Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।

সুশীল মেডিক্যাল কলেজের ছাত্র। এবার সে শেষ পরীক্ষা দিয়াছে, এখনও ফল বাহির হয় নাই। পূর্ণ পড়ে ক্যাম্পবেল মেডিক্যাল স্কুলে। তাহার পড়া শেষ হইতে এখনও এক বৎসর বাকি। পূর্ণ ছেলেটি বড় শান্ত, প্রায়ই কথা কয় না; কথায় কথায় শুধু একটু মিষ্ট হাসি হাসে। সুশীল তাহার বিপরীত; অদ্ভুত ছেলে, জীবনে পথ চলিতে কোনোখানে এতটুকু বাধা যেন তাহার ঠেকে না, কোনো কথা বলিতে তাহার দ্বিধা হয় না। শিবনাথের বিবাহ হইয়াছে শুনিয়া তাহার বিস্ময়ের সীমা রহিল না; সে বলিয়া উঠিল, শিবনাথবাবুর বিয়ে হয়ে গেছে নাকি? ডি ছি ছি, বলছেন কী?

শিবনাথের লজ্জা হইল। পূর্ণ মুখে একটুখানি মিষ্ট হাসি মাখিয়া দাঁড়াইয়া ছিল। জ্যোতির্ময়ীও হাসিলেন। কিন্তু পিসিমা রুষ্ট হইয়া উঠিলেন, তিনি বলিলেন, কেন বাবা, ছি ছি কেন? শিবু তো বিয়েই করেছে, বিয়ে তো সংসারে সবাই করে।

সুশীল অপ্রস্তুত হইল না। সে বলিল, এত সকালে বিয়ে দিয়েছেন। শিবনাথবাবুর পড়া শেষ হতেই এখন অনেক দেরি, উপার্জনের কথা দূরে থাক।

উপার্জন শিবু না করলেও বউয়ের ভরণপোষণ চলবে বাবা। আর তোমাদের ও হাল ফ্যাশনের ধাড়ী বউ আমাদের সংসারে চলে না।

তা হলেও পিসিমা, বাল্যবিবাহ ভাল নয়। ডাক্তারিশাস্ত্রেও নিষেধ করে।

আমাদের কবিরাজিশাস্ত্রে ও নিষেধ করে না বাবা। সে মতে গৌরীদান প্রশস্ত।

হা-হা করিয়া হাসিয়া সুশীল বলিল, তর্কে পিসিমা কিছুতেই হারবেন না। তা বেশ, আমাদের বউ দেখান। বউকে বুঝি ঘরের মধ্যে বোরকা এঁটে বন্ধ করে রেখেছেন।

পিসিমার মনের উত্তাপ ইহাতে লাঘব হইল না। তিনি বলিলেন, আমরা কি বোরকা পরে আছি বাবা, না ঘরের দরজা এঁটে আলোর পথ বন্ধ রেখেছি, যে বউকে বন্ধ করে রাখব?

জ্যোতির্ময়ী মনে মনে শঙ্কিত হইয়া উঠিতেছিলেন, তিনি তাড়াতাড়ি বলিলেন, বউমা থাকলে তোমরা দেখতে পেতে বৈকি বাবা; তিনি এখানে নেই, কাশীতে আছেন।

কাশীতে বিয়ে দিয়েছেন বুঝি?

না না, বউমার দিদিমা কাশী গেছেন, বউকে সঙ্গে করে নিয়ে গেছেন। বউমার বাপের বাড়ি এই গ্রামেই, এই আমাদের বাড়ির পাশেই। ওই যে পাকা বাড়ির মাথাটা দেখা যাচ্ছে, ওইটে।

অ্যাঁ! বলেন কী? এ তো ভারি মজার ব্যাপার! বউ বাপের বাড়ি গেলে শিবনাথবাবু জানলায় দাঁড়িয়ে কথা কইবেন!

মৃদুভাষী পূর্ণ এবার বলিল, অনেকটা বেলা হয়ে গেল; একবার রোগী দেখে আসি। আর নতুন কেস হয়েছে কি না খবর নেওয়া দরকার।

কাছারি-বাড়িতে প্রবেশ করিয়াই সুশীল সপ্রশংসকণ্ঠে বলিল, বাঃ, বেশ ঘোড়াটি তো, বিউটিফুল হর্স! কার ঘোড়া?

