ত্রিধারা -7
আমাদের কথা সে না ভেবে নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত
হয়ে পড়ল।ছেলেকে স্কুলে দিয়ে কোথায় চলে যেত
কিছু বলত না।আমিও ওর কাছ থেকে জানতে
চাইনি কখনো।রাতে আমি ও ছেলে একঘরে শুতাম আর পাখি অন্যঘরে।
তুমি ওকে অন্যঘরে শুতে দিতে কেন?
আমার খুব বিরক্ত লাগত তখন। আমি ওকে সময়
দিতে পারতাম না।টাকা টাকা করে আমি পাগল
হয়ে গেছিলাম। পাখি আমার পাশ থেকে সরে গেল।দেখতাম ও ফোন নিয়ে ব্যস্ত।অনর্গল ওর
ফোন আসত। আর ও ফোনে খুশিতে ভেসে যেত।
তুমি পাখির এই আচরণ মেনে নিলে কেন? তুমি তো তখনই ওকে শাসন করতে পারতে।
হ্যাঁ বৌদি ঠিকই বলেছ।টাকার নেশায় বোধ হয়
অনেকটা দেরি করে ফেলেছিলাম। শাসন যে
একেবারে করিনি তা নয়।
একদিন রাতে দরজায় কান পেতে ফোনালাপ শুনি।তাতে আমার মাথা গরম হয়ে যায়।দরজায়
লাথির পর লাথি মারি।ও ঘর থেকে বেরিয়ে এলে
গালে চড় মেরে বলি যেন মূহুর্তের মধ্যে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়।তখন আমার মাথা ঠিক ছিল
না।রাগের মাথায় কি যে করে ফেললাম জানি না।
এটা কি আমার অপরাধ? পরের দিন সকালে
নীলুকে নিয়ে পাখি চলে গেল।
সেই দিনই তুমি ওদের ফিরিয়ে আনলে না কেন?
হাসি পায় তোমার কথা শুনলে।তুমি বৌদি দেখছি
সরল সাদাসিধা সৎ মানুষ। তোমার মত মানুষ ক’জনের ভাগ্যে জোটে।দাদাকে তো ভাগ্যবান
বলতে হয়।বাজে কথা রেখে বল,তুমি ফোন করে জানলে না ছেলেকে নিয়ে ও কোথায় গেল?
ফোন করিনি আবার? রিং বেজে বেজে থেমে গেছে।কেউ ধরে নি।
সেটাই তো স্বাভাবিক। তবে তুমি ওর বাপের বাড়িতে ফোন করে সব জানালে না কেন?
হ্যাঁ শেষে পাখির বাপের বাড়ি দমদমে ফোন করে
জানতে পারি ওরা দুজনেই ওখানে আছে।তাই
আর দেরি না করে তখনই ফোন রেখে বেরিয়ে যাই ওদের আনতে।কোন ফল হয়নি।উল্টে ওদের বাড়ি ঢুকতেই ও আমায়
পুলিশের ভয় দেখায়,অপমান করে।৪৯৮ জারি করবে বলে
আমাকে জানায়।সেদিন হাতে পায়ে ধরে অনেক বোঝালাম কিন্তু ওর জেদ বজায় রেখে আমার
সাথে ফিরে এলো না।
বাঃ। তবে তুমি নিশ্চিন্তে বাড়ি ফিরে এসে ঘুমিয়ে
পড়লে? ঘুম সেই যে গেছে তারপর নিশ্চিত মনে
আর ঘুমাতে পারি না।ব্যালকনিতে বসে সিগারেটের ধোঁয়ায় রাত ভোর হয়ে যায়।
পাখির বাবা মা কেউ তাকে বুঝিয়ে তোমার কাছে
ফিরিয়ে দিয়ে গেল না?
আশায় ছিলাম পাখি ফিরে আসবে।ওর মা ওকে
অনেক বুঝিয়েও পারেননি। ও এতটাই জেদি ওর
কথাই শেষ কথা। কিন্তু আমার কথার উপরে কথা বলত না।তাই ভেবেছিলাম রাগ পড়লে ফিরবে।
সেই যে গেছিল আর আসেনি ফিরে। কি জানি কেন এতো পাল্টে গেল।ওর সাথে সাংসারিক মন
ভেঙে চুরমার হয়ে গেল। ওই আমার থেকে ডিভোর্স চাইল।তারপর লিখিতভাবেই ডিভোর্স হয়ে গেল।
শুধু তোমার কাছে ওর ফসল রেখে গেল? ওর
ফসল ও নিজের কাছে রাখল না কেন? আমি
একদমই ছেলেকে দিতে চাইনি।জোরালো পণ
করেছিলাম ছেলে আমার কাছেই থাকবে।আর
ছেলেও মাকে পছন্দ করত না।ছেলেও মায়ের
কাছে থাকতে রাজি হয়নি।
ছেলে মাতৃস্নেহ থেকে বঞ্চিত! ছেলে মায়ের জন্য
কাঁদত না।মায়ের কাছেই যেতে চাইত না।এটা কি
করে সম্ভব।মায়ের অভাব যে আমিই পূরণ করেছি
সব সময়। খাওয়ানো নাওয়ানো সবটাই আমি
করতাম।অনেকটা সময় ছেলের সাথে খেলা গল্প
পড়াশোনার মধ্যে কাটিয়ে দিতাম।
পাখিকে আর মনেই হত না তোমার। না আমি
ওকে আর কখনো মনে করতে চাইনি।ডিভোর্স এর পর থেকে ওকে প্রচন্ড ঘৃণা করতাম।ভেবেওছিলাম আমি আর ছেলে বাকি জীবন আনন্দেই কাটিয়ে দেব।কিন্তু গ্রহের ফের।
কি হল পাখি আবার ফিরতে চাইল।নিজের ভুল স্বীকার করে সংসার করতে চাইল?
না না আবার এক নতুন অধ্যায়।