দেড় ইঞ্চিদের জ্বালাতন
আর সহ্য হচ্ছে না । এ কি জ্বালাতন। না হয় হয়েছি একটু আধবুড়ো। বাচ্চাদের ভালোবাসি। যতটা পারি তাদের খেয়াল রাখি , তা বলে উৎপাত । দিনের বিশ্রাম , রাতের ঘুম , সব উধাও ? আরে বাবা খেতে দিচ্ছি সময়মত। পুরো স্বাধীনতা দিয়েছি। আর তোরা ! দিলি একটা আস্ত গেঞ্জি কেটে ? তোদের এতই খেলা করার ইচ্ছে ? এই ঠান্ডায় আমি কি গায়ে চাপাবো তোদের মা-বাপ কেউ ভেবেছে। কমপ্লেন করলাম , বলে – বাদ দাও, ওরা বাচ্চা, কিনে নাও না বাপু একটা, ওইটা কাটবে না , আমি বলে দেবোখন। আশ্চর্য। যতদূর জানি একটু বুড়ো হলে লোকে নাতি পুতিকে নিয়েই থাকতে চায়। আমিও তার ব্যতিক্রম নই। তাদের ভালোবাসি , স্নেহ করি , যা ভালোবাসে যতটা পারি সেই খাবরটাই দিয়ে থাকি। ওরা গোটা বাড়ি জুড়ে খেলে বেড়ায়। এজমালি বাড়ি। অন্যরা কমপ্লেন করে। মিনতি করে বলি ওরা তো তোমাদের ক্ষতি করছে না। ঘর দুয়ারও ভাঙছে না , একটু না হয় হুটোপাটি করছে, মেনে নাও না। ওরা কি আর বলবে , আমি আধবুড়ো লোক, হতেই পারে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে সব মেনে নিচ্ছে। এই তো বড়দিনের কথা। সকাল থেকেই চেল্লাছে ” কেক খাবো, কেক খাবো ” , বাধ্য হয়েই ওই বৃষ্টি আর ঠান্ডার মধ্যেই দোকানে গেলাম। বেশ তৃপ্তি করে কেক খেলো। দুপুরে রুটি আর আলু ফুলকপির ডালনা দিলাম। বেশ গম্ভীর হয়ে সকলে বললো – পেট ভরা , তুমি খাও। বাধ্য। রাতে শুরু করলো ” জিঙ্গল বেল ” গান। ওফ সে কি গান, যে শুনেছে সে বুঝেছে। সরগমের ষষ্ঠী পূজো করে ওনাদের গান আর হুল্লোড় চললো প্রায় সারা রাত ধরে। ঘুম শিকেয়। নিজেদের মধ্যে আকছার মারামারি হয়। আমাকেই সামলাতে হয়। এইভাবেই কেটে গেল সারারাত। আপনারাই বলুন , কেউ ঘুমাতে পারে এই অবস্থায়। পরেরদিন আরেক নাটক, সবে শুয়েছি- হটাৎ চুলে টান। তড়িঘড়ি উঠে আলো জ্বালিয়ে দেখি দুটো বদমাশ এই কাজ করছে আর বাকিরা র্যাকে বসে তামাশা দেখছে। যেন ব্রাজিল আর্জেন্টিনার ফুটবল খেলা হচ্ছে বিশ্বকাপে। পরেরদিন মেয়েকে ডেকে কড়া ধমক দিতে তার বক্তব্য হলো সে দেখছে তা বলে আমি যেন ওদেরকে না বকি বা ওদের বিরুদ্ধে কোন প্রতিহিংসা মূলক ব্যবস্থা না নিই। অতীত মনে রেখে মেনে নেওয়া ছাড়া রাস্তা ছিল না। অগত্যা। এরপর গতকাল। তখন রাত প্রায় দুটো, অঘোরে ঘুমাচ্ছি। হটাৎ কানের কাছে #রুদালি। ঘরফর করে ঘুম থেকে উঠে আলো জ্বালিয়ে দেখি ঐ বদমাশ ছ জন প্রায় হাতজোড় করে কাঁদো কাঁদো মুখে তাদের বক্তব্য জানাতে চাইছে। ঘুমভরা চোখে কি হয়েছে জানতে চাইলে দরজা খুলে দেখার ইঙ্গিত দিলো। দরজা খুলেই দেখি একটা ডাঁশ বেড়াল বসে আছে দরজা তাক করে। এতক্ষণে বুঝলাম। তা ওই বেড়ালটা আমার অচেনা , দরজা খুলতেই পালিয়ে গেল ঠিক কথাই, এদের তখন শুরু হলো বিজয় উৎসব। তারপর থেকে সারারাত জেগে। আজ ঠিক করেছি সময়ে খেতে দেবো না। এখনও দিই নি। ওনারা গন্ধ পেয়ে যা হুজ্জতি করছে তা বলার নয়। ভাব এমন যে দাদু যদি না হতে তবে দরজার খিল খুলে পেটাতাম। খেতে তো দেবোই তবে আরও পরে। এরাই এখন মাথাব্যথার কারণ। এদিকে ইঁদুর ধরা সেই সাবেক কল আর দোকানে বাজারে পাওয়া যাচ্ছে না। আমি তো মহা মুশকিলে অছি। আর আজকাল ঐ আঠা দেওয়া প্যাডও কিনবো না। বেচারাগুলো যদি আটকে যায় তবে বেঘোরে মরবে। এতটা নৃশংস হতে পারবো না। এর মধ্যেই পাড়ার নেড়ি ল্যাজকাট্টির ছানা ভুটুমকে এনেছিলাম দুদিন ওদের শায়েস্তা করতে। সে গুড়ে বালি- ভুটুমও ওদের বন্ধু হয়ে গেল। এখন তাই এই দেড় ইঞ্চি ইনটু সিক্স এই নেংটিগুলোই ভাবাচ্ছে – ওদের ভবিষ্যত আর আমার ভবিষ্যত। যাই গো সকলে এইবার ওদের একটু খেতে দিতে আসি। তবে রাতের ঘুম যে গেল তা নিশ্চিত।
শ্রদ্ধা ও শুভেচ্ছা নিবেদন…
সন্মান শিল্পীকে প্রেরণা জাগায়।
জয় হোক কলমের।
জয় হোক মানবের।
” যাযাবর……. “
অত্যন্ত আনন্দিত হলাম