সহিস ঘোড়াটায় চড়িয়া ঘুরাইয়া আনিয়া এখন মুখের লাগাম ধরিয়া ঘুরাইতেছিল। শিবু নিয়মিত চড়ে না, অথচ ঘোড়া বসিয়া থাকিলেই বিগড়াইয়া যায়, এইজন্য এই ব্যবস্থা। সুশীলের প্রশ্নের উত্তরে শিবু লজ্জিত হইয়াই বলিল, আমার ঘোড়া। বিবাহ প্রসঙ্গে সুশীলের মন্তব্য শুনিয়া তাহার মনে হইল, ঘোড়ার অধিকারিত্বের জন্যও সুশীল তীক্ষ্ণ মন্তব্য না করিয়া ছাড়িবে না।

সুশীল সবিস্ময়ে বলিল, আপনার ঘোড়া? এই ঘোড়ায় আপনি চড়তে পারেন?

এবার শিবু হাসিয়া উত্তর দিল, পারি বৈকি।

ওঃ, আপনি দেখছি, গ্রেট ম্যান–ওয়াইফ, ঘোড়া! হোয়াট মোর? আর কী আছে?

শিবু কোনো কিছু বলিবার পূর্বেই অহষ্কৃত কণ্ঠস্বরে কেষ্ট সিং বলিল, আজ্ঞে, বাইসি আছে, পালকি আছে।

পালকি! ওয়ান্ডারফুল! মনে হচ্ছে, যেন মোগল সাম্রাজ্যে চলে এসেছি ইন দি ল্যান্ড অ্যান্ড পিরিয়ড অব দি গ্রেট মোগলস।

সুশীলের কথার মধ্যে শিবনাথ যেন একটা তীক্ষ্ণ আঘাত অনুভব করিতেছিল, সে এবার ঈষৎ উত্তাপের সহিতই জবাব দিল, সে যুগ কিন্তু এই ফিরিঙ্গি যুগের চেয়ে অনেক ভাল ছিল সুশীলবাবু। উই হ্যাড আওয়ার ইন্ডিপেন্ডেন্স ইন দি ল্যান্ড অ্যান্ড পিরিয়ড অব দি গ্রেট মোগলস।

এবার পূর্ণ কথা বলিল, চমৎকার বলেছেন শিবনাথবাবু! এবার জবাব দিন সুশীলদা!

সুশীল হাসিয়া বলিল, বেলা হয়ে যাচ্ছে, আগে চল রোগী দেখে আসি, তারপর হবে। কিন্তু আপনার আর সব সহচর কই শিবনাথবাবু? আপনি কি একাই আপনাদের সেবক-সমিতি নাকি?

আমি এসেছি শিবনাথদা। কাছারি-ঘরের ভিতর হইতে বাহির হইয়া আসিল সেই ছোট ছেলেটি-শ্যামু। কাছারি-ঘরের ছবিগুলো দেখছিলাম আমি।

শিবনাথ খুশি হইয়া বলিল, তুই আসবি, সে আমি জানি। তুই একবার সক্কলকে ডাক দিয়ে আয় তো, চাল তুলতে হবে।

শ্যামু ক্ষুণ্ণ হইয়া বলিল, আমি তোমাদের সঙ্গে যাই না শিবনাথদা?

সুশীল তাহার পিঠ চাপড়াইয়া বলিল, সেনাপতির আদেশ মান্য করাই হল সৈনিকের সর্বশ্রেষ্ঠ কাজ। যাও, তোমাদের সেনাপতি যা বলছেন, তাই কর।

কোথায় মড়াকান্না রোল উঠিয়াছে, কোন্ একটা রোগী মরিয়াছে। বাকি পল্লীটা নিস্তব্ধ। আপন আপন দাওয়ার উপর সকলে বিবৰ্ণমুখে স্তব্ধ হইয়া বসিয়া আছে। পল্লীটার প্রথমেই শম্ভুদের বাড়ি; শিবনাথ প্ৰশ্ন করিল শম্ভুর মাকে, পাড়া কেমন আছে রে শ্যুর মা।

সে কম্পিতকণ্ঠে উত্তর দিল, ওগো বাবু, ভয়ে কাঁপুনি আসছে গো; বলতে যে রছি। কাল রেতে আবার ছজনার হইছে গো।

শিবনাথ শিহরিয়া উঠিল, ছজনের?

সুশীল প্ৰশ্ন করি, কেউ মরেছে নাকি? কাঁদছে—ওই যে?

তিন জন মরেছে বাবু। মুচিদের এক জনা, বাউরি এক জনা, আর ডোমেদের সেই ছেলেটা; ডোমেরা সব পালিয়েছে বাবু, মড়া ফেলে পালিয়েছে। ঘরেই কুকুরে মড়া নিয়ে ঘেঁড়াছিঁড়ি করছে। ওই দেখ কেনে, মাথার উপর শকুনি উড়ছে, দেখ কেনে!

শঙ্কুর মা শিহরিয়া উঠিয়া ভয়ে কাঁদিয়া ফেলিল, কী হবে বাবু? কী কন্ব বলেন দেখি? কোথা যাব?

