ত্রিধারা -4
কয়েকদিন পর এক সন্ধ্যায় কলিং বেল শুনে দরজা খুলতেই
দেখি স্কুলশিক্ষক রূপম ধারা এসে হাজির।অনেক
দিন পরে এলাম। বলেই তরতর করে দোতলায় উঠে গেল।
রূপমের সঙ্গে পা মিলিয়ে আমার মহারানীও দোতলায় উঠে যায়।ওকে দেখেই রূপম বলে
একে আবার কবে থেকে পুষলে গো বৌদি।
এই তো বাবা মারা যাওয়ার পর থেকেই ও এখানে
আশ্রয় নিয়েছে। বাবা যেখানটায় শুয়ে থাকতো
বিড়ালটিও সেখানে চুপ করে ঘুমায়।
রূপম হা হা করে হেসে বলল বৌদি তুমিও জন্মান্তর বিশ্বাস কর?তুমি ভাবছ তোমার বাবা
মেনী বিড়ালের রূপ ধরে এখানে এসেছে।
হ্যাঁ। আমার মা তো বলে ওর চোখদুটো নাকি একেবারে বাবার মতো।বাবার মতোই মাছ আর
মুরগীর মাংস খেতে খুব ভালবাসে।বাবার মতোই
জানলা দিয়ে বাইরে দেখে।বাবা যে বালিশটা
মাথা দিয়ে টিভি দেখতো মহারানীও বালিশটায়
ঠেশ দিয়ে শুয়ে টিভির দিকে তাকিয়ে থাকে।
আর মাঝে মাঝে ঠিক বাবার মতোই মিউমিউ
করে কি যেন বলে ওঠে।মা যেই তাড়া করে ও
মাকে খেঁকিয়ে হাত পা মেলে চোখ বুঁজিয়ে শুয়ে পড়ে।
আমার কথা শুনে রূপম হেসেই খুন।বলল
জন্মান্তরে মানুষ হতে পারতো শেষে মেনীবিড়াল
কেন হতে গেল?
একবার বাজার থেকে লোটে মাছ এনেছে।মহারানী তা মুখেও তুললেন না।বাবা বলতো
বাঙালদের প্রিয় মাছ লোটে।তিনি বাঙালদের
পছন্দ করতেন না।তাই ওই মাছ নিয়ে বিদ্রূপ
করতেন।মহারানীকে কিছুতেই খাওয়ানো গেল
না লোটে। বিকেলে মুরগী এনে দিতে তবে সে
খেল।বাড়ির সবাই যেন ওর খুব পরিচিত।বিশেষ
করে আমার ছোট ছেলে ওর খুব প্রিয়। আর
তোমার দাদা বাজার থেকে আসার অপেক্ষা। ছুটে
গিয়ে দু হাত বাড়িয়ে আবদার করে।কিন্তু কিছু
কোনদিন চুরি করে খায় না।টেবিলে মাছ আঢাকা
থাকে ও কিন্তু মুখ দেয় না।খিদে পেলে চেয়ে খায়।
একটুকরো টাটকা মাছ পেলেই খুশি মনে খেয়ে বাড়ির কোথাও ঘুমায়।ঘুমানোর প্রিয় জায়গা আমার মায়ের পাশে ঠিক যেখানে বাবা ঘুমিয়ে থাকতেন।আমরা সবাই ওর আচরণে অবাক হয়ে যাই।বাহ্যকর্ম করে বাইরে মাঠে।সদরের দরজায়
ছিটকিনির দিকে তাকিয়ে বসে থাকে। যেই বলব
কিরে এখানে বসে কেন? বাইরে যাবি ওমনি শরীরটা ধনুকের মতো করে গা ঝেড়ে লেজ নেড়ে
সাড়া দেয় মিউ।দরজা খুলে দিলে বাইরে চলে যায়।একটু ঘুরে জানলায় এসে টোকা মেরে ডাকে
মিউ মিউ। শুনতে পেলে জানলা খুলে দিলে ভিতরে এসেই ওর জন্য মগে রাখা জল পান করে
হাত পা টানটান করে বক্সজানলায় উঠেই ঘুম। বিড়ালের কথা শুনতে শুনতে সব ঘরগুলো
ঘুরে বলল বাঃ দোতলাটা নীচেরতলা থেকে বেশ সুন্দর তৈরি হয়েছে।আজও দুপুরে ওর কাছে ছিলাম।দেখ আবার একটা ছবি পোষ্ট করেছি।