ত্রিধারা -6
আজ আর তোমার কথা নয়।বল তোমার পাড়ার
কথা।সেই আলুকাবলিওয়ালা যে বাড়ির গেটে
এসে রোজ দাঁড়িয়ে থাকতো।কখন পড়া শেষ করে
ছেলেমেয়েরা এসে বলবে ঝাল কম দিয়ে বানাও।
ওদের সাথে আমারও দাঁড়িয়ে যেতাম। মনে আছে
তোমার? হ্যাঁ সে আর নেই মারা গেছে ওর মেয়ে অঙ্গনওয়ারীর দিদিমণি হয়েছে।বাঃ ভাল খবর।
কিন্তু তারও কপাল খারাপ বড়টা একেবারে মাতাল।ওমা সেকি? ওই ভালবাসার বিয়ে।
আর চাচার সিঙাড়ার কি খবর? খুব ভাল চলছে
তার ব্যবসা।
জিনিসের দাম বাড়লেও মহল্লার শিশু ও
গরীব মানুষের নাস্তার চাহিদা মেটাতে ছলেমন চাচা ত্রিশ বছর ধরে একটাকায় সিঙাড়া বিক্রি করে চলেছেন। মুচমুচে সিঙাড়া একটি কাঁচঘেরা বাক্সে ভরে ফেরি করে বেড়ায়। কি দারুণ খেতে বল।মহল্লা ছাড়াও বিভিন্ন ট্রেনে ফেরি করেন সিঙাড়া। কি অদ্ভুত ভাবনা তার। গরিব শিশুদের
কথা ভেবে দাম এক টাকাই রেখে দিয়েছে। তিনি ব লেন যত দিন সিঙাড়া বিক্রি করবে, দাম এক টাকাই রাখবে’।
এখনও প্রতিদিন ৮০০টি সিঙাড়া তৈরি করে দুপুরের মধ্যেই বিক্রি শেষ। যা লাভ হয়,তাতেই সুখে চলে যায় স্ত্রী ও মেয়ে নিয়ে সংসার।বেশি আশা না থাকায় সংসারে নেই টানা পোড়েন।
নিত্যপ্রয়োজনীয় সব জিনিসের দাম বাড়লেও তার সিঙাড়ার কেন দাম বাড়েনি, এমন প্রশ্নের জবাবে বৃদ্ধ চাচা বলেন, যাদের পাঁচ টাকা দামের সিঙাড়া কেনার সামর্থ্য নেই, কিন্তু খেতে মন চায়, তাদের জন্যই দাম বাড়ায়নি।
গরীব মনের জীবন দর্শন দেখে মুগ্ধ হতে হয়।
ছলেমানের সিঙাড়ার ভক্ত অনেক। একটাকায় সিঙাড়া কিনতে পেরে তারা খুশি।
তিনিও জীবনের ৭০ টি বছর অতিবাহিত করে এখন আমৃত্যু একটাকায় সিঙাড়া বিক্রি করে যেতে চান।
এবার বল ফুচকাওয়ালার কথা। তারা আর
মাটির ঘরে থাকে না। বানিয়ে ফেলেছে মার্বেলের
দোতলা। বাড়িতে দোকানঘরে ওদের বাবা ফুচকা
বিক্রি করে আর ওরা ঘুরে ঘুরে বিক্রি করে।আবার
ওদের কোন ভাই টোটো চালিয়েও সংসার করছে।
ওরাও তো তোমার কাছেই পড়েছে।
হ্যাঁ ওই মাধ্যমিক পাশ করেই জীবিকার সন্ধানে।
কি নেই ওদের ঘরে। কখনো দেখি বাইকে চেপে
ঘুরছে, কখনো দেখি চার চাকায় ঘুরছে।ওদের
ভাগ্য দেখে অবাক হয়ে যাই।
আমারই শুধু কপাল পোড়া।
হ্যাঁ তাই তো দেখছি।তোমার প্রথমা স্ত্রী দ্বিতীয়া
স্ত্রী দুজনেই তোমাকে ছেড়ে চলে গেল?
জানো বৌদি একেই বলে ভাগ্য।শেয়ার মার্কেট
আমায় ভাসিয়ে দিল আর ওই এক সন্দেহবাতিক
মন। এই এরা আমায় জ্বালিয়ে পুড়িয়ে একেবারে
শেষ করে দিলে।আনন্দফূর্তি ভরা মনটা আমার
হারিয়ে গেল।
প্রথমা স্ত্রী পাখি তোমায় সন্দেহ করত? তোমার
সরল সৎ মনটাকে সে বুঝল না? নিজের মনটাকেও বিষিয়ে ফেলেছিল?
হ্যাঁ এই ভুল বোঝা বুঝিতেই কত সংসার ছাড়খার
হয়ে যায় জানো বৌদি। পাখি নিকট আত্মীয় বলেই ওর সঙ্গে বিবাহিত জীবন যাপন করেছি।
বিয়ের প্রথম প্রথম ঠিকই ছিল। কলেজ যেত
পড়তেও যেত।আমাদের বাড়িতে ছিল ওর অবাধ স্বাধীনতা। কলেজ শেষ হতেই নীলু ওর গর্ভে
এল।খুব খুশি নীলুকে নিয়ে সারাদিন আনন্দে
কেটে যায়।নীলু ইস্কুলে ভর্তি হওয়ার পর থেকে
ওর মধ্যে পরিবর্তন দেখতে পাই।প্রায় চার পাঁচ
বছর ধরে একটু একটু করে কেমন নিজেকে
আমূল বদলে ফেলে।
তখন তুমি বা তোমার পরিবার ওকে শাসন কর নি
কেন?
আমি তো ওকে খুব ভরসা করতাম।আর তখন
আমার মাথায় শুধু শেয়ার মার্কেট।এতো লোভনীয়
ব্যবসা যে প্রথমেই অনেকটা ইনভেস্ট করে ফেলি।
প্রায় কয়েক লক্ষ টাকা লোকসান হয়ে গেল।সবটাই ছিল আমার টিউশন করে জমানো টাকা।
শেয়ারে সেই সব টাকা খাটিয়ে লাভ তো হলই না
উল্টে ঘরের টাকা বেড়িয়ে যেতে যেতে আমি নিঃস্ব
প্রায়।কি করব ভাবতে ভাবতে দিশাহারা একরকম
বিভ্রান্ত আমি।আর পাখি সেই সুযোগটাই নিল।