শিবনাথ চিন্তিতমুখে বলিল, খুব ভয় হচ্ছে তোদের শঙ্কুর মা? এক কাজ কর, আমাদের বাগানে কালীমায়ের ঘরের পাশে যে ঘর আছে, সেখানে গিয়ে ছেলেপিলে নিয়ে থাক্। কেমন?

পূর্ণ আকাশের দিকে চাহিয়া দেখিতেছিল, শকুনির দল পাক খাইয়া নিচের দিকে নামিয়া আসিতেছে। ঘৃণায় বিকৃতমুখে সে বলিল, কী বিশ্রী! একেবারে বীভৎস!

সুশীল বলিল, আচ্ছা ডেডামেদের সেই বউটি একা আছে, তাকে জ্যান্ত খেয়ে ফেলবে না। তো? চলুন, তাকেই আগে দেখে আসি।

সমস্ত পল্লীটা জনহীন। দূরে বোধ করি মুচিপাড়ার কান্নার রোল, সে রোলকেও ছাপাইয়া এ পাড়ার একটা বাড়িতে শকুন ও কুকুরের কলহ-কলরব। ফ্যালাদের বাড়ির উঠানেও কয়টা শকুন বসিয়া বসিয়া ওই মেয়েটিকে দেখিতেছে, তাহার মৃত্যুপ্রতীক্ষায় বসিয়া আছে। মেয়েটি আতঙ্কে বোধহয় মরিয়াই গিয়াছে।

সুশীল এক লাফে দাওয়ায় উঠিয়া তাহাকে পরীক্ষা করিয়া দেখিয়া বলিল, বেঁচে আছে। জল, ওয়াটার বটু থেকে জল দিন তো শিবনাথবাবু, সাবধান, ওঠাতে যেন ছোঁয়া না লাগে।

মেয়েটির সেই ভাঁড়টায় জল ঢালিয়া লইয়া মুখেচোখে জল দিতেই তাহার চেতনা হইল। কিন্তু অলস অর্থহীন দৃষ্টি।

কিছু খেতে দেওয়া দরকার। পূর্ণ, একটু গ্লুকোজ দাও তো। বাবু! ডাক্তারবাবু! পাঁচ-সাত জন লোক আসিয়া দাঁড়াইল অন্য রোগীর বাড়ির লোক। আমাদের বাড়িতে আসেন মাশায়।

আপনি ওর মুখে একটু একটু করে গ্লুকোজ-ওয়াটার দিন। ভালই আছে, বেঁচে যাবে বলে মনে হচ্ছে। চল পূর্ণ, আমরা রোগী দেখি। শিবনাথবাবু, একে একটা পাউডার দিয়ে দেবেন। জলের সঙ্গে।

সুশীল উঠিয়া পড়িল, পূর্ণও তাহার অনুসরণ করিল।

শিবনাথ একা বসিয়া তাহার মুখে অল্প অল্প করিয়া জল ঢালিয়া দিতে আরম্ভ করিল। সম্মুখেই খোলা মাঠ, এই প্রাতঃকালেই দিচক্ৰবাল ঘোলাটে হইয়া উঠিয়াছে। পৃথিবীর বুক হইতে আকাশ পর্যন্ত বায়ুস্তর ধূলিকণায় পরিপূর্ণ। সহসা সে পায়ে স্পর্শ অনুভব করিয়া চমকাইয়া। উঠিল। কাতর দৃষ্টিতে মেয়েটি তাহার মুখের দিকে চাহিয়া আছে, চোখ দুইটি হইতে জলের ধারা গড়াইয়া পড়িতেছে; মেয়েটিই হিমশীতল হাত দিয়া তাহার পা ধরিয়াছে।

শিবনাথ ব্যস্ত হইয়া বলিল, কাঁদছ কেন তুমি? তুমি তো ভাল হয়ে গেছ।

ক্ষীণকণ্ঠে মেয়েটি বলিল, ওগো বাবু, আমাকে জ্যান্ত খেয়ে ফেলাবে গো!

সে ফোঁপাইয়া দিয়া উঠিল। সম্মুখে উঠানে তখনও একটা শকুনি তীক্ষ্ণদৃষ্টিতে চাহিয়া বসিয়া ছিল।

শিবনাথ বলিল, ওর ব্যবস্থা এখুনি হচ্ছে, ভয় কী তোমার, তোমাকে না হয় ঘরের মধ্যে শুইয়ে দিয়ে যাচ্ছি।

সে শিহরিয়া বলিয়া উঠিল, ওগো না গো, ঘরের ভেতর অ্যাঁধার কোণে যদি সে বসে থাকে?

কে?—শিবু আশ্চর্য হইয়া গেল।

সে।

ও। শিবু এতক্ষণে বুঝিল, সে ফ্যালার কথা বলিতেছে। অনেক ভাবিয়া সে বলিল, তোমার বাপ-মা কেউ নেই?

