থেকে বের হয়ে এসেছিলেন এবং কিসে করে ফিরেছিলেন?

—আমি ফিরেছিলাম ট্যাক্সিতে—

–কেন, আপনার তো গাড়ি আছে

—গাড়ি আমি আগের দিন গ্যারাজে দিয়েছিলাম repair-এর জন্যে, আর আগেই বলেছি, আমি সদর দিয়েই বের হয়ে এসেছিলাম।

—দীপ্তেনবাবু, আপনি কি মালঞ্চদেবীকে একটা মুক্তোর হার দিয়েছিলেন?

–হ্যাঁ।

–কত দাম সেটার? কিরীটী জেরা করতে থাকে।

—হাজার তিনেক-

-ঐ রকম দামী জিনিস আরো দিয়েছেন কি তাকে?

–দিয়েছি অনেক কিছু, কিন্তু অত দামী জিনিস আগে দিইনি।

—তা হঠাৎ অত দামী হার, অন্য একজনের রক্ষিতাকে দিতে গেলেন কেন?

–খুশি হয়েছিল দিয়েছি। আর কিছু আপনাদের জিজ্ঞাস্য আছে?

–আচ্ছা, আপনার নাম তো দীপ্তেন ভৌমিক, আর কোন নাম নেই আপনার?

—মানে?

–মানে অনেকের দুটো নাম থাকে, যেমন ডাকনাম, পোশাকী নাম, আলাদা আলাদা–

—আছে। আমার ডাকনাম সুনু, মা বাবা আমাকে সুনু বলে ডাকতেন, আর দাদাকে মনু বলে ডাকতেন।

–আপনার দাদা বেঁচে আছেন?

–হ্যাঁ, ইংলন্ডে সেটেল্ড—

–আপনি নিশ্চয়ই রুমাল ব্যবহার করেন?

–নিশ্চয় করি। আর কিছু জিজ্ঞাস্য আছে আপনাদের? একটু যেন বিরক্তির সঙ্গেই কথাটা উচ্চারণ করলেন দীপ্তেন ভৌমিক।

-না, আপনি আপাতত যেতে পারেন মিঃ ভৌমিক। সুশীল চক্রবর্তী কিরীটীর চোখের ইশারা পেয়ে ভৌমিককে বললেন।

–ধন্যবাদ। চেয়ার ঠেলে উঠে দাঁড়ালেন দীপ্তেন, তারপর ঘর থেকে বের হয়ে গেলেন একটু যেন দ্রুত পদেই।

ভদ্রলোক থানা থেকে বের হয়ে যেতে সুশীল চক্রবর্তী বললেন, আমি দীপ্তেন ভৌমিকের ওপর constant watch রাখব ভাবছি দাদা

–ওয়াচ রাখতে হলে শুধু দীপ্তেন ভৌমিক কেন, সে তালিকা থেকে সুশান্ত মল্লিকও বাদ যাবেন না। কিন্তু আমি কি বলছি জানো ভায়া—আজকের সমাজের মানুষ এ কি এক সর্বনাশা পথে ছুটে চলেছে। না আছে কোন সংযম—কোন যুক্তি—কেবল to achieve, এবং মজা হচ্ছে, কি তারা চায়, কি পেলে তারা সুখী-সন্তুষ্ট, সেটা ওদের নিজেদের কাছেও স্পষ্ট নয়। ঐ মালঞ্চ দেবীর কথাই ভাবো না, সুরজিৎ ঘোষালকে নিয়ে সে সন্তুষ্ট হতে পারেনি, দীপ্তেন ভৌমিককেও টেনেছিল—যাকগে, আজ উঠি। হ্যাঁ, ভাল কথা, কাল একবার তোমাদের অকুস্থলটা ঘুরে এলে মন্দ হত না।

—বেশ তো, কখন যাবেন বলুন, আমি আপনাকে তুলে নেবখন। বাড়িটা তো এখন পুলিস পাহারাতেই আছে।

–রতন আর মানদা?

—তারাও আছে।

—আর কেউ নেই?

—আছে বৈকি, মালঞ্চর স্বামী সুশান্ত মল্লিকও তো ঐ বাড়িতেই আছে এখনো।

—কিন্তু বাড়িটা এখন কার সম্পত্তি হবে? মালঞ্চর কোন ওয়ারশিন নেই?

—জানি না। এখনো তো দাবীদার আসেনি।

—হুঁ। কাল সকালে তুমি নটা নাগাদ আসতে পারবে?

–পারব না কেন, যাব।

—তাহলে ঐ কথাই রইল, আমি চলি।

কিরীটী থানা থেকে বের হয়ে গেল।

কিরীটী চলন্ত গাড়িতে বসে বসে ভাবছিল—মালঞ্চর মৃত্যুটা কি তিনটি পুরুষের প্রতিদ্বন্দ্বিতা আর ঈর্ষা থেকেই ঘটেছে, না আরো কিছু ছিল?

সুরজিৎ ঘোষালের মত লোক ঈর্ষাপ্রণোদিত হয়ে তার রক্ষিতাকে খুন করতে পারে কথাটা যেন ভাবা যায় না, অথচ তারই রুমাল মৃতের গলায় পেঁচিয়ে গিট বাঁধা ছিল, এবং সে মালঞ্চকে শাসিয়েছিল, হত্যার হুমকিও দেখিয়েছিল। সুরজিৎ ঘোষালকে গ্রেপ্তার করার পিছনে পুলিসের ঐটাই জোরালো যুক্তি, সুরজিৎ ঘোষালের কথাগুলো সুশীল চক্রবর্তী মানদাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেই জেনেছেন।

কিন্তু মানদা আরো বেশী কিছু জানে, কারণ সে ছিল মালঞ্চর পেয়ারের দাসী। অনেক মাইনে পেত সে। মানদা যদিও দীপ্তেন ভৌমিকের কথাটা স্বীকার করেনি তবু সে-ই তার মনিবের কর্ণগোচর করেছে বলে কিরীটীর ধারণা, সেটা মানদারই কাজ। মানদা গাছেরও খেতো তলারও কুড়াতে।

কিরীটীর আরো মনে হয় দীপ্তেন ভৌমিক সত্যি কথা বলেননি। কিরীটী জানত না যে দুদিন পরেই সে দীপ্তেন ভৌমিক সম্পর্কে এক চমকপ্রদ সংবাদ শুনবে সুশীল চক্রবর্তীর কাছ থেকে, এবং সে সংবাদ পাওয়ার পর মালঞ্চর হত্যা ব্যাপারটা সত্যিই জটিল হয়ে উঠবে।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *