ইচ্ছে করে , মা , যদি তুই হতিস দুয়োরানী ! ছেড়ে দিতে এমনি কি ভয় তোমার এ ঘরখানি । ওইখানে ওই পুকুরপারে জিয়ল গাছের বেড়ার ধারে ও যেন ঘোর বনের মধ্যে কেউ কোত্থাও নেই । ওইখানে ঝাউতলা জুড়ে বাঁধব তোমার ছোট্ট কুঁড়ে , শুকনো পাতা বিছিয়ে ঘরে থাকব দুজনেই । বাঘ ভাল্লুক অনেক আছে , আসবে না কেউ তোমার কাছে , দিনরাত্তির কোমর বেঁধে থাকব পাহারাতে । রাক্ষসেরা ঝোপে ঝাড়ে মারবে উঁকি আড়ে আড়ে , দেখবে আমি দাঁড়িয়ে আছি ধনুক নিয়ে হাতে । আঁচলেতে খই নিয়ে তুই যেই দাঁড়াবি দ্বারে অমনি যত বনের হরিণ আসবে সারে সারে । শিঙগুলি সব আঁকাবাঁকা , গায়েতে দাগ চাকা চাকা , লুটিয়ে তারা পড়বে ভুঁয়ে পায়ের কাছে এসে । ওরা সবাই আমায় বোঝে , করবে না ভয় একটুও যে , হাত বুলিয়ে দেব গায়ে , বসবে কাছে ঘেঁষে । ফলসা - বনে গাছে গাছে ফল ধরে মেঘ করে আছে , ওইখানেতে ময়ূর এসে নাচ দেখিয়ে যাবে । শালিখরা সব মিছিমিছি লাগিয়ে দেবে কিচিমিচি , কাঠবেড়ালি লেজটি তুলে হাত থেকে ধান খাবে । দিন ফুরোবে , সাঁঝের আঁধার নামবে তালের গাছে । তখন এসে ঘরের কোণে বসব কোলের কাছে । থাকবে না তোর কাজ কিছু তো , রইবে না তোর কোনো ছুতো , রূপকথা তোর বলতে হবে রোজই নতুন করে । সীতার বনবাসের ছড়া সবগুলি তোর আছে পড়া ; সুর করে তাই আগাগোড়া গাইতে হবে তোরে । তার পরে যেই অশথবনে ডাকবে পেঁচা , আমার মনে একটুখানি ভয় করবে রাত্রি নিষুত হলে । তোমার বুকে মুখটি গুঁজে ঘুমেতে চোখ আসবে বুজে — তখন আবার বাবার কাছে যাস নে যেন চলে !