আছে, কিন্তুক সন্মা বাবাকে আসতে দেবে না বাবু।

তবে? আচ্ছা, ওষুধটা খেয়ে নাও দেখি। হাঁ কর, হ্যাঁ।

শিবনাথ ভাবিতেছিল, কী উপায় করা যায়। মেয়েটিকে আগলাইয়া এখানে থাকা তো। সম্ভবপর নয়। তাদের বাড়িতে লইয়া যাওয়াও চলে না।

কী হবে বাবু মশায়?—মেয়েটির চোখ আবার জলে ভরিয়া উঠিয়াছে।

দেবতার নাম করবে, ভগবানের নাম করলে তো ভূত আসতে পারে না।

মেয়েটি এবার আশ্বস্ত হইয়া বলিল, আমাকে চণ্ডীমায়ের একটুকুন পুষ্প এনে দেবা বাবু? তা হলে আমি খুব থাকতে পারব।

শিবু স্বস্তির নিশ্বাস ফেলিয়া বলিল, তা দেব এনে। এখন একটা কাগজে রামনাম লিখে তোমার মাথার শিয়রে দিয়ে যাচ্ছি। তুমি ঘরে শোবে চল।

তাহাকে ঘরে শোয়াইয়া দিয়া, শিবু পকেট হইতে কাগজ-পেন্সিল লইয়া রামনাম লিখিয়া দিল। কাগজটি মাথায় ঠেকাইয়া সেটি শিয়রে রাখিয়া দিয়া পরম নিশ্চিন্তে সে চোখ বুজিল। বেচারি শ্ৰান্ত হইয়া পড়িয়াছে। শিবু তাহাকে শিশুর মতই বহন করিয়া আনিলেও এই নাড়াচাড়ার পরিশ্রমেই তাহার অবসাদ আসিয়াছে। শিবু দরজাটি ভেজাইয়া বাহির হইয়া আসিল।

বাবু!—মেয়েটি আবার ডাকিল।

কী? আবার ভয় করছে?

না।

তবে?

ঈষৎ লজ্জার হাসি হাসিয়া মেয়েটি বলিল, চারটি মুড়ি দেবা বাবু? বড় ফিদে নেগেছে। সর্বনাশ! মুড়ি এখন খেতে আছে? ও-বেলায় বরং বার্লি এনে দোব।

সে বাড়ি হইতে বাহির হইয়াই শিবুর সেই বিকৃতমস্তিষ্ক গাঁজাখোরটির সহিত দেখা হইয়া গেল। সে তখন পাশের বাড়ির উঠানের দলবদ্ধ শকুনির দলকে ঢেলা মারিয়া কৌতুক করিতেছিল। ঢেলা মারিলেই শকুনির দল পাখা মেলিয়া খানিকটা সরিয়া যায়, ঢেলাটা চলিয়া গেলে তাহারা আবার গলা বাড়াইয়া পাখা ফুলাইয়া তাড়া করিয়া আসে।

শিবু হাসিয়া বলিল, কী হচ্ছে?

সে মুখ বিকৃত করিয়া বলিল, আজ্ঞে, বেটাদের ফলার লেগে গিয়েছে। এঃ, খেছে দেখুন কেনে! পেটটা ফুটো করে ফেলেছে, ফুটোর ভেতর গলাটা ঢুকিয়ে ঢুকিয়ে খেছে। এ!

সত্যই সে দৃশ্য বীভৎস, ভয়াবহ। শিবনাথ চিন্তিতমুখে বলিল, কিন্তু কী করা যায় বলুন দেখি? গ্রামের ভেতরেই যে শ্মশান হয়ে উঠল!

কেউ যদি কিছু না বলে, তা হলে আমি মাশায় ফেলে দিতে পারি।

আপনি পারেন?

হ্যাঁ, ঠ্যাঙে দড়ি বেঁধে বেটাকে হুই লাঘাটার ধারে দিয়ে আসব টেনে ফেলে।

আপনি দেবেন?

তা খুব পারি মাশায়। পুঁতে দিতে বলেন, তাও পারি; থাকুক বেটা উঠোনেই গাড়া। কিন্তু শেষে যদি গাঁয়ের লোকে পতিত করে?

আমি যদি আপনার সঙ্গে পতিত হয়ে থাকি?

দেখেন! কই, পৈতে ছুঁয়ে দিব্যি করেন দেখি।

হাসিয়া শিবনাথ পৈতা বাহির করিয়া শপথ করিল। পাগল মহা উৎসাহিত হইয়া বলিল, চলেন তবে, একগাছা দড়ি নিয়ে আসি।

বাউরিপাড়ার মধ্যে প্রবেশ করিয়া কিছুদূর অগ্রসর হইতেই সুশীল ও পূর্ণের সহিত দেখা হইয়া গেল, তাহাদের সঙ্গে শ্যামুও আসিয়া জুটিয়াছে। একা শ্যামুই, আর কেহ নাই। শিবনাথ সর্বাগ্রে শ্যামুকেই প্রশ্ন করিল, কই রে, আর সব কই?

