দায়িত্ব
মোবাইলে বেজে চলেছে, ‘ হে দয়াল বিচার কর ….. ‘
অবিনাশ বাবু মোবাইল তুলে বললেন,
-হ্যালো, কে?
-আপনি কি অবিনাশ হালদার বলছেন?
-হ্যাঁ, বলছি।
-শাশ্বত কি আপনার ছেলে?
-হ্যাঁ, আপনি কে বলছেন?
-আমি আপনার ছেলের স্কুল থেকে বলছি। অমর ব্যানার্জী। হেড-মাষ্টার।
-আচ্ছা স্যার। কেমন আছেন?
-ভাল আছি। আপনার ছেলে সম্পর্কে কিছু কথা ছিল বলার।
-হ্যাঁ বলুন।
-ও তো টেষ্ট পরীক্ষায় পাশ করেনি। আপনাকে কি বলেছে?
-হ্যাঁ, বলেছে।
-আমাদের স্কুলের কিছু নিয়ম-কানুন আছে। ফেল করলে আমরা ছাত্রদের আবারও পরীক্ষায় বসে পাস করার সুযোগ দিই। এরপরও ফেল করলে আর তাকে স্কুলে রাখার নিয়ম নেই।
-তা, এসব আমাকে বলছেন কেন?
-না, মানে, বলছিলাম আপনার ছেলে ফেল করেছে। আপনার কি উচিত নয তার পড়াশোনার প্রতি খেয়াল রাখা?
-আমিই যদি ওর পড়াশোনার খেয়াল রাখব, তাহলে আপনি কী জন্যে আছেন?
-না, মানে আমি বলছিলাম আপনি ওকে বোঝাতে পারেন।
-শিক্ষক হিসেবে আপনি কি তাকে বুঝিয়েছেন?
-মানে? বুঝলাম না!
-আমার ছেলে যে ফেল করল, গলদটা কোথায় বোঝার চেষ্টা করেছেন? দোষ কি শুধু ওর একার? আপনার কোনও দায় নেই?
-কী বলতে চাইছেন আপনি?
-দেখুন, স্যার, খুব সহজ সরল ভাবে বলছি কথাটা। ছাত্রের ব্যর্থতায় এভাবে মা-বাবাকে তলব করার আগে একবার ভাবা উচিত ছিল না কি? ছেলেকে পড়াশোনার জন্য পাঠিয়েছি আপনাদের কাছে। তাকে পড়াতে না পারার, পড়ালেখার প্রতি আগ্রহ তৈরি করতে না পারার, সফলতার পথ দেখাতে না পারার ব্যর্থতাটুকু পুরোপুরি আপনাদের। বাবা-মা তার শিক্ষক নয়, যে এসব দায়িত্ব পালন করবেন। এই দায়িত্বটুকু পালনের ভার আপনাদের উপরে দেয়া হয়েছে। তার জন্য তো আপনারা বেতন পান। তারপরও ছাত্রের সফলতার ভাগ চান। তাহলে ব্যর্থতার দায় কেন আপনারা না নিয়ে শুধুমাত্র ছাত্র আর মা-বাবার ওপরে চাপাবেন?
-আমি আসলে ওভাবে বুঝাতে চাইনি।
-কোনও ভাবেই বোঝানোর দরকার পড়ত না, যদি আপনারা শিক্ষকের দায়িত্ব যথাযথ পালন করতে পারতেন।
-আমি রাখছি।
দাঁড়ান। আপনার বাবার ফোন নম্বরটা পাঠিয়ে দেন।
-মানে? কেন?
-ব্যর্থ ছাত্রের পিতাকে ফোন করে যে দায়িত্ব আপনি পালন করেছেন, ব্যর্থ শিক্ষকের বাবাকে ফোন করে আমিও সেই একই দায়িত্ব পালন করতে চাই!