দেবদূত
হাসপাতালের গাইনি বিভাগের ইনচার্জ সুপ্রিয়া মাকে জানায় থানা থেকে পুলিশ এসে হাসপাতালে মেয়েটিকে আশঙ্কা জনক অবস্থায় ভর্তি করে দিয়ে যায়। নাম জিজ্ঞেস করলাম বলতে পারল না।বিড়বিড় করে আমার দিকে তাকিয়ে হাসল। মাথায় হাত বুলিয়ে ওর মনের কথা জানার চেষ্টা করলাম।অনেক পরে
কাঁদতে কাঁদতে শুধু বলল রাজু তুই কোথায়?
অনেকবার জিজ্ঞেস করলাম রাজু কে?কোথায়
থাকে? ওর বাড়ি কোথায়? কিচ্ছু বলতে পারল
না।অথচ ও মা হতে চলেছে।
আমি ওকে লেবার রুমে রেখে রুগি দেখতে যাই।এসে দেখি মেয়েটি নেই।রাস্তায় রওনা দিয়েছে।
হাসপাতালের দারোয়ান ওকে আবার ধরে নিয়ে
আসে।আর মেয়েটি আঙুল দেখিয়ে কেঁদে ডাকে
রাজু রাজু?
সুপ্রিয়ার কথা শুনতে শুনতে মায়ের দুচোখ জলে
ভরে যায়।এইরকম পাষণ্ড তো আমার জীবনেও
এসেছিল।তবে তুমি যে বলেছিলে পথ দুর্ঘটনায়
মারা গেছে আমার বাবা। মিথ্যে বলেছিলাম নিজের লজ্জায়।লজ্জা কেন গো।এখন সিঙ্গেল
মাদার পরিচয়ে পরিচিতি হয়।আমি তো তোমার
পরিচয়েই সকলের কাছে পরিচিত।তবে এখন আমি সম্পূর্ণ নিজের পরিচয়ে বাঁচতে চাই।
পাগলীর একটি ফুটফুটে ছেলে হয়েছে। জন্মের পর থেকেই শিশুটি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে। ‘পাগলী’ মা শিশুটির দেখভাল করে না। বিভিন্ন সময় হাসপাতাল ছেড়ে চলে যায় আবার ফিরে আসে।
হাসপাতালের নার্স ও আয়াদের কোলেই বেড়ে উঠছে শিশুটি। তবে মানসিক ভারসাম্যহীন মেয়েটির কোনো স্বজনের দেখা মেলেনি।
ঘটনাটি সমাজসেবা অধিদপ্তর ও আদালতকে অবহিত করা হলে মানসিক ভারসাম্যহীন মা ও শিশুর জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নির্দেশনা দিয়েছেন আদালত।
নির্দেশনায় বলা হয়েছে, যেহেতু মানসিক ভারসাম্যহীন মা শিশুটিকে লালন পালনে অক্ষম সেহেতু মাকে চিকিৎসার জন্য মানসিক হাসপাতাল ও শিশুকে শিশু কল্যাণ সংস্থায় পাঠাতে হবে।
মা শুনে বলল তবে তো শিশুটির দেখাশোনা থাকার ব্যবস্থা হয়ে গেল। তোর আর চিন্তা করে
লাভ নেই।
না মা আমি ভেবেছি।
কি ভাবছিস?
জানো ফুটফুটে শিশুটির আমি নাম দিয়েছি দেবদূত কেউ ডাকে এঞ্জেল কেউবা ফরিস্তা।অনেকেই শিশুটিকে দত্তক নিতে আগ্রহী। তাদেরকে শিশু কল্যাণ সংস্থা ও আদালতের শরণাপন্ন হতে বলা হয়েছে।
আমি ভাবছি শিশুটিকে দত্তক নেব।
মা শুনে বলল ওই পাগলীর সংস্পর্শে থেকে তুইও
পাগলী হয়ে গেছিস।আগে তোর বিয়ে তারপর তুই ছেলেটিকে দত্তক নেওয়ার কথা ভাববি।