সুশীল হাসিয়া বলিল, আপনার সৈন্যবাহিনী সব পৃষ্ঠপ্রদর্শন করেছে।

শ্যামু বলিল, প্রায় সব গাঁ ছেড়ে পালাচ্ছে শিবুদা। দেখগে, কমলেশদা আর তার বড়মামা এসে বসে আছেন তোমাদের বাড়িতে। তোমাকেও কাশী যেতে হবে।

শ্যামুও একটু ব্যঙ্গের হাসি হাসিল।

শিবনাথ উত্তপ্ত হইয়া উঠিল, কিন্তু সে উত্তাপ অন্তরে আবদ্ধ রাখিয়াই সুশীলকে প্ৰশ্ন করিল, এদিকে সব কেমন দেখলেন?

চিন্তিতমুখে সুশীল বলিল, ক্রমশই গুরুতর হয়ে দাঁড়াচ্ছে শিবনাথবাবু, একটা কাজ অবিলম্বে করা দরকার প্রিভেশনের ব্যবস্থা। যাদের বাড়িতে রোগ হয়েছে, তাদের সঙ্গে পাড়ার সংস্রব বন্ধ করতে হবে। জলজলের হেঁয়াচ আগে বন্ধ করতে হবে। তারা যেন পুকুরে নেমে জল খারাপ করতে না পারে। পুকুরে পুকুরে পাহারা রাখতে হবে। রোগীর বাড়ির প্রয়োজনমত জল তারাই তুলে তাদের পাত্রে ঢেলে দেবে, আর চিকিৎসার জন্যে ইন্ট্রাভেনাস স্যালাইনের ব্যবস্থাও করতে হবে।

শিবু চিন্তান্বিত হইয়া পড়িল, তাহার সহায় বন্ধুবান্ধব কেহ নাই। একা সে কী করিবে? বুকের মধ্যে বল যেন কমিয়া আসিতেছে। এই এতগুলি লোকের খাদ্য, ইহাদের জীবন-মরণসমস্যার সমাধান সে একা কী করিয়া করিবে?

পাগল নীরবতা ভঙ্গ করিল, দড়ি দ্যান বাবু।

সুশীল প্ৰশ্ন করিল, দড়ি কী হবে?

উনি ওই মড়াটাকে ফেলে দেবেন পায়ে বেঁধে।

গাঁজার কিন্তু চারটে পয়সা লাগবে বাবু। আচ্ছা করে কষে এক দম দিয়ে, দিয়ে আসছি। ব্যাটাকে গাছাড়া করে।

পাগল যুদ্ধের ঘোড়ার মত রীতিমত অস্থির হইয়া উঠিয়াছে।

সুশীল সবিস্ময়ে প্রশ্ন করিল, আপনি গাঁজা খান নাকি?

গাঁজা খাই, মদ খাই, চরস খাই, সিদ্ধি খাই, কেলে সাপের বিষ পেলে তাও খাই।

বলেন কী?—সুশীলের বিস্ময়ের আর অবধি রহিল না।

দিয়ে দেখেন কেনে। বাবু তো খুব হয়েছেন, কোট কামিজ জুতো! কই, দ্যান দেখি একটা টাকা, নেশা করি একবার পেট ভরে।

আচ্ছা তাই চলুন, একটা টাকাই দোর আপনাকে, কিন্তু আমাদের সামনে বসে নেশা করতে হবে।

কাছারিতে ফিরিতেই রাখাল সিং বলিলেন, গোঁসাই-বাবা তিন মন চাল পাঠিয়েছেন দেবার জন্যে।

সেই যাত্রাপাগল চুলওয়ালা বন্ধুটিও বসিয়া আছে; সে বলিল, কই হে, আমাদের কাজটাজ দাও!

শিবু আশ্বাসের দীর্ঘনিশ্বাস ফেলিল। রাখাল সিং আবার বলিলেন, আপনার মামাশ্বশুর এসে বসে আছেন।

শিবু বলিল, বলে দিন গিয়ে, আমি কাশী যাব না।

মাথা চুলকাইয়া সিং মহাশয় বলিলেন, কিন্তু গেলেই যেন ভাল হত বাবু, এই রোগ–না।

তা আমার বলাটা কি ভাল দেখায়, আপনি নিজে–

বাধা দিয়া শিবু বলিল, আমার হাতেপায়ে রোগীর ছোঁয়াচ, এ নিয়ে এখন কী করে বাড়ির মধ্যে যাব?

রাখাল সিংই অগত্যা সংবাদ বহন করিয়া লইয়া গেলেন। সুশীল বলিল, কিন্তু বউ আপনার রাগ করবে শিবনাথবাবু।

শিবু চিন্তা করিতেছিল, আরও লোক কোথায় পাওয়া যায়; সুশীলের কথাটা তার কানে গেলেও শব্দার্থ তাহাকে লজ্জিত অথবা পুলকিত করিতে পারি না। শিবনাথের মনের মধ্যে এত লোকের ভিড় দেখিয়া, কলরব শুনিয়া ছোট্ট গৌরী সসঙ্কোচে অবগুণ্ঠন টানিয়া যেন কোন্ অন্ধকার কোণে নিতান্ত অনাদৃতার মতই পড়িয়া ঘুমাইয়া পড়িয়াছে। সুশীলের হাত ধরিয়া শিবনাথ বলিল, চলুন, একবার থানায় যাব, চৌকিদারের সাহায্য না পেলে পুকুর পাহারা দেওয়ার কাজ হয়ে উঠবে না।

চুলওয়ালা বন্ধুটি বলিল, গানটান বেঁধেছ হে? সুরটা করে ফেলতাম তা হলে।

শিবু সুশীলকে লইয়া বাহির হইয়া গেল। পাগল বিরক্তিভরে বলিল, এই দেখ, ডাকব তো বলবে, পিছু ডাকলে। আমি এখন দড়ি পাই কোথা বল দেখি।

পাগলের কথায় কেহ কান দিল না। পাগল বসিয়া থাকিতে থাকিতে সহসা উঠিয়া গোশালার দিকে চলিয়া গেল। গরু-বাঁধা দড়ি নিশ্চয় আছে।

দিন তিনেক পরে।

শিবু আশ্চর্য হইয়া গেল যে, এই ভয়ঙ্কর মৃত্যু-বিভীষিকার মধ্যে মানুষ যা ছিল তাই আছে, একবিন্দু পরিবর্তন কাহারও হয় নাই। একটা গলিপথে যাইতে যাইতে সে শুনিল, সেই যে কথায় কথায় আছে, কোলে মরবে, জোলে ফেলবে, তবু না পুষুনি দোব—সেই বিত্তান্তের বিত্তান্ত। শৈলজাঠাকরুন বউয়ের হাড়ির ললাট ডোমের দুৰ্গতি করবে, দেখো তোমরা, আমি বলে রাখলাম। ওই একমাত্র ছেলে, মামাশ্বশুর একে কাশী নিয়ে যেতে চাইলে, কী অন্যায়টা সে বলেছিল! তা। এই মহামারণের মধ্যে ছেলেকে রেখে দিলে, তবু যেতে দিলে না, পাছে বউয়ের সঙ্গে ভাব হয়।

শৈলজা-ঠাকুরানীর নাম শুনিয়াই সে দাঁড়াইয়া মন্তব্যটা শুনিল। মনটা তাহার ভালই ছিল, আজ এই ভয়াবহ বিশৃঙ্খলার মধ্যেও সকল কাজেই একটা শৃঙ্খলা আসিয়াছে। চৌকিদারের সাহায্যে পুকুরগুলি রক্ষার ব্যবস্থা হইয়াছে, চুলওয়ালা বন্ধুটি ও শ্যামু চাল সগ্ৰহ করিতে আরম্ভ করিয়াছে। ওই অকেজো ঘৃণ্য পাগল করে সকলের চেয়ে বড় কাজএকটি নয়, একটি একটি করিয়া তিনটি শবের গতি সে করিয়াছে। ডিস্ট্রিক্ট বোর্ড হইতে প্রেরিত এক ভদ্রলোক ম্যাজিক ল্যান্টার্ন সহযোগে কলেরার বিষয়ে বক্তৃতা দিতে আসিয়াছেন। সকলের চেয়ে বড় কথা, তাহার পিসিমা ও মা তার কাজের গুরুত্ব বুঝিয়াছেন, অভয়দাত্রীর মত তাহার মাথায় হাত বুলাইয়া আশীর্বাদ করিয়াছেন। শিবু এই সমালোচনা শুনিয়া একটু হাসিল।

সমালোচকটি কঠোর সমালোচক, সত্য কথা বলিতে দুর্গা-ঠাকরুন কোনোদিনই পশ্চাৎপদ হন না। হাজার যুক্তিতর্কেও হার মতের পরিবর্তন হয় না, টুকরা টুকরা করিয়া তাহার। যুক্তিগুলি খণ্ডন করিলেও না; আপন মন্তব্যও কখনও তিনি প্রত্যাহার করেন না। যে যাহাই বলিয়া যাক, তিনি সেই আপনার কথাই বলিয়া যান। কিন্তু আজিকার এ কথাটার মধ্যে খানিকটা যেন সত্য ছিল। রামকিঙ্করবাবু এবং কমলেশ শিবনাথকে কাশী লইয়া যাইবার জন্য প্রস্তাব করিতেই। পিসিমা বলিলেন, বেশ শিবনাথকে বল; আমি তো তাকে নিয়ে সরে যেতেই চেয়েছিলাম, কিন্তু

সে-ই গেল না। তাকেই বল।

রামকিঙ্করবাবু বলিলেন, আপনারা পাঠালে শিবনাথ যাবে না, এ কি কখনও হয়? সে কি। এর মধ্যে স্বাধীন হয়েছে নাকি?

কথাটা শৈলজা-ঠাকুরানীকে গিয়া বিধিল। কথাটার সরলার্থ হইতেছে, আপনারাই আসলে পাঠাতে চান না, শিবনাথের মতটা নিতান্তই একটা অজুহাত। তিনি সে কথা প্ৰকাশ না করিয়া। রামকিঙ্করেরই কথার জবাব দিলেন, শিবনাথ স্বাধীন না হলেও বড় হয়েছে, তার মত এখন ফেলা চলে না। আর একটা কথা কী জান, ছেলে ছোট হোক আর বড়ই হোক, ভাল কাজ করলে বাধা কী করে দেব, বল? শিবু তো অন্যায় কিছু করে নি।

অবরুদ্ধ ক্রোধে রামকিঙ্কর অন্তরে অন্তরে ফুলিয়া উঠিলেন, তিনি বলিলেন, অন্যায় না। হোক, বিপদ আছে। শিবুর জীবন নিয়ে আর আপনারা ইচ্ছামত খেলা করতে পারেন না।

শৈলজা-ঠাকুরানীও মুহূর্তে মাথা খাড়া করিয়া সবিস্ময়ে বলিয়া উঠিলেন, খেলা! শিবুর জীবন নিয়ে আমরা খেলা করছি! এমন অপ্রত্যাশিত অকল্পিত অভিযোগের উত্তর তিনি বিশ্বব্ৰহ্মাণ্ড খুঁজিয়াও পাইলেন না। উন্নত মস্তকে দৃপ্ত দৃষ্টিতে শুধু আপনার নিষ্কলুষ মহিমাকে ঘোষণা করিয়া রামকিঙ্করবাবুর মুখের দিকে চাহিয়া রহিলেন।

উত্তর আসিল গৃহান্তরাল হইতে। জ্যোতির্ময়ী উত্তর দিলেন, হ্যাঁ, খেলাই। এক বয়সে মানুষ পুতুল নিয়ে খেলা করে, পুতুল খেলার বয়স গেলে ভগবান দেন রক্তমাংসের পুতুল মানুষকে খেলবার জন্যে। সে খেলায় বাধা দেবার অধিকার তো কারও নেই।

রামকিঙ্করের প্রকৃতি দুর্দমনীয় প্রভুত্বের আত্মম্ভরিতার মত্ততায় পরিপূর্ণ, সংসারে প্রতিবাদ বা বাধা পাইলে তিনি আত্মহারা হিংস্র হইয়া ওঠেন। এ উত্তরে তাহার চোখ রক্তবর্ণ হইয়া উঠিল; বলিলেন, জানেন, শিবুর জীবনের ওপর একটি দুগ্ধপোষ্য বালিকার জীবন নির্ভর করছে?

এবার শৈলজা-ঠাকুরানী বলিলেন, জানি না? হিন্দুর মেয়ে, বৈধব্য ভোগ করছি, আমরা সে কথা জানি না? শিবুর ওপর অধিকার যা আছে, সে সেই বা পকারই আছে, তোমার নেই। সে

অধিকার জারি করতে পারে শুধু সে-ই।

বাহির হইতে গলার সাড়া দিয়া রাখাল সিং বাড়ির মধ্যে প্রবেশ করিলেন এই মুহূর্তটিতেই, সবিনয়ে আক্ষেপ করিয়া বলিলেন, বাবু তো কাশী যাবেন না বলে দিলেন। তিনি ডাক্তারকে নিয়ে থানায় গেলেন কী কাজে। আমি বার বার–

গম্ভীরভাবে রামকিঙ্কর বলিলেন, থাক। এস কমলেশ।

তিনি কমলেশের হাত ধরিয়া অগ্রসর হইলেন। শৈলজা-ঠাকুরানী বলিলেন, অধিকার শুধু তো শিবুর ওপর তোমাদেরই নেই, শিবুর বউয়ের ওপর অধিকার আমাদেরও আছে। আমার বউ পাঠিয়ে দেবে তোমরা।

রামকিঙ্করবাবু ফিরিয়া দাঁড়াইয়া বলিলেন, তার ওপর যা অধিকার, সে কেবল শিবুরই আছে। শিবনাথ যখন যাবে সে দাবি নিয়ে, তখন সে আসবে।

কমলেশের হাত ধরিয়া দৃপ্ত ক্রুদ্ধ পদক্ষেপে রামকিঙ্করবাবু চলিয়া গেলেন। পিসিমা কিছুক্ষণ চুপ করিয়া থাকিয়া বলিলেন, আমার বউ এই মাসেই আমি আনব, কে ঠেকায় আমি দেখব।

জ্যোতির্ময়ী বলিলেন, না, এরপর আর সে হয় না ঠাকুরঝি।

দুর্গা-ঠাকুরানী ঘরে বসিয়া এই কথারই সমালোচনা করিতেছিলেন। শুধু শৈলজা-ঠাকুরানী নয়, জ্যোতির্ময়ীও বাদ গেলেন না। শিবু কিন্তু সমালোচনা শুনিয়া রাগ করিল না, হাসিল। আশ্চর্য, এই কর্মসমারোহের মধ্যে পড়িয়া শিবু অনুভব করে, মানুষের প্রতি শ্রদ্ধা স্নেহ অনুকম্পা ঘৃণা আক্রোশ–এ যেন সে ভুলিয়াই গিয়াছে।

ঠাকুরবাড়িতে আসরের ব্যবস্থা করিতে হইবে, সন্ধ্যায় সেখানে ম্যাজিক-ল্যান্টার্ন দেখানো হইবে।

তাহার আর দাঁড়াইয়া দুর্গা-ঠাকুরানীর সমালোচনা শুনিয়া উপভোগ করিবার সময় হইল। না, হাসিতে হাসিতেই সে অগ্রসর হইল।

ঢাক বাজিতেছে। সদর রাস্তায় রাস্তায় ঢাক বাজাইয়া বোধহয় কিছু ঘোষণা করিয়া চলিয়াছে। বোধহয় সামাজিক কোনো অনুশাসন। সরকারি কাজের ঘোষণা হইলে ঘেঁড়ি বাজিয়া থাকে, সামাজিক ঘোষণায় বাজে ঢাক। কিসের ঘোষণা? সহসা এই বিপর্যয়ের মধ্যে সমাজ সচেতন হইয়া উঠিল কেমন করিয়া?

রক্ষেকালীর পুজো হবে, পরশু অমাবস্যের দিন। চাঁদা লাগবে, চাল লাগবে সব। দেবাংশী দোরে মালসা পেতে দেবে, সরষে-পোড়া ছড়িয়ে দেবে।

দুর্গা-ঠাকুরানীও বাহির হইয়া আসিয়াছিলেন। দুইটি হাত জোড় করিয়া উদ্দেশে অনাগত দেবীকে প্রণাম জানাইয়া বলিলেন, এইবার আসল বিহিতটি হল। মা আসবেন, এসে এক রেতে তেড়ে বার করবেন গা থেকে। এই কী বলে গো, এই ইয়ে গাঁয়ে এক মাস কলেরা, শেষে যেদিন রক্ষেকালী পুজো হল, সেদিন রেতে পথে পথে সে কী কান্না মা! তারপর এই ভোরবেলাতে এই কালো বিভীষণ চেহারার এক মেয়ে এক চেটাই বগলে গাঁ থেকে বেরিয়ে গেল।

শিবনাথ হাসিয়া বলিল, কে দেখেছিল?

অঃই, অঃই ঠাট্টা আরম্ভ হল! তোমরা বাবা এখনকার ছেলে, তোমাদের কাজটাই তোমাদের কাছে বড়, আর সব ঠোঁট উলটানো আর ঠাট্টা, সব মিছে কথা। তা বাবা, মিছেই। বটে বাবা, মিছেই বটে। তোমরা বড়লোক, তোমরা বিদ্বেন, তোমরা পরোপকারী, তোমরা সব; আর আমরা ছোটলোক, আমরা পাজি, আমরা ছুঁচো, আমরা মুখ, হল তো বাবা।

শিবু একেবারে হতবাক নিস্তব্ধ হইয়া তাহার মুখের দিকে চাহিয়া চলিয়া গেল। দুর্গাঠাকুরানী আর দাঁড়াইলেন না, বাড়ি ফিরিলেন। ফিরিতে ফিরিতে এবার বিজয়গর্বে সদম্ভে বলিলেন, দেখ দেখি, বলে কিনা, আমরাই সব করছি। বলি, তুই কে রে বাপু, তুই কে?

শিবনাথ ক্ষুণ্ণমনেই চলিতে চলিতে অকস্মাৎ আবার হাসিয়া উঠিল। দুর্গা-ঠাকুরানীর রণকৌশলটি বড় ভাল। চমৎকার!

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress